শাড়ি, পেটিকোট, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, সিগারেট, বিয়ারের অলস বোতল এসব অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের মাঝে, ক্রিকেট খেলা, গাঁজা টানা যতটা মানানসই আর টানটান, মাঝে ওওওই সমাধিগুলো ততটাই বেমানান, অসঙ্গত। কেন যে আছে, কে জানে! নেহাত তাঁরা আগে থেকেই আছে, না হলে কোনোমতেই ......
==========
২১ বছর বয়স মানে তো এই কচিটি। এই তো সবে কলেজ। এখন তো একটু খেলাধুলো করার সময়। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা টাবনা ওসবে এখন ঢের সময় বাকি।
তবে যদি কারোর জীবৎকাল হয় ২১ বছর, তাহলে?
তরুলতা দত্ত। কলকাতায় জন্ম, মৃত্যুও। মাঝে ৩ বছর ইংল্যান্ড। জীবৎকাল ২১ বছর। এরমধ্যেই ৪টি ভাষাতে ( বাংলা,ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ, সংস্কৃত) পারদর্শী, লিখে ফেলেছেন দুটি নভেল। তার মধ্যে একটি Bianca or The Young Spanish Maiden ইংরিজিতে। অন্যটি Le Journal de Mademoiselle d’Arvers ফরাসিতে। বই অনুবাদ করেছেন দুটি, একটি ফরাসি থেকে ইংরিজিতে (প্রায় ৬৫ বিভিন্ন কবির কবিতা সংকলন), অন্যটি সংস্কৃত (পুরাণকাহিনী) থেকে ইংরিজিতে। জীবনের শেষ ৩ বছর নিয়মিত লিখেছেন The Bengal এবং The Calcutta Review ম্যাগাজিনে। মাইকেল মধুসুদন দত্ত এবং তরু দত্ত। পদবি ছাড়া আর একটি মিল তাঁদের। দুজনেই প্রথম ভারতীয় যাঁরা ইংরিজিতে কাব্যচর্চা করেছেন। মহিলা হিসেবে বলাই বাহুল্য ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে তরু দত্তই প্রথম, ইংল্যান্ডে যাঁর লেখার উচ্ছসিত প্রশংসা হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পরেও বহুদিন। বাঙালি এই মেয়েটিকে বাংলার কিট্স্ বলা হয়।
এখন তিনি মানিকতলা ক্রিস্টান সমাধিতে। হয়তো নিশ্চিন্তেই শুয়ে আছেন, মাটির ওপরের জগৎ নিয়ে আদৌ কোনো মাথাব্যথা নেই। এদিকে মাটির ওপরের মানুষদেরও মাথাব্যথা নেই। ২১ পেরিয়ে ৪১ হয়ে গিয়েও রসগোল্লা আর পাশবালিশেই তাদের লব্ধি এবং সিদ্ধি। মাঝে মাঝে মনে হয়, তরু দত্ত একদিন সমাধি থেকে বেরিয়ে যদি নিজের কর্মকাহিনীর একটি অনুগল্প একটু শুনিয়ে যেতেন, তাঁর সমাধির ওপর ঠেক বসাতে একটু বুক তো কাঁপতো গাঁজাখোরদের। রবি ঠাকুরের বাড়িতে ছেলে মেয়েরা হাতে হাত ধরে ঘুরলে যারা "কি শিক্ষা, শেষ অবধি এখানেও ..... " বলে মুখ ব্যাকান, রাস্তায় চুমু তো দূরের কথা একটু কাছাকাছি বসলে যাদের হার্টএট্যাক হয়, তাঁরা নিজের বাড়ির ছেলেমেয়েদের, পরিচিতদের, এমনকি নিজেকেও একটু তরু দত্তের গল্প বলুন না কেন! গর্ব করা যাক বাঙালি হিসেবে, নারী হিসেবে আর মনুষ্যজন্মলাভের স্বার্থকতার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে।
প্রণাম এই আগুনকে। ১৮৫৬এর তরু দত্তকে।