Wednesday, 13 May 2020

এনিমেটর

সার্গে মস্কোভিচ এই কিছুবছরে কার্টুন এনিমেশনে কাজ করে হলিউডে ভারী ওজনের নাম করে ফেলেছেন। তাঁকে এনিমেটর হিসেবে পেলে সিনেমার কমার্শিয়াল বেনিফিট নিয়ে নিশ্চয়করণই হয়ে যায়। শুধু মানুষ নয়, গাড়ি, বাড়ি, মোবাইল, গাছ এমনকি রান্নার বাসনকেও কার্টুন বানিয়ে দর্শকের চিত্ত বিনোদন করেছেন সার্গে। সকলে ওনাকে ট্র্যাজিক এনিমেটর বলে। কারণ তাঁর গল্পের শেষে চমক থাকে। ট্র্যাজিক বুক হিম করা চমক, যার ইমপ্যাক্ট দর্শকের ওপর থাকে অনেকক্ষন।
বহুদিন পর সার্গে আবার হিউমান কার্টুন নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। শুরুতেই স্কেচগুলো রেডি। গল্পের লাইন আপের সাথে আপাতত ফিট। এবার স্প্লিনিং এর কাজ শুরু। প্রেমের গল্প। মাঝে খানিক অ্যাকশন। ট্র্যাজিক এন্ডিং - মেয়েটি ছেলেটিকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য দেশে। সবকটা লেয়ার শেষ করতে বহুদিন লাগলো। গতরাতেই শেষ লেয়ারে কাজ করেছেন। আজ ঘুম থেকে উঠতে সার্গের অনেক দেরি হলো। এরকম দেরি হলে অবশ্য সার্গের দিব্বি লাগে। কফি খেতে খেতে অনিয়মের দুপুর পেরোয়। বিকেলে বসলেন স্মুথিংয়ের কাজ করতে। শেষ লেয়ারগুলোতে হঠাৎই চোখ পড়লো। এরকম ঝকঝকে রং ছিল না বলেই মনে পড়ে সার্গের। বিদায়বেলা মানেই সমবের টাচ, হালকা নীল। কিন্তু এতো লাল রং। এরকম ভুল তো সার্গের হওয়ার কথা নয়। তা যদি হয়ও, ছেলেটি খিলখিলিয়ে হাসছে? কি করে সম্ভব। কালই তো ছেলেটির ফেস এক্সপ্রেশনের ইম্পেরফেকশন কারেকশন করলেন সার্গে। ছেলেটির থাকবে স্যাড এক্সপ্রেশন। তার বদলে হাসি! প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ফোন করলেন সালভাদরকে। বন্ধু, সহকর্মী, প্রাণশক্তিতে ভরপুর একটি মানুষ। ঠিক এই সময় যাকে ভীষণ প্রয়োজন সার্গের। বন্ধু শুনে বললেন, গাঁজা ছাড়া এরকম দুঃসাহসিক কান্ড করানোর ক্ষমতা আর কারোর নেই। কথা বলে সার্গের মনটা ঠিক হলো সামান্য। কিন্তু গাঁজা খেয়ে মাউসে হাত দিয়ে ক্লাইম্যাক্স দিয়েছেন সার্গে এর আগে বহুবার। শুধুমাত্র গাঁজার পরাক্রমে এতো ভুল, স্বাভাবিক লাগছে না সার্গের। তবে বয়সের আক্রমণ ভেবে সার্গে ব্যাপারটাকে আপাত অগ্রাহ্য করে কাজে মন দিলেন। ফাইনাল সেভিংএর সময় ভালো করে দেখে একটা নোট রাখলেন "রেভিউড"।
মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো সার্গের। জল খেতে উঠলেন। চোখ পড়লো কম্পিউটারে। স্ক্রিন অন। অফ করেই শুতে গিয়েছিলেন সার্গে। এতো ভুল একসাথে হতে পারেনা। লেয়ারগুলোতে চোখ বোলাতেই হবে। আবার কিছু পিকুলিয়ার  ..... না আপাতত ঠিকই আছে। একদম শেষে এসে আবার ...... ড্যাম। আবার শেষের লেয়ারগুলোতে ঝকঝকে রং। ছেলেটা? হ্যা, আবার সেই হাসি মুখ। এইতো রেভিউয়েড নোট ওয়ালা ফাইল। এরপরেও এই রং, এতো পার্থক্য! ভুল নয়। ভুল নয়। কোথাও কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিছু হচ্ছে। ভাবতে ভাবতে আবার কখন সার্গে ছবি কারেক্ট করতে শুরু করলেন নিজের অজান্তেই। কিন্তু সব গুলিয়ে যাচ্ছে। নাহ ঠিক করলেন কাল সকালে দেখবেন। সেরকম কিছু গন্ডগোল হলে সালভাদরকে ডেকে নেবেন না হয়। ঘুম হলো না। তন্দ্রা ছিল। সূর্যের আলোর অপেক্ষা ছিল। অনেক শক্তি নিয়ে ফাইল খুলতেই আবার সেই। এবার যেন পাগল হয়ে যাবেন সার্গে। ইনসেন। টেকনিক্যালি সব নিখুঁত। কিন্তু গল্পের ক্লাইম্যাক্স ঘেটে যাচ্ছে যে।     
লেয়ার গুলো খুঁটিয়ে দেখছেন সার্গে। সব ঠিকই রয়েছে। ঠিক শেষ দৃশ্যে যখন মেয়েটির চলে যাওয়ার কথা, সেখানে সে দৌড়ে আসছে, ফিরছে। ঝকঝকে রং চারিদিকে। আলোয় আলো। ছেলেটি হাসছে। চোখে মুখে ভাস্করতার প্রভা। কিভাবে এসব হচ্ছে! কার্টুন ক্যারেক্টার নিজেরাই কন্ট্রোল করছে! ও কি সম্ভব! এরকম হলে চলে না। পাবলিক দুঃখ গেলে। মার্কেটে সেটাই চলে। এ জিনিস কেউ দেখবে না। সার্গে হঠাৎ অসহায় বোধ করছেন। ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোলেন টানা ০৩ দিন। শেষে এই ফাইলটাই দিয়ে দিলেন প্রোডাক্শনকে। গল্পের সাথে মেলেনি এরকম একটি কাজ দিলে প্রোডাক্শনের কাছ থেকে যে হেনস্তা হতে হবে তা মেনে নেওয়ার শক্তি নেই সার্গের। যেখানে নিজের বিচার বুদ্ধির ওপরেই জোর নেই। নিজের হাতের ওপরেই ভরসা নেই। যা হচ্ছে, তার কোনো যুক্তি নেই। সেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন না সার্গে। উধাও হয়ে গেলেন হঠাৎ। লোকে বলে মেক্সিকোর কোনো গ্রামে আছেন। বাচ্চাদের অ্যানিমেশন সেখান। খুশির অ্যানিমেশন। হাসির।
ওনার শেষ কাজ যার এন্ড ট্রাজিক, তা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলো। ওনার থেকে ট্রাজিক এন্ডিং এক্সপেক্ট করে দর্শক যখন হ্যাপি এন্ডিং দেখলো, চমকটা সেইখানেই হয়ে গিয়েছিলো।
ওই এনিমেশনের শেষে লেখা ছিল, সার্গে, টি এন্ড অফ ট্রাজেডি। 

No comments:

Post a Comment