Wednesday, 21 August 2024

নীলচে শাড়ি

 - বলছি ঘুমাচ্ছিস?

- না
- লাঞ্চ?
- হবে
- সেকি অনেক দেরী হলো যে! খিদে পায় নি?
- তুই এইসব ন্যাকা প্রশ্ন করা শুরু করলি কবে থেকে! আমি একটু ল্যাদ খাচ্ছি। তোর কি হয়েছে বলতো।
- মস্ত কাণ্ড।
- কি রে?
- ঘুড়িটা উড়ে এসে পড়লো আমাদের নারকেল গাছে। দুলল হাওয়ায়। নীলচে রং ঠিক ওই ডিসেম্বর বিয়ে বাড়িতে তুই যে শাড়িটা পড়ে গিয়েছিলি, সেই রঙের। মনে পড়লো তুই ভিডিও কল করে দেখালি তোকে কি সুন্দর লাগছে। দেখলাম কাঠঠোকরা ওই ঘুড়ি বাইপাস করে দিব্যি নিজের কাজ করে চলে গেলো। কাকও তাই। নারকেল গাছের বোরিং ডালগুলো বেশ গ্ল্যামার পেলো, বুঝলি। তারপর হঠাৎ মেঘ কালো, ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামলো। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর সব শান্ত হলো যখন, দেখি ঘুড়ির শুধু কাঠামোটাই পড়ে আছে। আর সব ...... তোর কথা হঠাৎ এত মনে পড়লো। একটিবার তোর সাথে কথা না বললে মনে হচ্ছিলো যেন তোকে ..... যেন তোকে হারিয়েই ফেললাম। ভালো আছিস তো তিতির? তুই ঠিক থাকবি কিন্তু, আমার জন্য প্লিজ। কথা দে।


অনাদি

 - মিষ্টি ভালবাসিস না যখন কেক এনে ন্যাকামো করে কি লাভ!

- সেই তো।
- তাই এটাই, স্ট্রেট ফ্রম .....?
- অনাদি?
- এক্কেরে ম্যাডাম।
- হমম, লাব্বু গাব্বু। তা মশাই, আজ না তো আমার বাড্ডে....
- বাদ্দে। আজ আমার মনের কানে খবর এলো যে তোর জিভে অনাদির দু টুকরো না পড়লেই নয়। ধর্মধর্মীর গর্মাগর্মীতে বিয়েতে না তুই ভালো করে সাজতে পারলি, না বছর বছর জন্মদিনে এবাড়ি ওবাড়ি থেকে সেলিব্রেশন হয়। এবার আমার গলায় ঝুলেছিস যখন ...... অক্কে সরি আমাকে যখন তোর গলায় সারাজীবন ঝুলতেই হবে, সেক্ষেত্রে গলার ভিতর-বাহির যাতে চনমনে থাকে, সে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করতে হবে আমাকেই যে ম্যাডাম।
- বুঝেছি, নাটক সম্রাট দিলবার খাঁ। ছুরি কাঁচি রেডি। আর কিছু?
- এই ডিজাইনার ক্যান্ডেল।
- ধুস। মোগালাইয়ে ক্যান্ডেল।
- ইয়েস ম্যাডাম। প্রাচ্য পাশ্চাত্য এক করে দিয়েছি শুধু একটাই আশা। চোখ বন্ধ করে তুই কি সব গুণগুণ করবি, তারপর ক্যান্ডেল লাইট ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিয়ে ওই মারকাটারি চোখে তাকাবি আমার দিকে, ব্লাকমাজিকে আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুল ফুটবে, এইটুকুই। তারপর প্রসাদ হিসেবে একটুকরো ছুড়ে দিস অধমের দিকে, ব্যাস.....


ভোলা ময়রা

 - ভোলা ময়রা

- হে হে, এর নাম বুঝি?
- এই নামটাই দিলাম।ইনি ভারী ভোলা। সবাইকে ভালোবেসে ফেলে। পুষ্পশ্রীর সামনের ওই গাছের পিছনে ওর আস্তানা। বৃষ্টি হলে বেচারা খুব কষ্ট পায়। আমাদের বারান্দার জায়গাটা ওর আজকাল বেশ পছন্দ হয়েছে। বাবা রাগারাগি করছে বটে।
- এই রে।
- ও কোনো ব্যাপার না। মা ঠিক ম্যানেজ করে দেবে। তুই জানিস তো, তোকে কি করতে হবে।
- দুধ?
- চলবে।
- ভাত?
- দৌড়োবে।
- চকলেট?
- পাগল হলি?
- হে হে, জানি রে বাবা। চকলেট চলবে না। সোয়ারমা?
- উফফ তুই না, খিদে পাইয়ে দিলি। ভোলার জন্য তুই দুধ-ভাত-রুটি আনিস। বাকি আমি দেখে নেবো। এখন চল, এভেন্জার্স-এন্ডগেম ট্রিট হোক। আজ তোকে সোয়ারমা খাওয়াই।
- সিরিয়াসলি?
- হ্যাঁ চল না।
- তারপর তুই আইরন ম্যান হয়ে নর্থ কোরিয়া চলে গেলি। শুনেছিস কি হচ্ছে ওখানে!
- হমম। ওখানে ঘর থেকে কুকুর কেড়ে নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে। "বুর্জোয়া বিরোধীতা" র নামে আসলে ওই কুকুরদের মেরে খাবে। ওই লোকগুলোকে ....
- শেষ করে দিতিস মুহূর্তের মধ্যে। ওদের বিবেক নেই রে। ওরা কি করছে ওরা জানে না। সত্যি যদি আইরন ম্যানের শক্তি মিলতো ..... ওকি বুবাই কাঁদছিস নাকি তুই? পাগল তুই। ওদেশের কুকুরদের রেসকিউ করার ক্ষমতা নেই আমাদের। কিন্তু আমরা এখান থেকেই শুরু করি। এই পাড়া, ওই পাড়া, আমাদের শহর, শহরের বাইরে গ্রাম ...... কত্ত কাজ বলতো। ওরে, শুনছিস তুই? ভোলা ময়রার চোখটা দ্যাখ। কিরকম মায়া ভরে দেখছে তোকে। আমরা ওদের এতো ভালোবাসা দেব, যে কোরিয়ার ওই কুকুরগুলো, রিইনকার্নেট করে আমাদের দেশে জন্মাবে, সব্বাই। এই তো ছেলের মুখে হাসি ফুটেছে। ওই, আমার খিদে পেয়েছে। সোয়ারমা খাওয়াবি বল্লি যে, ঢপ দিলি নাকি।




"এডজাস্ট" মহামন্ত্র

 "ওরা"

কথা বলতে বলতে হাঁটা দেয় অন্যদিকে।
ইচ্ছে হলেই কথা শুরু করে দেয় যার-তার সাথে। যে কোনো টপিক। যা হোক ভাষা।
যেটাতে প্রতিরোধ পায়, সেটাতেই আগ্রহ জন্মায়।
সামনে আলুভাজা দেখলেই ঝাঁপিয়ে পরে। সে প্লেট-হাত পরিচিত হোক বা একেবারেই অজ্ঞাত। খিদে পেলেই গপাগপ।
"কি-কি-খেতে-নেই" সে লিস্টটা তাদের ডাটাবেসে নেই। পটাপট ব্যাঙ-টিকটিকি-আরশোলা ধরে কে-এফ-সি-র বার্গার ভেবে ফেলে।
কখন এক পাত্র জলে হাত ঝাপ্টে মজা। কখন সেই জল দেখেই কান্না।
কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ উল্টে পরে সবার সামনে, হঠাৎ পাল্টি খায়।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো, জামা-কাপড় ছাড়াই বেরিয়ে পরে রাস্তায়। প্রতিবেশী কাকিমার ভাষায় "একটা সুতো অব্দি নেই গায়ে"। (একটা সুতো থাকলেই কি তফাৎ কিছু হতো?)
"ওরা" মঙ্গোলিয়ার আদিবাসীরা।
"ওরা" কলকাতার রাস্তাতেও ঘোরে। আপনারা ওদের পাগল বলেন।
"ওরা" আপনার বাড়িতেও আছে। আপনারা ওদের শিশু বলেন।
মানে বুঝতেই পারছেন হে হে আপনি নিজেও এরকমই ছিলেন, ওই যখন সবে সবে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন আপনি, তখন।
তারপর যা হয় আর কি। সুশীল-সমাজ -এর রাজ্যে যারা বন্দী, তারা মানে আপনারা সুশীল-সমাজ -এর শিক্ষা-দীক্ষায় (চাপে) ওদের থেকে অন্যরকম হয়ে ওঠেন।
কষ্ট হচ্ছে?
কি আর করবেন বলুন।
যাহোক তাহোক করার ভাগ্য কি সবার থাকে মশাই।
বন্দীদশা তেই তো দিব্বি এডজাস্ট হয়ে গেছেন মশাই। "এডজাস্ট" মহামন্ত্র। জপতে থাকুন।