ছাতাটা হারিয়েছি।
কোথায় রেখেছি মনে রাখতে না পারাকেই হারানো বলে, তাই
না?
ছাতাটা হারিয়েছি এই
ধরুন ছটা বর্ষা আগে। এ ক বছরে অবশ্য ছাতা হারিয়েছি এই
স্মৃতিটাই হারিয়ে গেছিলো। মনে পড়লো এই একটা অদ্ভুত ঘটনাটাতে। গত ২৩ দিন ধরে ইতিহাস
বইয়ের পাতায় রাখা একটি চিরকুট পাচ্ছি রোজ। তাতে লেখা,"আমি আছি, ইতি ছাতা"।
প্রথম প্রথম ব্যাপারটাকে ছাতার মাথা বলে উড়িয়ে দিলাম। কিন্তু ইতিহাস পড়া ইগনোর করাতে ওই সেদিন স্যারের কাছে প্রবল বকা খাই। বকা খেয়ে ইতিহাস বইটি খুলতেই আবার ওই চিরকুট। মাথাতে আগুন জ্বলে উঠলো।
সমাধান এবার করতেই হচ্ছে। মা-বাবা-দিদি কে বলতে গেলাম। হিতে বিপরীত। বুঝলাম, সবার ওই ছবর্ষা আগের স্মৃতিটিকে উস্কে দিয়েছি। চিরকুটের উপস্থিতির থেকে ছাতাটির অনুপস্থিতিতে তাঁরা বেশি মর্মাহত। ফলস্বরূপ ছ-বছর
আগে ছাতা হারানোর দিনটির যেন পুনরাবৃতি ঘটলো। সাথে বোনাস প্রাপ্তি- বাবার গুরুগম্ভীর জ্ঞান, ডালের হাতা হাতে মার হাই পিচ উপদেশ আর দিদির? খিল্লিমাখা হাসি। বিশেষ সুবিধা হলো না। সব আশা নিয়ে স্কুলে আমার আমার ডিটেক্টিভ বেস্ট ফ্রেন্ডকে এই ব্যাপারে বললাম। শুরুতেই ওর কথা কেন যে মাথায়
আসেনি! যাই হোক, প্রথমেই শুরু করলাম সবকটা চিরকুট নিয়ে প্যাটার্ন বোঝা। উদ্ধার হলো দুটো জিনিস:
১. লেখাটা কারো একার
নয়। ডিফারেন্ট হ্যান্ডরাইটিং
২. লেখা কালোকালি তে,
কিন্তু শেড এক নয়
এর মধ্যে একটা চিরকুট
নিয়ে বন্ধুটি বেশ সিরিয়াস। বললো,"চল বাড়িতে"। গেলাম। পরিস্কার চকচকে
ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাস নিয়ে এলো ওর দাদার ঘর থেকে। ওই চিরকুটের ওপর কিছুক্ষন ধরতেই
চিৎকার করে উঠলো,"তোর দিদি থিয়েটারের স্ক্রিপ্ট লেখে, তাই না? ওরই কাজ মনে হচ্ছে রে।
দেখ না চিরকুটের ওপর আবছা লেখা, ভূতের গপ্পো ৩। আমার মনে হয় এই চিরকুটটা যে পাতাতে
লেখা তার আগের পাতাতেই এই গল্পের প্লটটা লেখা শুরু হয়েছিল। ডটপেনে চেপে লেখে বোধহয়,
তাই ছাপ পড়েছে নিচের পাতায়। ভেবেছিলো, তুই এই চিরকুট দেখে ভয় পাবি, তাই তোর সাথে একটা রিয়েল এক্সপেরিমেন্ট
করতে চেয়েছিলো।"
"জিও কাকা"
বলে লাফিয়ে উঠলাম। ঠিকই তো, বাড়ির লোক ছাড়া রোজ রোজ আমার ঘরে ঢুকে এ কাজ কে করবে! আজ বাড়ি গিয়ে একটা দুর্দান্ত
ক্লাইম্যাক্স মোমেন্ট যে ক্রিয়েট করবো, সে নিয়ে সন্দেহ নেই। উফফ ভেবেই রোমাঞ্চ জাগছে। মনে হচ্ছে এবার আমার ছাতা হারানোর দোষটা কাটবে।
খুশিতে ডগমগ আমি যখন বন্ধুটির সাথে সমাধান উদযাপন
করছি, ওর দাদা পাশের ঘর থেকে ঢুকে বলে," তোপসে, আমার ম্যাগনিফায়িং গ্লাসটা .... ও তোর হাতে। তোদের
কাজ হয়ে গেলে দিয়ে যাস। আর শোন, বাড়িতে সন্দেশ আছে। চাই তো এখুনি ভিতরে
যা দৌড়ে।" এই বোনাস সন্দেশ জিভের চারিধারে ঘুরঘুর করতে করতে বললো, মনে হয় দিদি এরকম কাজ বার
বার করুক। ২১ রজনী সেনের এই বাড়ি আমার এই জন্য এতো ফেভারিট।
No comments:
Post a Comment