Friday, 30 November 2018

অশ্বিনীকুমার

রসিকবাবুর পেট ব্যাথা।
কখনো পেটের ডানদিকে, কখনো পেটের বাঁদিকে, আর কখনো একবারে সেন্টার অফ মাস।
সকাল থেকেই থেকে থেকে পেটে হাত দিয়ে,"ওরে ওরে ওরে" করে উঠছেন।
গিন্নী স্পাইডারম্যানের মতো হাত বাড়িয়ে এন্টাসিড সাপ্লাই দিচ্ছেন। বিকেলে "ওরে ওরে ওরে" র ভলিউম সঙ্কটজনক লেভেলে যেতেই পাড়ার ডাক্তারঠাকুরপোকে তলব দেওয়া হলো।

ডাক্তারঠাকুরপো - বুঝলে বৌদি, উল্টোপাল্টা খাওয়ার এতো বাজে স্বভাব রসিকদার। এইটে কন্ট্রোলে না আনলে তো সমস্যা হবেই। লোভ সামলানো কঠিন সাধন, সবাই কি পারে? নিশ্চয় গতকাল কিছু উল্টোপাল্টা খেয়েছিলো, ঠিক বলেছি বৌদি?

রসিকগিন্নী - না মানে  .....

ডাক্তারঠাকুরপো - ব্যাস ব্যাস আর বলতে হবে না। আপনার চোখের সামনে কি আর খেয়েছে। নিশ্চয় বাইরেই গপাগপ সাটিয়েছে। উফ বৌদি সিঙ্গারাটা কি ভালো বানিয়েছো গো। আর দুটো হবে?

রসিকগিন্নী - হ্যা নিশ্চয়, এইতো নাও। বলছি যে, সমস্যাটা কি বলতো? এরকমতো আগে কখনো দেখিনি। ইদানিং তো ডায়েট করছেন, স্যুপ আর ভেজিটেবল ব্যাস  .....

ডাক্তারঠাকুরপো - সেকি রসিকদা আর ডায়েট ! ধুস তুমি কি আর খেয়াল রাখছো আপিসে কি করছে? জানো না, মোড়েই বসন্ত কেবিন, এগোলেই পুঁটিরাম তারপর কত কি।

রসিকগিন্নী - এই ওকি, তুমি আঙ্গুল মটকাচ্চো কেন? তোমার আবার গালাগাল করার ইচ্ছে হলো নাকি? এরকম হলেই তো তুমি এরকম আঙ্গুল মটকাও। তোমার কি শরীরে খুব কষ্ট হচ্ছে? মাথা গরম করছো কেন? মানে ঠাকুরপোকে বলো না মাথা ঠান্ডা করে। উঠে বসবে? ও হ্যা বলছে মনে হয়। ও ঠাকুরপো একটু তুলে ধরো তো। কি বলছে বুঝতে পারছি না।

ধরাধরি করে রসিকবাবুকে তুলে ধরতেই রসিকবাবু কেটে কেটে সাড়ে চারটে গালাগাল দিলেন বজ্রনিনাদে। পঞ্চমটার বেলা গলাটা শক্তি হারিয়ে মিনমিন করে ফেলেছে। তাতে আরও রেগে বলতে শুরু করলেন, বেরো বাড়ি থেকে, আমার বাড়িতে এসে সিঙ্গারা গিলছে শুধু না, আমার পেট টিপে টিপে নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে দেওয়ার জোগাড় করলো, তার ওপরে আমার নামে আবার উল্টোপাল্টা বকা!! বেরো বাড়ি থেকে এখুনি বেরো বাড়ি থেকে।

ডাক্তারঠাকুরপো - ঠিক আছে ঠিক আছে , ইয়ে এ এ এ এ এই যে রইলো ইয়ে তোমার সিঙ্গারা। খেলাম না পাঁচ নম্বরটা। এভাবে অপমান।

এই বলে পঞ্চম সিঙ্গারাটা ফুল ফোর্সে প্লেটে রাখতে যান ঠাকুরপো। সিঙ্গারাও অমনি ভার্টিকাল এক্সিসে স্পিন করে স্ট্রেইট রসিকবাবুর মুখে।
এহে এহে করে রসিকগিন্নী মুখ থেকে সিঙ্গারা বার করতেই দেখেন রসিকবাবুর মুখে হাসি।

রসিকগিন্নী - এএ ই কি হলো, লাগলো নাকি? হাসছো কেন? পাগল হলে নাকি?

রসিকবাবু- আরে দাঁড়াও দাঁড়াও, সিঙ্গারাটা মুখে ঠেসে ধরতো আবার।

রসিকগিন্নী - এ মানে?

রসিকবাবু- আরে ধরই না। আ আঃ আহা (গপ করে সিঙ্গারা গিলে) কি শান্তি কি শান্তি। আহা আহা কি শান্তি।

রসিকগিন্নী আর ঠাকুরপো চোখ বড়ো করে তাকিয়ে।

রসিকবাবু প্লেটে পরে থাকা ষষ্ঠ সিঙ্গারাটা মুখে তুলে নিয়ে বলতে লাগলেন, অবিচার করেছি এতদিন গিন্নী অবিচার। ডাক্তার আমাকে ক্ষমা করো। তুমি আজ আমাকে মহাপাপ করা থেকে বাঁচালে। সিঙ্গারার ওই টুপটুপে তেল আজ সাতদিন পর জিভে পড়তেই শরীরে কি শান্তি, কি স্বস্তি, কি আরাম। যেন জীবনের আসল মানে খুঁজে পাওয়া। এক বোধোদয়। জানলাম শরীরের প্রতি কি অন্যায় অবিচারটাই না করেছি। জিভ থেকে পেট সবাই অভিমান করছে। বুঝিনি। নেহাতই উপায় ছিল না তাই বিদ্রোহ করেছে। ডায়েট করেছি, স্যুপ খেয়েছি, সিদ্ধ সব্জি চিবিয়েছি। একের পর এক অন্যায়। কি পাপ কি পাপ। নাহ ডাক্তার আর নয়। গিন্নী তুমি অশ্বিনীকুমার হয়ে  ..... ইয়ে আরও কিছু সিঙ্গারা সাপ্লাই দিতে পারো? আভি ইসি ওয়াক্ত ? প্লিস?

Monday, 5 November 2018

রঙ্গমঞ্চ

কালীপুজোর পাড়া-ভোজন।
প্রথমদিন আমিষ। দ্বিতীয়দিন নিরামিষ।
অবাধ খাবার আয়োজন, তার ওপর আমিষ। পাড়ার রিকশারাজু থেকে ডাক্তার হাজরা, মণ্ডপে সবার হাজিরা।
বাঙালি কে কোন শ্লা অসময়নিষ্ঠ বলে?
বেলা বারোটায় রান্না রেডি, খাবার লোক নেই। ঠিক একটা বাজতেই, জনজোয়ার। সব বাঙালির একসাথে খিদে পায়। ফ্রি -এর খাবার পেতে এবার লাগা লাইন। খিদে এবার পেট থেকে মাথাতে। পুজোর দিনে, মণ্ডপে গালাগাল দিলে, দেবীর কোপে পড়ার ভয়। ঢোক গেলা ছাড়া নো উপায়। ইতিমধ্যে পেট ভরপেট করে দাঁত খুঁচতে খুঁচতে বেরিয়ে আসা লোকজন-এর "জিতে গেছি কাকা" টাইপ বাঁকা চাহনি। গোদের ওপর বিষফোঁড়া। এ যেন যুদ্ধ। লাইনে দাঁড়িয়ে মাথার ঘাম পায়ে পড়ে পড়ে মিনি-পুকুর। লাইন এগোয় অনুপমের কাছিমের মতো। "গুটি গুটি পায়ে আর এগোতে পারে না"। শেষে পুকুর উপচে পড়ার আগেই এক ঠেলাতে একেবারে ফ্রাইড রাইস এর কাউন্টারে। তারপরে স্বপ্নের মতো ফিফটিন মিনিটস। ততক্ষনে পেট দয়াভিক্ষা করে ক্লান্ত। তুবড়ির মতো একটা জম্পেশ ঢেঁকুর দিতেই এ হে হে ...... ফিফটি পার্সেন্ট মাল হড়হড়িয়ে বাইরে। আসলে গলার নিচে ডাউনস্ট্রিম ফ্লো করবে, সে সময়টা পায়নি বেচারা। ঢেঁকুরটা চিরকালই অবাধ্য। আইটেমগুলোকে পেটে স্টে ই যদি না করানো গেলো, তাহলে তো যুদ্ধ-এ ফেল। যাক কেউ দেখেনি। মুখ-টুক ধুয়ে বেরিয়ে পড়লেই বাঁচোয়া। আরে ওদিকে কি? ভিড় কেন? পান-সুপারি টা মিস হলো নাকি? আরে এ হে হে, এতো আরেকজন বমি টমি করে ......
তাহলে এখন বাঙালির টাইম টু এক্ট এস এ শুভানুধ্যায়ী
"আরে কেন এতো খাস? ফ্রি এর মাল দেখলেই হামলে পড়বি? একটু বুঝে খাবি তো নাকি ..... মণ্ডপের এখানে এ হে হে কি ময়লা" ....... এবার কব্জি গুটিয়ে বেরিয়ে পড়া যাক মানে মানে। হে হে সবই "এ মায়া প্রপঞ্চময় ভব রঙ্গমঞ্চ মাঝে"।