Monday, 30 December 2024

সকাল ৪ টে

সকাল ৪ টে নয় মশাই, মাঝরাত ৪টে। ঐসময় ঘুম থেকে ওঠার মোটিভেশন শুধু লুচি আলুরদম ছাড়া অন্য কিছু হয় না, হতে পারে না, হওয়া অন্যায়। কিন্তু হলো। কারণ আগেরদিন ঠিক হয়েছিল সবাই মিলে যাওয়া হবে উদ্যেশ্য হীন গন্তব্যে। বড় সহজেই আগেরদিন মুখ ফস্কে কোনও কথা দেওয়া। বড় কঠিন মাঝরাতে, সে কথার দাম রাখা। অ্যালার্ম আর ফোন কল বেজে বেজে যখন মাথার মধ্যে হ জ ব র ল করছে, নিজেকে সামলে যুদ্ধে নেমে পড়লাম। নানা মুনির মত এ গুতো খেয়ে শেষে ভোট প্রসেসে যে যে জায়গা যাওয়ার প্ল্যান হলো, তার সবকটাতেই গিয়ে দেখা গেলো হয় সে জায়গা আপাতত বন্ধ বা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বা নেহাতই ভুল সিদ্ধান্ত। ঠিক হলো জমিয়ে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক যাতে মনে মলম মালিশ হয়। খিদের কথায় "খিদে" মাথায় ছাইয়া ছাইয়া করতে শুরু করল। আকাশ মেঘলা। গাড়ি চলতে শুরু করল পার্ক স্ট্রিটের দিকে। বিদ্যাসাগর সেতুতে উঠতেই ক্লাচ ক্লা ক্লা করে কলা দেখিয়ে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। এগোয় না। পিছিয়ে পড়ে ঢাল বেয়ে। কোনরকমে গাড়ি বন্ধ করে নিজেদের ঢলে পড়া থেকে বাঁচানো গেল। এবার? গাড়ি ক্ষেপে উঠেছে। রেসকিউ গাড়ি, গারাজ সবাই নারাজ। সবার মুখে বিপবিপ, বুকে ঢিপঢিপ, চোখ করুন, অবস্থা পিতামহ ভীষ্ম। পাশ দিয়ে প্রচুর গাড়ি ছুটছে স্যাট স্যাট। বাস থেকে উৎসাহী জনতা ব্রিজ দেখছে আর আমাদের দেখছে। দুটোই তাদের কাছে বেশ নতুনত্ব, বেশ আজিব। আমরা আটকে। 

দুটো কাকও এল। এদিক ওদিক দেখল, কিন্তু আমাদের দেখল না। চুমু খেল একজন আরেকজনকে। আর তারপর উড়ে গেল। একটা ছেলে মেয়ে বাইক নিয়ে এলো, আমাদের দেখল না। জড়িয়ে সেল্ফি তুলল, তারপর চলে গেল। একটি ছেলে বস্তা মাথায় চলতে চলতে একটু দাঁড়াল, রেলিং ধরল, কি একটা ভাবল, তারপর চলে গেল।

এমন সময় রেসকিউ গাড়ি থেকে কল করল, "দাদা আপনারা কোথায়। হ্যাজার্ড লাইট জ্বলছে তো? আর মিনিট পাঁচেক।" সূর্য বেশ জ্বলজ্বল করছে।



আলবার্ট-হল

 সাড়ে পাঁচ কাপ কফি: 

টেবিল চাপড়ে নিজের বক্তব্যে বঙ্কিমচন্দ্র স্ট্রীটে টর্নেডোর জন্ম দিতে। 

দুটো মাটন কাটলেট:

পাশের টেবিলের সাথে তালে তাল দিতে। 

একটা ফিশ কবিরাজী:

বাংলাতে মাছের ডিমান্ড-সাপ্লাই চেইন টা বহাল রাখতে। 


শুনি, আজকাল মেজাজ নাকি আগের মতো আর নেই। না রং, না রূপ, না গন্ধ। তবু! 

মন দিয়ে দেখলে টেবিলে কি আজও চাপড়ের দাগ পাওয়া যায় না?

চোখ বন্ধ করলে কি শোনা যায় না, ফ্রাস্ট্রেশনের হুঙ্কার, প্রথম ভালোবাসার অনুচ্চার, বন্ধুত্বের আশ্বাস আরও কোটি কোটি আভাস?

বলছি, কেউ কি আলবার্ট-হলে রাবড়ি মিস করেন না? একেবারেই করেন না?

(30-Dec-2017)




Wednesday, 25 December 2024

বড়দিনের মেটামরফোসিস

 

আজকালকার বড়দিনের মেটামরফোসিসে, সান্তা আছে, পান্তাও আছে, পাবলিক সবজান্তাও আছে।

প্লাষ্টিক-ফুল-শিরসজ্জিতা এঞ্জেল থিকথিক।

যদুবাবুর বাজারে ইস্পেশাল ট্রাফি-কেক।

সুমন-অঞ্জন এক ছাদের তলায়। একজন একে। অন্য দোতলায়।

মোমোর গন্ধে ম-ম এক্সাইড।

ফুচকা আর এগরোল যথারীতি ফুড বিলবোর্ডের তালিকার টপে।

আলু আর ডিম হলো বাংলার "আপনি থাকছেন স্যার" রজতাভ দত্ত। সবেতেই আছেন।

আঙ্গুল উঁচিয়ে "ট্রাফিক রুল, তুমি ভুল" বলে সদর্পে লালবাতিতেই এগিয়ে যায় হাতে হাত ধরা সদ্য প্রেমে পড়া ম্যাংগো-জনতা।

সাউথ কলকাতা চকমক।

বাস নেই, ট্যাক্সি নেই।

মেট্রো বাঙালি-ওষুধ-বাক্সের চেয়েও ওভারলোডেড।

ওলা-উবের ধনকুবের।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই স্মাইলিং। কেউ দুঃখী নেই এ তল্লাটে। একমাত্র আবশ্যিক হলো কেক, অন্য সবকিছু চূড়ান্ত ফেক। সবকিছুই। কিছুদিন আগে অব্দি বড়দিন বলতে চিড়িয়াখানা, একাডেমি, জাদুঘর, নিকোপার্ক ছিল। লম্বা লাইন দেখা যেত দূরদূরান্ত থেকে। এখন পার্কস্ট্রিট আর বো-ব্যারাক্স । দুর্গাপুজোর মতো দলে দলে সবাই চলে। কিসের দিকে  এগোচ্ছে কেউ জানে না । হয়ত কিছু বছর পরে প্যান্ডেল হবে। যীশু-সান্টা মঞ্চে বসবেন। প্যান্ডেলের থিম হবে। উৎসব ২৫ থেকে ৩১ অব্দি চলবে।  মন্দ কী! মানুষ নতুন নতুন জামা পড়বে, ছবি তুলবে , সবাইকে দ্যাখাবে। কেউ কারোরটা দেখবে না। সব সবাই নিজের জন্যই করে যাবে। একটা ঘোরের মধ্যে জীবন কাটবে। নো সমস্যা, নো ক্রিয়েটিভিটি, নো বুদ্ধিমত্তা , নো প্রশ্ন। 

পূর্ণিমার চাঁদটা বড়ো ভালো, সাথে সাথে থাকে।



(২৬ ডিসেম্বর ২০১৮)





Monday, 23 December 2024

মাদুলি নয়, মাজুলি

 রসিকবাবু বলেন, শীতকালে যাওয়া উচিত মাজুলি।

মাদুলি নয়, মাজুলি।
সকালবেলা আড়মোড়া ভাঙেন যে দিকে মুখ ঘুড়িয়ে, হ্যা হ্যা ঠিক ওই দিকে।
অনলি থাউসেন্ড কিলোমিটারস ফ্রম কোলকাত্তা।
পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপটি যে একেবারেই আপনার পড়শি তা কি জানতেন? মিসিং উপজাতিদের খ্রীষ্টমাস সেলেব্রেশন দেখেছেন কখনো?
অবশ্য শুধুই যে সেই জন্যই রসিকবাবু মাজুলি জপ করেন, তা নয়।
রসিকবাবু বিয়ের পর যে বার প্রথম গিন্নীকে নিয়ে মাজুলি গেছিলেন, সে বছর গিন্নীকে মিসিংদের বানানো মুখোশ কিনে দিতে, গিন্নী খুশিতে লাফিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন রসিকবাবুকে।
ওরকম এক বাজার লোকের সামনে শুধু গোঁফওয়ালা অনিল কাপুরকেই জড়িয়ে দেখতে দেখা যায়, ওই বত্রিশ ইঞ্চি স্ক্রিনে।
এরকম একটা ঘটনা রসিকবাবুর সাথেই যে ঘটে যাবে, তা তো কখনো ভাবেননি। প্রথমে হঠাৎ একটু ভেবলে গেলেও, ঠিক সামলেছেন। শুধু ঘটনার আচম্বিকতাতে শারুখ খানের মতো ডানা মেলতে ভুলে গেছিলেন। তাই ডানা মেলার প্রাকটিস চালিয়ে যান বাথরুমে। আর প্রতিবছর ঢুঁ মারেন গিন্নীর সাথে, মাজুলিতে, মুখোশ হাতে।
তাই শীতকালেই, হ্যা ওই শীতকালেই মাজুলি যেতে সাজেস্ট করেন রসিকবাবু।
মুখোশটা কিন্তু মাস্ট।





Wednesday, 4 December 2024

ভুলের পর ভুল করে যাচ্ছ

 একটা পাখি উড়তে উড়তে বলে গেলো, "ভুলের পর ভুল করে যাচ্ছ।"

একটা শিরশিরে দমকা হাওয়া হঠাৎ ঘুরে ফিসফিস করল, "উহু, অন্যায়।"

একমুঠো রোদ চমকে উঠে বলল, "কি করে সহ্য করছ?"

এক মেঘ তার বৃষ্টিকে বুকে আগলে বলতে বোল্ট চলে গেলো, "দমবন্ধ লাগে না তোমাদের? আমাদের লাগে"

ধূসর গাছগুলো ক্লান্ত হয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছে,"হাহ"। 

একটা সবুজ পাতা খুশি খুশি মুখে পৃথিবীকে প্রথম দেখবে বলে মুখ বাড়াতেই আশেপাশের বয়স্ক পাতারা ভয় পেল। বলল,"লুকিয়ে পর, লুকিয়ে পর।"

লম্বা লম্বা নির্মাণগুলি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। "হমম" 

এক মনকেমনকরা চাঁদের আলো বলল, "ভালো আছো? ভালো থেকো।"


আমি অবাক হয়ে বললাম, "এরকম কেন বলছ? কি হয়েছে তোমাদের?"


ওরা একসাথে চিৎকার করে বলে উঠল, "মনুষ্যত্ব মশাইকে দেখতে পাচ্ছি না বহুদিন। উনি বাড়ি আছেন?"


(০৫ -ডিসেম্বর-২০১৭)



Tuesday, 3 December 2024

মেয়েটি কি কাঁদছিলো?

 বাচ্চা মেয়ে। কি সুন্দর পোজে ঠমকি চমকি!

"কলসি কাঁখে চলছি মৃদু চালে" পায়ে নূপুর ধিনাক না তিন তালে।
একটু ভালো করে দেখলে তার গায়ের ময়লা চোখে পড়ে কি? আরো ভালো করে দেখলে ওর নাক থেকে ঝরা জল?
মেয়েটি কি কাঁদছিলো?
আচ্ছা ওকে মেয়ে বলা যায়? নাকি ও এখনো শিশু? যার নিজের কোলে চড়ার বয়স, সে কলসি বয়ে চলেছে!
ছবিতে তো আর সব ধরা পড়ে না। ভালো করে দেখলেও কতটাই বা জানা যায়, বোঝা যায়।
কত গল্প অজানা থেকে যায়, যা জানলে ছবির সাথে দূরত্ব লক্ষ ক্রোশ বেড়ে যায়।
আমি এই ছবিটার নাম দিয়েছি "জীবন" কারণ এতে হাসি আর কান্না দুটোই (আন) ফেয়ারলি ব্যালান্সড।
(04-Dec-2020)

(Pic from Internet)