Wednesday, 3 May 2017

"কায়নাত" কি "কৌশিশ"

"কেহতে হে কি কিসি চিজ কো আগার দিল সে চাহো, তো পুরি কায়নাত উসে তুমসে মিলানেকি কৌশিশ মে লাগ্ জাতি হে।"

ইয়ে মানে ডায়ালগ টা সঠিক। এতদিন বুঝিনি। কাল বুঝলাম জানেন। বাহুবলী দেখতে গিয়ে জীবনে প্রথম তা মর্মোদ্ধার করলাম। সিনেমা দেখতে গেলে আশেপাশের পরিবেশ আপনাকে শুরু থেকেই ট্রেলার দেখাতে থাকে। না হলে সিনেমার মাহাত্ম্যর মাইলেজে ঘাটতি পড়ে। 
যেমন ধরুন নতুন সিনেমা আসছে, পোস্ত। বাড়িতে দেখলেন, ইয়েস, লাঞ্চে আলুপোস্ত। বেগম জান দেখতে যাওয়ার আগে একটু বৌকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎ বলে উঠলেন,"আন বান শান, তুমি বেগম জান" বা ঐরকম পেটি কিছু ছড়া। 
ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস এর ক্ষেত্রে সংসারীরা একটু গুণে দেখবেন সারাদিনে কতবার ফিউরিয়াস হয়েছেন। অন্যদিনের তুলনায় একটু যেন বেশি না? হে হে হতেই হবে বাওয়া। নাহলে বুঝবেন, আপনি সিনেমাটির প্রতি সুবিচার করেননি। আপনি মুভিটাই ডিজার্ভ করেন না। 
এবার আসি বাহুবলীর কথায়। সিনেমা যেহেতু বাহুবলী। একটা অ্যাকশন-অ্যাকশন.... আর সেখানেই যত সমস্যা। মানে আমি শান্তিপ্রিয় তুলসী চক্কোত্তি। তা বলে কি আমাদের কি বাহুবলী দেখতে নেই? ভয়ে ভয়ে আছি, "কায়নাত" কি "কৌশিশ" করছে কে জানে। রিলিজ করার পরের দিন। সিনেমা শুরুর পনেরো মিনিট আগেই সিনেমাঘরে পোঁছলাম। ভিড় এভোয়েড করতে নিজের যথেষ্ট স্মর্টনেস ব্যবহার করে বাইরেই কিছুক্ষন দাঁড়ালাম। ভাবলাম সবাই ঢুকে গেলে ধীরে ধীরে এন্ট্রি নেওয়া যাবে। স্মার্ট আইডিয়া। শো শুরু হওয়ার ঠিক চার মিনিট আগে ঢুকতে গিয়ে দেখি, ভিড়ের পরিমাণ তো কমেনি উল্টে বেড়ে গিয়েছে। কানটা খাঁড়া করতেই বুঝলাম, শো অনিবার্যকারণবশতঃ পনেরো মিনিট ডিলেইড। আর শুনেই পিছন ফিরতে গিয়ে দেখি,জনঅরণ্য। আমি-পেরেক, গর্তে ঢুকে প্যাঁচ খেয়ে গেছি। এবার হাতুড়ি ঠোকা খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আর কি, দরদর করে ঘাম, জায়গা-অজায়গায় চুলকুনি, ঘাড়ের কাছে গরম-পিঁয়াজি নিশ্বাস। অনুভব করলাম। মন দিয়ে। পিছনের মহিলা তার পাশের শ্রেষ্ঠতর-অর্ধ্যেকের (বেটার হাফের) কাঁধে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। তিনি বুঝতেও  পারছেন নাকি যে নিজের সাথের ঢাউস ব্যাগটার নাইন্টিটু পার্সেন্ট আমার বাহুর ওপর? আমি বাহুবলী নই ম্যাডাম। বুঝলাম "কায়নাত" ইস নাউ ইন অ্যাকশন। এই মুহূর্তে কোথা থেকে অসময়ে এসে "চ্যালেঞ্জ" গোত্তা মারলো, ব্যাস আর তো হাত গুটিয়ে থাকলে চলবে না। অপেক্ষার একেকটি সেকেন্ডে মনে হচ্ছে যেন যুদ্ধে শত্রুপক্ষের টিকি দেখার অপেক্ষা। যেই না দরজা খুলবে, সে সময় কোন স্ট্রাইকটা যথোপযুক্ত হবে, তার প্ল্যান ছকে নেওয়া চলছে। আসে-পাশের সবার মুখ দেখি গম্ভীর। কেউ হাসছে না, কথা বলছে সিক্রেট মিশনের এজেন্টদের মতো। সবার নজর মাছের চোখে। ভাবলাম শত্রুকে ডাইভার্ট করি। বলে উঠলাম আচমকা,"বিচ্ছিরি গরম ভাই। কি করছে এরা। কখন যে খুলবে। পশ্চিমবঙ্গের টাইমসেন্সটা নিয়ে কোনো বিপ্লব যতদিন না হচ্ছে  ....." পিছন থেকে একজন বলে উঠলেন,"মশাই, এই গরমে চুপ করে থাকুন না প্লিস। আর না হলে কিছু নতুন বলুন। গান শোনান। বাজে কথা বলাটাও একধরণের পলিউশন জানেন, বাকদূষণ"। ড্যাম!! বুঝলাম সবাই কনসেনট্রেট করতে চাইছে। শত্রুপক্ষ অনেক বেশি প্রিপারেড। আমি এমনিতেই পিছনের সৈন্য। কালচক্রে এইমুহূর্তে আবার অভিমন্যু স্টেটে। অসহায় বোধ করছিলাম ভীষণ। অপেক্ষার আরও পাঁচ মিনিট। এইই দরজা খুলল। ব্যাস। আক্রম..... ণ। বাহুবলী ১ এর কিছু দৃশ্যের কথা মনে করে একটু ঝুঁকে, তীরের ফলের মতো মুঠো বন্ধ করে যেই না এগোবো, হঠাৎ কোমরে বেদম জোরে গুদুম। পাশের মহিলার কনুইয়ের সফল লক্ষ্যভেদ আমার কোমরে, বুঝলাম অফেন্সিভ খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠিক এই সময়ে, কেউ আমার চোখের ওপর রুমাল ঝাড়লো। ডেন্জার। মানে দল বেঁধে নেমেছে। আমি রিস্ক না নিয়ে "কাটাপ্পা পা পা পা" বলে ছুটলাম এলোপাতাড়ি। হে হে কাটাপ্পা-নামের মহিমা কম? দেখলাম হলের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। এবার শুরু অন্ধকারে সিট্ হাতড়ানো। কোনোরকমে নিজেরটা খুঁজে বসা গেলো। মনে হলো ব্যাস এবার বোধহয় "কায়নাত" বাবুও বাহুবলী এনজয় করবেন। ও হরি, সে গুড়ে বালি। বাহুবলী সিনেমা বলে কথা বাওয়া, তাই মহাধামাকা "কৌশিশ" টাও যথোপযুক্ত হবে সেটা এক্সপেক্ট করা উচিত ছিল। হঠাৎ চিল-চিৎকার সাথে বেদম সিটি। একের পর এক। সিনেমা শুরুর প্রথম দশ মিনিট কানে তালা ছিল। যতবারই বাহুবলীর স্ক্রিনে আগমণ, ততবারই চিল-চিৎকার-সিটি। বাহুবলী উড়ছেন, চিল-চিৎকার-সিটি। বাহুবলী নাচছেন, চিল-চিৎকার-সিটি। বাহুবলী চোখ নাড়ছেন, চিল-চিৎকার-সিটি। বাহুবলী কোপাচ্ছেন, চিল-চিৎকার-সিটি। সামনে-পিছনে সর্বত্র। এতক্ষনে অস্ত্র নামিয়ে ফেলেছি। কিছু কিছু যুদ্ধে হার নিশ্চিত। আমি আত্মসমর্পণ করেছি। তুলসী-চক্কোত্তি- আমি ক্ষেপটি মেরে বসে রইলাম বাকি সময়টা। আর অনুধাবন করলাম বাহুবলী কে বড্ডো বেশি "দিল সে" চাওয়া হয়ে গিয়েছে। নেক্সট টাইম একটু কেয়ারফুল থাকতে হবে।

P.S.সামনের সিটে বসে (বা উড়ে) থাকা "চিল-চিৎকার-সিটি" গ্রূপের যে লিডার ছেলেটি, চেহারাতে তিনি লাঠিকে কম্পেটিশন দেন। কিন্তু গলার জোরে নয়। মাঝে কোনো বিশেষ ফোন আসাতে তিনি একটু দিকভ্রান্ত হলেও শেষ অব্দি গলা জোর অটল ছিল। ওনার সাথে একটু আলাপ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সিনেমা শেষ হতেই উনি লুচি-মটনের মতো মুহূর্তেই অন্ধকারের পেটে অদৃশ্য হলেন। হোয়াট এ মিস।

No comments:

Post a Comment