Monday, 4 November 2024

ভারতীয় আর বাঙালি আলাদা

 ঠিক এইসময়টাতে ভারতীয় আর বাঙালি আলাদা।

দেশের বাইরে সবাই যখন বাঙালিকে প্রশ্ন করছে, আর ইউ নট সেলিব্রেটিং দিওয়ালি? কি করে বোঝাই, মশাই, উই ডোন্ট হ্যাভ দিওয়ালি। ছোটবেলায় দীপাবলিও তেমন জানতাম না। কালীপুজো এটাই। বাজি ফাটবে। ভয় হতো। তারাবাতি আর সাপবাজি ফাটাতে সাহস পেতাম। চকোলেটের মতো সুস্বাদু বস্তু কালীপুজোয় হঠাৎ বোমা হয়ে মহা ত্রাস তৈরী করতো। কালীপটকা নিয়ে নাজেহাল ছিল কুকুর শ্রেণী। তুবড়ি প্রতিযোগিতা হতো। দেখতে বেশ লাগতো। কার তুবড়ি কত উঁচু। পাড়ায় শাঁখ বাজানোর প্রতিযোগিতাও হতো। কখনও বুক কাঁপিয়ে দিতো। কখনও হাসি ছুটিয়ে দিতো। তবে এসবের পরেও একটা চিন্তা দুদিন পরেই স্কুল খুলবে আর খুললেই পরীক্ষা। অর্থাৎ কালীপুজো মানেই ছুটি শেষ।  

"হ্যাপ্পি দিওয়ালি"র ঢাই কিলো-কা হাতের ভয়ে সেই সব দীপাবলি, প্রদীপ-মোমবাতিকে বগলদাবা করে কেটে পড়ার তালে। টুনির মা বাজার মাতিয়ে ফেলেছে মশাই।

আর এসেছে ঝাঁটা। কেন! কেউ জানে না। কিন্তু সবার বাড়িতে ঝেঁটিয়ে ঝাঁটা। 

ভূত চতুর্দশী কাকে বলে? ঘরে ঘরে এখন হালোইন ইন। শিশুরা এখন বাজি নয়, কুমড়ো নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করছে। ছয় বছরের রিয়া বাবাকে বাজার থেকে কুমড়ো আনতে বলছে। বাবা হা। দিদিমা গদ গদ। বৌমা মেয়েকে এখন থেকেই রান্না শেখাচ্ছে বুঝি, আহা! রিয়া বলে উঠলো, মা ছুরিতে ধার আছে তো? ভূতের দাঁত বানাতে হবে। দিদিমা জল খেলেন।

তবে বাজির ব্যাপারটা তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে (হয়তো)! ছোটবেলার চকোলেট বোমা, কালী পটকা, দোদোমা, দিদিমা, কাকিমা, মাসিমা, এই মা, ওই মা যে কত দাদুর হার্টএটাক ঘটিয়েছে, কত কাকু যে সাময়িক বধিরত্ব পেয়েছিলেন, কত কুকুরের যে ল্যাজ পুড়েছিল, কতদিন যে সে আতঙ্কে ডাস্টবিনের পিছনে লুকিয়েছিল, তার ইয়ত্তা নেই। সেসব, বাজি বাজার থেকে যে আপাতদৃষ্টিতে বেপাত্তা, তাতে আমি বেশ খুশি। লুকিয়ে যারা আজও ডিমান্ড এবং সাপ্লাই এ অংশ নিচ্ছেন, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় শীঘ্রই হোক, এই প্রার্থনা করি।

যাই হোক, দীপাবলি শুভ কাটুক।

(26 October 2019)




No comments:

Post a Comment