Wednesday, 31 October 2018

আসলেতে পাখি সে

টেবিল ১:
শোন্ শোন্ কন্সেন্ট্রেট করতে শেখ। সামনের কালীপুজোতে তুবড়ি প্রতিযোগিতা। নোটবুকটা বার কর দেখি। তুবড়ির মশলার মাপটা ঝালিয়ে নেওয়া যাক। চল চম্পাহাটি। চারটে কাটলেট বলে দে।

টেবিল ২:
অনিককে ফোন করে "হ্যাঁ" বলেই দাও রুমাদিদি। কবিরাজি অর্ডার করবে তো আজ। স্পেশাল ডে বলে কথা।

টেবিল ৩:
আর শোনো, কাল কিন্তু ইলেকট্রিসিটি বিলটা জমা করতে হবে। শুনছো তুমি? আরে আবার কফি অর্ডার করলে যে। উঠবে কখন?

টেবিল ৪:
একটা ব্রীজ রিপেয়ার করতে কতদিন লাগে বলুনতো বরুণবাবু? আমরা নাকি এখন দ্রুতগতির যুগে? ধুর ধুর, এখন কফিটা পেলে হয় সময়মতো।

টেবিল ৫:
পাগলা দাশু জানিস না? পড়িস নি? আচ্ছা মটন মামলেট ..... মানে ওই ওমলেট, খা। খেতে খেতে বলছি।

টেবিল ৬:
বাবার শরীরটা বিগড়েছে। এখানে এসেছি শুনেছে যখন, কাটলেট প্যাক করিয়ে নিয়ে যেতে হবেই গো।

টেবিল ৭:
শোনো তোমার এই রোজকার অভিযোগ শুনে আমি এবার ফেডাপ। আমি কি এতোই খারাপ? এবার দেখবে একদিন সম্পর্কটা এতোই তেতো হবে যে দুজনেই ভ্যানিশ হয়ে যাবো। কোল্ড কফি বলবো?

টেবিল ৮:
পলাশপ্রিয়াকে ভুলতে পারছিস না? একেবারেই না? আজকাল কোয়ালিটিতে বেড়ে গোলমাল দেখছি। নাহলে ০৪ মাসের প্রেম ভুলতে চার কাপই তো যথেষ্ট। যাক তুই দশম কাপটা ট্রাই করেই দেখ তো। কাজ হবেই। হতেই হবে। এই বাড়ির কফির ওপর ভরসাটা এতো সহজে ডাইলিউট হতে দেওয়া যায় না।

টেবিল ৯:
আজ পুরো আঠারো বছর পর তোমার সঙ্গে দেখা। কেমন আছো তুমি? ফিশ ফ্রাই এখনো তেমনি ভালোবাসো? নাকি চেহারার সাথে সাথে স্বাদও বদলেছে?

======

ধুস আড্ডা নয়, কোনো এক অদৃশ্য লেখকের ইচ্ছে হচ্ছে আর টেবিলে টেবিলে তৈরী হচ্ছে ইমোশন, কফি হাউসের স্টিমুলেশনে তাতে টপাস টপাস ফোঁটা ফোঁটা টুইস্ট।

ট্যাঁশ গরু গরু নয়, আসলেতে পাখি সে; যার খুশি দেখে এস "কফি হাউসে"।



Saturday, 27 October 2018

নাড়ু

লক্ষ্মীপুজো এলেই আবীর কোমরবেঁধে পুজোর জোগাড়ে লেগে যায়। মা-বাবা-বৌ খুশিই হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের মধ্যে হালকা আধ্যাত্মিক পাঞ্চ থাকলে বাড়ির লোকজন ভরসা পায়। আবীর পুজোর বাজার করে, ঘরের ঝুল ঝাড়ে, লক্ষ্মীঠাকুর ফুল দিয়ে সাজায়, ঘরের ডেকোরেশন করে, মা-বৌ লক্ষ্মীর পা আঁকলে কোমরে হাত দিয়ে রিভিউ করে, আল্পনার ডিসাইন গুগল খুঁজে জোগাড় করে। দেখেশুনে আত্মীয়স্বজন "কি ভালো কি ভালো" বলে। বন্ধুরা হাসে, বলে, কি মেয়েদের মতো  ....... । মা গর্বভরে ছেলের মাথায় হাত বোলান। বাবা কিন্তু প্রত্যেকবারের মতোই বিরক্ত।
- আবু, তুই এবার নাড়ু এনেছিস না আবার ভুলেছিস? আবু? আবীর? শুনতে পেলি?
- বাবা, পরের বছর পাক্কা।
- আবু, প্রত্যেকবার তোর এই এক কথা  ......

মা ছেলের মাথায় হাত বোলান। ছেলের সাথে নাড়ুর কি যে এতো রাগ! ভুলে যাওয়ার ছেলে যে আবু নয়, তা মা জানেন। বৌ রিয়া জানে আজ আবীর ছাতে কাটাবে অনেকরাত অবধি। কারণ জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যায়। জোর করবে এ স্বভাব রিয়ার নেই।

- তুই আবার কাঁদছিস
- কোথায় কাঁদছি?
- আমার সাথে নাটক করিস না। তোর মা-বাবা যে কি, এতোবছরেও তোকে সামলাতে পারলো না।
- সামলানোর কি আছে ? আমি কি বাচ্চা নাকি?
- আচ্ছা, তাহলে এবারেও দোকানে নাড়ু এদিক-ওদিক নাড়িয়ে কিনলি না কেন?
- উফফ, তুমি আবার  ......
- কি আবার? বল বল। চুপ করলি কেন বল।
- ও দোকানদার বাজে কোয়ালিটির নাড়ু গছাচ্ছিল, তাই  ......
- আচ্ছা, অন্য সব দোকানেই বাজে নাড়ু? আবুদাদুভাই, নাড়ুর গন্ধে তুমি আমাকে খোঁজো, তা কি আমার বুঝতে বাকি আছে। তাই না? দাদুভাই? আরে আরে ওই দেখো ছেলের চোখ অমনি ছল্ছলিয়ে  ..... কি মুশকিল .......
- ঠাম্মা, প্যাকেটের নাড়ুতে তোমার শাড়ির গন্ধ খুঁজি, নেই যে ......  এই ছায়াতে বসে তোমার ঘিয়ে মাখা তেলতেলে হাত আমার কপালে চাই সেই আগের মতো, আর পাই না ..... তোমার নরম কোলে মাথা রেখে লালকমলের গল্প শুনতে চাই, শুনি না তো আজকাল   ......  ব্যাঙ্গমাদের কথা শুনে আমার হাসি পেলে, চোখ বড়ো করে বিশ্বাস করাও না তো আজকাল  ...... পাঁচালি পড়ার সুরটা তোমার মতো কারোর নয়, কেনো বলো?   ......  ঠাম্মা, কেন ছায়া হয়ে আছো ঠাম্মা? ঠাম্মা  তুমি ফিরে এসো .......