Monday, 24 June 2024

পাড়ার নতুন রেকর্ড

 - এসেছো? এতো দেরি হলো? দাঁড়াও দাঁড়াও খুলছি দরজা। উফ ভেঙে ফেলবে নাকককইইই ..... এককিইইইই তোমার একই অবস্থা! চুল ওলোটপালোট। জামা ছিঁড়েও গেছে বুঝি! চোখে মুখে কালি। কি হলো তোমার?

- আরে সড়ো সড়ো বসতে দাও গিন্নী। উফফ একটু ফ্যান চালাও। জল দাও। শ্বাস নিতে দাও শ্বাস।

- এই নাও। বলো এবার। আমার বুক ঢিপঢিপ করছে এখনো। কি হয়েছে বলো তো তাড়াতাড়ি। মারামারি করেছো নাকি? এই বয়সে?

- আরে গিন্নী, যদি তোমার জন্য করতে হয়, জীবন দিয়ে দেবো, পরোয়া করবো না গিন্নী, পরোয়া করবো না। বয়স ভুলে আমি হয়ে উঠবো হিমশিখর হিমালয়। এখনো কুড়মুড়িয়ে দিতে পারি অপোনেন্টকে গিন্নী।

- ধুস তুমি কি যে বলো।

- আরে সত্যিই যে। ওবাবা এ আবার লজ্জা পায় দ্যাখো। হে হে

- ধুস ওসব ছাড়ো। বলো কি হয়েছে আজ তোমার। তুমি তো বললে বিশ্বাস বাড়ী যাবে আমাদের গাছের আম দিতে। যাওনি?

- আরে সেটাই তো। রুকুর চায়ের দোকানে যাওয়া হলে আম ওখানেই দিয়ে দিতাম। সেই কবে ওদের বাড়ী গেছি শেষ ভুলেই গেছি। বিশ্বাস বাড়ী পৌঁছে দেখি বাড়ীর সামনে তিনটে দরজা। প্রথমটাতে গেলাম। দেখলাম কলিং বেলের সামনে মাকড়সার জাল। বুদ্ধি আমার তুমি জানোই গিন্নী। বুঝলাম ওটা বহুদিন বন্ধ আছে। তাই চলে গেলাম দ্বিতীয়টাতে। যেতে গিয়ে ক্যাকটাস গাছের কাঁটাতে এমন গুঁতো খেলাম গিন্নী কি বলবো।

- আহা রে। তারপর

- কোনোরকমে দ্বিতীয় দরজাতে পৌঁছে দেখি কলিং বেল নেই। দরজাতে ধাক্কা মারতে যাবো, বড় মায়া হলো। দরজার অবস্থা ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থার মতো। একটু চাপ পড়লেই মূর্ছা যাবে। তাই ওকে বিরক্ত না করে এগিয়ে যেতে গেলাম তৃতীয়র দিকে।

- ধুর বাবা। একটু তাড়াতড়ি বলো তো। এ যেন উপন্যাস শুনতে বসেছি।

- তৃতীয়তে যেতে গেলে দেখলাম অনেকটা ঘুরতে হবে। বুদ্ধি আমার তুমি জানোই গিন্নী। আমি পাঁচিল টপকালাম।

- হ্যাঁ মানে? এই বুড়ো বয়সে তুমি! হ্যাঁ? মানে?

- ওটা কোনো ফ্যাক্টর নয় গিন্নী। মুশকিল হলো আমি পাঁচিলে আঁটকে গেলাম যখন। কিছুতেই নামতে পারিনা। দূর থেকে এক ছোকরা "চোর" "চোর" বলে এমন চিৎকার .....

- ওমা গো ......

- আহা তুমি ওরকম করলে কি করে হবে। ব্যাপারটা সামলেই গেলো শেষ অব্দি। লোকজন জড়ো হয়ে মারতে যাবে, আমি চিৎকার করে বলছি,"কিছু নিতে নয়, দাদা দিতে এসেছি।" বিশ্বাসের ছোটো বৌ, হাতে আম দেখে লোকজনকে থামায়। দেখো কিরকম সব মিটে গেলো।

- মিটে গেলো? এটাকে মিটে যাওয়া বলে? লোকজন চোর বললো, মারতে গেলো, কাঁটার গুঁতো খেলে। এটা তোমার মিটে যাওয়া?

- মিটবে না? বিশ্বাসের ছোটো বৌ যার কিনা হাত থেকে একটা নকুলদানা পাওয়া যায় না। সে আমাকে বাড়িতে নিয়ে চা আর রসোগোল্লা খাওয়ালো, গিন্নী। রুকুর চা দোকান খুললে যখন এইটা ওদের বলবো, দেখবে আমাকে কিরকম ধন্য ধন্য করে। পাড়ার রেকর্ড গড়া গিন্নী এতো সোজা কথা নয়। তুমি একটু বরং বোরোলিন টা এগিয়ে দাও .....

ছেলের বিয়ে, বাবা কোথায় গেলো


সকাল থেকে বাড়িটা আনন্দমুখরিত, কলকোলাহলজাগরিত, উল্লাসবিচ্ছুরিত।

ছেলের বিয়ে বলে কথা।

পুরুতমশাই মন্ত্র পড়ছেন। ছেলের মুখে চাপা-হাসি মেকি-গাম্ভীর্য্য এর ককটেল মাখা। মাঝে মাঝেই ধুতির আড়ালে হোয়াটস্যাপ চেক করে নিচ্ছে। কিছু দরকারি বার্তা হবে। মা কুতিয়ে কাতিয়ে পুরুতমশাইকে সাহায্য করছেন। মাসি-পিসি-কাকী-জেঠি-শালী-বাড়িওয়ালি এনারা ব্যস্ততার অভিনয় ঝালিয়ে নিচ্ছেন। মেসো-পিসো-কাকা-জ্যাঠা-শালা-বাড়িওয়ালা এনারা সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে রাতের জলের আর্র্যাঞ্জমেন্ট টা বুঝে নিচ্ছেন। জল মানেই জীবন।

"ছেলের বাবাকে ডাকুন"

"এই ওর বাবা কোথায় গেলো"

"আরে হরেনবাবু গেলেন কোথায়"

"হরেনকাকু, বেরিয়েছে মনে হয়"

"তাহলে জ্যাঠাকেই বলুন বসতে ......"


গায়ে হলুদের গাড়ি রেডি। ফটোসেশন প্রায় শেষ।

"ছেলের বাবা কোথায়, উনি যাবেন তো"

"এই ওর বাবা কোথায় গেলো"

"আরে হরেনবাবু গেলেন কোথায়"

"হরেনকাকু, বেরিয়েছে মনে হয়"

"তাহলে জ্যাঠাকেই বলুন বসতে ......"


দুপুরের খাওয়া শেষ। ছেলের মা খাবেন না।

"ছেলের বাবা বসে পড়ুক। একটু পরেই তো বরের গাড়ি বেরোবে"

"এই ওর বাবা কোথায় গেলো"

"আরে হরেনবাবু গেলেন কোথায়"

"হরেনকাকু, বেরিয়েছে মনে হয়"

"তাহলে জ্যাঠাকেই বলুন বসতে ......"


বিকেলে বরের গাড়ি রেডি। এবার বেরোতেই হয়।

"ছেলের বাবা কোথায়? ছেলের সাথে তো উনিই বসবেন"

"আরে হরেনবাবু গেলেন কোথায়, ছেলের মা তো চিন্তায় প্রায় অজ্ঞান, ছেলে হোয়াটস্যাপে চেপে, কিছু জরুরি কাজ হবে হয়তো"

"তাহলে জ্যাঠাকেই বলুন বসতে ......"

"জ্যাঠার তো এসিডিটি। দুপুরে তিননম্বর সর্ষে ইলিশটা একেবারে ডাইরেক্ট ইসোফেগাসে হিট করাতে ....."

"তাহলে তো মুশকিল। আচ্ছা হরেন বাবুই বা কোথায়"

"হরেনকাকু, বেরিয়েছে মনে হয়"

"সেতো সকাল থেকেই শুনছি, বিয়েটা আটকে না যায়"

"ইয়ে মানে, কি বললে, বাবা কোথায়? দাড়াও তো কল করি।"

"এই যে খোকা। তোমার ঘাড় তুলতে বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না বাবা। যেভাবে টুংটাং চালিয়ে যাচ্ছো সকাল থেকে। সকাল থেকেই তো তোমার বাবাকে কল করা হচ্ছে। কিছুই তো সাড়াশব্দ নেই। কোনো সিরিয়াস কিছু হলো কিনা বোঝা যাচ্ছে না। ফোন বেজে বেজে ..... আরে ঐতো ঐতো হরেনবাবু, কি মশাই কোথায় ছিলেন"

"আরে হরেনকাকু, এইতো। কোথায় ছিলে?"

"আরে হরেনজ্যাঠা ...."

"এইতো হরেনমামা ....."

"বৌদি, হরেনদা এইযে এসেছেন ....."

"আমার বলে চিন্তায় হাত-পা শুকিয়ে। সারাসকাল কোথায় ছিলে শুনি? মাছটাও তো রবিঠাকুরপো আনলো। তুমি কি করছিলে ...... কি হলো বলবে তো"

"হে হে। খেয়াল ছিল না। তাস এর আজ ফাইনাল ছিল। পরশু নকআউট হয়ে গিয়েছিলো ভুলেই গেছিলাম। মাছের দোকানে ভোলা মনে করলো। আরে না হলে মনোহরা আর সরভাজাটা মিস হয়ে যেত যে। তুমি তো জানোই, তাসের ফাইনালে আজ অব্দি কেউ আমাকে ...... এই ওকি ওকি হলো তোমাদের? এমন চোখমুখ কেন .... শরীর খারাপ লাগছে নাকি! মাথা ঘুরছে নাকি?"