পদ্মাবত নিয়ে এ যাবত অনেক ঘোল-শরবত হলো। ওসব নিয়ে না চাইলেও চোখের সামনে, কানের পাশে, হাতের ডগায়, মাথার আগায় যা সব চলছে, তাতে খুব চিন্তিত। না, চিন্তা দেশ নিয়ে নয়, দীপিকার মাথা নিয়েও নয়, বনশালির কুশপুতুল নিয়ে তো নয়ই। চিন্তা ওই টিয়াটিকে নিয়ে।
এ? টিয়া কোথা থেকে এলো!
সিনেমাটি না দেখে থাকলে, নিদেনপক্ষে রানী পদ্মিনীর গল্পটা না পড়ে থাকলে, নিশ্চয় ভূরু কুঁচকে এটাই ভাবছেন।
তা কেসটা এরকম।
বেশি সুন্দরী মেয়ে মানেই মেয়ের বাবারা বাই ডিফল্ট অমরেশ পুরি। এ দেশে অবশ্য তা ছাড়া উপায়ই বা কি! যাক সে অন্য প্রসঙ্গ।
তা পদ্মিনীও সুন্দরী। (সে তো দিপিকা পাডুকোনকে নাম ভূমিকা নায়িকা হিসেবে দেখেই আন্দাজ করেছেন) তাই পদ্মিনীর বাবারও মেয়েকে সামলানোর প্রবল চাপ। কারোর সাথে কথা বলা বারণ পদ্মিনীর। এখানেই এন্ট্রি টিয়ার। হ্যা পাখি। যে সে পাখি নয়, কথা বলা পাখি। তা তার সাথেই জমে ওঠে পদ্মিনীর, সরল বন্ধুত্ব। টিয়াটির বেশ চকচকে নামও দেওয়া হয়, হীরামন। এই বন্ধুত্বর চাকচিক্য দেখে, মেয়ের বাবার আবার চাপ। বোধহয় এই জন্য যে পাখিটি ছেলে। ছেলে পাখির সাথেও কথা বলা যথেষ্ট রিস্কি মনে করাতে পাখি-হত্যার হুকুম জারি হলো। ব্যাস, টিয়া অমনি জান বাঁচিয়ে ভাগ মিলখা। এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে হাত বদল হয়ে সে এবার রতন সিংহের পোষ্য।
গল্প এতদূর শুনলে, বেচারা টিয়া আর পদ্মিনীর বিচ্ছেদের দুঃখে মনটা কিরকম কিরকম ভারী হয়ে আসে শ্রোতার। হওয়ারই কথা।
তা টিয়ার হঠাৎ খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, পদ্মিনীর রূপ নিয়ে গল্প করতে থাকে রতনের কাছে। ব্যাস রতনেরও, দিল মে লাড্ডু ফুটা। আরে বাবা, ছেলেদের হৃদয় হলো সেই ভালোবাসার তেঁতুল পাতা, সুজন-নজন আরও কতজনই আসুক না কেন, ঠিক ফিট হয়ে যায়। রতনেরও তাই। বাড়িতে অলরেডি বৌ বর্তমান, তবু লাড্ডু ফুটা তো ফুটা। এইসময় বলি টিয়ার আক্কেলটাই বা কি হ্যা? নিজে পাখি হয়ে ঝাড়ি মারলি, তার থেকে বেশি কিছু হবে না জেনে আরেকজনকে লেলিয়ে দিলি! পদ্মিনীর বাবার পাখিকেও সন্দেহ করা যে একেবারেই যুক্তিসঙ্গত, তা আর বলতে বাকি রাখে না।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, মেয়ের বাবারা যদি এ লেখা পড়ছেন, একদম নোট করে নিন। কাউকে বিশ্বাস করা নয়। বাড়িতে কাক-চিল-এমনকি ভোডাফোনের কুকুরও যেন বসতে না পারে।
যাই হোক, সে টিয়াটি এমন ইয়ে, যে সে রতন সিংকে পদ্মিনীর ঠিকানা জানায়, উড়ে গিয়ে পদ্মিনীকে দেখা করার ডেট-টাইম অ্যাডভান্স জানিয়ে দেয়, মানে জিপিএস-হোয়াটস্যাপ এর কম্বো, ওই একাই হীরামন টিয়াটি। এরপর তো মহাকান্ড। সাত সমুদ্র পার করে রতন পৌঁছয়, হেব্বি ঝামেলা ঝঞ্ঝাট সামলে রতন-পদ্মর বিয়ে হয়, তাতেই কি শেষ? সাথে জীবন-যুদ্ধ সামলানো, সতীনের সাথে হাল্কা কূটকচালি ম্যানেজ করা ওসবও হয়। কিন্তু ও নিয়ে আমার গল্প নয়। কারণ ওতে টিয়া নেই। শুরুতেই বলেছি চিন্তা আমার টিয়া নিয়ে।
সুফি কবি জয়সির লেখা অনুযায়ী, ওই টিয়াই নাকি কি এক কারণে রতন -এর থেকে বহিষ্কৃত হয় এবং আরও একবার খুজলি করে, এবার একেবারে স্বয়ং আলাউদ্দিন খিলজীকে। আর তারপর তো খেল খতম, আর পয়সাও হজম হয়না। এই পোরশনটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। মানে টিয়াটির চাপা-শয়তানি ঠিক কতদূর তা নিয়ে বিতর্ক আছে। আর এখানেই আমার চিন্তা।
প্রশ্ন হলো, চাপ তো এখনো আছে। টিয়াটি কোথায়? সে তো এখনো ফ্রি বার্ড। আরে বাবা, জানি জানি বলবেন এতো বছর হয়েছে, তো থোড়ি সে পাখি আছে নাকি। আরে বাবা, জন্মান্তর বলেও তো কথা আছে, তাই না? আর তাছাড়া তার যে বংশবৃদ্ধি হয়নি, তাই বা কে বলতে পারে। প্রেমে ভাংচি দেওয়া ইয়েরা ওই ওরই বংশধর যে নয়, তা কে বলতে পারে।
তাই আর কি, একটু চাপে। এরা আশেপাশেই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। দেখছেনই এই এতবছর পরেও রতন-পদ্ম-খিলজী যা চাপে, তাতে আপনাদের কে বাঁচাবে।
তাই সবাই সাধু সাবধান।
No comments:
Post a Comment