আমার এক পুরুষ বন্ধু। কষ্ট পেলে সে কেঁদে ফেলে। কি ভীষণ অবাক কান্ড! ছোটবেলা থেকে আশপাশের লোকজনের ধারাবাহিক ঠাট্টার চাপে আজকাল চোখ কিঞ্চিৎ ছলছল হয়, যা কিছু পরেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তার ধারণা সে এবার বোধহয় যথেষ্ট "পুরুষ" হয়েছে।
আমার এক দাদার শপিং না করলে মাস পূরণ হয় না। লোকজন তাকে "বাতিকগ্রস্ত" বলে। বলে, "মেয়েদের মত স্বভাব"।
আমার এক মেসো টিকটিকি দেখলেই লাফায়। মাসীর পিছনে লুকিয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরা মেসোকে আড়ালে "মেয়েছেলে" বলে। মাসিকে কেন যে "ব্যাটাছেলে" বলে না, তা বুঝি না!
আমার এক পরিচিত পুরুষ তার বৌ প্রেগনেন্ট হওয়ার পরেই চাকরি ছেড়ে হাউস-হাসব্যান্ড হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্বেচ্ছায়। বৌ নিশ্চিন্তে চাকরি করে। আত্মীয়স্বজন শুরুতে খামখেয়ালি করছে ভেবেছিল। বেশ কিছুদিন যেতে ঘটনার গাম্ভীর্য্য বুঝে তারা একশো কুড়ি কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে বাড়ি এসে বা ফোন করে মনোবিদ-গিরি করেছিলেন, পরিস্থিতির অস্বাভাবিকত্ব বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই। কোনও হেলদোল হয়নি দেখে গালাগালি করে তবে বাড়ি ফিরেছেন।
আমার দেখা কিছু পুরুষ গোলাপি রং পছন্দ করে। কী লজ্জা!
আমার দেখা কিছু পুরুষের ভয়ানক মুড সুইং হয় থেকে থেকে। অযৌক্তিক আর্গুমেন্টের কাঞ্চনজঙ্ঘা তৈরী হয়। কী ভয়ঙ্কর!
অনেক পুরুষই কখনও পছন্দের মানুষের কাছে নিজেকে সর্বস্ব ছেড়ে দিয়ে গলা ছেড়ে কাঁদতে চেয়েছে আর চেয়েছে যাতে সেই মুহূর্তে কেউ মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিক। কী ন্যাকা!
আর এসবের পর যদি সামনে আসে "গে" পুরুষ, তাহলে তো আর... যাক-গে।
কথা হচ্ছে, উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট আজকাল মার্কেটে যতটা অনুকূল, পুরুষদের ওভার-এমপাওয়ারমেন্ট ততটাই সংকুল। রণে বনে জলে জঙ্গলে এমনকি স্বপ্নেও পুরুষের "পুরুষ" হয়ে থাকার অহোরাত্র নাটক করে যেতে হচ্ছে। মারাত্মক!
আমাদের মতো দেশে যেখানে ছোটবেলা থেকেই পুরুষদের শেখানো হয় তুমি একটা টাকা তৈরীর মেশিন। অনেক টাকা রোজগার করতে হবে, গাড়ি কিনতে হবে, সবাইকে "দেখাতে" হবে। নিদেনপক্ষে ভবিষ্যতে একটা গার্লফ্রেন্ড বা বৌ জোটানোর জন্যও টাকা রোজগার করতে হবে। তোমাকে শেখানো হয়, একবার টাকা রোজগার করলে তুমি হবে রাজা।
যদি দেখাতেই হয় শুধু রাগ দেখাও। তুমি রানা প্রতাপ হবে।
গৌতম হবে, গম্ভীর হবে, বুদ্ধ হতে যেও না।
তোমার কাঁদলে চলবে না। ডিপ্রেশন আবার কী!
টাট্টু ঘোড়া হয়ে শুধু ছুটতে হবে। মেয়েরা শুধুই "টাফ গাই" গায় এবং চায়।
গার্লফ্রেন্ড না থাকলে অথবা এখনও ভার্জিন থাকলে তোমার মুখে কচুপাতা ঢেকে চলা উচিত।
মায়ের আর বৌয়ের ওয়েইট স্কেল মেশিনের ব্যালান্স তুমি।
এসবের মধ্যেও তুমি চলছো। ব্যালান্স করছো। কখনো লুকিয়ে কেঁদে, কখনো স্লিপিং পিল খেয়ে বা নেশাগ্রস্ত হয়ে .....
কিন্তু ইকোসিস্টেমের তুমি অর্ধাংশ। তুমি yin yang এর অর্ধ্যেক। তুমি অর্ধনারীশ্বরের আংশিক। তোমাকে ছেড়ে তো কিছুই নয়।
কাঁদতে পারো তুমি, তুমি কোমল হতে পারো, ডিপ্রেশন স্বাভাবিক হতে পারে, কন্সালটেন্সি নিচ্ছো বলে হাসছে যারা তারা অশিক্ষিত, ভার্জিনিটি একটা অপসন ঠিক যেমন বিয়ে অথবা সন্তান।
"ইমোশন" জেন্ডার স্পেসিফিক নয় গো।
#happyinternationalmensday #InternationalMensDay
No comments:
Post a Comment