Monday, 8 May 2017

লাবণ্যর জীবন

দৃশ্য ১:

উফফ, সংসারের সব দায়িত্ব আমার তাই না? কেউ কিচ্ছু করবে না! পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবে! এ সংসার আমার একার যে। তাই না? 
 উফফফ, কি নোংরা করে রেখেছে ঘরটা। এই পঁয়তাল্লিশের কোমড় তো এবার বিদ্রোহ করবে। আর কত কি সামলাবো বলতে পারো? তোমাকে আর কি বলবো? দূরে দাঁড়িয়ে আমার কথা শোনো আর ভাবটা এমন যেন কিচ্ছুটি জানো না। তাই না? এই লাবণ্য ছিল বলে বেঁচে গেলে হে অমিত রায়। ওওওওই মুচকি হাসি ব্যাস। ওতেই সব রাগ গলে জল। হা হা। 
আচ্ছা তোমার ওপর কিছুতেই রাগ করতে পারিনা কেন বলতো? তোমার ওই চাহুনিতে কি যে খুঁজে পাই কি বলবো। তোমার ওই চাহুনি? উফফফ এখনো মনে আছে সেই প্রথম ছোঁয়া? সে কি শিহরণ কি বলবো। তুমি সাথে থাকলে দিনগুলো কাটে হ্যারি পটারের ম্যাজিক ওয়ানডের মতো। কেন যে মাঝে মাঝে আমাকে একদম সময় দাও না। ওরে বাবা, আচ্ছা আচ্ছা সে অভিমানের কথা না হয় আজ বাদ দিলাম। ঠিক আছে তো এইবার?কিন্তু সেইদিন কি যে হলো, আমি কি আমার মধ্যেই ছিলাম না? কি যে হলো হঠাৎ? সকাল থেকে বৃষ্টি। পেন-খাতা নিয়ে সারাটাদিন হাঁ করে ছিলাম। একটা শব্দ বেরোলো না। এমন মাথায় আগুন জ্বললো। আসলে মনটাই ভালো ছিলোনা হয়তো। পেনটা ছুঁড়লাম আর পড়বি তো পড়, তোমার ...... ইশ ইশশ এই এই যে এখানে এখনো দাগটা রয়েছে। এযে মহাপাপ। কি করে হলো এই অন্যায়? ইশশ। তুমি আমায় ক্ষমা করতে পারবে? কোনোদিনই? জানি জানি, তুমি ক্ষমা করেছ। কিন্তু আমি পারছি না যে, নিজেকে ক্ষমা করতে। এই দাগ কত চেষ্টা করেও মিলছে না কেন জানো? ও বুঝিয়ে দেয় ওর হিসেবটা এখনো বাকি আছে, ও আমাকে আমার অপরাধ মনে করায়। প্রতি মুহূর্তে। না না এটা ঠিক। এটাই ঠিক। এতেই আমার পাপের শাস্তি।

য়্যা রবু? তুই এখানে কখন এলি? এই তুই হাসছিস কেন রে? খুব মজা লাগছে তাই না? জামাটার কি অবস্থা করেছিস বলতো? আয় চেঞ্জ করিয়ে দি। আমার সোনাটা তুই, জানিস, প্রথম যখন তুই এলি আমার কোলে, তোকে ছুঁয়ে প্রথমটায় রোমাঞ্চ লেগেছিলো যেন। নিজের চোখেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিলো না। কত চেয়েছিলাম তোকে মনে মনে। শেষে তুই এলি, ঠিক এলি। তোর গায়ে অদ্ভুত গন্ধ। এখনো মনে করলেই পাই সেই গন্ধ। তুই আমার, এক্কেবারে আমার। তোকে আজ এই সবুজটা পড়াই। খুব মিষ্টি লাগে তোকে এটাতে। আমার সবুজসোনা। ওরে সবুজ ওরে আমার কাঁচা … হা হা।

এই সঞ্চু কোথায়? কোথায় গেলো রে? তুই জানিস কোথায় গেলো? সঞ্চু না আমাকে পাগল করে দেবে একদিন। ইচ্ছে করে-করে কোথায় লুকোবে, আর আমি পাগলের মতো খুঁজবো! আমাকে খুঁজতে দেখতে, খুব মজা লাগে ওর। এই কে রে ওখানে কে রে কে রে? খিলখিলিয়ে হাসে যে? খুব মজা না? দাঁড়া তো? দাঁড়া তো? এই তো কাপবোর্ডের পিছনে মনে হচ্ছে, এএএএই এই তো পেয়েছি বদমাসটাকে। হা হা। কি রে? এখানে লুকিয়ে আছিস? দাঁড়া তো? এইকি ওমাগো ………… কেঁটে গেলো কি করে!! তুই আমাকে বলিসনি? ডাকিসনি? এ হে? কাটলো কি করে? এতো ছটফট করিস না তুই! তোকে নিয়ে কি যে করি সঞ্চু। উফফফ আহা আহা কি যে করিসনা বাবা! এরকম করিসনা সোনা। জানিসনা তোদের কিছু হলে আমার কত কষ্ট হয়। একদম বুঝবিনা তোরা? তোরা তিনজনেই তো আমার জীবন রে। একটু বুঝবি না সোনা। আয় আয় সোনা ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দি।
------------------------------------
দৃশ্য ২:

ঘরের মধ্যে,
শেষের কবিতা হেলে আছে একদিকে, তার প্রথম কয়েকটা পাতায় পেনের খোঁচার গভীর দাগ।

রবীন্দ্ররচনাবলি সদ্য নতুন মলাটে আবৃত, সবুজ মলাটে।

লাবণ্য ব্যস্ত, এইমুহূর্তে সঞ্চয়িতার পিছনের পাতার ছিঁড়ে যাওয়া কোণের অংশতে সেলোটেপ লাগাচ্ছে

No comments:

Post a Comment