নিশিকান্ত ভালোবাসতে ভালোবাসে। অথচ প্রথম প্রেমে দড়াম ধাক্কা খেয়েছিল। প্রেমের কটা বছর কেটেছিল প্রতিমুহূর্তে ভালোবাসার মানুষকে ভেবে ভেবে। প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর সেই ভাবনাগুলোই ক্যাকটাসের তীক্ষ্ণ স্পাইনের মত বিঁধেছিল। দুটো পর্যায়ই গভীর। দুর্ভাগ্য নিশিকান্ত-এর মধ্যে আবেগের ভলিউম সাধারণের থেকে বেশি। বন্ধু, গান, বই, কাজ, পরিবার, রাস্তা, গাছ, আকাশ, দুর্গাপুজো, রবিবার, মদ, গাঁজা এত্ত কিছু তার জীবনে থাকলেও শুধু ওই প্রেম-প্রেম ব্যাপারটাই নিশিকান্তর জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন, তা কেউ বোঝে না! কাউকে ভালোবাসা আর কেউ তাকে ভালোবাসে এইটুকুর প্রত্যয়ই তো তার চাওয়া। এখন সোশ্যাল মিডিয়া আছে। তার মাধ্যমে বন্ধু পাওয়া একেবারে ঢেঁকুর তোলার মতো সহজ। কিন্তু এখন নিশিকান্ত একটু বড়ো হয়েছে। ছোট্টবেলার প্রেমটা তার যেমন তেমন কিভাবে যেন হয়ে গিয়েছিলো। এবার তো সে সচেতন। নিজের একটা চেকলিস্ট বানিয়েছে সে। সোশ্যাল মিডিয়ার মানুষজনকে নিশিকান্তর ভীষণ shallow মনে হয়। গভীরতা নেই। সবটাই রঙ চঙে মলাট। সবাই সব জানে। অথচ আঙ্গুল ডোবে না। নিশিকান্তর আরো বেশ কয়েকটা সমস্যা আছে, সে নিজের বয়সের ছেলেমেয়ের চেয়ে মানসিকভাবে একটু বেশিই বড়। নিজের গায়ের রং আর কাজকর্মের পরিধি নিয়ে হীনমন্যতা আছে। তার নিজের গুণ মানুষের কাছে বাড়িয়ে না বলে বরং লুকোনোর মহান গুণ আছে। সৎ হয়ে থাকার আর ভালোমানুষ হওয়ার বাতিক আছে। অর্থাৎ আজকের টিকে থাকার রেসে কোনোটাই এক্সেপটেবল ক্রাইটেরিয়া নয়। অতএব সঠিক মানুষের খোঁজ নিশিকান্ত পায় না। এভাবে দশ বছর কাটে। পাব, বালিগঞ্জ স্টেশন, গাঁজার ঠেক, মানসিক ডাক্তার, ওষুধ আর চায়ের দোকান ধীরে ধীরে আবছা হয়ে যাচ্ছে। নিশিকান্ত সব ছেড়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করবে ভাবছে সচেতন ভাবে।
আর যখন চারিদিক বন্ধ, ছোট্ট পুঁচকে আলো এলো নিশিকান্তএর সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্রেন্ড লিস্টে। যত আলাপ বাড়ে নিশিকান্তর মনে হয়, যেন এর জন্যই তার অপেক্ষা। চেকলিস্ট মাইল যাচ্ছে ম্যাজিকের মতো। সিনেমা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন। এরকম হয়না বাস্তবে। কিন্তু স্বপ্নটাই আরো বেশিক্ষণ দেখবে বলে নিশিকান্ত ডুব দেয় স্বপ্নসিন্ধুতে। এরপরের দিনগুলো একেবারে দুর্গাপুজোর মতো। পেটে প্রজাপতি, ইমোশনের চড়াই উৎরাই, রাগ-অভিমানের নাগরদোলা কি নেই। ধীরে ধীরে নিশিকান্ত সেই একেবারে হারিয়ে ফেলা প্রত্যয় খুঁজে পায় নিজের মধ্যে। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে নিশিকান্তর এখন খুব। জীবনটাকে এইবার যেন জীবন বলে মনে হচ্ছে নিশিকান্তর। এতদিন যেন শীতঘুমে ছিল। এভাবেই মধুযামিনী চললো এক্সপ্রেসওয়েতে একশো কুড়ি কিলোমিটার বেগে। সবকিছুর মত সেসব কাটতেই নতুন সমস্যা তৈরী হলো। নতুন মানুষের সাথে চাওয়া পাওয়ার সমস্যা। দুজনেই প্রত্যাশা ভালোবাসা, কিন্তু চাহিদা দুজনেরই, একই সময়ে, অনেকটা। কেউ একটু পিছু হটে আরেকজনকে সুযোগ দিতে চায় না। ভালোবাসাটুকুই তো চাই। তাতে আপোষ কেন! যুক্তির আইসবার্গ তৈরী হয়ে পোক্ত। সহজে তা গলে না। শেষে কান্নাকাটি, ভাঙ্গাভাঙ্গি। নিশিকান্ত ভালোবাসা চেয়েছিল। কিন্তু মৌলিক পদার্থ নিয়ে তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। শুধুই পেটে প্রজাপতি ভালোবাসা নয়। ধৈর্য্য, সময়, আপোষ, নিয়ন্ত্রণ, অনু পরমাণু এসব যে এতো গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝেনি নিশিকান্ত। এখন নিশিকান্তর সব আছে। কিন্তু শান্তি? স্থিরতা? হারমোনি?