বাঙালিরা ডিম, ডিমের কুসুম, মটনের চর্বি থালার কোণায় রেখে দেয়। হিমালয় ঢেকে দেওয়া ভাত, কোপাই নদীর মতো তরকারিতে না কুলোলে, তবু কুতিয়ে কাতিয়েই শেষ করা যায়, কিন্তু ওই স্বর্গীয় বস্তুসমস্ত শেষপাতেই, জমিয়ে এবং অবশ্যই রসিয়ে। ভাগ্গ্যিস আজকাল বিয়ে বাড়িতে বুফে সিস্টেম। নাহলে আইসক্রিমের পর চর্বিওয়ালা ওয়ান পিস্ চাইতে ক্যাটারারদের সামনে হাত পাতা ইস লিটল ইয়ে ইয়ে। মোদ্দাকথা বাঙালি ভালোবাসার জিনিসটি যত্নে সামলায় শেষ পাতে।
তেমনি কালী পুজোর নির্জলা উপবাস। দুদিন আগে থেকেই বাড়িতে নিরামিষ। দিনের দিন তো চোখে মুখেই নিরামিষ ভাব ফুটে ওঠে। লোকজন দেখলেই বোঝে কিছু মর্মান্তিক ঘটেছে। নিরামিষকে আপন করতে পারার থেকে কঠিন আমিষকে দূর করা। আর যেই কালী পুজো শেষ, সকালে উঠেই বাঙালির প্রথম শব্দ, মটন। কালী পুজোর সাথে পাঠাবলির পিছনে কোনো প্রবল খাদ্যরসিক ব্রাহ্মণের যোগাযোগ না থাকলেই নয়।
মারাঠিরা অর্থাৎ মহারাষ্ট্রিয়ানরা উল্টো। শ্রাবণ মাস এ তাঁরা একবেলা খায়, নিঃসন্দেহে নিরামিষ। মদ্যপান? ছিঃ। তাঁরা মনে করে, এই সময় চারিদিকে রোগের সম্ভাবনা বেশি, তাই ভোগের লোভ আয়ত্তে রাখাই যথাযথ। তাই শ্রাবণ শুরুর আগের দিনই তাঁরা গাঁতিয়ে খায়, একে গাতারি বলে। গাতারি অমাবস্যা মানে শ্রাবণের আগের অমাবস্যার দিন। লোকমুখে প্রচারিত ঐদিন লোকজন মদ খেতে খেতে টলে পড়ে নালাতে, তাই এর নাম গটরি অমাবস্যা। চিকেন আর মদ ঐদিন অপরিহার্য। অন্যরকম ভ্যারাইটি স্বাদমতো, জিভমতো, মনমতো, পকেটমতো।
আগামী ০২ অগাস্ট সেই গাঁতিয়ে খাবার দিন। অদ্ভুতভাবে সেদিন আবার শুক্কুরবার। মহারাষ্ট্রে থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলেও সেক্যুলার কসমোপলিটন বাঙালি হিসেবে দিনটি উদযাপন করা কর্তব্য। কি বলুন?