Wednesday, 21 February 2018

ককটেল

আমিষ-নিরামিষ একই ফ্রিজের একই ফ্লোরে থাকলে একটু ছোঁয়া তো লাগবেই। তাই না?
আকাশের মা- তাতে প্রবল সমস্যা। উপায় হিসেবে ভাবা হলো, আলাদা একটি পুঁচকে ফ্রিজ হবে, যাতে থাকবে নিরামিষ। এবং দুটি ফ্রিজ যেন একে ওপরের থেকে অন্ততপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বে থাকে।
কিন্তু যদি নিরামিষ ফ্রিজের পাশে বসে আমিষ হাঁচি আসে?
যদি নিরামিষের ফ্রিজের ভিতরকার বাটির ওপর লাগিয়ে রাখা ভেজ-আইডেন্টিফিকেশন-নেইলপলিশ- মার্ক আচমকা উঠে যায়?
যদি নিরামিষের ফ্রিজের ওপর কোনো গেস্ট এসে মটন-বিরিয়ানি খাওয়া কব্জিটা রেখে ফেলে?

গত কয়েকমাস ধরে এই সব সম্ভাবনার কথা আকাশের মা কে বোঝাতে, উনি অবশেষে ঠিক করেছেন, একটি ফ্রিজই থাক। ওই নিরামিষের আগের দিন একটু মুছে নিলেই হবে। যতই হোক, আমিষ-নিরামিষ, খাদ্য বই আর কিছু তো নয়।

ঠিক যেমন, যে দেশে কোনো একটি সরকারী ভাষা নেই (“একটি” শব্দটির ওপর জোর দেবেন), তখন একগাদা আশেপাশের ভাষার সাথে একটু ছোঁয়াছুঁয়ি তো হবেই। তাই না?
উত্তরে-দক্ষিণে-পশ্চিমে গিয়ে কি আর বাংলা বলা যাবে? ওখানে "জল খাতা হুঁ" -এর পাঞ্চ মারতেই হবে। অর্থাৎ আমাদের দেশের লোকজনকে একটু ককটেল হতেই হয়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক আকর্ষণ মাধ্যাকর্ষণ -এর কারণেও পাঞ্চ আজকাল একেবারে প্রায়-আবশ্যিক হয়ে উঠেছে। অমনি বলবেন, "বাজে কেন বকছেন? দক্ষিণে তো ওরা দিব্বি নিজের ভাষাতেই কথা বলে।" তা বলে। আমেরিকার রাস্তাতেও তাদের একমাথা তেল চুপচুপে চুলে ফুলের মালা লাগিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। আপনি কি ধুতি-শাড়ি পড়েন? প্যারিসে গিয়ে পড়বেন?

ব্যাপার হলো, আপনার মন কি চায়? অন্য ভাষাকে করায়ত্ত করাতে দোষ কি? অবশ্যই নিজের ভাষাকে অপমান না করে। যারা অপমান করে, তাদের ওপর আমারও হেভি ইয়ে হয়। খুব লিখেছি, খিল্লি করেছি তাদের নিয়ে একসময়। কিন্তু এখন মনে হয় তাদের বলি,"ভালো হয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি" কারণ "শো অফ" একটা রোগ। ভাষা আরো অনেককিছুর মতোই সেটার শিকার।
তা বাদ দিয়ে অন্য ভাষাতে অনুরাগ দোষের কি। এই দেখুন না আজকাল বাংলা লেখাতে আধুনিক লেখকরা মাঝে মাঝেই ইংরিজি ব্যবহার করেন, তাদের লেখা পড়তে ভালো লাগলেও পড়া বর্জন করবেন? (ডিসক্লেইমার: এই লেখা যা আপনি এখন পড়ছেন, তার সব কিছুই কাল্পনিক আর কেউ কোন মিল পেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়) সাধু থেকে চলিত হয়েছিল একসময়, তা নিয়েও মহাভারত কম হয়নি। চলিত থেকে এখন ককটেলিত হয়ে গেলেও বিচলিত হবেননা। এটাই নিয়ম। Heraclitus বলেছেন change is the only constant যদি ইংরিজি না পড়তেন, সন্মান না করতেন, এই কোট টাও  জানা হতো না।

আজ সারাদিন শুদ্ধ বাংলা বলে যেতে হবে নাকি! সে তো আবার ওই "শো অফ" বা ওই সিনেমা হলে " বাবা আবার উঠে দাঁড়াতে হবে" টাইপ জাস্ট একটা দায়।
মাতৃ ভাষাটাকে দায় করে তুলবেন না।
আমি বলি কি, অন্য ভাষা কথাতে-লেখাতে পাঞ্চ হচ্ছে হোক। আপনি যেটা চান, সেটাই করুন। চয়েস আপনার। তবে মানুষকে-কুকুরকে-ভিখিরিকে-অন্ধকে যেমন অপমান করা ঠিক না, তেমনি ভাষাকেও না। নিজের ভাষাকে তো একেবারেই না।

মন দিয়ে বাংলাকে ভালোবাসছে দেখুন ওই লোকটা। রাশিয়ার পাতাল রেলে বসে অফিস ফেরত লোকটা জয় গোস্বামী পড়ছেন। 
জয় বাংলা।

জয় বাঙালি।

Friday, 16 February 2018

ট্যাটু

- দ্যাখা দ্যাখা ওটা কি ..... ওটা কি দ্যাখা
- উফফ মা ছাড়ো তো , আমি জাস্ট বাড়ি ঢুকলাম আর তুমি শুরু হয়ে গেলে।
- ঋক, দ্যাখ আমার দিকে। কেন হাত লুকোচ্ছিস! দ্যাখা হাতটা দ্যাখা।
- উফফ মা 
- একি এটা কি? এটা কি করেছিস?
- ও কিছু না। ট্যাটু। বাবাকে বলবে না কিন্তু। বলো বলবে না। প্রমিস করো।
- ট্যা?
- টু।
- মানে? ওই যেগুলো একদম সুঁচ বিঁধিয়ে  .....
- উফফ আরে এ সব কুল মা  ..... তুমি বুঝবে না  ..... আরে কি হলো? মারছো কেন? থামো থামো বলছি। উফফ মা কাম অন  ..... আরে আবার কাঁদছো কেন? আরে তুমি যে কি করো না।

********
- কে কে ওখানে? মা তুমি? কি হলো?
- লেগেছে বাবা তোর?
- আরে না না। তোমার ওই নরম হাতে লাগে নাকি। তোমারই হাতে লেগেছে দ্যাখো। আমার বাইসেপ্সে কি স্ট্রেন্থ জানো? হে হে।
- ধুস। আমি বলছি ওই যে হাতে সুঁচ ফোটালো  .... তাতে লাগেনি?
- ওহ একটু। মাইনর। তুমি আবার কাঁদছো নাকি! উফফ মা  .....
********
- এই যে এদিকে আসুন আসুন এদিকে।
- এই এরা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে গো? ঋক কোথায়? বলো না আমরা এখানে এসেছি কেন? ইসস কি গন্ধ।
- দেখুন। বডির অবস্থা খুব খারাপ। মুখ দেখে ভয় পাবেন না। বাসটা মুখের ওপরেই  ..... মানে যাই হোক দেখুন যদি শার্ট-প্যান্ট বা বডির অন্য কোনো আইডেন্টিফিকেশন দেখে বলতে পারেন, ঋক বসু ইনি কিনা  ..... ওকি ওকি হাতটা ধরে এরকম  ..... ট্যাটুটা কি আইডেন্টিফাই করতে পারছেন? ওকি এই ওনাকে ধরুন ধরুন  ..... উনি বোধহয় ফেইন্ট হয়ে যাচ্ছেন   ..... বলছি মিস্টার বসু, সরি মানে আমাদের ডিউটি, প্লিস বলুন আপনার ওয়াইফ কি কিছু আইডেন্টিফাই করতে পারলেন? ইনি কি ঋক বসু?


Thursday, 8 February 2018

পদ্মাবত এবং টিয়া

পদ্মাবত নিয়ে এ যাবত অনেক ঘোল-শরবত হলো। ওসব নিয়ে না চাইলেও চোখের সামনে, কানের পাশে, হাতের ডগায়, মাথার আগায় যা সব চলছে, তাতে খুব চিন্তিত। না, চিন্তা দেশ নিয়ে নয়, দীপিকার মাথা নিয়েও নয়, বনশালির কুশপুতুল নিয়ে তো নয়ই। চিন্তা ওই টিয়াটিকে নিয়ে।
এ? টিয়া কোথা থেকে এলো!
সিনেমাটি না দেখে থাকলে, নিদেনপক্ষে রানী পদ্মিনীর গল্পটা না পড়ে থাকলে, নিশ্চয় ভূরু কুঁচকে এটাই ভাবছেন।
তা কেসটা এরকম।
বেশি সুন্দরী মেয়ে মানেই মেয়ের বাবারা বাই ডিফল্ট অমরেশ পুরি। এ দেশে অবশ্য তা ছাড়া উপায়ই বা কি! যাক সে অন্য প্রসঙ্গ।
তা পদ্মিনীও সুন্দরী। (সে তো দিপিকা পাডুকোনকে নাম ভূমিকা নায়িকা হিসেবে দেখেই আন্দাজ করেছেন) তাই পদ্মিনীর বাবারও মেয়েকে সামলানোর প্রবল চাপ। কারোর সাথে কথা বলা বারণ পদ্মিনীর। এখানেই এন্ট্রি টিয়ার। হ্যা পাখি। যে সে পাখি নয়, কথা বলা পাখি। তা তার সাথেই জমে ওঠে পদ্মিনীর, সরল বন্ধুত্ব। টিয়াটির বেশ চকচকে নামও দেওয়া হয়, হীরামন। এই বন্ধুত্বর চাকচিক্য দেখে, মেয়ের বাবার আবার চাপ। বোধহয় এই জন্য যে পাখিটি ছেলে। ছেলে পাখির সাথেও কথা বলা যথেষ্ট রিস্কি মনে করাতে পাখি-হত্যার হুকুম জারি হলো। ব্যাস, টিয়া অমনি জান বাঁচিয়ে ভাগ মিলখা। এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে হাত বদল হয়ে সে এবার রতন সিংহের পোষ্য।
গল্প এতদূর শুনলে, বেচারা টিয়া আর পদ্মিনীর বিচ্ছেদের দুঃখে মনটা কিরকম কিরকম ভারী হয়ে আসে শ্রোতার। হওয়ারই কথা।
তা টিয়ার হঠাৎ খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, পদ্মিনীর রূপ নিয়ে গল্প করতে থাকে রতনের কাছে। ব্যাস রতনেরও, দিল মে লাড্ডু ফুটা। আরে বাবা, ছেলেদের হৃদয় হলো সেই ভালোবাসার তেঁতুল পাতা, সুজন-নজন আরও কতজনই আসুক না কেন, ঠিক ফিট হয়ে যায়। রতনেরও তাই। বাড়িতে অলরেডি বৌ বর্তমান, তবু লাড্ডু ফুটা তো ফুটা। এইসময় বলি টিয়ার আক্কেলটাই বা কি হ্যা? নিজে পাখি হয়ে ঝাড়ি মারলি, তার থেকে বেশি কিছু হবে না জেনে আরেকজনকে লেলিয়ে দিলি! পদ্মিনীর বাবার পাখিকেও সন্দেহ করা যে একেবারেই যুক্তিসঙ্গত, তা আর বলতে বাকি রাখে না।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, মেয়ের বাবারা যদি এ লেখা পড়ছেন, একদম নোট করে নিন। কাউকে বিশ্বাস করা নয়। বাড়িতে কাক-চিল-এমনকি ভোডাফোনের কুকুরও যেন বসতে না পারে।
যাই হোক, সে টিয়াটি এমন ইয়ে, যে সে রতন সিংকে পদ্মিনীর ঠিকানা জানায়, উড়ে গিয়ে পদ্মিনীকে দেখা করার ডেট-টাইম অ্যাডভান্স জানিয়ে দেয়, মানে জিপিএস-হোয়াটস্যাপ এর কম্বো, ওই একাই হীরামন টিয়াটি। এরপর তো মহাকান্ড। সাত সমুদ্র পার করে রতন পৌঁছয়, হেব্বি ঝামেলা ঝঞ্ঝাট সামলে রতন-পদ্মর বিয়ে হয়, তাতেই কি শেষ? সাথে জীবন-যুদ্ধ সামলানো, সতীনের সাথে হাল্কা কূটকচালি ম্যানেজ করা ওসবও হয়। কিন্তু ও নিয়ে আমার গল্প নয়। কারণ ওতে টিয়া নেই। শুরুতেই বলেছি চিন্তা আমার টিয়া নিয়ে।
সুফি কবি জয়সির লেখা অনুযায়ী, ওই টিয়াই নাকি কি এক কারণে রতন -এর থেকে বহিষ্কৃত হয় এবং আরও একবার খুজলি করে, এবার একেবারে স্বয়ং আলাউদ্দিন খিলজীকে। আর তারপর তো খেল খতম, আর পয়সাও হজম হয়না। এই পোরশনটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। মানে টিয়াটির চাপা-শয়তানি ঠিক কতদূর তা নিয়ে বিতর্ক আছে। আর এখানেই আমার চিন্তা।
প্রশ্ন হলো, চাপ তো এখনো আছে। টিয়াটি কোথায়? সে তো এখনো ফ্রি বার্ড। আরে বাবা, জানি জানি বলবেন এতো বছর হয়েছে, তো থোড়ি সে পাখি আছে নাকি। আরে বাবা, জন্মান্তর বলেও তো কথা আছে, তাই না? আর তাছাড়া তার যে বংশবৃদ্ধি হয়নি, তাই বা কে বলতে পারে। প্রেমে ভাংচি দেওয়া ইয়েরা ওই ওরই বংশধর যে নয়, তা কে বলতে পারে।
তাই আর কি, একটু চাপে। এরা আশেপাশেই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। দেখছেনই এই এতবছর পরেও রতন-পদ্ম-খিলজী যা চাপে, তাতে আপনাদের কে বাঁচাবে।
তাই সবাই সাধু সাবধান।