Thursday, 23 February 2017

রুদ্রোদয় হোক

আজ সকালে এলাকার প্রত্যেক স্বামী একটা খাম পেয়েছেন পাঞ্জাবি বা শার্ট বা বারমুডার পকেটে। মুশকিল হচ্ছে, যে খামটা খোলা যাচ্ছে না। কাগজের, অথচ টানো, ছেড়ো, উপড়ে ফেলো, অল আন-সাক্সেস্ফুল। খামটা পেয়েই নিজ নিজ পত্নীকে তা বলাতে তারা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে। শুধু স্বামীরাই দেখতে পাচ্ছে খামটা। নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে যে বাকিদের সাথে বসে এ নিয়ে কথা বলবে, তারও সুযোগ দিচ্ছেনা বৌয়েরা। আজ একটার পর একটা কাজ চাপিয়ে যাচ্ছে। সব থেকে ভয়ঙ্কর ঘটনা হলো, মনে মনে গালাগাল দিলে বৌ বুঝে যাচ্ছে আর উল্টে দশটা বৃহত্তর এবং জোরাল ঝাড়ছে। রাত্রেবেলা স্বামীদের তখন কুকুরের মতো জিভ বেরিয়ে গেছে। এলাকার স্বামীদের মধ্যে জয়ন্তও একজন। রাতের বাসনগুলো মেজে যখন আর শরীর চলছেনা, হঠাৎ ফোন।
-হ্যালো
-আমি রুদ্র, বাড়ির বাইরে চলে আসুন এখুনি, অপেক্ষা করছি।
-আজ না আর পারছিনা বুঝলেন? কে বলুনতো আপনি? ব্যাডমিন্টন ম্যাচের জন্য ফোন করে থাকলে বলে দি, আজ যা গেছে, কাল যদি বেঁচে থাকি, তাহলে ফিল্ডে যাবো, না হলে আপনারা দেখে নিন। রাখছি।
-এখুনি আসবেন, না টেনে বাইরে নিয়ে আসবো?
-আরেব্বাবা থ্রেট দিচ্ছেন নাকি হে? কারোও কাছে কোনো ধার আছে বলে তো জানি না! সুদীপের কাছে একটা বিয়ার ডিউ আছে ব্যাস। আপনি কে বলুনতো? ফোন রাখ   ....... এই অব্দি বলতেই হঠাৎ একটা ঝড়, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জয়ন্ত দরজার বাইরে। সৎবিৎ ফিরতেই জয়ন্ত দেখে আশপাশের সব স্বামীরাও দাঁড়িয়ে, সব হতভম্ব। ঠিক তখনই-
-সরি, একটু ফোর্স করতেই হলো, আপনারা থ্রেট আর নির্দেশের তফাৎ জানেন না। তাছাড়া একটু ব্যস্ত, তাই শক্তির ব্যবহার করতেই হলো।
স্বামীরা হতভম্ব, এদিক ওদিক চাইছে। শব্দ আসছে, কিন্তু কিচ্ছুটি দেখা যাচ্ছেনা। অথচ একটি সুপারপাওয়ারের ব্যাপারস্যাপার তো আছেই মনে হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আবার সেই কণ্ঠ

-আমাকে দেখার ঋদ্ধি তোদের এখনো হয়ে ওঠেনি রে ছোকরার দল। খুব দরকারি যে কটি কথা বলতে এসেছি শোন। আজ তোরা সমস্ত করেছিস, তোদের নিজের কাজের সাথে সাথে যা রোজ স্ত্রীয়েরা করে থাকে তাও। এই ট্রেলারটা যদি রিপিট না হতে দেখতে চাস, তাহলে প্রতি শিবরাত্রিতে যে ড্রাম কে ড্রাম দুধ বইয়ে দেওয়ার তোদের স্ত্রীয়েদের প্ল্যান তা বইয়ে দে পাশের বস্তির শিশুদের মধ্যে, মেয়েদের এক গ্লাস বেশি দিস। আর ওর একফোঁটা দে আমার লিঙ্গে। এই ধরাধামে দুধের বন্যা নালায় না হয়ে হোক রক্ত-মাংসের শরীরে। আর ভাবছিস, একথা একেবারে স্ত্রীয়েদের না বুঝিয়ে তোদের বোঝাচ্ছি কেনো? সেটা তোরা জানিস। চলি।
**
উফফফ সবে সকাল সাড়ে ছয়, ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। বাপরে স্বপ্ন বটে। উফফফ। জয়ন্ত পাশ ফিরে বেশ তরিজুত করে আবার শুতে গিয়ে দেখে মাথার পাশে, সেই খাম। ধড়াস করে উঠলো বুকটা। তাড়াতাড়ি খামটা খোলার চেষ্টা করতেই খুলে গেলো। ভিতর থেকে বেরোলো একটা চিরকুট তাতে লেখা দুলাইন
“জন্ম আমার তাপ থেকে, অগ্নিচ্ছটা থেকে।
তোদের মধ্যে রুদ্রোদয় হোক, একে, একে।“

Sunday, 19 February 2017

আদিম এবং অকৃত্রিম, তথাপি প্রতি পলের আনন্দ

- মানে, আর কতক্ষন? লোকদেখানো না করলেই নয়?
-ওহ, মানে আমি লোকদেখাই, আর তুমি? ধোওয়া তুলসীপাতা
-তাহলে তুমিই দেখো, এই হিসেবে তো আমি রিলিশড ফ্রম অল এলিগ্যাশন্স।
-মানে? কি ভুলভাল বকছো।
-আরে তুমি তো বললে তুলসীপাতা, তুলসী দাসের রামায়ণের পাতা। খুললেই তো একের পর এক গৃহঅশান্তি। সে দিক দিয়ে আমি তো শান্তিপ্রিয় এবং ………
-থামো, সোজা কথাকে শুধু উল্টো করা। তুমি হলে ঘাপটি, ঘাপটি বোঝো? লোকের কাছে সাধুপুরুষটি, ভাজা মাছটি উল্টে খেতে পারে না। আমি চিনি না তোমাকে …… বাব্বা।
-উঁহু উঁহু সাধুরা জেনেরালি নিরামিষাশী, ভাজা মাছ তো আউট অফ কোয়েশ্চেন। আর যে সাধুপুরুষ, মাছ ভাজতে পারে, সে ওল্টাতে পারবেনা কেন হে! তার কি হঠাৎ প্যারালিসিস হলো? কোইন্সিডেন্স অনুযায়ী যদি তা হয়ও, পয়েন্ট ওয়ান পার্সেন্ট, তাহলে তার ভাজা মাছের চিন্তা ছেড়ে এম্বুলেন্সের নম্বর খোঁজা আর হরিনাম জপ করা উচিত। বাংলার প্রবাদ গুলোর একটু রিভিশন দরকার। ইটস হাই টাইম।
-এই লোক আমায় পাগল করে দেবে একদিন। এই লোকের সাথে ঘর করে দেখাক কেউ।
-সে চান্স নেওয়া বোকামোর কাজ হবে মনে করি। আর তাতে লসটা তোমারি।
-আচ্ছা? তাই নাকি?
-মানে, শুধু শুধু খাওয়ার লোক বাড়াবে?
-আচ্ছা, মানে ঝি গিরিও করাতে চাও আমায় দিয়ে, তলে তলে এতো। চলে যাবো যেদিকে দু-চোখ যায়।
-তোমার ক্যাটারাক্ট অপারেশনটা হয়নি যে।
-ওহ বাহ্, হলে রাস্তায় ছেড়ে দিতে বেশ সুবিধে হতো তাই না? শয়তান, তুমি তল-শয়তান।
-মুখোশের তলায় শয়তান হবে কথাটা
-ওরে আমার বাংলার মাস্টারমশাই, তুমি ওই, তুমি ওই, তুমি মুখোশ, তুমি শয়তান, তুমি পাজি ...... উফ আমার বুক ধরফর করছে।
- বুক ধড়ফড় সেন্স করে সেটা সেন্সরি নার্ভাস সিস্টেমে গিয়ে তারপর সেটা বলতে মিনিমাম ৩০-৭০ মিলিসেকেন্ড লাগে। তোমার কি এতটা সময় .......
- ও মা গো
- আচ্ছা আচ্ছা, ডাক্তার ডাকবো, মানে কোথায় কষ্ট হচ্ছে?
- বলছি, আগে বলো। গোয়ার টিকিটটা কালই কাটবে, বলো ......
- (বিড়বিড় করে) কে বলে, মহিলাদের বুদ্ধি কম?






Monday, 6 February 2017

ছড়াবেন না কিন্তু

-(কাশির শব্দ শুনে) কে ঘরে কে?

-ইয়ে আমি

-আমি কে, কোথা থেকে বলছেন? দেখতে পাচ্ছি না তো, এই মাঝরাতে ভয় দেখানোর চেষ্টা? পলু তুই নাকি?

- না না পলু নয়, কলু বলতে পারেন, আমি ক্যালেন্ডার। মাথাটা পিছনে ঘুরিয়ে দেখুন না, এই তো পরশু আনলেন নিউ মার্কেট থেকে।

-(মাথা ঘুরিয়ে) আঁ মানে ক্যালেন্ডার .... কথা ...... গুলিয়ে যাচ্ছে সব

- উহু ওরকম অবাক হচ্ছেন কেনো, কাল তো দিব্ব্যি চোখ বন্ধ করে কত কথা বললেন, মানে ইলার কথাও তো বললেন, বলতে বলতে কেঁদে উঠলেন

- ওসব তো স্বপ্ন .... দেখলাম ..... মানে হালকা হালকা মনে পড়ছে

-হে হে জীবনটাই তো স্বপ্ন ভাইটু, ওই যে শেক্সপীয়ার বলেছেন,"আওয়ার লিটল লাইফ ইস রাউন্ডেড উইথ এ স্লীপ" আর আমরা হলাম স্বপ্ন।

-বাব্বা, আপনি তো বেশ পড়েছেন টরেছেন

-ওই আমার পাতায় পাতায় সব যা লেখা থাকে, প্রথম দিনই গুলি খেয়ে নি, তারপর তো প্রতি মাসে রিভিশন চলে, যাই হোক যে কথাটা বলতে চাইছি যে, আজ থেকে প্রেমের হপ্তা। খবর কি রাখেন? মানে সরস্বতী পুজোতে যদি যুৎসই কিছু করতে না পেরে থাকেন, তবে এই সুযোগ। আর প্রেমটা এখন অফিসিয়াল, মানে বেশ বাধ্যতামূলক। আমার পাতায় দেখে নিন, সব ফর্দ লেখা, কবে গোলাপ, কবে চকলেট কবে খুক খুক মানে চুমু ..... ওকি ওরকম হা করে কেনো, কিচ্ছু চিন্তা নেই, বাকি রাতটাতে প্ল্যানটা ছকে ফেলুন দেখি। আমি কাল আবার আসবো, আপডেট নিতে। আর সাজেশন চাইলে অলওয়েজ ওয়েলকাম। তাহলে এখন যাই, বলছি বেস্ট অফ লাক, ছড়াবেন না কিন্তু।