Wednesday, 26 November 2025

সব ঠিক হয়ে গেলে, তুমি আমি

 সব ঠিক হয়ে গেলে, তুমি আমি কাদা-জলে ঝপাৎ ঝপাৎ লাফাবো।

"দাগ আচ্ছে হ্যায়" বলে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় তুলবো, "অ্যাচ্ছে দিন আগায়া" বলে কাহারবা দাদরা ঠুকবে তুমি।

সব ঠিক হয়ে গেলে বেহালার ভিড় ঠেলবো আবার। দিনের ২০ ঘণ্টা দিব্যি রাস্তায় সস্তায় কেটে যাবে।

সব ঠিক হয়ে গেলে মেট্রোর ঘেমো গন্ধের নেশায় ঘোর লাগবে আবার। স্বপ্নে সেই গন্ধ এসে কামড়ে ধরবে। ধড়মড় করে উঠে বসে অনুলোম বিলোম শুরু করবো সুন্দর।

সব ঠিক হয়ে গেলে, আপিসে অনুব্রত দার পটপট - পুওও পুও - বরর বিরর বাতকর্মের আওয়াজ অ্যানালিসিস করবো তেতলার ছাদে বিড়ি ফুকতে ফুকতে।

সব ঠিক হয়ে গেলে রাস্তার মোড়ে চাউমিন এর সাথে টিনের চাল থেকে গড়িয়ে পড়া কালো কালো জল মিশে যাওয়া লাইভ দর্শন করবো, আর সেই মিক্সড চাউমিন খেয়ে বলবো, "উফফ নাজুক".

সব ঠিক হয়ে গেলে তুমি আমি আবার চৌরাস্তার মোড়ে দেখা করবো। রাস্তার লোক দেখবে তোমাকে ওপর থেকে নীচে। দাঁতে দাঁত চেপে আবার সেসব সহ্য করা প্রাক্টিস করবো আমি, সব ঠিক হয়ে গেলে।


২৭ নভেম্বর ২০২০




Sunday, 12 October 2025

মনের ভুল?

 এমন ঝগড়া, বাড়িতে কাক-চিল বসছে না।

গজগজ করতে করতে মনটা অন্যদিকে ডাইভার্ট করার প্রবল চেষ্টা চলছে।

বই পড়া? শব্দগুলো সিম্পলি মাথার পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

অফিসের কাজ? তাতে ওই ঝগড়াকালীন কথা কাটাকাটি, ক্ষতবিক্ষত হয়ে শোণিত প্রবাহিত হচ্ছে।

কাজে ভুল হওয়ার চান্স।

কারোর সাথে কথা বলা? সমস্যা হলো যে তাতে, সে বেচারা জীবন্ত বলি হবে অকারণে।

কি করা! কি করা!

কানে হেডফোন। গোঁজা গেলো। এলোমেলো গান চললো।

আকাশটা কি আজ একটু বেশিই নীল?

মেঘ গুলোর একটা মহিষ, একটা ঘোড়া আর ঐটা কি? রথ?

হালকা ঢাকের আওয়াজ এলো কি?

ধুনোর গন্ধটা?আরে, শরৎকাল এসে গেছে যে সেইটাই যে চোখ তুলে দেখা হয়নি হায় এতদিন।

মনে হতেই কি যেন শিরশির করে বয়ে গেলো সারা দেহে।

পুজো আসছে।

কানে বেজে চলা “মধুকৈঠভবিদ্রাভি বিধাতরু বরোদে নামাহ" র ম্যাজিক বুঝি?

নাকি সবই মনের ভুল?


৯ অক্টোবর ২০১৮ 



আরে ধুর, আরে ঐটার কি হবে

- কি রে, কি হবে

- বৃষ্টি কমে যাবে, চিন্তা কোরো না।

- না ওই, কি হবে

- কালই হবে। মূর্তি উন্মোচন। চলে এস বিকেলবেলা।

- সে ঠিক আছে, কিন্তু ওটার কি হবে

- ও ওটা একটু সময় লাগবে গো। কালীপুজোর পরেই হবে মনে হচ্ছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবো, হুড়োহুড়ি করলে চলে?

- আরে ধুর, আরে ঐটার কি হবে?

- কোনটা গো? এইরে, তুমিও কি রাজুর বৌ এর কথা জেনে গিয়েছো? ওটা নিয়ে চাপ নিও না। পালিয়ে বিয়ে করেছে তো কি আমরা সবাই মিলে জমিয়ে বিয়ের আয়োজন করবো ......

- কি জ্বালা, আরে বাবা ঐটার, ঐটার কি হবে?

- কি ঐটা ঐটা করছো বলতো? চাঁদার হিসেব মিলছে না, মাথা এমনিতেই চটকে, তারমধ্যে এইটার কি হবে, ঐটার কি হবে, করছো। শোনো, গ্যাসের দাম আরও বাড়বে, পটলেরও, জলেরও, সাপবাজিরও, সিগারেটেরও, বিরিয়ানিরও, লুঙ্গিরও। দেশে ভিড় আরও বাড়বে, গুঁতোগুঁতি, হুড়োহুড়ি বাড়বে, তাতে মানুষের দাম একটু কমবে। বাকি সব যেমন হচ্ছে, খিদে-বাথরুম-নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস-ঢেঁকুর তেমনি হবে।

- এই রে, না মানে বলছিলাম যে

- বলাটাও হবে, শোনা কম হবে, শব্দদূষণ হবে, ধোঁয়া হবে, কাশি হবে, ডাক্তার হবে, ওষুধ হবে, মৃত্যু হবে, জন্ম হবে .....

- বিলিতি ওয়াইনটা কবে খোলা হবে?


১২ অক্টোবর ২০১৮ 



Tuesday, 17 June 2025

মাছ বলতে এই

 আস্ত পাবদা মাছের কালোজীরা কাঁচালংকা দিয়ে ঝোল ৷

চিতল মাছের পেটির কালিয়া, আর গাদা থেকে কাঁটা বেছে  মুইঠ্যা, নারকেলের দুধ দিয়ে ৷ গলদা চিংড়ির মালাই কাড়ি , বা বাগদা চিংড়ি ভাপে ৷

ভেটকি মাছের পাতুরী, কলাপাতায় মুড়ে৷ তার কাঁটা আর তেল দিয়ে ঝাল কাঁটার চচ্চড়ি। ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘণ্ট মুগের ডাল বা কচু শাক দিয়ে ৷ কুঁচো চিংড়ি বাটা দিয়ে পোস্তর বড়া। বেসনে চোবানো তোপসে মাছ ভাজা ৷ পলতাপাতায়, বা লাউপাতায় মুড়ে নোনা ইলিশের বড়া ৷

বেগুন, কালোজিরের পাতলা ইলিশের ঝোলও হত৷ পেটির দিক ডিম পোরা৷ কৈ মাছের গঙ্গাযমুনা, বা হরগৌরী। মাছের একদিক ধনেপাতা বাটা দেওয়া সবুজ রঙের, আর অন্যদিকে 'সর্ষের হলুদ রঙ। দুই সাইডে একই মাছের দুরকম স্বাদ।

বাটা মাছ মাখা, বাটা মাছ সেদ্ধ করে, কাঁটা বেছে, পেঁয়াজ, কাঁচা লংকা, আদার রস আর অল্প লেবুর রস, সর্ষের তেল, নুন দিয়ে মাখা। উপরে ধনে পাতা কুচি।

দেশী ট্যাংড়ার ঝাল, লাল লাল।

টাকি মাছ ভর্তা, উফ কর্তা!

ইলিশ পোলাও, ওয়াও। 

ছোটমাছের টক তেঁতুল দিয়ে।

ওহ হ্যাঁ, তেলাপিয়া আর লইট্যা, চাইট্যা পুইট্যা।

(এপ্রিল ৮, ২০২১)




Monday, 2 June 2025

ঘাম ঘ্যাম

 এসি আর প্রাকৃত চল্লিশ ডিগ্রীর ধরা-ছাড়াতে মাথায় বাজছে হানি সিং।

ঘাম ঘ্যাম নিয়ে বলছে, "ন্যাচারাল স্পা রে পাগলা, এনজয়"।

কষেকষা ঝালঝোল খাওয়ার আগেই পেট হেভিওয়েট চিলড ওয়াটার ট্যাঙ্ক। চিকেন মুখের কাছে পৌঁছনোর মুহূর্তে টপ করে দুফোঁটা ঘাম সাই করে মিশে গপাৎ। স্বাদের মাত্রা বলছে, "এ অন্য লেভেল"।

গালাগালির পরিসর বাড়াতে "ন্যায়" কেস ঢুকবে বলে শাসিয়ে গেছে।

মেইন কোর্স হিসেবে মাইক্রোফনে ধর্মীয় গান। দিগ্বিদিকে পুণ্যবাণী ছড়িয়ে দেওয়ার সৎউদ্দেশ্য। জোর "সোরে", কান ডে-অফ চাইছে। না দিলে প্রতিবাদ করে জানতে চাইছে, "নব্বই ডেসিবেল ছাড়িয়েছে, কমপ্লেইন করতে কোথায় যেন যেতে হয়?"

জামাইষষ্ঠী-সেমেস্টার লগ্ন-বৈচিত্র্য চাইছে, একটু যদি তাদের ওপর দয়া করা হয়।

সুখের কথা এই যে পাশের বাড়ির তেড়ে-কেটে তার-কাটা (waist-turn) নাচের প্র্যাক্টিস বেশ কিছুদিন যাবৎ হলো নীরব। "হোয়াই আর ইউ সো সাইলেন্ট? ইন্ডিয়া ওয়ান্টস তো নো।"

আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এই নীরবতা ঋতুগত কারণে।

আষাঢ়-শ্রাবণে কাটা-তার জুড়লে আপনাদের কন্ফার্ম করবো।


৩ জুন ২০১৭ 




Monday, 12 May 2025

সান্ধ্য ভ্রমণ

তখন দেশে covid এর আক্রমণ 

তিনজন মহিলা গলিতে সান্ধ্যভ্রমণে বেড়িয়েছেন। দুজন শাড়ি, একজন কামিজে। দেখা যাচ্ছে শাড়ি জনেরা আঁচল দিয়ে এবং কামিজের উনি ওরনা দিয়ে মুখ ঢেকে রেখে মোটামুটি দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছেন। গলির মুখে পৌঁছে আবার ফিরে আসছেন। বোঝা যাচ্ছে নিতান্তই শারীরিক সুস্থতার প্রয়োজনেই হাঁটতে বেড়িয়েছেন, গল্প আড্ডার উদ্দ্যেশ্যে নয়। বারচারেক গলি অতিক্রম করার পর তাঁদের মধ্যেকার দূরত্ব কমছে মনে হলো। মুখ থেকে ঢাকা সরছে। অল্প অল্প। এখন একদম নেই। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে কথাবার্তা চলছে। কাছাকাছি আসতে শোনা গেল, পাশের বাড়ির বসাককাকু নাকি কাল আলুপোস্ততে নুন বেশি দিয়েছেন, তাতে বসাক কাকিমা কাকুকে সামান্য উত্তেজিত হয়ে কিছু অনাবিল অকৃত্তিম গালি দিয়েছেন। গলা বসাক কাকিমার কখনই বসে থাকে না। তার ফলে সে ধ্বনি পাড়া মহল্লায় সাড়া ফেলেছে।

ব্যাপারটা এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ, যে মুখ ঢেকে রেখে তার সম্পূর্ণ বর্ণন প্রায় অসম্ভব।

তবে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনার পর পরই তিনজনেই আবার মুখ ঢাকা দিয়েছেন এবং ধীরেধীরে বাড়ী চলে যাচ্ছেন।

আজকের সান্ধ্য ভ্রমণ এই অব্দি।


১২ মে ২০২০ 




Saturday, 10 May 2025

একটা গান পাঠিও

 ধরো যদি মনের চিলেকোঠায় ঘনায় ধন্ধ,

সহসা যোগাযোগের রাজপথ হয়ে যায় বন্ধ,

মাঝরাতে তবু উড়ে আসে চেনা সেই গন্ধ,

কষ্টে যদি তোমায় খুঁজি, আঁধারে আমি অন্ধ,



একটা গান পাঠিও


(০৯ মে ২০১৯)