Tuesday, 20 March 2018

ভিক্টিম শেষে চড়াই

কিউট অথচ শো-অফ হীন।
পুচকে, নাদুসনুদুস, কঠিন-দৃঢ়-অভিমানী ঠোঁট। অথচ নো শো-অফ। দিব্বি আশেপাশে ঘুরে বেরায়। বদ্রি-লাভবার্ড -এর মতো দুর্লভ নয়। তা বলে কি এলেবেলে নাকি? আত্মসম্মানে বিদ্যাসাগর। কখনো খাঁচার মধ্যে দেখেছেন ওকে? হু হু বাবা।
কিন্তু এই কলকাতায় বেচারাদের মোটে কদর নেই। দাঁত থাকতে দাঁতের আর চড়াই থাকতে চড়াইয়ের মর্যাদা নেই।
ভাবুন যার চিকচিক আওয়াজে বিরক্ত হয়ে জানলা বন্ধ করছেন, একদিন তাকে আর দেখতেই পেলেন না।
এর প্রসেস অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। আমার মুম্বাইবাসী বন্ধু জানলায় একটা চড়াই দেখবে বলে আজ হাপিত্যেশ করে। মুম্বাইতে গাছ-টাছ কেটে মানুষ নিজেদের জায়গা করে নিতে ব্যস্ত। চড়াই কি আর পুলিশ কমপ্লেইন করতে পারে? মোবাইল টাওয়ার বসানো অনেক বেশি জরুরি। চড়াইকে তো আর ফোন করতে হয়না বর-বৌ-বাচ্চাকে। ওদের উড়ে যাওয়ার পাখা আছে। চুপিচুপি শুনে রাখুন, মুখ ভেংচে চোখ উল্টে পড়ে যাবেন না যেন। আমাদের দেশে বেশ কিছু লোক চড়াই-কারি বানিয়ে খান নিয়মিত। ওই আর কি, কামোত্তেজনা- ফামোত্তেজনা বাড়াতে। আমাদের দেশের একম-অদ্বিতীয়ম-লক্ষ্যম কামোত্তেজনা। ফ্রি ফান্ডে, "তোমাকে দেখাবো নায়াগ্রা তোমাকে শেখাবো ভায়াগ্রা" এর ভিক্টিম শেষে চড়াই।
এই চড়াই-উতরাই আর সহ্য করতে না পেরে কিছু বুদ্ধিমান চড়াই বিদেশে পালিয়েছে বা পাতি মরেছে, বেঁচে গেছে। যেকটা কিউট ভারতবর্ষে পরে আছে, তাদের পোড়া কপাল।
গ্রীকদেবী আফ্রোডিট-এর ভালোবাসার প্রতীক স্বয়ং তুই।
এ যে পোড়া ভারত, চড়াই, ভালোবাসার দাম এখানে নেই।
তবু যদি অধমের দু-চার কথা শোনেন, বলি যে,
১. একটু জানলার ধারে জল রাখুন, একটু পান করে বাঁচুক বেচারা
২. পারলে একটু দানাও দিন
৩. গাছ লাগাবেন এ আর নতুন কথা কি
একটু হোক না। ক্ষতি কি।

Thursday, 15 March 2018

স্কেলটা

"টিক টিক টিক টিক"
ব্যাস ওই আবার। এখন আবার কি? এই এখুনি তো লাঞ্চ খাইয়ে এলাম। ওহো এবার বোধহয় ওনার পটি টাইম। উফফ এটা একটা লাইফ? সারাদিন শুধু  "টিক টিক টিক টিক"। এই চা দাও, এই ব্রেকফাস্ট দাও, এই শাড়ি চেঞ্জ করাও। আর পটি করানো তো যুদ্ধ। সারাদিন খেয়ে খেয়ে আর বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোটা হচ্ছে আর শুধু "টিক টিক টিক টিক"। রোমা বলে, শাশুড়ীরা নাকি খুব ভয়ঙ্কর হয়। তারা নাকি ঝগড়া করে, তারা নাকি বৌয়ের নিন্দে করে প্রতিবেশীর কাছে! আমার প্যারালাইস্ড শাশুড়ী, তাই আমি নাকি ভালোই আছি। প্রতিবেশীর কাছে আমার নাম নিন্দে করতে পারেনা। কথা বলতে পারেনা তাই ঝগড়াও নেই। তা আমি বলি, ওসব হলেই বরং বেঁচে যেতাম। কানের কাছে সারাদিন প্রতি ঘন্টাতে "টিক টিক টিক টিক" তো আর শুনতে হতো না। কোনো শখ-আহ্লাদ-ঘুরতে যাওয়া-সিনেমা যাওয়া তো নেই জীবনে। রোমার সাথেও যে দশমিনিট কথা বলবো তার জো নেই। শুরু হবে "টিক টিক টিক টিক"। সেদিন তো "জননীর কোলে" সিরিয়ালের ঠিক ক্লাইমেক্সের টাইমেই "টিক টিক টিক টিক"। ও বলে, পঁচাশি বছরের ওর মা, তাকে নাকি আর আয়ার ভরসাতে রাখা যায় না, বয়স্কদের ওপর নাকি খালি হামলার খবর পেপারে। তাও তো খুব জোড় করে একজন আয়া রাখা হলো। ওই পনেরদিন মতো টিকেছিল। সারাদিন "টিক টিক টিক টিক" এর জ্বালায় আর রোজ মাঝরাতে আঠারোবার উঠতে গিয়ে সে আয়ার নিজেরই নাকি এখন বাড়িতে আয়ার সেবার দরকার হয়ে পড়েছে।
সারাদিন সমস্ত বাড়ির খেয়াল রেখে তারপর রাতে ওই "টিক টিক টিক টিক" আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। এখন আর কিছু না শুধু একটু ভালো করে ঘুমোতে চাই। কতদিন যে ভালো করে ঘুম টুকু হয়নি!

ওই আবার। "টিক টিক টিক টিক"।
"দাঁড়াও দাঁড়াও, আমাকে বাথরুম থেকে তো বেরুতে দাও উফফফফ"
মাঝে মাঝে মনে হয় ওই যে স্কেলটা দিয়ে খাটের ধারে "টিক টিক টিক টিক" করে, সেটা দিয়েই মাথাতে ..... 

============================================================================

- কি হলো, উঠে পড়লে কেন?
- না ওই যে মা বোধহয়  ....
- মা? পর্ণা তুমি আমার মা কে এতো ভালোবাসতে? উনি চলে যাওয়ার পরেও  .....
- ও হ্যা। রোজ রাতে কি যে হয়। কিন্তু আজ যেন  ..... যাক ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও  ..... এই ওটা কিসের আওয়াজ। শোনো, শুনতে পাচ্ছো। শোনো
- কোথায় পর্ণা কিচ্ছু তো নয়। তোমার মনের ভুল। শুয়ে পড়ো।
- উফফফফ ভালো করে শোনো। শোনো না। আরে এইটা স্কেলের তোবড়ানো দিকটার আওয়াজ। আমি জানবো না? এই ছ'বছর ধরে শুনছি  .....
- পর্ণা  .....