Thursday, 25 May 2017

তিনি আমার পরমাত্মীয়

- ওটা আবার কি?
- ভাস্কর্য।
- য়্যা? কে? কে কথা বললো? আপনি কিছু বলছেন?
- হ্যা। তুমি বললে, ওটা আবার কি? আমি তাই উত্তর দিলাম ভাস্কর্য-স্কাল্পচার। মূর্তিও বলতে পারো।
- ও কিন্তু আমি তো মনে মনেই ভাবছিলাম। আপনি শুনতে পেয়ে গেলেন!! একটু জোরেই বলে ফেলেছি, তাই না? সরি।
- সরির কিছু নেই ভাই। আর জোরেও তুমি বলোনি। আমারই সব শুনে ফেলার রোগ হয়েছে কিছুকাল ধরে। মাঝে মাঝে কানটা ঝালাপালা করে।
- হে হে আপনি মজার মানুষ তো।
- মজার? আচ্ছা তা বেশ।  ...... এই মূর্তিটার অর্থ কি ভেবে পাচ্ছ না নাকি?
- কি আশ্চর্য। আপনি কি করে বুঝলেন? আসলে আমি খুব ভাবার চেষ্টা করছি এই মূর্তির মাধ্যমে কি বলা হয়েছে? আসলে ডেবিট-ক্রেডিট করে করে মাথাটা গ্যাছে।
- বটে? কমার্স?
- ওই হ্যা হ্যা। ঠিক ধরেছেন। আর্ট এন্ড কালচারে একদম অজ্ঞ। কিন্তু জানার ইচ্ছে খুব জানেন? তাই তো শান্তিনিকেতনে  .... আচ্ছা, আপনি জানেন, বলে দেবেন, এই মূর্তির মানে কি?
- হমম বলতে পারি। তবে তোমার কি মনে হচ্ছে শুনি আগে? তারপর আমি বলবো।
- আমার দেখেই কিরকম মনে হলো ভীম। দুর্যোধনকে বেদম পেটাচ্ছে। মাফ করবেন আমার অজ্ঞতাকে।
- হা হা কি বললে ভীম? হা হা।  তা বেশ বলেছো। আর কি মনে হচ্ছে?
-  হে হে ভীম তো পুরুষ তাই ঠিক মেলাতে পারছি না। তাছাড়া দুর্যোধনের মাথাও দেখা যাচ্ছে না। তাই এখন মনে হচ্ছে কোনো মহিলা  ...
- বাহ্। বলতে থাকো। 
- কাপড় কাঁচছে। শুধু মাথাটা নেই কেন ভাবছি। মাথাটা পিছনের দিকে আর্চের মতো ঝোলানোও নেই। নাঃ। তাই আর কিছু মাথায় আসছে না। আপনিই বলে দিন প্লিজ।
- আচ্ছা, আচ্ছা। মূর্তির নিচে কি লেখা আছে, সেটা তো পড়েছো নিশ্চয়।
- হ্যা। লেখা আছে থ্রেশার। তাই তো প্রথমে ভীম ভাবলাম।
- হমম হারভেস্টার জানো? চাষীরা ফসল আছড়ায় দেখেছো? শহরে আর ওসব কি দেখবে তোমরা!! ঐটিই আছে এই মূর্তিতে। ল্যাটেরাইট মাটি আর সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে এই মূর্তি। তুমি আছড়ানোর ব্যাপারটা ভালোই ধরেছো যদিও। হা হা
- ওহ তাই নাকি। আচ্ছা, শিল্পীর ভাবনা যা এইটিই আপনি জানলেন কি করে? আপনি কি এখানেই থাকেন? লোকাল?
- হ্যা আমি সেই ঊনিশ বছর বয়স থেকে এখানেই। লোকালই বলতে পারো। লোকে আমায় খ্যাপাকিঙ্কর বলে। তবে আমি এই মূর্তির বিষয়ে জানি কারণ যিনি এটি বানিয়েছেন তিনি আমার পরমাত্মীয়। তাই  ....
- সে কি বলছেন মশাই? মানে? আপনি চেনেন তাকে? তিনি কি এখনো  ....
- বেঁচে? আমার তো মনে হয় আছেন। লোকে বিশ্বাস করেনা।
- য়্যা? মানে?
- তবে তুমি মনে হয় তার দেখা পাবে। ওই ঘরে তাকে দেখা যায় মাঝে মাঝে। 
- আপনি মশাই ভয় দেখাচ্ছেন রীতিমতো। কি বলছেন? কিছু বুঝতে পারছিনা যে। তবে এই দিনে দুপুরে এরকম....
- ঠাট্টা?
- না না মানে তা ঠিক বলতে …, উফ আপনি না মশাই  ... সব মনের কথা পড়ে ফেলেন। দাঁড়ান একবার ওই ঘরে ঢুকে দেখিই  .... ও মশাই এখানে তো সব ফাঁকা আ আ আ। শুধুই একটা ছবি ই ই ই ই। শুনতে পাচ্ছে  .... ন? .... য়্যা? আরে মশাই এতো আপনিই বানিয়েছেন যে? আপনারই ছবি তো। এতক্ষন আমার সাথে ছিলেন আর একবারও বলেননি!! আমি এতো গুণী মানুষ। আমার শিল্পকার্য্য শান্তিনিকেতনে? একি কোথায় গেলেন? মশাই  .... নামটাও বলে গেলেন না? আরে ও মশাই  ... একটা অটোগ্রাফ এটলিস্ট  .... চলে গেলেন কোথায়? ওনার নামটা ছবির তলাতেই থাকবে নিশ্চয়। রামকিঙ্কর বেজ। জন্ম - ১৯০৬। মৃত্যু? মৃত্যু? .... উনিশ্য আশি  ..... 



No comments:

Post a Comment