Thursday, 5 December 2019

তার আগে আসুক কম্পাস

পুজোর সময় থেকেই চারিদিকে পোস্টার "উত্তর আসবেই"। ছোটমামা গম্ভীর মুখে বলেছিলো,"তা আসুক কিন্তু তার আগে প্রশ্ন আসুক, আর তার আগে আসুক মালপোয়া"। বলেই একটা মালপোয়া এক সেকেন্ডে গপাৎ।
তা প্রশ্ন আসেনি তবে পোস্টার বদলে নতুন পোস্টার এলো,"পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ, উত্তর আসবেই"। ছোটমামা গম্ভীর মুখে বলেছিলো,"তা আসুক, তবে তার আগে আসুক কম্পাস"।
রাজর্ষি দে র নতুন ছবি পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ, উত্তর আসবেই । চলন্ত একটা ট্রেনে যাত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় ও কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। হঠাৎ অর্পিতাকে কোনও একটা গল্প শোনার জন্য জোরাজুরি কমলেশ্বরবাবুর। আমার বিশ্বাস ফাঁকা কামরা থাকলেও উনি গল্প বলতেন নিশ্চিত। প্রতিবেশী বয়স্কা যাত্রীটি ডায়ালগ ডেলিভারির দায়িত্ব সুন্দর পালন করেছেন। টানা বলে গেছেন। সামনের কারোর কথা শোনার বা বোঝাবার অবকাশ দেননি। এবং বক্তব্য শেষ করেই ধা হয়েছেন। ঠিক আমার এক দিদার মতো। তিনি অবশ্য কানে শোনেন না। যাই হোক, কমলেশ্বরবাবু গল্প শুরু করেন। তিনটি গল্প বলেন। গল্পের মাঝে মাঝে অর্পিতাও থেকে থেকে নিজের জীবনের কথা বলতে থাকেন, তা সে গল্পের সাথে যোগাযোগ থাকুক বা না থাকুক। কমলেশ্বরবাবুর তিনটি গল্পের প্রতিটিতেই ভীষণ রকম তাড়াহুড়ো। প্রথম গল্পটি শেষ হয়ে গেলো বোঝা গেলো যখন দ্বিতীয় গল্প শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় গল্পটিতে এক ভদ্রমহিলা পুরো গল্পটা জুড়েই ছিলেন। "মেয়ে বাড়ি এসেছে" থেকে "মেয়ে পালিয়ে গেছে" বরাবর তার এক অভিব্যক্তি। এ ধরণের চারিত্রিক গুণধারী মানুষের বাস্তবজীবনে আশেপাশে থাকা অত্যন্ত জরুরি। "জীবন মানেই মায়া" গোছের ভাব আসে, দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করে সে সাধ্য কার। এ ছাড়াও দ্বিতীয় গল্পটিতে আবার সেই তাড়াহুড়ো। দুষ্টের দুষ্টামি যত না রসিয়ে কষিয়ে দেখানো হলো, দুষ্টের দমন হলো পাঁচ সেকেন্ডে। কাট টু তৃতীয় গল্প। তৃতীয় গল্পটি আগে থেকে না পড়া থাকলে "বোধহয় অমুক, বোধহয় তমুক" টাইপ অনুমানের ওপর ভরসা করতে হবে। আর বাকি সব ভুতুড়ে বাংলা সিনেমার মতো এতেও ভূত অদ্ভুত হাঁটে, অদ্ভুত কথা বলে, অথচ আশেপাশের লোক তাদের সাধারণ মানুষ হিসেবেই ঠাওর করে। কি বোকা! এত্ত গপ্পো হলো  তাতে লাভের লাভ এই যে কমলেশ্বরবাবু গল্প বলার জাদুতে অর্পিতা যথেষ্ট ইমপ্রেসড হন এবং ডিরেক্টর সুযোগের অপব্যবহার না করে তাদের প্রেমের সম্পর্ক-এ  আবদ্ধ করেন। পাবলিক শুরুর দিকে ঘেটে ঘ হলেও শেষে মাখোমাখো প্রেম দেখে চিপসের প্যাকেট সিটের তলায় গুঁজে বেরিয়ে পড়েন।
গল্প এক্সেকিউশন ঝুলে গেলে যে জিনিসটা সারভাইভাল ফ্যাক্টর হিসেবে বেঁচে থাকে তা হলো, কিছু বাঘা অভিনয়। পরানবাবু, রুদ্রপ্রসাদ বাবু, রাজেশ শর্মা, বিদীপ্তা, পদ্মনাভ সাথে গৌরব আর দামিনী বেণী বসু(আসল নাম জানি না) দুঘন্টা জমিয়ে দিয়েছেন।
শেষে, কিসের উত্তর খুঁজতে ঢুকলাম বা কিসের উত্তর পেলাম সেটাই প্রশ্ন হয়ে রইলো। ছোটমামা গম্ভীর মুখে বলেছিলো,"প্রশ্ন আসবেই"।

P.S.ব্যাগে যা নিয়ে এলাম, আগমবাগীশকে আরো বেশি করে জানার আগ্রহ।



Saturday, 7 September 2019

হ্যান্ডওভার

- হ্যালো
- হ্যা হ্যাল্লো হ্যাল্লো মিস্টার দাশ, তন্ময় বলছি।
- হ্যা হ্যা বলুন। কেমন আছেন? অফিসের সব কেমন লাগছে? নতুন কেবিন? সব ঠিক তো?
- একটা গোলমাল বুঝলেন
- কিরকম গোলমাল? হ্যান্ডওভারের সব কাগজপত্র বুঝিয়ে দিলাম যে।
- লেবু চা টা কোথা থেকে আসে বলুন তো?
- মানে?
- মানে রোজ বিকেলে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। ক্যান্টিন থেকে কেউ পাঠায় না বললো।
- ওহ! লেবু চা? হা হা, আসলে আমি তো রোজ ওই সময়ে খেতাম, তাই বোধহয় অভ্যেস বশে রাস্তার পাশের চা ওয়ালাটা দিয়ে গিয়েছে।
- গত ৩ সপ্তাহের প্রতিটি দিন উইথাউট মিস। আমি চাওয়ালা কে জিজ্ঞেস করলাম। ওরা না বললো। কে দিয়ে যায় দেখতে পাইনা। শুধু দেখি বিকেলে ওই সময়ে চা টা টেবিলে।
- স্ট্রেঞ্জ। আমি তো কিছু  ....
- আর ওয়ালক্লক টা দশ মিনিট ফাস্ট। ম্যানেজার বাবু বললেন, আপনি নাকি করে রাখতেন ওরকম।
- হ্যাঁ তা বটে।
- আমি কারেক্ট টাইম করালাম, কিন্তু পরেরদিন যেই কে সেই।
- বটে, নতুন ঘড়ি ট্রাই করে দেখ  .....
- দেখেছি। যে কে সেই।
- সেকি।
- শুধু তাই নয়, ভাঙা সবুজ পেপারওয়েটটা কিছুতেই টেবিলের ওপর থেকে নড়ছে না। পাঁচটা নাগাদ জানলার শেডটা আপনাআপনি নেমে আসছে। সবই ঠিক আপনার অভ্যেস মতো তাই না?
- হ্যাঁ কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা, আমি তো এখন আর ওই কেবিনে নেই। যাই নি গত ৩ সপ্তাহ।
- কিন্তু গত তিরিশ বছর আপনি ছিলেন, এই কেবিনে। এই অভ্যেসগুলোর সাথেই। ওদের নিয়েই। আপনি ওদের ছেড়ে গিয়েছেন। ওরা ছাড়তে পারেনি।
- হ্যান্ডওভার  .....
- কি শুধুই কাগজের আর দায়িত্বের? অভ্যেসের হ্যান্ডওভার হয়নি মিস্টার দাশ।

Wednesday, 31 July 2019

গটরি অমাবস্যা

বাঙালিরা ডিম, ডিমের কুসুম, মটনের চর্বি থালার কোণায় রেখে দেয়। হিমালয় ঢেকে দেওয়া ভাত, কোপাই নদীর মতো তরকারিতে না কুলোলে, তবু কুতিয়ে কাতিয়েই শেষ করা যায়, কিন্তু ওই স্বর্গীয় বস্তুসমস্ত শেষপাতেই, জমিয়ে এবং অবশ্যই রসিয়ে। ভাগ্গ্যিস আজকাল বিয়ে বাড়িতে বুফে সিস্টেম। নাহলে আইসক্রিমের পর চর্বিওয়ালা ওয়ান পিস্ চাইতে ক্যাটারারদের সামনে হাত পাতা ইস লিটল ইয়ে ইয়ে। মোদ্দাকথা বাঙালি ভালোবাসার জিনিসটি যত্নে সামলায় শেষ পাতে।
তেমনি কালী পুজোর নির্জলা উপবাস। দুদিন আগে থেকেই বাড়িতে নিরামিষ। দিনের দিন তো চোখে মুখেই নিরামিষ ভাব ফুটে ওঠে। লোকজন দেখলেই বোঝে কিছু মর্মান্তিক ঘটেছে। নিরামিষকে আপন করতে পারার থেকে কঠিন আমিষকে দূর করা। আর যেই কালী পুজো শেষ, সকালে উঠেই বাঙালির প্রথম শব্দ, মটন। কালী পুজোর সাথে পাঠাবলির পিছনে কোনো প্রবল খাদ্যরসিক ব্রাহ্মণের যোগাযোগ না থাকলেই নয়।

মারাঠিরা অর্থাৎ মহারাষ্ট্রিয়ানরা উল্টো। শ্রাবণ মাস এ তাঁরা একবেলা খায়, নিঃসন্দেহে নিরামিষ। মদ্যপান? ছিঃ। তাঁরা মনে করে, এই সময় চারিদিকে রোগের সম্ভাবনা বেশি, তাই ভোগের লোভ আয়ত্তে রাখাই যথাযথ। তাই শ্রাবণ শুরুর আগের দিনই তাঁরা গাঁতিয়ে খায়, একে গাতারি বলে। গাতারি অমাবস্যা মানে শ্রাবণের আগের অমাবস্যার দিন। লোকমুখে প্রচারিত ঐদিন লোকজন মদ খেতে খেতে টলে পড়ে নালাতে, তাই এর নাম গটরি অমাবস্যা। চিকেন আর মদ ঐদিন অপরিহার্য। অন্যরকম ভ্যারাইটি স্বাদমতো, জিভমতো, মনমতো, পকেটমতো।



আগামী ০২ অগাস্ট সেই গাঁতিয়ে খাবার দিন। অদ্ভুতভাবে সেদিন আবার শুক্কুরবার। মহারাষ্ট্রে থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলেও সেক্যুলার কসমোপলিটন বাঙালি হিসেবে দিনটি উদযাপন করা কর্তব্য। কি বলুন?

Tuesday, 9 April 2019

ভবিষ্যতের ভূত

যে ভূতেরা দুষটু লোকেদের বধ করে, তাঁরাই ভবিষ্যতের ভূত। (ভবিষ্যতের কেন, বর্তমানের নয় কেন তা এখনো জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।)
কেন খামোকা এমন সমাজ সচেতনতা? সব ভূতেরা তো এতো সমাজ সচেতন হয়না। আদতে এঁদের ভূত হওয়ার পিছনে সেই সব দুষ্টু লোকেদের হাত ছিল। তাই রিভেঞ্জ।
গল্পের থিম এইটুকুই।
(এই গল্পটি দর্শকদের দেখানো হবে কি না তা নিয়ে একটি নাটক বাস্তবেই হয়ে যাওয়াতে) ভেবে নিতে অসুবিধা হয়না স্বাভাবিকভাবেই এখানে দুষটু লোক অর্থাৎ বর্তমান রাজনীতিবিদরা এবং ভূত অর্থাৎ সাধারণ মানুষ বা ভূতপূর্ব রাজনীতিবিদরা।
ইটস এ বর্তমান vs অল আদার্স-এর গপ্পো।

খুবই সরল-সুন্দর শিক্ষামূলক গল্প, শুরুতে অবশ্য যা ধরতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল। গল্প -এ বেশ কিছু (অগুনতি) সাবগল্প ছিল। একটি অন্যটিতে এলোপাথাড়ি দৌড়োয় অবলীলায় দর্শকদের বেগ-আবেগের তোয়াক্কা না করেই। দর্শকরা পথভোলা-অবোলা-দিশাহারা।
সাবগল্পে কি নেই! রিয়ালিটি শোয়ের ছেলেখেলা, মোবাইল গেম-এর নাশকতা, সাংবাদিকতার ত্রুটি, ফিল্মজগতের জাল, নারীজীবনের দর্দ, বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ, যাত্রা কেন হাওয়া, হারমোনিয়ামে রবীন্দ্রসংগীত-এর ক্লান্তি আরও কত কি।
প্রতিটি সাবগল্প নিয়ে শ্রীজিৎদা চাইলে আগামী দশবছরে আঠাশটা সিনেমা নামাতে পারেন এক তুড়িতে। 
তবে যতই সাবগল্প থাক না কেন, প্রতিটিতেই উদ্দেশ্য ছিল কমন। তা হলো বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে একেবারে কোনঠাসা করে জীবাশ্ম বানিয়ে দেওয়া। তাতে একেবারে ম্যাজিকের মতো কাজ দিয়েছে। পথভোলা পাবলিক এতে দিশা পেয়েছেন, বলা যায় "খেয়েছেন"। জমিয়ে এনজয় করেছেন।
এইটে দিয়ে মোটামুটি দু ঘন্টা আর বাকি পনেরো মিনিট বর্তমানকে সান্তনা দিতে ভূতপূর্ব রাজনীতিবিদের নিয়ে উদাহরণ, সংহরণ, প্রহারণ, হৃদয়হরণ ইত্যাদি হয়েছে।
পুরো গল্পে প্রচুর ঐতিহাসিক এবং বর্তমান চরিত্রের স্পষ্ট, সিউডো স্পষ্ট এবং কখনো অস্পষ্ট ছোঁয়া।
গোটা কাস্ট এন্ড ক্রুএর কে প্রধান আর কে গেস্ট তা বোঝা মুশকিল।

সবটা শুনে গল্পটা ট্র্যাক করা যতটা বিভ্রান্তিকর মনে হচ্ছে, দেখতে গিয়েও তার থেকে বেশি মনে হবে।
কিন্তু আগেই বলেছি কোণঠাসার ম্যাজিকটা দর্শকদের সিট্ ছেড়ে উঠতে দেয়নি। তা সম্ভব হয়েছে সব্যসাচী, পরান, কাঞ্চন, সুমন্ত, কৌশিক, খরাজ এদের অসাধারণ টাইমিং, অনিক এবং উৎসব এর ডায়লগ -এর জন্য। এঁরা না হাসিয়ে, গোটা গল্পটাকে না ভালোবাসিয়ে ছাড়েনি।


Thursday, 21 March 2019

ভাড়াটে চাই

চন্দ্রনাথ চন্দ্র বাবু বললেন ওনার বাড়ির একটা ছবি তুলে দিতে। ভাড়াটে চাই। ওদিকে দালালের উৎপাত খুব। মোটা কমিশন চায়। তাই অনলাইন এ এড দেবেন। নেইল আর্মস্ট্রং এর পরিবার এরও কেউ ওনার জমির ভাগ দাবী টাবী করবে বলে মনে হচ্ছে না।
ওখানের লোকজন যে ভাড়া চাইছে না তা নয়, তবে সব নেহাতই নাকউঁচু। ওনার ওখানে কারোরই মাটিতে পা পড়ে না। পৃথিবীর লোকেদের নাকি শুনেছেন মাটিতেই পা। সর্বদা। ভারী অবাক কান্ড! সবাই একেবারে মা-মাটি-ইয়ে! সব থেকে মজার ব্যাপার হলো, চন্দ্রনাথ চন্দ্র বাবু শুনেছেন ওনাকে নিয়ে নাকি একমিনিটে একলিটার কবিতা নামিয়ে ফ্যালে পৃথিবীর মানুষেরা। নিন্দুকেরা অবশ্য বলে, কবিতা ওনাকে নিয়ে নয়, ওনার বৌকে নিয়ে। তা সে যাই হোক, বৌকে নিয়ে কেউ কবিতা লিখলে ওনার রাগ হবে এমন মর্কট উনি নন। বরং গর্বে ওনার বুক একেবারে গুলুগুলু করে ওঠে। বৌ যে ওনার কাব্য-ফ্রেন্ডলি, তা উনি শুভ-দৃষ্টির সময়ই বুঝে গিয়েছিলেন। চন্দ্রাহত হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। স্বয়ং সূর্য-এর সাথে যার কোলাবোরেশন, বাওয়া। প্রভাবশালী বললেও বড়ো কম বলা হয়। তাই পৃথিবীর লোকজন ভাড়াটে হিসেবে পেলে উনি বেজায় খুশি হন।
============


P.S.আজকের চাঁদ, ক্লিকড ফ্রম ছাদ।

Wednesday, 13 March 2019

নিউট্রোপিয়া


সে এক ভারী মজার দেশ। সে দেশে কেউ কাঁদে না। কেউ উচ্চস্বরে গালাগাল দেয় না। এমনকি কেউ জোরে জোরে হাসেও,  না কারণ তাতে আশেপাশের লোকজন চমকে যেতে পারে, বাচ্চা ভয় পেতে পারে, কাঁদতে পারে। এ দেশের রাস্তায়, লিফ্টে, ঘরে এমনকি বাথরুমেও ক্যামেরা। হ্যাঁ। নিরাপত্তার প্রয়োজনে। সবাই কি করছে, কি ভাবছে, কি বুঝছে, কি বুঝতে চাইছে সবটাই ওই দেশের রাজার দখলে। দেশের মানুষেরা তাই সবাই বেশ সংযত এবং নিয়ন্ত্রিত। ধর্ষণ তো দূরের কথা এখানে কারোর গায়ে টোকা মারলেই ওই এলাকা বরাবর একটা লাল আলো জ্বলে ওঠে আর সাথে সাথে ক্ষণক্ষণে একটা সাইরেন। টোকা মারা লোকটার ওপর স্পটলাইট পরে। তারপর পুলিশ এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তার বিচার হয়। কাউকে ছোঁয়া এখানে সমস্যাজনক বলে এবং সর্বত্র ক্যামেরা আছে বলে বিশেষ নিয়ম যৌনতার ক্ষেত্রে। যৌনতার জন্য রেজিস্ট্রেশন করাতে হয় সরকারের কাছে এই যেমন বিয়ের জন্য করে থাকি আমরা। সেই রেজিস্ট্রেশনের সময় একটি দিন ধার্য্য হয় যেদিন তার বাড়ির ক্যামেরা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ  থাকে। বিয়ে এখানে নিষিদ্ধ। সিগারেট-মদ-গাঁজা এসব যে যেখানে যখন ইচ্ছে খেতে পারে। টিভি সিরিয়াল আর নীল ছবির প্রচুর যোগান। কারোর যদি একটু কষ্ট-কষ্ট পায় কখনো বা কি যেন নেই কি যেন নেই ভাব আসে তার জন্য আছে একটা ছোট্ট ট্যাবলেট, যা সবসময় পকেটে রাখাই নিয়ম। সেটা খেয়ে নিলেই ব্যাস, ঘুম এসে যাবে কিছুক্ষনের জন্য। আর ঘুমলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রত্যেকেই এখানে সবসময় কিছু না কিছু করছেন আর নাহলে ঘুমোচ্ছেন। এখানে সবাই সচেতন এক একটি মেশিন। সবাই পরাধীন আর তাই সবাই সুখী। কারণ কেউ এখানে আলাদা করে ভাবে না, ভাবতে পারে না। কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না, কারণ তার যা চাই অর্থাৎ খাবার, যৌনতা, পোশাক, বাসস্থান সবই আছে বা চাইলে পাওয়া যায়। যেহেতু সবটাই নিয়মমাফিক তাই রাজা ছাড়া কেউ বেশি পেলো বা কম সেই রকম কোনো গরমিল নেই। তাই ঈর্ষাও নেই। বিয়ে নেই যে ওর বৌ বা বর বেশি সুন্দর তাই নিয়ে আক্ষেপ। তাই এই দেশকে চাইলে Sir Thomas More এর ইউটোপিয়া বলা যেতে পারে। সেই রূপকথার দেশের মতো যেখানে সবাই খুশি। বা রবি ঠাকুরের তাসের দেশ বলা যাতে পারে।
সংস্কৃতি এখানে কেউ বোঝে না কারণ তাতে ভাবনার প্রয়োজন।
কিন্তু হঠাৎ একটা পূর্ণিমা চাঁদ উঠলে কারোর মনে ভাবাবেগ এলে, কারোর যদি এই নিয়মের বাইরে যেতে ইচ্ছে করে, কারোর যদি কোনোরকম রেজিস্ট্রেশন ছাড়া এখন এই মুহূর্তে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, কারোর যদি মায়ের কোলে শুয়ে একটু ভানুর কমেডি শুনে চিৎকার করে হা হা করে হাসতে ইচ্ছে করে তাহলে? তাহলে সেটা বিদ্রোহ। তাহলে হয় তার শাস্তি হবে বা যদি বিদ্রোহ ব্যাপক মাত্রাতে হয় যখন হীরক রাজা নিজেই এসে নিজের মূর্তি ভাঙে, তখন ইউটোপিয়া ভেঙে সব আজকের মতো হয়ে যাবে।
আমরা তো সবাই ইউটোপিয়া চাই যেখানে সবাই খুশি কিন্তু তা ঠিক এইরকম আশা করিনা। সবকিছু একদম সঠিক, নিয়মমাফিক তাতে দমবন্ধ হয়ে আসে। স্বাধীনতা, এলোমেলো, ইচ্ছেমতো এসব জিনিস বড় সুস্বাদু, একবার পেলে ঠেকিয়ে রাখা মুশকিল। ওই দেশে তাই আমার আর যাওয়া হলো না। এই আমার নিউট্রোপিয়া তেই দিব্ব্যি আছি। একটা আলোর দিকে এগিয়ে চলার প্রত্যাশা নিয়েই এগিয়ে চলেছি। এই বেশ।

Thursday, 7 March 2019

তরু দত্ত

শাড়ি, পেটিকোট, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, সিগারেট, বিয়ারের অলস বোতল এসব অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের মাঝে, ক্রিকেট খেলা, গাঁজা টানা যতটা মানানসই আর টানটান, মাঝে ওওওই সমাধিগুলো ততটাই বেমানান, অসঙ্গত। কেন যে আছে, কে জানে! নেহাত তাঁরা আগে থেকেই আছে, না হলে কোনোমতেই  ......
==========
২১ বছর বয়স মানে তো এই কচিটি। এই তো সবে কলেজ। এখন তো একটু খেলাধুলো করার সময়। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা টাবনা ওসবে এখন ঢের সময় বাকি।
তবে যদি কারোর জীবৎকাল হয় ২১ বছর, তাহলে?
তরুলতা দত্ত। কলকাতায় জন্ম, মৃত্যুও। মাঝে ৩ বছর ইংল্যান্ড। জীবৎকাল ২১ বছর। এরমধ্যেই ৪টি ভাষাতে ( বাংলা,ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ, সংস্কৃত) পারদর্শী, লিখে ফেলেছেন দুটি নভেল। তার মধ্যে একটি Bianca or The Young Spanish Maiden ইংরিজিতে। অন্যটি Le Journal de Mademoiselle d’Arvers ফরাসিতে। বই অনুবাদ করেছেন দুটি, একটি ফরাসি থেকে ইংরিজিতে (প্রায় ৬৫ বিভিন্ন কবির কবিতা সংকলন), অন্যটি সংস্কৃত (পুরাণকাহিনী) থেকে ইংরিজিতে। জীবনের শেষ ৩ বছর নিয়মিত লিখেছেন The Bengal এবং The Calcutta Review ম্যাগাজিনে। মাইকেল মধুসুদন দত্ত এবং তরু দত্ত। পদবি ছাড়া আর একটি মিল তাঁদের। দুজনেই প্রথম ভারতীয় যাঁরা ইংরিজিতে কাব্যচর্চা করেছেন। মহিলা হিসেবে বলাই বাহুল্য ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে তরু দত্তই প্রথম, ইংল্যান্ডে যাঁর লেখার উচ্ছসিত প্রশংসা হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পরেও বহুদিন। বাঙালি এই মেয়েটিকে বাংলার কিট্স্ বলা হয়।

এখন তিনি মানিকতলা ক্রিস্টান সমাধিতে। হয়তো নিশ্চিন্তেই শুয়ে আছেন, মাটির ওপরের জগৎ নিয়ে আদৌ কোনো মাথাব্যথা নেই। এদিকে মাটির ওপরের মানুষদেরও মাথাব্যথা নেই। ২১ পেরিয়ে ৪১ হয়ে গিয়েও রসগোল্লা আর পাশবালিশেই তাদের লব্ধি এবং সিদ্ধি। মাঝে মাঝে মনে হয়, তরু দত্ত একদিন সমাধি থেকে বেরিয়ে যদি নিজের কর্মকাহিনীর একটি অনুগল্প একটু শুনিয়ে যেতেন, তাঁর সমাধির ওপর ঠেক বসাতে একটু বুক তো কাঁপতো গাঁজাখোরদের। রবি ঠাকুরের বাড়িতে ছেলে মেয়েরা হাতে হাত ধরে ঘুরলে যারা "কি শিক্ষা, শেষ অবধি এখানেও  ..... " বলে মুখ ব্যাকান, রাস্তায় চুমু তো দূরের কথা একটু কাছাকাছি বসলে যাদের হার্টএট্যাক হয়, তাঁরা নিজের বাড়ির ছেলেমেয়েদের, পরিচিতদের, এমনকি নিজেকেও একটু তরু দত্তের গল্প বলুন না কেন! গর্ব করা যাক বাঙালি হিসেবে, নারী হিসেবে আর মনুষ্যজন্মলাভের স্বার্থকতার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে।
প্রণাম এই আগুনকে। ১৮৫৬এর তরু দত্তকে। 



Thursday, 21 February 2019

বাংলাভাষা ফ্রীজে রাখা রাবড়ি

বাংলাভাষা ফ্রীজে রাখা রাবড়ির মতো, চরম শান্তি এই ভেবে, যে সে আছে, জানি সাথে আছে, এক্কেবারে আমার। এ স্বাদের ভাগ হলে স্বাদ সাড়ে সাতাশ গুন বাড়ে। পাস্তা-কাবাব-নিজামের রোল জিভ-এর সারপ্রাইস গিফ্ট। কিন্তু আদতে জিভের যে অপেক্ষা, বাংলাভাষা তাই। সবাই জানে। কিন্তু বাড়িতে মায়ের আদরের মতো ওটা কিরকম একটা "আছেই তো" টাইপের হয়ে যায়। একবার বাংলার বাইরে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে নিলেই,, এসিডিটিটা অনুভব করা যায়। তখন কো-বাঙালি খুঁজে অক্সিজেন টানার চেষ্টা চলে।
**মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বসে খেলার ম্যাচের ওই নির্ণায়ক মুহূর্তে, হাত কচলানোর সময় আপনার মুখ দেখে যে কেউ বলবে, আপনি হাওড়া।
**প্যারিসের পকেট ফাঁকা করা হোটেলে ঢুকে যখন দেখলেন, পাশবালিশ নেই, দুটো গালাগাল বেরোনো বাঙালি অধিকার।
**স্প্যানিশ প্রতিবেশীর গিটার প্র্যাকটিস বেশ লাগে, একদিন সেই সুরে রবি ঠাকুর পেতেই প্রথম গিয়ে আলাপ করলেন।
**পোল্যান্ডের গ্রামে বাঙালি রেস্তোরাঁ নেই, শুধু বাড়ির খাবার পেতে আপনি বিয়ে করলেন।
**আইসল্যান্ডে পৌঁছে অব্দি বাঙালি মুখ খুঁজছেন, যদি একটিবার পাওয়া যেত।
**ঠান্ডা রুমে ঢুকে রুম হিটার অন করতে করতে বুকের ভিতর থেকে দলা পাকানো কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে, কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা তাকে আটকানোর। কি মুখে কাঁদবেন? মায়ের "খেয়ে নে" ঘ্যানঘ্যানানি আর প্যাঁচপ্যাঁচে গরম থেকে পালাতেই তো এদেশে।
আরও হাজারো হাজারো অনুভূতি চারিদিকে। বাংলা শুধু ভাষা নয়. প্রতি শব্দে রয়েছে একটা একটা অভিব্যক্তি। ভূল হোক বাংলা লিখতে, হাজার বাংলার মধ্যে দুটো ইংরিজি আসুক। মন জানে বাংলা কি। মন সব জানে বাংলা আমার কাছে কি।

Thursday, 14 February 2019

আয়না, আই লাভ ইউ

আদো আদো করে গড়িয়াহাটের মোড়ে দাঁড়িয়ে তারা আজ প্রমিস করলো, কখনো ছেড়ে যাবে না একে অপরকে।
আজ থেকে তারা মনে-প্রাণে এক।
অটোতে বাড়ি ফেরার পথে, মেয়েটি দেখলো, ছেলেটি হা করে রাস্তার ওপারে অন্য একটি মেয়েকে দেখছে। এমন তন্ময়, যে তাকে হাত নেড়ে "বাই" বলতেও ভুলে গিয়েছে।
ছেলেটি এক্সপেক্ট করছিলো, বাড়ি ফিরে মেয়েটি জানাবে, ছেলেটির দেওয়া গিফ্টটা কেমন লাগলো। কিন্তু মেয়েটি জানায়নি।
তারপর রাতে ফোনে কি প্রচন্ড ঝামেলা! দুজনেই রাগে গুমরোচ্ছে। বিছানাতে এপাশ-ওপাশ, দুশ্চিন্তা। পরের দিন মিটমাট হবে কিনা জানা নেই। গড়িয়াহাটের প্রমিসটা জাস্ট ছেলেখেলা মনে হচ্ছে। একটা রাত চলে যাবে চিন্তায়, মন খারাপে। একটা পুরো রাত। ধুস।
হঠাৎ কি মনে হলো, তখন মাঝরাত, মেয়েটি আয়নার কাছে গেলো, নিজেকে দেখলো আর কি জানি কি মনে হলো, কারিনা কাপুর স্টাইলে বললো,"মেয় আপনি ফেভারিট হু". আর বলেই হেসে ফেললো। আর পরক্ষনেই রাগটাগ ভ্যানিস। জাস্ট সু, ভ্যানিশ। ইশ, রাগটা কি বিচ্ছিরি রকমের বাড়াবাড়ি লাগছে এখন।
কেউ কতদিন কাকে কত কিলোগ্রাম ভালোবাসবে, তা কি সে নিজেও জানে! প্রমিস-ট্রমিস তো শুধুই মুহূর্তকে গ্ল্যামারাস করার মেকআপ কিট। একজনের প্রতি অপরজনের ভালোবাসা থাকলে থাকে। না থাকলে থাকে না। ভালোবাসা আসে, যায়, হয়তো আবার আসে।
রবি ঠাকুর বলেছেন,"
লাজে ভয়ে ত্রাসে আধো-বিশ্বাসে
শুধু আধখানি ভালোবাসা,
শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা,
শুধু আলো-আঁধারে কাঁদা-হাসা।"
কেউ ছেড়ে যাবে তার ভয়, কেউ যদি আর ভালো না বাসে তার ভয়, কেউ চিট করছে কি না তার ভয়! এই ভয় যাকে বলে ইনসেক্যুরিটি, চব্বিশঘন্টা চেপে থাকবে কেন! কেন কারো জন্য নির্ভর করবে নিজের ভালো থাকা! কেউ কাউকে কি বা দিতে পারে! কাকে কত লিটার বিশ্বাস করা যায়! এর উত্তর কি কেউ জানে?
কিন্তু নিজেকে ভালোবাসার গ্যারান্টিটা তো নিজেই দেওয়া যায়। তাতে না কাউকে দরকার, না কেউ বাধা। বরং নিজেকে ভালোবাসলে মনের মধ্যে একটা হনলুলুকুলুপুলু টাইপ তৈরী হয়, তাতে বাকি সব কিছু "বেশ তো" টাইপ হয়ে যায়। বেশ একটা ক্ষমা-মা ভাব আসে।
মেয়েটি সেদিন রাতে এসএমএস করলো,"আই লাভ ইউ, বাট মোর আই লাভ মাইসেলফ। এন্ড, আই এম হ্যাপি"। সে রাতটা দুজনেই নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেলো। ভবিষ্যৎ কেউ জানে না। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে কোনো গ্রাজ নেই, কারোর ওপর কোনো রাগ নেই। ঠিক যেমনটা সবাই চাই। শান্তি।
তাই কাউকে ভালোবাসা ভালো। তার চেয়ে ভালো একটা আয়না আর তাকে বলা আই লাভ ইউ। নিজেকে ভালোবাসলে বাকিদের থেকে চাওয়ার ক্যালকুলেশনে ব্যস্ত থাকার দরকারই হয়না। ট্রাই, ইট ওয়ার্কস।

Monday, 11 February 2019

মনবাসাতে পারফরমেন্স চলছে

এই মুহূর্তে তুমি ঠিক কি করছো?
আমার কথা মনে পড়ছে খুব?
মনে পড়ছে আমাদের দিনযাপন?
খুনসুটি? সিনেমা? কমিক্স?
রবীন্দ্রসংগীত, বব মারলে?
ক্ষিরাই, দারিংবাড়ী, বইমেলা?
নাকি শুধুই ঝগড়ার কথা ভেবে
খুব রাগ করছো আমার ওপর।
মনে হচ্ছে, বেশ হয়েছে
সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে?
হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছো বুঝি?
নাকি মিস করছো প্রচন্ড?
ইগোর লাইন অফ কন্ট্রোল
ফোনের কন্ট্যাক্ট লিস্টে?
হয়তো এসব কোনোটাই নয়।
হয়তো নতুন কারোর সাথে
নতুন গল্প-এর প্লট তৈরী হচ্ছে।
তার হবি, তার ফেভারিটস
মুখস্ত করছো মন দিয়ে।
তাকে তোমার সমস্ত চার্ম
মুগ্ধ করছে উত্তমের মতো।
অথবা  .......
যা ভাবছি, যেটুকু ভাবা যায়,
তার বাইরেও হয়তো অনেক
কিছু আছে, যা চলছে, হচ্ছে,
কল্পনাদেবী যার হদিস পান না।
সত্যি এই মুহূর্তে কি করছো?
না, সত্যি তা জানতে চাই না।
কল্পনাদেবী বড়ো বিলাসী,
খামখেয়ালি, অনিয়ত,
স্টেজ, অভিনয় সব ওনার,
ডিরেক্টরও সেখানে উনিই।
তাহলে?
তুমি জেনে রেখো, উঠতে বসতে,
আজকাল দিনরাত মনবাসাতে 
ফাটিয়ে পারফরমেন্স চলছে,
অডিয়েন্স মুগ্ধ, বশীভূত।

Monday, 28 January 2019

ব্যালান্সের চেষ্টা

- ডিভোর্স ছাড়া উপায় নেই রমিতদা। এ একেবারে নাজেহাল কেস। তুমিই ভালো আছো দিব্যি। আপেল খাচ্ছো। কামড়ে খাও, কেটে খাও। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আমার জীবনটা শালা কৈফিয়তের শপিং মল তৈরী হয়েছে।

- স্থির হও খোকা। সোমবার তো। চাকুরিজীবীদের দীর্ঘ্যশ্বাসে আকাশে বাতাসে একটু নেগেটিভ এনার্জি জেনারেট করেছে। এই নে, তুই ও একটা আপেল খা দেখি। কামড়ে খাবি খা। হুইস্কি বের করে ঢাল। দেখবি বেশ একটা স্বাচ্ছন্দ্যময় ওয়ার্ম ফিলিং আসছে। মনে হালকা চাপ তখনও থাকবে। তবে সেটা ব্যালান্সড।
এই যে আপেল এর হাঁকুপাঁকু মাটির দিকে ধেয়ে যাওয়া দেখে, স্যার নিউটন, ইউনিভার্স -এর প্রতিটি কণার মধ্যে এট্ট্রাকশন এর কথা বলেছিলেন। বিয়ে করেননি সারাজীবন। তাই মাখোমাখো আকর্ষণটুকুই দেখেছেন।

- তবেই বোঝো। শালা বিয়ে করেছো কি কেস খেয়েছো।

- বটেই। কিন্তু কেস ভালো। উইলিয়াম থমসন বিবাহিত। টেরটি পেলেন হাড়ে হাড়ে। গ্যালাক্সি-এর ডার্ক ম্যাটার খুঁজে পেলেন। বললেন রিপালশনের কথা। দিলেন বিকর্ষণ এর ব্যাখ্যা। ওদিকে আইনস্টাইন আবার বেলতলা গিয়েছেন দুবার। E=MC2 করতে করতে জিভ দেখিয়ে নেগেটিভ ম্যাসের থিওরি বলেছেন।

- হমমম।

- যেদিকে যাও, কন্ট্রিবিউট করে যাও। লক্ষ্য হবে, ব্যালান্স। আসবে না। তবু চেষ্টা করে যেতে হবে খোকা। থ্যানোস ও চেষ্টা করেছে অর্ধ্যেক এভেঞ্জআর দের হত্যা করে ব্যালান্স আনবে ইউনিভার্স-এ। পারেনি। ভূগর্ভে একটু এদিকওদিক হয়, ভূমিকম্প আসে, কিন্তু নড়াচড়া করে আবার স্থিতিশীলতা মাস্ট। উল্টিমেটলী ব্যালান্সের চেষ্টা। নইলে বাছা খেলাটা ভীষণ বোরিং।

- দাদা, ওই সংকটময় কৈফিয়ত ডিমান্ডের চাপের মুহূর্তে কি আর এসব তত্ত্বকথা মাথায় আসে!

- আনবে। আনতে হবে। আনা প্র্যাকটিস করবে। সময় খুব খারাপ মানি। গুগলে নিউটন সার্চ করলে এখন আর শান্ত-স্নিগ্ধ ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট দৃশ্য আসে না। রাজকুমার রাওয়ের আঁতকে ওঠা ছবি আসে। তা বলে হাল ছেড়ে দিলে হবে না। কণ্ঠ ও বেশি জোড়ে নয়। মনে মনে ভাবো "কফি উইথ করনে" বসে আছো। উস্কানি আসবে। ট্র্যাপ রেডি। পা দেওয়া যাবে না। গান গাও মনে মনে, আমি যামিনী, তুমি শশী হে। লিরিক্স টা মনে না পড়লে, মনে করার চেষ্টা কারো। একসময় দেখবে মেঘ কেটেছে। এইভাবেই চালিয়ে যাও ভায়া। আপেল কামড়ে বা কেটে।