Monday, 24 February 2025

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর গল্পদাদু


তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। আকাশবাণীতে প্রোগ্রাম করেন এক ভদ্রলোক, নিয়মিত যেমন ডিউটি করতে যান, সেদিনও গিয়েছেন। পৌঁছে দেখেন, আকাশবাণীতে যন্ত্রপাতি, মানুষজন সব বদলে গেছে রাতারাতি। মিলিটারিরা পাহারা দিচ্ছেন। তার মধ্যে একজন অর্ডার দিলেন, একটা রেকর্ড "মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা" পরপর দুবার বাজাতে। খুব অদ্ভুত। অনেক প্রশ্ন সত্ত্বেও মিলিটারির অর্ডার, তাই মানতেই হলো। গানটি পুরোটা পরপর দুবার বাজলো। পরে জানা গিয়েছিলো যে, ঐটি ছিল সৈন্যদের জন্য কোডেড মেসেজ। গানটি পুরোটা দুবার বাজা অর্থাৎ "attack"। এই মেসেজ পেয়ে সৈন্যরা যশোর দিয়ে ঢুকে আক্রমণ চালান। বাংলাদেশ থেকে দুর্বৃত্তদের দূর করেন। যে ভদ্রলোক সেদিন এই রেকর্ড বাজিয়েছিলেন, এই যুদ্ধে পরোক্ষভাবে তিনিও যোদ্ধা।

এই ভদ্রলোক হলেন গল্প দাদু।

"আকাশ আমার পায়ের তলায়" শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আকাশকে পায়ের তলার বস্তু বলেই বিশ্বাস করেছিলাম যার কণ্ঠস্বরে তিনি আমাদের গল্পদাদু। এই গল্পদাদুর প্রথম পরিচিতি বাবার কাছে। বাবা বলেছিলেন, আকাশবাণীতে একসময় গল্প দাদুর আসর হতো, যেখানে ছোটদের জন্য গল্প পাঠ হতো। সেই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আজ যেমন সানডে সাসপেন্স হয়। এই গল্পদাদুর গল্প শোনা হয়ে ওঠেনি কখনো আকাশবাণীতে। কিন্তু পরবর্তীকালে দূরদর্শনের রেকর্ডিং-এ দেখেছি তাঁকে। ইউটুবের কল্যানে তাঁর শ্রুতিনাটক শুনেছি। আবৃত্তি কাকে বলে, খায় না মাথায় দেয়, জেনেছি তখন।

ঘরের দাদু থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা, পার্থ ঘোষ মশাইয়ের সাথে আবার দেখা। আরও একবার।বললেন,"শরীর ভালো নেই"। ভালো থাকতে হবে গল্পদাদু। গল্প অনেক বাকি। এইপ্রজন্ম তো জানতেই পারলো না সে ছেলেটার কথা যে পায়ে গুলি ঢুকে যাওয়া অবস্থায় মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে রবীন্দ্রনাথ-বাংলাদেশের উদ্যেশ্যে কবিতা লিখছে। জানতে পারলো না আজ যে ভাষা প্রায় একটা বোঝা সেই বাংলাকে বাঁচানোর জন্য কত রক্ত, কত আবেগ। তোমাকে তাই ভালো থাকতেই হবে। ভালো থাকতে হবে গল্পদাদু।

২৫- ফেব্রুয়ারি - ২০১৯ 



Wednesday, 19 February 2025

হ্যাপি রোজ ডে

 সবাই কিন্তু বড্ডো রেগে। গা রি রি করছে সবার।


নটিবিনোদিনী শুধু হ্যাপি রোজ ডে তে বলেছেন,"নিতুই নতুনভাবে গাঁথি ফুলহার, মালা কি ভালোবাসো প্রাণেশ আমার?"
ব্যাস অমনি সবাই রেগে র।

স্যার জগদীশ বলছেন,"এ অতিশয় অন্যায়, এভাবে শুধুমাত্র চিত্যবিনোদনের জন্য গোলাপের যে রূপ হত্যা হইলো, তার আমি তীব্র নিন্দা জানাইতেছি”.
রবিঠাকুর বলছেন," বনে যতগুলি ফুল আলো করি ছিল শাখা, কারো কচি তনুখানি নীল বসনেতে ঢাকা, উউউফফফফ কষ্ট"
মান্না দে বলছেন,"মানুষ খুন করলে পরে, মানুষই তার বিচার করে, নেইতো খুনের মাফ, তবে কেন পায়না বিচার নিহত গোলাপ"
অঞ্জন দত্ত বল্লেন," নেই যে তাদের আর কোন চাওয়া-পাওয়া, শুধু খাতার ভেতর চ্যাপ্টা গোলাপ ফুল .. ল.. ল..ল ..ল .......
আই ডোন্ট নো, মানে আই ডোন্ট..... ধুর আমার জাস্ট ভালো লাগছে না।”

************************
জানি রে বাবা আজ রোজ ডে নয়, ঠিক আছে, কিন্তু তথ্য জোগাড় করতে সময় লাগবে, তাই না। আর এক সপ্তাহ পরে এই খবর দেওয়ার কারণ ছিল অপেক্ষা, দত্তবাবুর মত বদলানোর। বাট নাথিং, কাল তাকে ফোন করতেই, তিনি বললেন,"রঞ্জনা, আমি আর আসবো না"


১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 





Wednesday, 12 February 2025

ভ্যালেন্টাইন্স

 - ভ্যালেন্টাইন্স দিনে কি দেবে আমায়?

- কি চাও বলো?

- এমন বলছো, যেন সবকিছু তোমার হাতের মুঠোয়!

- আহা বলেই দ্যাখ না। তুমি চাইলে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে ইকো করবো। নদীর জলে তোমার নাম লিখবো। হাওয়ায় চুমু ছড়িয়ে দেব।

- কিন্তু এসবই তো ক্ষণস্থায়ী। ধরে রাখবো এমন কিছু দাও।

- তাহলে আমার বিশ্বাস নাও। বাঁচবো যতদিন তোমার থাকবো এই বিশ্বাস দিলাম তোমায়।


১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 






হাগের মতই

 রসিকগিন্নী অনেকদিন বাপের বাড়ি।

রসিককর্তা অনেকদিন চাকরিসূত্রে বাইরে বাইরে।

রসিককর্তা ভারী মিস করছেন গিন্নীকে।

সামনেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে।

রসিকবাবু সবে সবে বাংলা টাইপ শিখেছেন।

তাই আনন্দে, আজ মন খুলে একটি মান্না-দে-হোয়াটস্যাপ-মেসেজ করলেন বৌকে,

"খুব জানতে ইচ্ছে করে, খুব জানতে ইচ্ছে করে তুমি কি সেই হাগের মতই আছ নাকি অনেকখানি বদলে গেছ"

...

রসিকগিন্নীর মেসেজ এলো,"কীইইইইইইই! তুমি আমার ওজন তুলে কথা বললে? আমি হাগের মতো না থাকলে কী কঞ্চি খুঁজতে যাবে? অন্য ঘাটে নৌকো ভেড়াবে ভাবছো বুঝি!"

সঙ্গে একটা মুড়ো ঝ্যাঁটার ছবি পাঠিয়ে, ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, রসিকগিন্নী। আর কথা বলছেন না।

আরে ধুর । "আগের" কখন "হাগের" হয়ে গিয়েছে টাইপ করতে গিয়ে, তা বোঝার আগেই রাগের বাগে পড়তে হলো রসিকবাবুকে । 

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৮ 



হাগ্ ডে


রিক্সাওয়ালা ও রসিকবাবুর কথোপকথন-

- রসিককাকু আজ একটু তাড়াতাড়ি আপনাকে বাজারে নিয়ে যাবো, বিকেলে মানে একটু আজজেন্ট কাজ আচে।

- সে ঠিক আছে, কিন্তু কি এমন আর্জেন্ট কাজ হে পলুরাম?

- ইয়ে ও কিচু না, মানে ওই রানীর সাথে দেকা কত্তে যাবার ......

- ও হো বুঝেছি, তাই একেবারে তোমার রিক্সা একেবারে ত্রিকোণমিতির মতো চলেছে। তা একটু আগে সময় দিতে পারলি না রে ছোকরা?

- আসলে কাকু আজ হাগ্ ডে না, এ হপ্তা তো নিয়ম করে সব হলো, আর হাগ্ হবে না, কিন্তু লোকে দেকলে কেলো তাই, রানী বললো সন্ধ্যের পর যেতে। 

কাল ছিলো চুমু ডে। হি হি । 

- চুমু! অ! তা কাল চুমু খেয়ে আজ হাগ্- ডে যাচ্ছো?

- হিহি কী যে বলেন কাকু । কাকু, আজকাল মেয়েরা খুব সেয়ানা, গিফট নিতে ছাড়বে না, রোজ গিফট নি .. কি হলো কাকু অমন হা হয়ে আচেন যে। বলি আপনি হাগ্ করেচেন কাকিমাকে?

-হা ....

- গ, হ্যা হাগ্ করেচেন?

- হাগ্ দেখাচ্ছি, একেবারে পাকার ডিপো, ওরে তোকে তো জন্মাতে দেখলাম রে ছোকরা, হাগ্ দেখাচ্ছিস? হাগ্? চল ভাগ।


১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 



Monday, 10 February 2025

হ্যাপি চকলেট (ডে)

 বাঙালি আমি, খাঁটি।

প্রমান চাই?

প্রথম শব্দ লিখেছিলাম অন স্লেট "লেট"।

(তবে বাঙালি আজকাল অনেক বেশি পাংচুয়াল বটে).

বয়সবৃদ্ধির সাথে চিঠিতে লিখেছি কাপলেট।

গিলেছি মিত্র কাফের কাটলেট, তারপর গাদা গাদা জেলুসিল ট্যাবলেট।

প্রেম করতে গিয়ে বারবার গুবলেট, ফলস্বরূপ সয়েছি বুলেট।

আজও তাই।

এতো সাধ করে গিফট করলাম ব্রেসলেট, কিন্তু উইডাউট চকোলেট!! ব্যাস!! তবে আর কি, মানভঞ্জন কনটিনিউস।

হে বাঙালি, ছাড়ো ওমলেট, হ্যাপি চকলেট (ডে)

০৯ - ফেব্রুয়ারি - ২০১৭ 








শীত তো নয় যেন গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স

নলেন গুড়, খাই খাই, পিকনিক, বইমেলা এমনকি শীতটাও শেষ হতে চলেছে।

এমন রাগ হয় যে কি বলবো।

শীত তো নয় যেন গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স।

আরে বাবা, দু এক মাস আরো থেকে যাবি, তা না।

মাঙ্কিক্যাপটা তো সূর্যের মুখ দেখতেই পেলো না।

মটনের ইনটেক ২০% বাড়াতেই ঘেমে ঘ।

শাটল গাড়ির চারজনের সিটটা আবার তিনজনের মনে হতে শুরু করেছে।

সবাই এক্সপান্ড করছে, প্রস্থে।

ধুস।

আর রোববার সন্ধ্যেতে রোমহর্ষক ভূতের গল্পে কম্বলের মরাল সাপোর্ট সেটা!!??

আরে বাবা, বেহালা টু বইমেলা জার্নি সামলানোর মত মানানসই ক্লাইমেট টা তো নিদেনপক্ষে চাই নাকি!

আর কতকিছু যে রইলো বাকি!

সার্কাস দেখা বাকি,ক্ষীরাই যাওয়া বাকি,লাল-হলুদ শাড়ি পড়ে বোলপুরে সেল্ফি কিচিক বাকি,বল্টুকে মুখ থেকে ধোয়া বার করা ম্যাজিক দেখানো বাকি,জমাট কুয়াশাতে প্রিন্সপ ঘাট থেকে দৌড়ে এসপ্লানেড যাওয়া বাকি,ঠাকুমার কোলে শুয়ে কম্বল মুড়িয়ে খই নাড়ু খাওয়া বাকি।

আর মাখোমাখো প্রেমে বাহু জড়াইয়া, পুস্পকাননে টহল দিয়া, কড়াইশুটি র কচুরি গিলিব, নব্য আলুর সহিত, উহাও বাকি।

ধুস।

P.S. অল্টারনেট ডে তে স্নানের রুটিন আবার ব্যাক টু ডেইলি রুটিন। ইটস বোরিং, ম্যান।



শুক্রবার এলেই আমার মনে হয়

 শুক্রবার এলেই আমার মনে হয়:

১. ঘরময় মটন বিরিয়ানির গন্ধে ভরে যাক

২. বিস্কুটের কামড়ে ফিশ কবিরাজি ফীল হোক

৩. বাথরুমে ঢুকলে জলের আওয়াজ ছাপিয়ে সামারঅফসিক্সটিনাইন নিনাদিত হোক

৪. স্বপ্নে পেঙ্গুইন, টিনটিন, প্রফেসর শঙ্কু আর ভোরের দিকে উত্তম কুমার আসুক

৫. আকাশের মেঘলা হওয়ার অধিকার না থাকুক

৬. পুরোনো এক চিঠি হঠাৎ করে চোখের সামনে এসে পড়ুক, নস্টালজিয়া কব্জা করুক দুপুরটা

৭. টিভিতে প্রতি রবিবার নায়ক সিনেমা ম্যান্ডেটরি হোক

৮. তেলেভাজাতে এসিডিটি হোক, সে জ্বালা গলা অব্দি না পৌঁছুক

৯. জানালার বাইরে শালবনি নজরে পড়ুক

১০. ঢাকের আওয়াজ ভেসে এসে চারিদিক দুগ্গা পুজো দুগ্গা পুজো করে দিলে বেশ হয়


০৭ - ফেব্রুয়ারি - ২০২০ 




একান্নবর্তী

 একান্নবর্তী পরিবারের বারান্দা টানা ঘর।

কেউ বড়ি শুকোতে দেয়, পা ছড়িয়ে গল্প করে।

শীতের সন্ধ্যে নামলে বড় তাড়াতাড়ি অন্ধকার হয়ে যায় সে।

হারমোনিয়াম প্রাক্টিস আর শাঁখের আওয়াজ মিলে মিশে একটা নতুন সুর সৃষ্টি করে যায়।

সারাদিনের শোরগোল হঠাৎ ভ্যানিশ হয়ে যায়।

নিশাবসানের অপেক্ষা চলে।

বারান্দার নিজেকে বড্ডো একা মনে হয়।

05-feb-2021