তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। আকাশবাণীতে প্রোগ্রাম করেন এক ভদ্রলোক, নিয়মিত যেমন ডিউটি করতে যান, সেদিনও গিয়েছেন। পৌঁছে দেখেন, আকাশবাণীতে যন্ত্রপাতি, মানুষজন সব বদলে গেছে রাতারাতি। মিলিটারিরা পাহারা দিচ্ছেন। তার মধ্যে একজন অর্ডার দিলেন, একটা রেকর্ড "মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা" পরপর দুবার বাজাতে। খুব অদ্ভুত। অনেক প্রশ্ন সত্ত্বেও মিলিটারির অর্ডার, তাই মানতেই হলো। গানটি পুরোটা পরপর দুবার বাজলো। পরে জানা গিয়েছিলো যে, ঐটি ছিল সৈন্যদের জন্য কোডেড মেসেজ। গানটি পুরোটা দুবার বাজা অর্থাৎ "attack"। এই মেসেজ পেয়ে সৈন্যরা যশোর দিয়ে ঢুকে আক্রমণ চালান। বাংলাদেশ থেকে দুর্বৃত্তদের দূর করেন। যে ভদ্রলোক সেদিন এই রেকর্ড বাজিয়েছিলেন, এই যুদ্ধে পরোক্ষভাবে তিনিও যোদ্ধা।
এই ভদ্রলোক হলেন গল্প দাদু।
"আকাশ আমার পায়ের তলায়" শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আকাশকে পায়ের তলার বস্তু বলেই বিশ্বাস করেছিলাম যার কণ্ঠস্বরে তিনি আমাদের গল্পদাদু। এই গল্পদাদুর প্রথম পরিচিতি বাবার কাছে। বাবা বলেছিলেন, আকাশবাণীতে একসময় গল্প দাদুর আসর হতো, যেখানে ছোটদের জন্য গল্প পাঠ হতো। সেই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আজ যেমন সানডে সাসপেন্স হয়। এই গল্পদাদুর গল্প শোনা হয়ে ওঠেনি কখনো আকাশবাণীতে। কিন্তু পরবর্তীকালে দূরদর্শনের রেকর্ডিং-এ দেখেছি তাঁকে। ইউটুবের কল্যানে তাঁর শ্রুতিনাটক শুনেছি। আবৃত্তি কাকে বলে, খায় না মাথায় দেয়, জেনেছি তখন।
ঘরের দাদু থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা, পার্থ ঘোষ মশাইয়ের সাথে আবার দেখা। আরও একবার।বললেন,"শরীর ভালো নেই"। ভালো থাকতে হবে গল্পদাদু। গল্প অনেক বাকি। এইপ্রজন্ম তো জানতেই পারলো না সে ছেলেটার কথা যে পায়ে গুলি ঢুকে যাওয়া অবস্থায় মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে রবীন্দ্রনাথ-বাংলাদেশের উদ্যেশ্যে কবিতা লিখছে। জানতে পারলো না আজ যে ভাষা প্রায় একটা বোঝা সেই বাংলাকে বাঁচানোর জন্য কত রক্ত, কত আবেগ। তোমাকে তাই ভালো থাকতেই হবে। ভালো থাকতে হবে গল্পদাদু।
২৫- ফেব্রুয়ারি - ২০১৯