Tuesday, 28 January 2025

জীবন যুক্তিহীন

এই যে ধরুন ভালোলাগছে কাউকে, মনে মনে একটা চার দেওয়ালে তাকে এই যে বেঁধে নেওয়া, এই যে চোখে-ঠোঁটে-গালে লেগে লেগে থাকা, এই যে মুহূর্তেই সবচেয়ে কাছের সবচেয়ে প্রিয় আত্মার আত্মীয় হয়ে যাওয়া,

তারপর

এই যে একদিকে পালাই পালাই ভাব, অন্যদিকে এই যে ছেড়ে দিতে না চাওয়া, এই যে কান্না গিলে হঠাৎ করে বড় হয়ে যাওয়া,

তারপর

রাস্তায় হঠাৎ আবার এই যে তার সাথে দেখা হওয়া, বুকের ভিতর এই যে চিনচিন, এই যে চোখ না নামিয়ে এগিয়ে যাওয়া, কষ্টকে এই যে এখন আর ভয় না পাওয়া,

একে বোধহয় পরিপূর্ণতা বলে।

একেই বোধহয় রবীন্দ্রনাথ বলে।

একেই বোধহয় সাহিত্য বলে।

আর একেই বোধহয় আল্টিমেটলি জীবন বলে।

 oedosSrnpt80m19altJ2auaf1u1rg52t9a hy0ca cn8121af21a5h5212u0 



Monday, 27 January 2025

স্বপ্নের ফিল্টার 

 

আজকাল ঘুমের মধ্যে আসা স্বপ্ন গুলোকে একটু ফিল্টার করতে চাই।

যাকে ভুলতে চাই, তার জবরদস্তি স্বপ্নে এন্ট্রিটা বড্ডো চাপ সৃষ্টি করছে।

যা এতদিন বেশি বেশি করে চাইছিলাম, তা বেশি বেশি করে দূরে ঠেলতে চাই।

যা এতদিন বেশ রোগানজোশ ফীল দিচ্ছিলো, তা এবার কোলেস্টেরল-স্যাচুরেট করাচ্ছে।

যা এতদিন করন জোহরের সেট ছিল, তা আজকাল হরনাথ হয়ে উঠেছে।

ওরা বলে, সারাদিন যা ভাববে, তাই নাকি দিনভর রিহ্যার্সাল করে রাতে স্বপ্ন-এ একটা থিয়াট্রিকাল পারফরমেন্স দেয়।

দিনে তার ভাবনা আনতে না দেওয়ার বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকলেও, রাতে ভাবনাবাবু যে বেশ একগুঁয়ে, তা প্রত্যক্ষ।

এবার ঠিক করেছি, ভাবনাদের খেঁদিয়ে না তাড়িয়ে বরং পরম যত্নে আতিথেয়তা করি।

তাদের বেশ করে খাইয়ে-পরিয়ে-পড়িয়ে বড় করি।

দুধ খাওয়াই। কালসাপ হওয়ার অপেক্ষায়।

এক ছোবলেই ছবি হবে।

স্বপ্নগুলোর মৃত্যু হবে।

আজকাল ঘুমের মধ্যে আসা স্বপ্ন গুলোকে একটু ফিল্টার করতে চাই।





Sunday, 19 January 2025

মাছের বাজার

 - এ তো...

- হ্যাঁ মাছের বাজার। 

- কিন্তু এখানে তো...

- হ্যাঁ দিব্বি মেডিটেশন সম্ভব। কিন্তু...

- কিন্তু কী?

-  ভালো লাগছে না রে তোপসে। 

- কেন গো?

- একটাও পার্শে দেখতে পাচ্ছি না।


(19-jan-2021)














সরস্বতী পূজা মানেই

সরস্বতী পূজা মানেই বসন্ত এসে গেছে

সরস্বতী পূজা মানেই বাঙালির মাথায় উস্কে ওঠা কবিতা

সরস্বতী পূজা মানেই বিয়েবাড়ি

সরস্বতী পূজা মানেই স্পেল চেকার

সরস্বতী পূজা মানেই সকাল সকাল স্কুল

সরস্বতী পূজা মানেই জলবৎ তরলং খিচুড়ি

সরস্বতী পূজা মানেই পাড়ায় প্যান্ডেল ক্রিয়েটিভিটি

সরস্বতী পূজা মানেই হলুদ সাদা

সরস্বতী পূজা মানেই ম্যান্ডেটরি চোখাচুখি

সরস্বতী পূজা মানেই প্রেমে একটু ডেয়ার

সরস্বতী পূজা মানেই লাভ ইস ইন দা এয়ার... 


সরস্বতী ঠাকুর আমাকে অ্যানুয়াল এক্সামের কথা মনে করিয়ে দেয়।

রিভিশন, টিউশন, ইমোশন, টেনশন এরা সবাই মিলে পেটে ধাধিনা নাতিনা করছে।

কুল খাওয়ার ইচ্ছেটা যে সরস্বতী পুজোর সাথেই কেন চলে যায় এই জালিম দুনিয়া কোনোদিন বুঝলো না।

মেয়েদের স্কুলে ছেলেদের স্কুল পুজোর নিমন্ত্রণ করতে আসছে। ছেলে দেখতে মেয়েদের সে কি উকিঝুকি আর টিচারের বকুনি।

মেয়েদের ফিসফিস "শাড়ি পড়া প্র্যাকটিস শুরু করতে হবে রে, আর তো বেশিদিন বাকি নেই রে" বুলি আওড়ানো।

... শাড়ি, খিচুড়ি, boys স্কুলের ইনভিটেশন, বছরের প্রথম কুল, পরীক্ষার হালকা টেনশন আর দিনের শেষে হঠাৎ একটা পাঁচ লাইনের প্রেম পত্র...

দেবী আসছে মানেই বসন্ত আসছে...

(২০ - জানুয়ারি - ২০১৮ )



Wednesday, 15 January 2025

ট্যাট ফর টিট

 বরুণা "পাটকেল ফর ইট" আর "ট্যাট ফর টিট"-এ ততটাই বিশ্বাসী, যতটা অঞ্জন দত্তর বিশ্বাস বব ডিলানে আর কাঞ্চনজঙ্ঘাতে।

দেবলীনা স্কুলের টিফিনে দেখিয়ে দেখিয়ে, অপমান করে, ডিম ভাজা খেয়েছিল বলে পরের দিন কাঁচা ডিম লুকিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে এলো দেবলীনার ব্যাগে।

সুনিত সবাইকে গান শোনালো, শুধু বরুণাকে ডাকল না। বরুণা পিয়ানো শিখে ফেলল। নিজের জন্মদিনে সবাইকে ডাকলো, সুনিতকে বাদ দিয়ে।

পাড়ার কাকু ডেয়ারী মিল্ক দেবে বলে কোলে বসিয়ে কাতুকুতু দিচ্ছিল। বারণ শুনছিল না, কোল থেকে নামাচ্ছিল না। বরুণা কম্পাসটাই গেঁথে দিল কাকুর পায়ে।

সন্ধ্যে আটটাই তো হয়েছিল বাড়ি ফিরতে। তাতেই পিসি বাবাকে এমন নালিশ করলো। বাবার বকাবকি শেষ হতেই, ভাঙা টবটা পুরোটা ভেঙে পিসির বিছানাতে চাদরের মতো সুন্দর করে বিছিয়ে দিয়ে এলো।

তাই রোমিকেই আর ছেড়ে দেওয়া কেন!

এতদিনের প্রেম এমনি অমনি কিছু না বলে নষ্ট করা যায় নাকি! তাই ব্লেড দিয়ে হাত কাটা। অবশ্য তার আগে সুইসাইড নোটে লিখেছে,"আমার মৃত্যুর জন্য আমার মনের ভিতরের যুদ্ধ দায়ী" ...


(১৬-জানুয়ারি-২০১৮)




Sunday, 12 January 2025

বইপুজো

 বইপুজো শুনেছেন? শীত বাই বাই বলার আগেই হৈ হৈ করে বইমেলা, সেই তো বইপুজো।

ওয়ানাবি গোছের বাঙালিদল এশুনে ঠোঁট উল্টে বলবে,'ধুস,আজকাল ইবুক এর যুগে বইমেলা, ওসব সিম্পলি চলে না'.

নাকউঁচু বাঙালিদল বলবে,"বাওয়া, ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিল আছে 'কিকত্তে' গুরু! অত ঠেঙিয়ে মিলনমেলা!! বস, মিলন, ফেসবুকেই বেশ জমে".

এদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, বিশ্বাস করুন এখনও লোকে বইমেলা যায়। নিশ্চয় যায়। আর এবং তাদের মধ্যে আজকাল এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য নজরে পড়েছে, তাদের জন্য বই আর মেলা নেই, পুজো হয়েছে। এ দল ঘোরে-ফেরে, সেলফি তোলে, এগরোল-পাটিসাপ্টা খায় কিন্তু বই কেনে না। তারা দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলের মতো স্টলে স্টলে ঘোরে, কিছু বই নাড়ানাড়ি করে (প্রণাম করে) বেরিয়ে পড়ে। আবার থিমের পুজো-প্যান্ডেলের মতো বেশ অন্যআঙ্গিকের স্টলগুলোর ভিতরের থেকে বাইরে সময় কাটান বেশি। ফেসবুকে পোস্ট করলে ওগুলোর বোধয় মর্যাদাক্রম (লাইকের চান্স) একটু বেশি। আর বইএর ভিড়ে বাই চান্স যদি একটু টিভি-সিরিয়াল-মুখ দেখা যায়, কেল্লা ফতে।

যাক তবু এভাবেও বছর বছর বই আসুক মেলা রূপে বা পুজো রূপে।

২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 


সাত বছর পরে, বইমেলা ২০২৪শে, বই বেচাকেনার প্রয়োজন তেমন দেখা গেল না। সেই দিকটা প্রায় হতাশাজনক মেনে নিয়ে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তায় মনোযোগ বেশি দেখা গেল।

নিজবৃত্তে বইয়ের সাফল্য জানানোর অভিনব কৌশল কয়েকটি লক্ষ্যণীয়:

১. বই বইমেলায় তাকে/টেবিলে থাকবে, নিশ্চিত জানা মাত্রই হাতের লেখা বিশেষত সই প্রাক্টিস করছেন, আয়নায় সেল্ফি তোলারও

২. বইমেলা গিয়ে লাইক-বৃত্তের লেখক বা লেখিকার বই কিনছেন না, শুধু বইয়ের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে বলছেন, ' এলাম, নিলাম '

৩. বন্ধুবান্ধবকে মেলায় পেলেই, হাতে বই ধরিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছেন, ফেসবুকে দ্রুত আপলোড


২৯ জানুয়ারি ২০২৪ 






রোমাঞ্চ and munch

 রোমাঞ্চ নানা সময়ে নানা মুহূর্তে।

রোমান্স, বাতকর্ম, হাঁচি, শীতকালে ঠান্ডা জলে আঙ্গুল ইত্যাদি প্রভৃতি মহৎ কাজে, রোমাঞ্চ আছে।
তবে রোমাঞ্চ শব্দে লুকিয়ে থাকা munch কে অগ্রাহ্য করা অন্যায়। চিঁড়েভাজা, চানাচুর এ রোমাঞ্চ নেই বলছেন? শীতের বিকেলে এক কাপ চায়ের সাথে চানাচুর খেয়ে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ার মুহূর্তে কটাং একটি লোহাকে-চ্যালেঞ্জ-করা-মটরদানা দাঁতে আঁটকে আঁতকে ওঠেন যখন, গায়ের লোমগুলিতে একবার নেত্রপাত করলেই বাবার নাম ভুলিয়ে দেওয়া রোমাঞ্চ অনুভব করবেন।

15-jan-2021



Monday, 6 January 2025

নো হুড়োহুড়ি

 শনিবার রাত থেকেই প্ল্যানটা মন দিয়ে ছকে নেওয়া:

ঘুম ভাঙ্গবে সকালে নয়, "বেলায়"

বাজার শনিবারই কমপ্লিট। তাই নো হুড়োহুড়ি। 

নো হুড়োহুড়ি - এ এই অনুভূতিটাই মনকে কুলুপুলু করে তোলে । 

মনের আনন্দে দার্জিলিং টানা যাবে, বসার ঘরে নয়, বারান্দায় রেলিঙে পা উঁচিয়ে। এক কাপ নয়, অন্তত দুই বা তিনের তিরিক্কে । 

সুরে সুরে দিন চলবে। ভীমসেন থেকে ফরিদা খানুম হয়ে কিশোরে ।

লাঞ্চ মেনুর গরম ভাতে, মনোটনি নয়, মটন

ক্যারাম খেলা,  শুধু চায়ে নয়, ফুলকপির সিঙ্গারার সঙ্গে

নতুন বইগুলো উল্টে দেখার সময় পাওয়া যাবে । 

রাতের মেনু হবে ...


============================

ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিংক্রিং ক্রিং,

হ্যালো রসিকবাবু,

ডেবিটের ফাইলটা একটু সানডে মর্নিং-এ শশাঙ্ক বাবুকে কন্টাক্ট করে দিয়ে দেবেন।

শশাঙ্কবাবু সানডে ইভনিং-এ ট্যুরে যাচ্ছেন। তাই ভুলবেন না । ওকে?

অবশ্যই মনে করে দিয়ে দেবেন কিন্তু।

আর, এনজয় রেস্ট অফ দা সানডে।

বাই।


এই শুনছো। আরে এই । এরকম থম বসে আছো কেন?

শোনো, বিকেলে রীনা আসছে বরের সাথে। সেই যে ওদের আসার কথা ছিল। আজ আসছে। এ এই কিছুক্ষণ আগে ফোন করেছিল । 

আমি আমি বাজারের লিস্ট করলাম । তুমি একটি টুক করে ওগুলো নিয়ে এসো, এক এক করে কেমন!

আর তো কিছুই বলিনা তোমায়। সংসারের এতো কাজ। আমিই করি। রবিবার কাজের কথা বললেই তোমার আবার অনেক কথা।  

যাই হোক। রবিবার পুরোটাই তো বেশ আনন্দে কাটাতে পারবে, শুধু ওই বিকেল টুকুই কিছুক্ষণ ওদের সঙ্গে বসবে, গল্প হবে, আড্ডা হবে। মজা । ঠিক আছে তাহলে? বুঝলে?


০৭-জানুয়ারি-২০১৮ 




Thursday, 2 January 2025

জ্যাঠামশাই

 জ্যাঠামশাই মানে আরমকেদারায় হাতে বই, পাইপ, সাদা পাঞ্জাবী সত্যজিৎ রায় পোজ।

নতুন বইএর হদিস, পরীক্ষার ফলাফল বিচার, ইন্ডিয়ান রেল এর ইতিহাস আর মন দারুন ভালো থাকলে দার্জিলিং-র গল্প।
ছোটবেলার কান মুলে দেওয়া জ্যাঠামশাই,বড়বেলার পিঠে হাত বুলিয়ে দেওয়া জ্যাঠামশাই, পটু হাতে হঠাৎ ঢাক বাজিয়ে চমকে দেওয়া জ্যাঠামশাই, বিয়েবাড়ির মেনুতে মটন ম্যান্ডেটরি করা জ্যাঠামশাই, পুরোনো কলকাতার গন্ধ ক্যারি করা জ্যাঠামশাই, মঙ্কিক্যাপ ফ্যাশন সচেতন জ্যাঠামশাই।
জ্যাঠামশাই আর পাশে টেবিলে রাখা প্লেটে দুটো জলভরা। সময়মতো পৌঁছলেই একটা প্রাপ্তি। এদিক ওদিক জ্যাঠামো তাই মন্দ লাগে না!