Tuesday, 27 June 2017

লক্ষণরেখাটা

কার চোখ, কার দিকে, কখন, কিভাবে, কোথায় এবং কোথায় সুরুৎ করে আটকে যায়, তা কে বলতে পারে! 
রাস্তায় চলছেন ফিরছেন যারা, বিশেষত স্ত্রীজাতীয় হলেই তারা সবাই হলো শোপিস। পুরুষ জাতির চোখ তাদের "দেখে"। তা ভাই দেখা যেতেই পারে। সে দোষের নয়। বরং তা থেকে নতুন রাস্তা তৈরী হয়। কারোর দিকে দেখলেন, ভালো লাগলো, মন ছুঁয়ে গেলো, কবিতার জন্ম হলো, গল্প হলো, কথা আগে এগোলো, জীবনের সাথে জুড়ে গেলো সে। কি সুন্দর! দেখা যদি নাই হতো, তাহলে কি আর এমন মিষ্টি জীবন-চলচ্চিত্র তৈরী হতো? অবশ্য সব সময় যে পরিণতি এরকমই হবে তার মুচলেকা নেই। কখনও ছোট ছোট টেলিফিল্মও হয়, যা এন্ড-দে-লিভ-হাপিলি-এভার-আফটার টাইপ হয় না। কখনও হৃদয়ে চোট, কখনও বা কোমরে। তবে তাতেও একটা এডভেঞ্চার আছে বটে। অর্থাৎ চলতে-ফিরতে ঘুরেএএ -ঘুরেএএ বা আড়চোখে টুক করে দেখা নেওয়ার মধ্যে ক্ষতি নেই। বরং লভ্যাংশ বেশ। তাই তা চলছে। মুশকিলটা হচ্ছে এই “দেখা”র নিউমেরিকাল ফ্যাক্টর এবং তার লিমিট ফাংশান কিছু আজ অব্দি আবিষ্কার হয়নি। তাই সবটাই আপেক্ষিক। কতটা “দেখা” হলে তাতে নারীরা অস্বস্তিতে পড়বেন না তা বোঝার আগেই "অ্যাংরি" রিঅ্যাকশনে ভস্মীভূত হতে হয় বহু নিরপরাধ প্রাণীকে। উল্টোটারও সমান সম্ভাবনা। পুরুষরা গলা লম্বা করে জিগাইতে পারেন, শুধু পুরুষ কেন, নারীরা? হ্যা হ্যা প্রচুর দ্যাখেন। ভারতবর্ষের নারীদের, শিলনোড়ার তলায় যতদিন রাখা গিয়েছিলো, ততদিন আড়চোখে-পর্দার পিছন থেকে, আর আজকাল প্রকাশ্যেই পুরুষ দেখা চলে। আজকাল আবার একটু বেশিই চলে, ওই বোধহয় শিলনোড়ার পুরোনো হিসেব মেটানোর উদ্দেশ্যে পুরুষদের একটু ইচ্ছাকৃতভাবেই.... তবে যাই বলুন পুরুষরাই এখনো এব্যাপারে এগিয়ে। এমন এগিয়ে যে মকবুল ফিদাবাবু ফিদা হয়ে আঁকলেন নগ্ন সরস্বতী। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখলেন সরস্বতীকে দেখে তাঁর পুরুষালী উত্তেজনার কথা। বুঝলাম মা সরস্বতীও টার্গেট। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই উক্তি আবার সরস্বতী-সন্মান পাওয়ার পরেই। শুধুই কাকতালীয়?
ওবাবা তাতে কি? শিল্পে নগ্নতার ভিজ্যুয়াল রিপ্রেসেন্টেশনস তো সেই কবে থেকে.... সেই তো রেনেসাঁস। পাবলো পিকাসো? এগোন শিলে? এঁদের কারুকার্য হা করে দেখবেন। আর মকবুল-সুনীল শুনিলেই চমকান কেন মশাই?
আসলে ভারতবর্ষ কোনদিকে কিভাবে সাবালক হবে, আদৌ হবার প্রয়োজন আছে কিনা, সে নিয়ে বোধহয় একটু বিভ্রান্ত। "ছি ছি জঘন্য" বললেও দুর্গাপ্রণাম করতে গিয়ে এরূপ দৈহিক চিন্তা নিশ্চয় অনেক পুরুষের যে আসে, তা অবাস্তব নয় বলেই মনে হয়। মহিলাদের কি আসে না? আসে। "কার্তিক ঠাকুরকে হেবি হ্যান্ডসম লাগছে" "অসুরের বাইস্পেস তা জাস্ট অসাম" ওই আর কি! তার বাইরের চিন্তা ভাবনা? আসে হয়তো। খুব বেশি নয়। সচরাচর নয়। মহিলারা আজও একটু বেশি আধ্যাত্মিক হয়তো বা ভীতু। তা এর ঠিক-ভুল বিচার করবে মানুষের নিজের মানসিক স্থিতি। কিন্তু যদি তা ইতোমধ্যেই অস্থিতিশীল? তাহলে? কে ওই "জাস্ট একটু দেখা" আর "আয় ছিঁড়ে খাই" এর সূক্ষ্ম সীমারেখা দেখিয়ে দেবে? তবে সে লক্ষণরেখাটাও ছলেবলে পার করানো যায় আর জটায়ুর ডানা কাঁটা পড়ে। আমি ভাবছি মানুষ কবে রোবট হবে! চোখের সামনের চলেফিরে বেড়ানো শোপিস হবে ইমোশনলেস। যা ইচ্ছে করো, কিছুতেই কিছু হবে না। হে হে। ওহো ওহো আরে আরে "ইচ্ছেটাই" তো থাকবে না। তাতে সাহিত্য বন্ধ হবে বা বন্ধ্যা হবে। দুঃখের। কিন্তু পাঁচ-বছরের বাচ্চাকে রড-ঢোকানো-নির্মম যন্ত্রনা তো সহ্য করতে হবে না।


Picture from Google



Thursday, 8 June 2017

আজকের বিশেষ খবর

আজকের বিশেষ খবর:
তারাতলার কাছে মাঝরাস্তায় বসে আছেন এক ভদ্রলোক। বাবুই পাখির মতো শুধু হাত দিয়ে কপালে আঘাত হানছেন। চারিদিকে লোক জড়ো হয়ে গেছে। বাস এগোতে পারছে না। পুলিশও বমকে গিয়েছে। অটো-ট্যাক্সি-সাইকেল সবাই অত্যন্ত বিরক্ত। তারাতলার ট্রাফিক আবার সমস্যার মুখে। আমাদের প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছে ইতিমধ্যেই, প্রত্যেকবারের মতোই সবার প্রথম। জনগণের খবর নেয়, জনগণকে খবর দেয়।
- হ্যালো ঋক, হ্যালো, শুনতে পাচ্ছো, হ্যালো, কোনো যান্ত্রিক গোলমালে বোধহয় লাইনটি কেটে গেলো। আবারো জানাই, তারাতলার কাছে মাঝরাস্তায় বসে আছেন এক ভদ্রলোক। বাবুই পাখির মতো শুধু হাত দিয়ে কপালে আঘাত হানছেন.... হ্যালো ঋক, হ্যালো, শুনতে পাচ্ছো … আবারো কোনো যান্ত্রিক গোলমাল … হ্যালো … আবারো জানাই, তারাতলার কাছে মাঝরাস্তায় বসে আছেন …ওহ এই তো যোগাযোগ করা গিয়েছে ঋকের সাথে। ঋক, আমাদের জানাও কি অবস্থা ওখানকার।
- হ্যালো নবনীতা, হ্যালো হ্যালো নবনীতা
- হ্যালো ঋক, হ্যালো, আমরা শুনতে পাচ্ছি তুমি বোলো।
- ধুস মাইকটা লাগা ঠিক করে এদিকে। ইয়্যা ও ও হ্যালো নবনীতা … হ্যা শুনতে পাচ্ছো … হ্যা ভদ্রলোক এখনো মাথায় হাত দিয়ে, কিছুই বলছেন না। ক্যামেরা নিয়ে যাচ্ছি তার কাছে। এই যে শুনুন, আপনাকে সমস্ত বাংলা দেখছে, বলুন কি ব্যাপার আপনার। এভাবে কেন বসে আছেন? এই যে শুনছেন?
ভদ্রলোক (ক্যামেরার দিকে এগিয়ে এসে) - য়্যা? ক্যামেরা, সবাই দেখতে পাচ্ছে? চৌরাস্তার সবাই? আমাকে শুনতে পাচ্ছে?
- হ্যা নিশ্চয়। আপনি লাইভ। দর্শকদের জানান, সবাই উদগ্রীব হয়ে বসে আছে।
- ও, (ক্যামেরার দিকে আরও এগিয়ে) ওরে ওই হারামজাদা ঘনা, ওরে ওই ঘনা শুনতে পাচ্ছিস? ঘনেশ্বর ঘোষ? শুনতে পেয়েছিস? তুই পালিয়ে পাড় পাবি না রে, বুঝলি? তুই ব্যাকস্ট্যাব করলি রে হারামজাদা? আমার জীবনের একমাত্র খুশি তুই এভাবে ছিনিয়ে নিলি? একমাত্র খুশি। পাপ লাগবে তোর পাপ। তোর বিবেক কাঁদলো না রে ঘনা? তুই মানুষ? আমি কেস করবো। আমি সুপ্রিম কোর্ট অব্দি যাব। শেষ দেখে ছাড়বো।
- ও নবনীতা, দেখতেই পাচ্ছো। কিছু মারাত্মক হারিয়েছেন ভদ্রলোক। আচ্ছা আচ্ছা, আমাদের একটু খুলে বলুন প্লিস মিস্টার ঘনা কে? উনি কি আপনার পরিচিত? উনি কি করেছেন? চুরি? ডাকাতি? আপনার মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে? আপনার বৌয়ের প্রতি কুনজর? আপনাকে কি আঘাত করেছে? আপনি কি রুলিং পার্টির? মিস্টার ঘনা কি বিরোধী দলের.....
- আরে দাঁড়ান মশাই, কোথা থেকে কি টানছেন? আমার গিন্নির রান্নার স্বাদ বুঝলেন এক্কেবারে স্বর্গসুখ। আজ টিফিনে ছিল লুচি আর ইয়ে মটন। শালা ঘনার বাচ্চা সবকটা লুচি একেবারে থরেথরে সাজিয়ে রেখে সমস্ত মটন সাবাড় করে হাওয়া? এই দেখুন টিফিন বক্স, দেখে বোঝার উপায় নেই, যে এতে কখনও মটন ছিল বলে। নেহাৎ আমার কাছে প্রমাণ আছে, এই যে গিন্নির এসএমএস, "আজ মটন দিলাম আমি, অনেক অনেক হামি”.

- (ঢোক গিলতে গিলতে) য়্যা? ঠিক ঠিক আছে, নমস্কার, ক্যামেরায় ভ্যাবলার সাথে আমি ঋক, জনগণের খবর নেয়, জনগণকে খবর দেয়। 

Thursday, 1 June 2017

সিলভার লাইন

- দিন কাগজটা এদিকে দিন। এটা পেলেন কোথায়?
- বালিশের পাশে। এতে যে শব্দ গুলো আছে, এরা আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় ......
- ও। তা কে দিলো এটা আপনাকে?
- ওই সেইটাই ঠিক মনে করতে পারিনা! উফ খুব কষ্ট হয় মনে করতে .....
- ঠিক আছে, ঠিক আছে, দেখি কি লেখা আছে, সাংসারিক আলাপ?
- ওই আর কি, আল্টিমেটলি অন্যের ছেলে মার্ক্স কম পেলো কিনা সেইটাই লক্ষ্য আর তাতেই মোক্ষ।
- খাতির?
- শুধু যদি ব্যাকগ্রাউন্ড সলিড থাকে। ভালো কানেকশন বা টাকা। অন্ততপক্ষে ভালো বংশ। নাহলে কে তুমি বাবা শান্তিগোপাল?
- ডাঙ্গুলি লাঞ্ছিত ছেলেবেলা?
- জানি জানি, প্রতিদিন দুপুরে আমার অপেক্ষা করেছে। প্রতারণাটা আমিই করেছিলাম। ইঁদুর দৌড়ের নেশার কাছে সব তুচ্ছ মনে হতো। তবু সেতো ছেলেবেলা।
- ড্রেনমগ্ন শব যার পিঠে সতেজ উদ্ভিদের মতো ফুটে রয়েছে অমোঘ একটা ছুরি?
- এ থেকে রেহাই নেই। নোংরা-পঁচা গন্ধটা অনেকদিন থেকেই একটু একটু করে বেড়েছে। আমি বলেছিলাম বুল্টিকে, মাধবীকে, চয়নকে, সান্টুকে, কোকিলকে, পলাশগাছটাকে, সাক্সফোনটাকে, গানের সুরগুলোকে, সকালকে মানে প্রায় সকলকে। কেউ গন্ধ পেতো না। তারপর যখন ছুরিটা দেখা যেতে থাকলো, সবাই যন্ত্রনাটা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করলো, তখন গন্ধটাও টের পাচ্ছিলো। কিন্তু উপায় কি? এভাবেই চলতে হবে। সবাই জখম। ওষুধ কোথায়? শুধু রাতে একটু হাত বোলানোতে কি প্রচন্ড শান্তি।
- আকাশচারী কেরানি?
- ওহ।
- কি হলো?
- এভরি ক্লাউড হ্যাস এ সিলভার লাইন, ডাক্তারবাবু। শনিবার রাতে ফ্লাইং শসারটা নামে যখন ছাতের ওপর। ডাঙ্গুলি টাকে সাথে নি। বুকটা এমন ঢিপঢিপ করে যতক্ষণ না আসে। ঠিক আসে নিয়মাফিক। উঠে যাই ওতে আর .... মহীনের ঘোড়াগুলি টেনে নিয়ে যায় ফ্লাইং শসারটাকে। কি হলো ডাক্তারবাবু চললেন কোথায়?
- আসছি একটা ফোন করে। (ঘর থেকে বেরিয়ে) হমমম আপনার বন্ধুর মেন্টাল ডিসর্ডারটাই ..... বুঝলেন। একটু চিকিৎসার দরকার আছে। আজ এডমিট করে যান ..... ওই দেখুন উনি চেঁচাচ্ছেন। কন্ফার্ম করুন। আমি বলে দেব টীম এখুনি ওনার ট্রিটমেন্ট শুরু করে দেবে।
- (ঘরের ভিতর থেকে) ও ডাক্তারবাবু ..... আরে ও ডাক্তারবাবু .........
আমরা যাইনি ম’রে আজো -তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়,
মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে। .....

(নিচের ছবিটি ১৯৭৮ সালের মহীনের ঘোড়াগুলি বাংলা ব্যান্ডের দ্বিতীয় অ্যালবামের (অজানা উড়ন্ত বস্তু বা আ-উ-ব)।ভারতের সর্বপ্রথম রকব্যান্ড।)