Thursday, 25 May 2017

তিনি আমার পরমাত্মীয়

- ওটা আবার কি?
- ভাস্কর্য।
- য়্যা? কে? কে কথা বললো? আপনি কিছু বলছেন?
- হ্যা। তুমি বললে, ওটা আবার কি? আমি তাই উত্তর দিলাম ভাস্কর্য-স্কাল্পচার। মূর্তিও বলতে পারো।
- ও কিন্তু আমি তো মনে মনেই ভাবছিলাম। আপনি শুনতে পেয়ে গেলেন!! একটু জোরেই বলে ফেলেছি, তাই না? সরি।
- সরির কিছু নেই ভাই। আর জোরেও তুমি বলোনি। আমারই সব শুনে ফেলার রোগ হয়েছে কিছুকাল ধরে। মাঝে মাঝে কানটা ঝালাপালা করে।
- হে হে আপনি মজার মানুষ তো।
- মজার? আচ্ছা তা বেশ।  ...... এই মূর্তিটার অর্থ কি ভেবে পাচ্ছ না নাকি?
- কি আশ্চর্য। আপনি কি করে বুঝলেন? আসলে আমি খুব ভাবার চেষ্টা করছি এই মূর্তির মাধ্যমে কি বলা হয়েছে? আসলে ডেবিট-ক্রেডিট করে করে মাথাটা গ্যাছে।
- বটে? কমার্স?
- ওই হ্যা হ্যা। ঠিক ধরেছেন। আর্ট এন্ড কালচারে একদম অজ্ঞ। কিন্তু জানার ইচ্ছে খুব জানেন? তাই তো শান্তিনিকেতনে  .... আচ্ছা, আপনি জানেন, বলে দেবেন, এই মূর্তির মানে কি?
- হমম বলতে পারি। তবে তোমার কি মনে হচ্ছে শুনি আগে? তারপর আমি বলবো।
- আমার দেখেই কিরকম মনে হলো ভীম। দুর্যোধনকে বেদম পেটাচ্ছে। মাফ করবেন আমার অজ্ঞতাকে।
- হা হা কি বললে ভীম? হা হা।  তা বেশ বলেছো। আর কি মনে হচ্ছে?
-  হে হে ভীম তো পুরুষ তাই ঠিক মেলাতে পারছি না। তাছাড়া দুর্যোধনের মাথাও দেখা যাচ্ছে না। তাই এখন মনে হচ্ছে কোনো মহিলা  ...
- বাহ্। বলতে থাকো। 
- কাপড় কাঁচছে। শুধু মাথাটা নেই কেন ভাবছি। মাথাটা পিছনের দিকে আর্চের মতো ঝোলানোও নেই। নাঃ। তাই আর কিছু মাথায় আসছে না। আপনিই বলে দিন প্লিজ।
- আচ্ছা, আচ্ছা। মূর্তির নিচে কি লেখা আছে, সেটা তো পড়েছো নিশ্চয়।
- হ্যা। লেখা আছে থ্রেশার। তাই তো প্রথমে ভীম ভাবলাম।
- হমম হারভেস্টার জানো? চাষীরা ফসল আছড়ায় দেখেছো? শহরে আর ওসব কি দেখবে তোমরা!! ঐটিই আছে এই মূর্তিতে। ল্যাটেরাইট মাটি আর সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে এই মূর্তি। তুমি আছড়ানোর ব্যাপারটা ভালোই ধরেছো যদিও। হা হা
- ওহ তাই নাকি। আচ্ছা, শিল্পীর ভাবনা যা এইটিই আপনি জানলেন কি করে? আপনি কি এখানেই থাকেন? লোকাল?
- হ্যা আমি সেই ঊনিশ বছর বয়স থেকে এখানেই। লোকালই বলতে পারো। লোকে আমায় খ্যাপাকিঙ্কর বলে। তবে আমি এই মূর্তির বিষয়ে জানি কারণ যিনি এটি বানিয়েছেন তিনি আমার পরমাত্মীয়। তাই  ....
- সে কি বলছেন মশাই? মানে? আপনি চেনেন তাকে? তিনি কি এখনো  ....
- বেঁচে? আমার তো মনে হয় আছেন। লোকে বিশ্বাস করেনা।
- য়্যা? মানে?
- তবে তুমি মনে হয় তার দেখা পাবে। ওই ঘরে তাকে দেখা যায় মাঝে মাঝে। 
- আপনি মশাই ভয় দেখাচ্ছেন রীতিমতো। কি বলছেন? কিছু বুঝতে পারছিনা যে। তবে এই দিনে দুপুরে এরকম....
- ঠাট্টা?
- না না মানে তা ঠিক বলতে …, উফ আপনি না মশাই  ... সব মনের কথা পড়ে ফেলেন। দাঁড়ান একবার ওই ঘরে ঢুকে দেখিই  .... ও মশাই এখানে তো সব ফাঁকা আ আ আ। শুধুই একটা ছবি ই ই ই ই। শুনতে পাচ্ছে  .... ন? .... য়্যা? আরে মশাই এতো আপনিই বানিয়েছেন যে? আপনারই ছবি তো। এতক্ষন আমার সাথে ছিলেন আর একবারও বলেননি!! আমি এতো গুণী মানুষ। আমার শিল্পকার্য্য শান্তিনিকেতনে? একি কোথায় গেলেন? মশাই  .... নামটাও বলে গেলেন না? আরে ও মশাই  ... একটা অটোগ্রাফ এটলিস্ট  .... চলে গেলেন কোথায়? ওনার নামটা ছবির তলাতেই থাকবে নিশ্চয়। রামকিঙ্কর বেজ। জন্ম - ১৯০৬। মৃত্যু? মৃত্যু? .... উনিশ্য আশি  ..... 



Tuesday, 23 May 2017

রেসিপি অফ ডেলিসোপ

উপকরণ:

  • ·      স্কুললেভেল মেয়ে (প্রেফারেবলি বোকা বোকা গোল মুখ এবং ফর্সা), কলেজেলেভেল ছেলে (প্রেফারেবলি পেশীবহুল, বাকি যা হোক হলেই হলো),
  • ·      দুটি পঁচিশের কাছাকাছি মহিলা (একটি অবশ্যই বোকা বোকা গোল মুখ, আরেকটি অবশ্যই সুন্দর লম্বা এবং প্রেফারেবলি ফর্সা মুখ),
  • ·      পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি ভদ্রলোক (প্রেফারেবলি পেশীবহুল, বাকি যা হোক হলেই হলো),
  • ·      জনপ্রিয়মুখ মাঝবয়সী একজন মহিলা এবং পুরুষ



প্রণালী: 


স্কুললেভেল বোকা বোকা মুখ মেয়েটি ও পঁচিশের কাছাকাছি গোল মুখ মহিলাকে বেশ কিছুক্ষন ভাসতে দিন। 
পঁচিশের কাছাকাছি সুন্দর-লম্বা-ফর্সা মুখ মহিলাকে পর্দার আড়ালে থেকে নাড়াচাড়া করতে দিন। 
দেখবেন স্কুললেভেল বোকা বোকা মুখ মেয়েটি ও পঁচিশের কাছাকাছি গোল মুখ মহিলা বেশ ফুটতে শুরু করেছে। 
বেশ ঘন হয়ে এলে পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি ভদ্রলোককে মাঝে মাঝে ওর মধ্যে ছিটিয়ে দিন, সাথে সাথে নাড়তে থাকবেন। 
দেখবেন যেন ভালো করে ঘেঁটে যায়। 
বার বার খালি জল ঢালুন। 
(অ)রুচিমতো কলেজেলেভেল ছেলেটিকে এবার মেশান। 
বাসি গন্ধ বেরোনো অব্দি চালিয়ে যান। 
বাসি গন্ধ যখন বেরোতে সবে শুরু করেছে, মানে টেকা-দায়ের ঠিক পৌনে ছয় সেকেন্ড আগে, কলেজেলেভেল ছেলেটিকে চিমটে দিয়ে আলাদা করে বের করে এনে টেনে-হিচড়ে-তুবড়ে-তাবরে রংবদল করে আবার মেশান। 
বেশ খানিক মেশানোর পরে শুধু নাড়িয়ে যান। 
জনপ্রিয় মাঝবয়সী মহিলা এবং পুরুষকে হাটের মাঝে হাড়ির মধ্যে বসিয়ে দিন। ওতে স্বাদে কিছু হেরফের হবে না। শুধু গার্নিশিং এর জন্য। আর ওটাই শেষ সাময়িক বিকল্প।
অতঃপর ল্যাজেগোবরে হচ্ছে বুঝবেন যখন, আর কোনো উপকরণও হাতে নেই, ব্যাস গ্যাস নিভিয়ে দিন। 
রান্না আপনার শেষ হলো। 
এবার পরিবেশন করতে করতে চুপচাপ কেটে পড়ুন। 

Sunday, 14 May 2017

স্ট্রেইট লাইনটাই একমাত্র রাস্তা

- হ্যা হ্যা স্ট্রেইট লাইন। ঐটাই একমাত্র রাস্তা। 
- তুমি কি করে একথা বলছো সেনদা? তুমি কি দেখেও দেখছো না? তুমি দেখছো না এ রূপকথার রাজ্য। বাস্তবে অথচ কিচ্ছু নেই, ফক্কা। কিন্তু সবাই ভাবছে, আছে। মানে জানে যে নেই, তবু জোর করে নিজের ঘাড়কে দু হাত দিয়ে চেপে ধরে বোঝাচ্ছে যে এটাই বাস্তব এটাই বাস্তব এটাই বাস্তব। দুষ্টু লোক, রাজকুমার আর রাজকন্যে এই নিয়েই আজকের বায়োস্কোপের এসেসমেন্ট। বাস্তব কেউ বলেনা। সুড়সুড়ি দিয়ে কান্না? আছে। সুড়সুড়ি দিয়ে হাসি? তাও আছে। নেই শুধু প্রাণ। আত্মারাম নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে নাকি তাকে হিপ্নোটাইসড করা হয়েছে বলতো? কোথাও মনে হয়না- এই তো আমার গল্প। থিয়েটারে তবু আজকাল একটুআধটু … কিন্তু ফিল্ম? শুধু ভাবাবেগময় একটা ক্লান্তিকর গতি। রূপকথা দিয়ে খিদে মেটে? জ্বালাটা শান্ত হচ্ছে না যে। কেউ আঙ্গুল তুলে বলে না,"রাজা, তোর কাপড় কোথায়?" 
- তা সে আমাকেও লোকে অভিযোগ করতো। আমি নাকি বড্ডো ডিরেক্ট। আমার তবু মনে হতো, আই মাস্ট মেক এ পয়েন্ট। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজের বিশ্বাসেই তো মনে হতো যেন হালকা ফাটল..... 
- তবু তো তুমি যা দেখাতে সেটা রিয়ালিটি ছিল। বিশ্বাসে ফাটল ধরতে পারে, সময়ের সাথে, ম্যাচুরিটির সাথে। কিন্তু সেই ফাটল টাও তো লুকোও নি। আল্টিমেটলি ভণ্ডামিকে তো প্রশ্রয় দাওনি। ভণ্ডামি তো আজও আছে। বাস্তবে প্রতিবাদের অক্ষমতা থাকতে পারে। তাই সেখানে না পারলেও, ছবিতেই তো সে ভণ্ডামিকে নেকেড করা যায়, যেমন তুমি করেছো। না হলে কিসের আর্ট?
- আমার সময় উন্মত্ততা ছিল। 
- আজ নেই বলছো?
- আছে, কিন্তু মানুষ অনেকদিন যুদ্ধ দেখেনি। ভিতরে লড়ে চললেও অনেকদিন বাইরের লড়াই না দেখে দেখে মানুষ ভীতু হয়ে গেছে। মানুষ বড়ো ভয়ে আছে।
- আমার মাঝে মাঝে কান্না পায় সেনদা। দম বন্ধ হয়ে আসে। মনে হয় আর পারবো না। 
- সেই জন্যই তো স্ট্রেইট লাইন। যা দেখছিস তাই এঁকে দে। একদম স্ট্রেইট। ঐটাই একমাত্র রাস্তা। "আজ" নিয়ে ভাব। দেখবি তোর পরের প্রজন্মও ছবি দেখে বলছে - এই তো আমার গল্প। আসলে সময় বদলায়। কমোডিটি বদলায়। মধ্যবিত্ত বদলায় না। সমস্যা বদলায় না।বুর্জোয়া অপরিবর্তনীয়।

(14th May জন্মদিনে শ্রদ্ধা নিবেদন শ্রী মৃনাল সেন।)



Thursday, 11 May 2017

শুধু এই হাসিতেই

** সিরিয়ালটা শুরু হলো ভালোই কিন্তু নায়কের আট নম্বর বিয়েটা আর নেওয়া যাচ্ছেনা।
** ভালো একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস মাথায় আসছে না!! কি মুশকিল।
** মনীষা ম্যাথসে আমার থেকে টেন মার্ক্স্ বেশি পেয়েছে বলে আমাকে এবার সামার সেলে ক্রপটপ কিনে দেবে না? কি অদ্ভুত লজিক!!
** বিরিয়ানির দামটা ফট করে কুড়ি টাকা বাড়িয়ে দিলো!! আর এ নিয়ে কোনো বিপ্লব হলোনা?
** শুধু গান গাইতে চেয়েছিলাম, এখন স্কেল নিয়ে লোকের বাড়ি-ঘরের মাপঝোপ করছি। এটা জীবন?
** শ্লা আমি ঠিক জানতাম। কাল ছুটি নিচ্ছি, মালটা ঠিক লাস্টমোমেন্টে ফাইলগুলো পাঠাবে। ধুস।
** মাসের শেষের ডেটগুলোতেই সব নিমন্ত্রণ বাড়িগুলো হামলে পরে। কেন রে? আখেরে তোদেরই তো ক্ষতি রে। ক্ষি জ্বালা রে ভাই।
** "ইটস নট ওয়ার্কিং"? মানেটা কি? এতদিনের চ্যাট-স্ক্রিনের সামনে গালে হাত দিয়ে অপেক্ষা, প্রতিটি বোকা-বোকা স্ট্যাটাস আপডেটে ওয়াও নিদেনপক্ষে লাইক, দেখা করলেই প্রত্যেকবার ডেয়ারিমিল্ক আর ডোমিনোস। আর এখন "ইটস নট ওয়ার্কিং"? কারণটা ঝেড়ে কাশলো না পর্যন্ত!!
** নিশ্চিন্তে আইপিএল টাও আমার জীবনে চ্যালেঞ্জ। এর থেকে কোলের বাচ্চার ফেসভ্যালু অনেক বেশি। 
** অফিসের কাজ, ঘরের কাজ এসবই যদি একমাত্র যুদ্ধ হতো, তুড়ি মেরে বলতাম,"আই ক্যান কংকর দা ওর্য়াল্ড"। কিন্তু সারাদিন এরওর হাঁ-করা জিভ-বার-করা মুখ সহ্য করা, বাসে-ট্রামে শরীর বাঁচানো, এগুলো?
 -------------
শুধু এই হাসিতেই মাথাঠাসা ডালহৌসি, মুহূর্তে সান্দাকফু
শুধু এই হাসিতেই "আমার মতে জগৎটাতে ভালোটারই প্রাধান্য, মন্দ যদি তিন-চল্লিশ, ভালোর সংখ্যা সাতান্ন"
শুধু এই হাসিতেই "আমি যামিনী, তুমি শশী হে"
শুধু এই হাসিতেই ডেসডিমোনা বেঁচে উঠে এক চড় মেরে ওথেলোকে বলে," উইথিন এ পার্ক অফ লাসটি ফ্লাওয়ারস, দি চার্ম অফ হিস্ ফ্লুট এস এম্পাওয়ার্স … গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে মৃদুল মধুর বংশি বাজে, বিসরি ত্রাস-লোকলাজে. সজনি, আও আও লো, জয়েন মি জয়েন মি জয়েন ওহ"
শুধু এই হাসিতেই কেটো বাসের জানলা, বাকিংহাম প্যালেসের দোতলা
শুধু এই হাসিতেই চ্যাটচ্যাটে ঘাম আচমকা পনেরো ডিগ্রির ম্যাজিকে চিলড
শুধু এই হাসিতেই ঢেঁড়সের তরকারির বদলে ডিনার টেবিলে অকস্মাৎ রগরগে মটন
শুধু এই হাসিতেই অফিসের বস, বাজারের ফর্দ, পুরোহিতের দক্ষিণা, ছেলের বায়না, মহুয়ার পরচর্চা, কেকেআরের রান রেট, বাজেটপেশ, আউটঅফসিলেবাস, দেশের ইকোনমি, পাশের জনের প্রতি পক্ষপাত হঠাৎ কিরকম "বেশ-তো"
শুধু এই হাসিতেই লাল-সবুজ-কমলা “ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি” টপিক নিয়ে একমঞ্চে
শুধু এই হাসিতেই বামুনদল জাত-পাতের বিরুদ্ধে পিটিশন দেয়
শুধু এই হাসিতেই মাঝরাতের ভয়-ভয় হোয়াটস্যাপ আই-লাভ-ইউ মেসেজটা গান্ধীজির স্ট্যাম্পমার্কা ইনল্যান্ড লেটার হয়ে পৌঁছে যায় তার ডেস্কে

শুধু এই হাসিতেই, সবাই “এই মুহূর্তে” বাঁচে

Monday, 8 May 2017

লাবণ্যর জীবন

দৃশ্য ১:

উফফ, সংসারের সব দায়িত্ব আমার তাই না? কেউ কিচ্ছু করবে না! পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবে! এ সংসার আমার একার যে। তাই না? 
 উফফফ, কি নোংরা করে রেখেছে ঘরটা। এই পঁয়তাল্লিশের কোমড় তো এবার বিদ্রোহ করবে। আর কত কি সামলাবো বলতে পারো? তোমাকে আর কি বলবো? দূরে দাঁড়িয়ে আমার কথা শোনো আর ভাবটা এমন যেন কিচ্ছুটি জানো না। তাই না? এই লাবণ্য ছিল বলে বেঁচে গেলে হে অমিত রায়। ওওওওই মুচকি হাসি ব্যাস। ওতেই সব রাগ গলে জল। হা হা। 
আচ্ছা তোমার ওপর কিছুতেই রাগ করতে পারিনা কেন বলতো? তোমার ওই চাহুনিতে কি যে খুঁজে পাই কি বলবো। তোমার ওই চাহুনি? উফফফ এখনো মনে আছে সেই প্রথম ছোঁয়া? সে কি শিহরণ কি বলবো। তুমি সাথে থাকলে দিনগুলো কাটে হ্যারি পটারের ম্যাজিক ওয়ানডের মতো। কেন যে মাঝে মাঝে আমাকে একদম সময় দাও না। ওরে বাবা, আচ্ছা আচ্ছা সে অভিমানের কথা না হয় আজ বাদ দিলাম। ঠিক আছে তো এইবার?কিন্তু সেইদিন কি যে হলো, আমি কি আমার মধ্যেই ছিলাম না? কি যে হলো হঠাৎ? সকাল থেকে বৃষ্টি। পেন-খাতা নিয়ে সারাটাদিন হাঁ করে ছিলাম। একটা শব্দ বেরোলো না। এমন মাথায় আগুন জ্বললো। আসলে মনটাই ভালো ছিলোনা হয়তো। পেনটা ছুঁড়লাম আর পড়বি তো পড়, তোমার ...... ইশ ইশশ এই এই যে এখানে এখনো দাগটা রয়েছে। এযে মহাপাপ। কি করে হলো এই অন্যায়? ইশশ। তুমি আমায় ক্ষমা করতে পারবে? কোনোদিনই? জানি জানি, তুমি ক্ষমা করেছ। কিন্তু আমি পারছি না যে, নিজেকে ক্ষমা করতে। এই দাগ কত চেষ্টা করেও মিলছে না কেন জানো? ও বুঝিয়ে দেয় ওর হিসেবটা এখনো বাকি আছে, ও আমাকে আমার অপরাধ মনে করায়। প্রতি মুহূর্তে। না না এটা ঠিক। এটাই ঠিক। এতেই আমার পাপের শাস্তি।

য়্যা রবু? তুই এখানে কখন এলি? এই তুই হাসছিস কেন রে? খুব মজা লাগছে তাই না? জামাটার কি অবস্থা করেছিস বলতো? আয় চেঞ্জ করিয়ে দি। আমার সোনাটা তুই, জানিস, প্রথম যখন তুই এলি আমার কোলে, তোকে ছুঁয়ে প্রথমটায় রোমাঞ্চ লেগেছিলো যেন। নিজের চোখেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিলো না। কত চেয়েছিলাম তোকে মনে মনে। শেষে তুই এলি, ঠিক এলি। তোর গায়ে অদ্ভুত গন্ধ। এখনো মনে করলেই পাই সেই গন্ধ। তুই আমার, এক্কেবারে আমার। তোকে আজ এই সবুজটা পড়াই। খুব মিষ্টি লাগে তোকে এটাতে। আমার সবুজসোনা। ওরে সবুজ ওরে আমার কাঁচা … হা হা।

এই সঞ্চু কোথায়? কোথায় গেলো রে? তুই জানিস কোথায় গেলো? সঞ্চু না আমাকে পাগল করে দেবে একদিন। ইচ্ছে করে-করে কোথায় লুকোবে, আর আমি পাগলের মতো খুঁজবো! আমাকে খুঁজতে দেখতে, খুব মজা লাগে ওর। এই কে রে ওখানে কে রে কে রে? খিলখিলিয়ে হাসে যে? খুব মজা না? দাঁড়া তো? দাঁড়া তো? এই তো কাপবোর্ডের পিছনে মনে হচ্ছে, এএএএই এই তো পেয়েছি বদমাসটাকে। হা হা। কি রে? এখানে লুকিয়ে আছিস? দাঁড়া তো? এইকি ওমাগো ………… কেঁটে গেলো কি করে!! তুই আমাকে বলিসনি? ডাকিসনি? এ হে? কাটলো কি করে? এতো ছটফট করিস না তুই! তোকে নিয়ে কি যে করি সঞ্চু। উফফফ আহা আহা কি যে করিসনা বাবা! এরকম করিসনা সোনা। জানিসনা তোদের কিছু হলে আমার কত কষ্ট হয়। একদম বুঝবিনা তোরা? তোরা তিনজনেই তো আমার জীবন রে। একটু বুঝবি না সোনা। আয় আয় সোনা ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দি।
------------------------------------
দৃশ্য ২:

ঘরের মধ্যে,
শেষের কবিতা হেলে আছে একদিকে, তার প্রথম কয়েকটা পাতায় পেনের খোঁচার গভীর দাগ।

রবীন্দ্ররচনাবলি সদ্য নতুন মলাটে আবৃত, সবুজ মলাটে।

লাবণ্য ব্যস্ত, এইমুহূর্তে সঞ্চয়িতার পিছনের পাতার ছিঁড়ে যাওয়া কোণের অংশতে সেলোটেপ লাগাচ্ছে

Wednesday, 3 May 2017

"কায়নাত" কি "কৌশিশ"

"কেহতে হে কি কিসি চিজ কো আগার দিল সে চাহো, তো পুরি কায়নাত উসে তুমসে মিলানেকি কৌশিশ মে লাগ্ জাতি হে।"

ইয়ে মানে ডায়ালগ টা সঠিক। এতদিন বুঝিনি। কাল বুঝলাম জানেন। বাহুবলী দেখতে গিয়ে জীবনে প্রথম তা মর্মোদ্ধার করলাম। সিনেমা দেখতে গেলে আশেপাশের পরিবেশ আপনাকে শুরু থেকেই ট্রেলার দেখাতে থাকে। না হলে সিনেমার মাহাত্ম্যর মাইলেজে ঘাটতি পড়ে। 
যেমন ধরুন নতুন সিনেমা আসছে, পোস্ত। বাড়িতে দেখলেন, ইয়েস, লাঞ্চে আলুপোস্ত। বেগম জান দেখতে যাওয়ার আগে একটু বৌকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎ বলে উঠলেন,"আন বান শান, তুমি বেগম জান" বা ঐরকম পেটি কিছু ছড়া। 
ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস এর ক্ষেত্রে সংসারীরা একটু গুণে দেখবেন সারাদিনে কতবার ফিউরিয়াস হয়েছেন। অন্যদিনের তুলনায় একটু যেন বেশি না? হে হে হতেই হবে বাওয়া। নাহলে বুঝবেন, আপনি সিনেমাটির প্রতি সুবিচার করেননি। আপনি মুভিটাই ডিজার্ভ করেন না। 
এবার আসি বাহুবলীর কথায়। সিনেমা যেহেতু বাহুবলী। একটা অ্যাকশন-অ্যাকশন.... আর সেখানেই যত সমস্যা। মানে আমি শান্তিপ্রিয় তুলসী চক্কোত্তি। তা বলে কি আমাদের কি বাহুবলী দেখতে নেই? ভয়ে ভয়ে আছি, "কায়নাত" কি "কৌশিশ" করছে কে জানে। রিলিজ করার পরের দিন। সিনেমা শুরুর পনেরো মিনিট আগেই সিনেমাঘরে পোঁছলাম। ভিড় এভোয়েড করতে নিজের যথেষ্ট স্মর্টনেস ব্যবহার করে বাইরেই কিছুক্ষন দাঁড়ালাম। ভাবলাম সবাই ঢুকে গেলে ধীরে ধীরে এন্ট্রি নেওয়া যাবে। স্মার্ট আইডিয়া। শো শুরু হওয়ার ঠিক চার মিনিট আগে ঢুকতে গিয়ে দেখি, ভিড়ের পরিমাণ তো কমেনি উল্টে বেড়ে গিয়েছে। কানটা খাঁড়া করতেই বুঝলাম, শো অনিবার্যকারণবশতঃ পনেরো মিনিট ডিলেইড। আর শুনেই পিছন ফিরতে গিয়ে দেখি,জনঅরণ্য। আমি-পেরেক, গর্তে ঢুকে প্যাঁচ খেয়ে গেছি। এবার হাতুড়ি ঠোকা খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আর কি, দরদর করে ঘাম, জায়গা-অজায়গায় চুলকুনি, ঘাড়ের কাছে গরম-পিঁয়াজি নিশ্বাস। অনুভব করলাম। মন দিয়ে। পিছনের মহিলা তার পাশের শ্রেষ্ঠতর-অর্ধ্যেকের (বেটার হাফের) কাঁধে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। তিনি বুঝতেও  পারছেন নাকি যে নিজের সাথের ঢাউস ব্যাগটার নাইন্টিটু পার্সেন্ট আমার বাহুর ওপর? আমি বাহুবলী নই ম্যাডাম। বুঝলাম "কায়নাত" ইস নাউ ইন অ্যাকশন। এই মুহূর্তে কোথা থেকে অসময়ে এসে "চ্যালেঞ্জ" গোত্তা মারলো, ব্যাস আর তো হাত গুটিয়ে থাকলে চলবে না। অপেক্ষার একেকটি সেকেন্ডে মনে হচ্ছে যেন যুদ্ধে শত্রুপক্ষের টিকি দেখার অপেক্ষা। যেই না দরজা খুলবে, সে সময় কোন স্ট্রাইকটা যথোপযুক্ত হবে, তার প্ল্যান ছকে নেওয়া চলছে। আসে-পাশের সবার মুখ দেখি গম্ভীর। কেউ হাসছে না, কথা বলছে সিক্রেট মিশনের এজেন্টদের মতো। সবার নজর মাছের চোখে। ভাবলাম শত্রুকে ডাইভার্ট করি। বলে উঠলাম আচমকা,"বিচ্ছিরি গরম ভাই। কি করছে এরা। কখন যে খুলবে। পশ্চিমবঙ্গের টাইমসেন্সটা নিয়ে কোনো বিপ্লব যতদিন না হচ্ছে  ....." পিছন থেকে একজন বলে উঠলেন,"মশাই, এই গরমে চুপ করে থাকুন না প্লিস। আর না হলে কিছু নতুন বলুন। গান শোনান। বাজে কথা বলাটাও একধরণের পলিউশন জানেন, বাকদূষণ"। ড্যাম!! বুঝলাম সবাই কনসেনট্রেট করতে চাইছে। শত্রুপক্ষ অনেক বেশি প্রিপারেড। আমি এমনিতেই পিছনের সৈন্য। কালচক্রে এইমুহূর্তে আবার অভিমন্যু স্টেটে। অসহায় বোধ করছিলাম ভীষণ। অপেক্ষার আরও পাঁচ মিনিট। এইই দরজা খুলল। ব্যাস। আক্রম..... ণ। বাহুবলী ১ এর কিছু দৃশ্যের কথা মনে করে একটু ঝুঁকে, তীরের ফলের মতো মুঠো বন্ধ করে যেই না এগোবো, হঠাৎ কোমরে বেদম জোরে গুদুম। পাশের মহিলার কনুইয়ের সফল লক্ষ্যভেদ আমার কোমরে, বুঝলাম অফেন্সিভ খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠিক এই সময়ে, কেউ আমার চোখের ওপর রুমাল ঝাড়লো। ডেন্জার। মানে দল বেঁধে নেমেছে। আমি রিস্ক না নিয়ে "কাটাপ্পা পা পা পা" বলে ছুটলাম এলোপাতাড়ি। হে হে কাটাপ্পা-নামের মহিমা কম? দেখলাম হলের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। এবার শুরু অন্ধকারে সিট্ হাতড়ানো। কোনোরকমে নিজেরটা খুঁজে বসা গেলো। মনে হলো ব্যাস এবার বোধহয় "কায়নাত" বাবুও বাহুবলী এনজয় করবেন। ও হরি, সে গুড়ে বালি। বাহুবলী সিনেমা বলে কথা বাওয়া, তাই মহাধামাকা "কৌশিশ" টাও যথোপযুক্ত হবে সেটা এক্সপেক্ট করা উচিত ছিল। হঠাৎ চিল-চিৎকার সাথে বেদম সিটি। একের পর এক। সিনেমা শুরুর প্রথম দশ মিনিট কানে তালা ছিল। যতবারই বাহুবলীর স্ক্রিনে আগমণ, ততবারই চিল-চিৎকার-সিটি। বাহুবলী উড়ছেন, চিল-চিৎকার-সিটি। বাহুবলী নাচছেন, চিল-চিৎকার-সিটি। বাহুবলী চোখ নাড়ছেন, চিল-চিৎকার-সিটি। বাহুবলী কোপাচ্ছেন, চিল-চিৎকার-সিটি। সামনে-পিছনে সর্বত্র। এতক্ষনে অস্ত্র নামিয়ে ফেলেছি। কিছু কিছু যুদ্ধে হার নিশ্চিত। আমি আত্মসমর্পণ করেছি। তুলসী-চক্কোত্তি- আমি ক্ষেপটি মেরে বসে রইলাম বাকি সময়টা। আর অনুধাবন করলাম বাহুবলী কে বড্ডো বেশি "দিল সে" চাওয়া হয়ে গিয়েছে। নেক্সট টাইম একটু কেয়ারফুল থাকতে হবে।

P.S.সামনের সিটে বসে (বা উড়ে) থাকা "চিল-চিৎকার-সিটি" গ্রূপের যে লিডার ছেলেটি, চেহারাতে তিনি লাঠিকে কম্পেটিশন দেন। কিন্তু গলার জোরে নয়। মাঝে কোনো বিশেষ ফোন আসাতে তিনি একটু দিকভ্রান্ত হলেও শেষ অব্দি গলা জোর অটল ছিল। ওনার সাথে একটু আলাপ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সিনেমা শেষ হতেই উনি লুচি-মটনের মতো মুহূর্তেই অন্ধকারের পেটে অদৃশ্য হলেন। হোয়াট এ মিস।