Monday, 30 October 2017

ফিউচার

ফিউচার

- তাহলে কি.....
- হ্যা আর কোনো ফিউচার দেখছি না। শুধু শুধু একে টেনে বেরিয়ে লাভ কি?
- সবই তো ঠিক ছিল শ্রী। হঠাৎ কি হলো?
- তোমার আর আমার মধ্যে এতো ফারাক। এডজাস্ট করা সম্ভব কিন্তু তার একটা লিমিট আছে তো নাকি?
- খেতে খেতে ঢেকুরটা তো আজকাল একটু কমই হয়। হয় না?
- উফ ওটা তো মাইনর। কুঁজো হয়ে হাঁটা টা আর নেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সময়-অসময়ে কথার খেই হারিয়ে ফেলা। পরশু রাতে ফোন করতে করতে হঠাৎ চুপ। কত কথা বলে যাচ্ছি আমি একা একাই। শেষে আওয়াজ নেই দেখে কেটে কল করি। তারপর বুঝলাম, ঘুমিয়ে পড়েছিলে। মানে হাউ ডেয়ার ইউ! যাক গে যাক আজ ঠিক করেছি আর মাথা গরম করবো না।
- বলছি যে, একটি বার আমার কথা শোনো। আমি কথার খেই হারাবো না। মানে যেই খেই হারিয়ে যাবার সিগন্যাল পাবে, আমাকে একটু চোখ মেরে দিও বা হাত টিপে দিও। আমি বুঝে যাব। কথার খেই, দড়ি, তার, পাইপ যা পাবো ধরে উঠে আসবো ঠিক মেন লাইনে। আসলে তুমি না থাকলে খেই-খৈ সবেতেই তো জল থৈ থৈ। ঠাঁই পাই কোথা বলতো। আর ঘুমের কেসটার সমাধান আছে।
- আছে?
- হ্যা গো। কলেজেই কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেবো না হয়। ক্যারাম আর উনিয়নের টাইমটার সাথে এডজাস্ট করে নেবো। স্যার শাস্তি দেবে দিক। বন্ধুরা ত্যাগ করবে করুক। ও দুঃখ তবু সহ্য হবে। কিন্তু তোমাকে ছেড়ে থাকার দুঃখ, সারাজীবন তোর্তুগিলা দ্বীপে একা থাকার মতো হবে গো। তুমি ত্যাগ কোরো না গো। ট্যাগ করে রেখো। পিনপোস্টের মতো।
- প্লিস। রাস্তায় মেয়ে দেখলেই যে চোখটা ড্যাবডেবিয়ে বেরিয়ে আসে। জিভটাও। তার বেলা? ঐটাই মেন রিজন। আমি তো আর গরু চড়াতে তোমার সাথে হাঁটি না যে সারাক্ষন তোমার দিকেই নজর রাখবো। আর কি ইরিটেটিং! তুমি একটা পারভার্ট। বিকৃতবুদ্ধি। নাহলে রাস্তায় মেয়ে দেখে এরকম করো!
- বটেই তো। বটেই তো। গরু চড়াবে কেন খামোকা। কিন্তু তুমি তো পয়েন্টটাই বোঝোনি এতদিন আর আমাকে ভুল বুঝে এসেছো, এহ হে এহ হে এহ হে।
- কিসের পয়েন্ট? দাঁত বার না করে বলে ফেলো।
- ব্যাপারটা হলো যে, দ্যাখ তুমি হলে আমার রত্ন। মানে তোমাকে পেয়ে আমার সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে। মানে তুমিই আমার ডেসডিমোনার সুরেলা গলা, তুমিই আমার "হামদাম সুনিও রে", তুমিই আমার "টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন, টু ফোর ফোর ...."
- একেবারে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেব কিন্তু, ভনিতা না করে বলবে?
- ঐটাই তো মানে সংক্ষেপে এই যে, তোমাকে সাথে নিয়ে হাঁটি যখন, ওরা দেখনি কিরকম হাঁ করে থাকে!! তাই ওদের আমি ইয়ে মানে....
- কি বলো?
- ওই মুখ ভেঙ্গাই। জিভ বের করে, এ এ এ এ। আর চোখ আর জিভের কানেক্শনটা তো জানোই। জিভ বেরোলেই দেখবে চোখটা বড়ো হয়ে যায়। ওই "জিম ক্যারি" ইন "দি-মাস্ক" এর মতো আর কি। কি যে প্রশান্তি কি বলবো তোমায়।
- য়্যা মানে? ওরকম বাঁদরের মতো?
- এএএই এক্কেবারে ঠিক বলেছো। বাঁদরের মতো ভেঙ্গিয়ে সারা পৃথিবীকে জানাতে চাই,"পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি, ফিং দিয়া দিই তিন দোল, আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা  ...."
- আচ্ছা আচ্ছা। বুঝেছি।
- বুঝেছো?
- হুঁ।
- (ভয়ে ভয়ে) কি?
- একটু এডজাস্ট নাহয় করেই নেবো। ছেলে তুমি মন্দ না।

Monday, 23 October 2017

আজ হয়ে গেলো একচল্লিশ

-ও এম জি! দিস ইস ড্যাম অসাম ইয়ার। এটা বট না অশ্বত্থ?
-অশ্বত্থ গাছ। খুব পুরোনো হবে। বাড়িটাকে পুরো জাপটে ধরেছে। হে হে যেন বাড়িটা ওর প্রেমিকা।
-তুই এই দেখছিস? আমি ভাবছি, প্রোপার্টিটার কি বিচ্ছিরি অবস্থা। নিশ্চয় ছেলে-মেয়েরা সব আমেরিকা-লন্ডনে। আর কোর্টে কেস চলছে। হিয়ারিংয়ের ডেট পিছোচ্ছে। সেম ওল্ড স্টোরি।
-ধুস। তুই আনরোমান্টিক। আমার মতো করে ভাবলেও তো পারো দেবী ফর আ চেঞ্জ। শিকড়-এ একটা আর্ট আছে, দেখ। লুক্স লাইক একটা মেয়ের এলোমেলো সাহসিনী চুল।
-আমার তো মনে হচ্ছে একটা নাম্বার, সামথিং লাইক থার্টি নাইন?
- হে আমার আনরোমান্টিক, সংখ্যাতত্ববিদ দেবী, আপনি এর মধ্যে কোর্টের কেস আর সংখ্যা ছাড়া আর কিছু পেলেন না দেখে নিশ্চিন্ত হলাম।
- নিশ্চিন্ত কেন?
- বিয়ের পর সংসারের জমা-খরচের রেসপনসিবিলিটি তোমায় দিয়ে আমি মাতবো আপন তালে।
- স্যাট আপ।
- আচ্ছা আচ্ছা, যাক ফটো তুলে নি কি বল। রাতে একবার আসবো। বিউটিফুল একটা ক্যাপচার হবে এক্সপেক্ট করছি।
-এই, আজ কি রে? পূর্ণিমা না অমাবস্যা?
-ওহ গস। কাম অন। আমি কি বলছি, আর তুই কি বলছিস! আই ডোন্ট নো ইয়ার, পূর্ণিমা না অমাবস্যা। কাল রাতে কালীপুজো গেলো। নিশ্চয় অমাবস্যা হবে। রাইট?
-দিদা বলতেন, অমাবস্যার রাতে বট বা অশ্বত্থ গাছের তলায় যেতে নেই!
-ডোন্ট টেল মি, সেটা তুই বিলিভ করিস আজও। প্লিস লেট্ মি কন্সেন্ট্রেট। আজ রাতে আসছি। একটা ফাটাফাটি ক্লিক তোমাকে উপহার দেব বেবি।
=======================
"আজ কি অপরূপ সাজ তোমার হে পৃথিবী
অশ্বত্থে আজ লেগেছে হাওয়া, উত্তাল মাধবী।
হা হা হা হা। আজ অমাবস্যা। অশ্বত্থের আজ কামনা জেগেছে, আবার। আবার সে আজ মহাতরঙ্গময়। যেমন হয়েছিল আজ থেকে ষাট বছর আগে। পাতায় পাতায় কেমন ইশারা। ডালে ডালে চলেছে সর্বনাশা খেলা। শিকড়গুলি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। উদ্দণ্ড শক্তি চেপে বসেছে ওতে। আজ কি নেশায় মেতেছে যেন। গুণে দেখেছো উনচল্লিশ। সেই উনচল্লিশটা খিদে মিটিয়েছিলো অশ্বত্থ একে একে উনচল্লিশ তাজা প্রাণে। আরে আরে এ ছেলে-মেয়ে দুটি কোথায় যায়? ওদের আটকাই কিভাবে। এই কি বিধাতার ইচ্ছে? আজ কি আবার? আবার? না, না ..."
=========================
-এই পিনটু দেখ দেখ, অশ্বত্থ গাছটা কিরকম বেড়ে গেছে এক রাতে?
-আরে ও সব ওরকমই। বাড়িটা কোনদিন ভেঙে পড়বে, দেখিস।
-এই দেখ দেখ, শিকড়ে এমন জড়িয়ে আছে, যেন কি একটা বোঝাতে চাইছে।
- ওই আবার। আবার সেদিনের মতো। আজ কি সংখ্যা? নাকি আজ তোকে ডাকছে, বলছে, দোল খাবি? হ্যা? হা হা।
-আরে ইয়ার্কি না। সত্যি দেখ, শিকড়গুলোর আঁকাবাঁকা পথ গুলো দেখ। কিরকম একটা যেন লাগছে। মম ... ওই চার আর এক দেখ দেখ একচল্লিশ। একদম যেন একচল্লিশ। ও ও ওই ও ও ওই কিছু শুনতে পাচ্ছিস? একটা চিৎকার? কেউ যেন কিছু বলতে চাইছে?


-ধুর ভাই। চল তো যত্তসব। এই সেদিন বলি উনচল্লিশ। আজ হয়ে গেলো একচল্লিশ। আবার চিৎকারও শুনছিস? তুই কবিতা লেখ না হয় ডাক্তার দেখা। হা হা। এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? ধুর। শোন। সামনের অমাবস্যায় রাতে আসবো দুজনে কেমন? কিচ্ছু ভয়ের নেই। একবার রাতে এখানে এসে বসবো, দেখবি ভয়-টয় সব হাওয়া। কবে রে অমাবস্যা? পরশু?

Wednesday, 18 October 2017

১২ নম্বরের রচনা

"বৈচিত্র্য-র মধ্যে ঐক্য" এই ১২ নম্বরের রচনাটা সবার হেব্বি পছন্দের। "কমন পড়েছে, হুররে"।
গাছগাছালি, পাহাড়পর্বত, মরুভূমি এসব নিয়ে লিখলে মেরে কেটে ৬, তবে খাতা যিনি দেখছেন তাঁর জিভে জল আনা খাবার দাবার নিয়ে লিখলে ৯ নম্বর পাক্কা।
রাকাও মহা উৎসাহে পরীক্ষাতে রচনাটা লিখেছিল, বলেছিল জব্বর লিখেছে। নম্বর বেড়োতে রাকা কিরকম যেন হতভম্ভাইস্ড হয়ে গিয়েছিল, ১২তে পেয়েছিল ২। শুধুই কি তাই? টিচার-ব্যক্তিটি বাঁকা হাসি হেসে উচ্চস্বরে ক্লাসের মাঝে পড়ে শুনিয়েছিলেন ওর লেখা। সে কি কান্ড! মাথা নিচু করে ছিল রাকা। টপটপ করে দুফোটা জল পড়েছিল হাতে। আজ সবটা মনে নেই। তবে শেষ লাইনটা ছিল এইরকম, "ভারতবর্ষ-এর মানুষের মন সর্বাপেক্ষা বৈচিত্র্যময়। কালো রং-ওয়ালা মহিলা-জীব ভারতের রাস্তায়-হাটে-মাঠে-ঘাটে কুচ্ছিত-মহাঅশুভ, তবে পূজার মন্দিরে মূর্তি হিসেবে চলবে।"

(চরিত্র কাল্পনিক। বিষয়বস্তু কাল্পনিক কিনা, আপনারাই বলুন।)
(নিচের ছবিটি একটি শ্যামবর্ণা নারীর, যেন ঘরের মা লক্ষীটি, যাঁর অস্ত্র ওঠে অন্যায়ে।)

Saturday, 7 October 2017

থিমের প্যান্ডেল

রসিকবাবু ফাইনালি এবার হুপহাপ্ করে হপিংয়ে বেরোলেন, গিন্নিকে নিয়ে প্যান্ডেল। 
- বেহালা মন্দ কি। প্যান্ডেল সে তো আছেই। অশোকার মোগলাইও তো আছে। বেঙ্গল হোটেলের মটন কাটলেটও তো .... 
(গিন্নি কটমট চোখে)- বেরোতে না বেরোতেই খাওয়ার চিন্তা এসে গেলো, তাই না? বলি বিয়ের পর এই প্রথম তো নাকি। 
- আহা এতো হাটবে, শরীর টাকে রাখতে হবে না? তাছাড়া তোমার পছন্দের প্রচুর ডালডা ঢালা এগরোলও তো আছে- এগরোল ফ্রম হাজি, কি রাজি?
(গিন্নি) - সে পরে দেখা যাবে। চলো চলো, এতে ঢোক তো। কি সুন্দর প্যান্ডেলটা। এই কি থিম গো এইটের?
- দাড়াও বুঝে দেখি। ভিতরে চলো। ওকি কিছুই তো নেই। প্যান্ডেল কি কমপ্লিট হয়নি নাকি? সব তো ফাঁকা। নাকি চোখে দেখা যাচ্ছে না? বললাম কাটলেট খেয়ে ঢুকি। তাতে চোখ-মাথা সব ভালো খোলে। থিমের প্যান্ডেল বোঝা কি সহজ নাকি? নিড এলেম গিন্নি।
(সিকিউরিটি) - স্যার ওপরে তাকিয়ে দেখুন। টেবিল, চেয়ার, আলমারি সব ওপরে সাঁটানো। বুঝলেন না? এটাই থিম। যেন বাড়িটা উল্টে গ্যাছে।
(গিন্নি) - এই এই ওকি কি করছো, ওগো কে কোথায় আছো গো? এই এরকম শুয়ে পড়লে কেন? দেওয়াল বেয়ে কি করছো?
রসিকবাবু ততক্ষনে দেওয়াল বেয়ে মাথা নিচে, পা ওপরে।
- আহা আহা গিন্নি এইবার থিম টা বোঝা যাচ্ছে। থিমের নাম "শীর্ষাসন"। ঠিক বলেছো গিন্নি, আগে থিমের প্যান্ডেল, তারপর কাটলেট। না হলে এতক্ষনে কাটলেট মাথায় চড়তো।


নিকো পার্কের বাপীদা

লোকজন বলছিল, ওটা নাকি একোয়ারিয়াম।
দুর্গাপুজোতে একোয়ারিয়াম!! ও ফিশ!!
কাছাকাছি হতেই বুঝি একোয়ারিয়াম নয় হে। এ হলো মরীচিকা, ফুল অফ ফুচকা।
বাংলার বুকে ফুচকা সারভাইভিং ফ্যাক্টর। এনার প্রভাব অনস্বীকার্য।
#বাড়িতে ডিনার না হলে ফুচকা।
#ছেলের এক্সাম পরশু থেকে, টেনশনে ফুচকা।
#অফিস ফেরত, গৃহযুদ্ধের প্রাক্কালে দশটাকার ফুচকা।
#স্কুললাঞ্চ ডাস্টবিনে, গেটের বাইরে হাত বাড়িয়ে ফুচকা।
সে আরও কত কান্ড।
তা এই ফুচকা দোকানি ফুচকা দোকানি পাক্কা মার্কেটিং এনালিস্ট। মার্কেট ডিমান্ড ভালোই বুঝেছে, তাই এনাফ সাপ্লাই নিয়ে হাজির। এনাফ বলে এনাফ। শুধু কোয়ান্টিটি দেখলেই যে হবে না তাও বুঝেছে, তাই মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কম নাকি? দেখুন না কি অফার করছে  আপনাকে। দই ফুচকা তো আঁতিপাতি। এখানে পাওয়া যাচ্ছে চাটনী ফুচকা, জেলি ফুচকা। আমি ঘাড় উঁচু করে খুঁজছিলাম মটন ফুচকা বা রাবড়ি ফুচকা গোছের কিছু। মানে ঘেটে ঘ যখন হচ্ছেই, তখন ড্রিম বিগ।

"জেলি ফুচকা জিনিসটা কি বাপিদাদা", জিজ্ঞেস করতেই, মায়াবী চোখ তুলে জিজ্ঞেস উনি বললেন ,"আমি বাপি নই,  ঝাল বেশি না কম? জল দিয়ে না শুকনো? এই নিন বাটি"

নিকো পার্কের এরকম একটি বাপীদা না হলে দুর্গাপূজাতে টিনেজার রা বলবে কি করে,"ইটস ক্রেজি ইয়ার"


Tuesday, 3 October 2017

বাঁশ

"বাঁশ" শুনলেন কি ব্যাস অমনি সব ভয়ে ভ। বলি বাঁশকে ভয় পান কেন? আরে মশাই, বাঁশ তো আর নিজে নিজে ভয় দেখায় না। যত্তসব। বাঁশ-ক্যারিয়ারদের ভয় পাওয়াটা বরং লজিকাল। বাঁশ-ক্যারিয়াররা বাঁশকে অন্য-এর ওপর ইউস করলে, তাতে বাঁশের কি দোষ বলুন তো? বেচারা নির্ভেজাল শান্ত বাঁশটি। এভাবে ওকে ভয় পেতে থাকলে আর খিল্লি ওড়াতে থাকলে একদিন যে বাঁশ বাবাজি নিজেই ভয় দেখাতে হামলা করবে না, সে গ্যারান্টি নেই কিন্তু। বাঁশ বলে কি, আত্মসম্মান নেই নাকি! ভাগ্যিস পুজোর প্যান্ডেলে বছর বছর তার একটু সন্মান প্রাপ্তি হয়। না হলে ওনাকে বাগে আনা মুশকিল ছিল। এবারের পুজোতে বাঁশ বাবাজি হেব্বি হ্যাপি সুরুচি সংঘ-এ। তার মেক ওভার আগেও হয়েছে বটে তবে এখানে লুকটা জাস্ট ফাটিয়ে। তৈরী হয়েছে বাঁশ-মানুষ। উচ্চতায় সাধারণদের দু-গুণ। সিক্স প্যাক, বাই-ট্রাই সেপ্স, চেস্ট, মানে একেবারে জমে রাবড়ি। মানুষ-মানুষ সেজে বাঁশের সে কি ঝিং-চ্যাক হাবভাব! সাধারণ মানুষ যখন ভিড়ে গুঁতোগুঁতি করে, ঘাড় উঁচিয়ে, হা করে, শুধু ঢোক গিলছে, বাঁশবাবুর কি মজা। মনে মনে হেব্বি হেসেছে। সে এক কান্ড বটে।

পুনশ্চ: বাকি সবাই যেমন তেমন বাঁশ সামলেছে। কিন্তু অসুর টেনশনে সবুজ হয়ে গেছে। যতই হোক ভিলেন, যতই থাকুক ত্রিশূলের গুঁতো, যতই কামড়াক সিংহ, ফিজিক এর দিক দিয়ে একটা ফেভারেবল পসিশন তো তার ছিল এতদিন নাকি! সেটাকেই চ্যালেঞ্জ? দু হাত তুলে বলছে, "কি বাঁশ। কি বাঁশ"


এই উইকেন্ডে দেখা করবে?

বং-রা বলেন, রবিঠাকুর-মান্না-কিশোর নিয়ে বাঙালি ন্যাকাপনা লেবু চটকে একেবারে তেতো। শুধুই কি বলেন? কোনো কোনো সাহসী বং এগিয়ে এসে নতুন লেবু প্রোডিউসও করতে চান। গিটার-ক্যানভাস-বাংলা কিবোর্ড এপ্লিকেশন, অস্ত্র-সস্ত্র যা সহজে পাওয়া যায়, নিয়ে এগিয়ে পরেন। ফেসবুকে পেজের পর পেজ বাড়ে। ইউটিউবে চ্যানেল এর পর চ্যানেল। দুদিন যেতেই অস্ত্রে ভ্যাজাল বেরোয়। কিন্তু ব্রহ্মাস্ত্র নেই বলে পিছিয়ে যাওয়া? উহু নাহ। বরং এর ওর বাগান থেকে লেবু চুরিটা বেটার। তাই শুরু হয়। তাতে পৃথিবী বদলায় না। উল্টে ঘড়ির কাঁটা বদলায়। কিছুতেই আকাশের রং সবুজ আর গাছের রং নীল হয়না। এইটা মোটামুটি চলে ধরুন এই বয়স ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ অব্দি। কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে এরপর তারাই আবার নিজেরাই লেবু চটকানোতে ফিরে আসেন। বা ঢাউস গদিতে এক পা আর একটির ওপর তোলার চেষ্টা করে হুইস্কী-র গ্লাসে সুপ করে চুমুক দিয়ে "ধুর শ্লা বাঙালি" বলে নিজের জীবনপথের যত-সমস্ত পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে নেন। একে বলে চক্র। লেবু চক্র।
ভাত-ডাল থেকে via ইডলি-সাম্বার বাঙালি পাস্তাতে সহজেই আস্থা পেয়েছেন। ধুতি থেকে via বলিউড বাঙালি হলিউড ডুড হয়েছেন। তাতে কি। আর একটা রবীন্দ্রনাথ জন্মালে ঠিক যে আবার ইউ-টার্ন মারবেন, সে মনে মনে জানা। ঠান্ডা ঘরে মিটিংয়ের পর মিটিং শেষে, ইংরিজি কপচে, দুহাত দিয়ে মাথা চেপে যখন ল্যাপটপ স্ক্রিনে তাকিয়ে। হঠাৎ হোয়াটসাপে টুং। "তুমি যে শিশির বিন্দু মম কুমুদির বক্ষে না হেরিলে ওগো তোমারে তমসা ঘনায় চক্ষে।"। ম্যাজিক কাজ করে না বলুন? গায়ে বাঙালি কাঁটা গুলো সোজা হয়ে বলে ওঠে "ওহ, শ্লা বাঙালি", হাতের আঙ্গুল গুলো মাথা থেকে নেমে ওই পুরোনো বাংলা কিবোর্ডে টাইপ শুরু করে, এমনি এমনি,"আমি যামিনী তুমি শশী হে ভাতিছ গগন মাঝে, মিস ইউ। এই উইকেন্ডে দেখা করবে?"

Independence Day

রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে যারা পিক করে কালারফুল বা কালারলেস থুতু ফেলেন, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
সম্মানজনক দূরত্ব না রেখে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একেবারে ঘাড়ের ওপর উঠে পরতে চান, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
পাবলিক সিট্, চেয়ার-এ আঁচড় কেটে অমুক+তমুক লেখেন যারা, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
কান ফাটিয়ে অকারণে যারা হর্ন বাজিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে চলেছেন, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
রেষারেষি করে গাড়ি চালিয়ে "Dhoom" এর অডিশন দিচ্ছেন যারা, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি। 
বাসে বসে যেসব মায়েরা বাচ্চাকে কনুইয়ের গুঁতো দিয়ে চানাচুরের প্যাকেটটা "ফেলে দে না জানলা দিয়ে" বলেন, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
নিজে না এগোতে পেরে যারা এগিয়ে যাওয়া মানুষটাকে পিছনে টানতে চান, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
এরা শিক্ষক, প্রতিমুহূর্তে লাইভ ডেমো দিয়ে, নিজেদের মনুষ্যত্বকে ঘুষি মেরে, পাঁকে হাবুডুবু খেতে খেতে শেখাচ্ছেন। ওনাদের ধন্যবাদ দিয়ে ও পাঁক থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা ধরুন। খুব সহজ তো, ওনারা যে রাস্তায়, ক্রস করে উল্টোটা ধরুন। ব্যাস।

জিভে "ধাপ্পা"

"সব পেলে নষ্ট জীবন" অনুপমদা আগেই বলেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আর তাছাড়া বাঙালিরা আবার কো-বাঙালিদের কথা বিশেষ মনে ধরেন না। পশ্চিমীদের কথাকেই ..... ওই আর কি আপ্তবাক্য বলে ধরেন। 
কাচের ভিতর ঠান্ডাঘরে ১০ খানা ইয়া লম্বা লম্বা চোঙ পাশাপাশি সাজানো। তাতে একটাতে হলুদ, নিচে ছোট্ট স্টিকারে লেখা "ম্যাংগো"। ও মা গো! পাশেরটা সাদা, "পিস্তাসিও"। জিও। তারপরে "ভ্যানিলা", "রাম-রেসিন", "চকলেট", "স্ট্রবেরি", "রাস্পবেরি" আরও সব মিলে লাল-নীল-হলুদের মেলা বসিয়েছে। জিভ আন-কন্ট্রোলেবল। কোনোরকমে ঢোক গিলে গিলে সামাল দেওয়া। চোখ বাঁ থেকে ডানে যায়। মন বলে "লুটে নে, লুটে নে"। দড়াম করে অমনি মাথা থ্র্যাটেনিং দেয়,"ওহে টোয়েন্টি টু পার্সেন্ট ফ্যাট"। ভ্যাট, এই হাতছানি ইগনোর করা যায় নাকি? একটা তো নেবোই। চোখ নাচতে নাচতে এগোতে লাগলো। থামলো একটা হালকা নির্ভেজাল অলিভ সবুজে। নিয়েই নেওয়া গেলো, এক স্কুপ। জিভকে বইতে দেওয়া গেলো "আমার খোলা হাওয়া"। মাথাকে রেস্ট দেওয়া গেলো "তিষ্ঠ ক্ষণকাল"। মন-প্রাণ এক করে চামচে অমৃতাংশ তুলে স্ট্রেইট জিভে চালান করা গেলো। চনমনে ঠান্ডা মুখের ভিতর কাবাডি কাবাডি খেলতে শুরু করেছে সবে .... আহা। হুট্ করে হঠাৎ কে যেন জিভে "ধাপ্পা" বলে দিলো। "ধাপ্পা আ আ আ আ"। এমন টেস্ট, কেউ যেন রেগে ঘাস সিদ্ধ খেতে দিয়েছে। সান্তনা হিসেবে সেই সিদ্ধতে মিষ্টি দিতে ভোলেনি যদিও। এহে একিরে। শেষে মিষ্টি ঘাস! দৌড়ে যাওয়া চোঙ-এর কাছে। দেখা গেলো হালকা নির্ভেজাল অলিভ সবুজটির স্টিকারটিতে লেখা "গ্রিন টি"! জিভ চিৎকার করে ওঠে,"হে পাপাত্মা, পাষন্ড, পাপিষ্ঠ, দুরাত্মা ..... "
"সব পেলে নষ্ট জীবন" অনুপমদা আগেই বলেছেন......
অত কিছু ছেড়ে গ্রিন টিতে চোখ আটকানোর পিছনে যড়যন্ত্রটা কার সেটা ভেবে কিছুতেই উত্তর পাওয়া যায়না। কাচুমাচু চুপ মেরে থাকাই সেফ। তবে জিভ কিন্তু গালাগাল দিয়েছে উচ্চ ভাষায়। সেইটে অগ্রাহ্য করলে চলবে না। জিভের এই শালীনতার পিছনে কি ওই গ্রিন টির হাত আছে?

দেবীকে চক্ষুদান

পূজার বেদীতে বসা দেবীকে যেমন ইচ্ছে সাজাতে পারি, বলেই কি তার প্রতি এতো যত্ন? এতো মন আকুল করা ভালোবাসা?
না হলে, রক্ত-বুদ্ধি ওয়ালা জীবের প্রতি এতো অন্যায় কেন? তাদের বুঝি যেমন ইচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করা কিঞ্চিৎ দুস্কর? 
কাউকে বেশ করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার মধ্যে মনের জ্বালা মেটানো তৃপ্তি আছে একরাশ, তাই না?
যে দেশ কাউকে স্বচ্ছন্দ-স্বাধীন হতে দেখতে পারে না, সে "দেশ লয় গো কত্তা, দেশ লয়। সে দেশলাই, ভিজে দেশলাই। ক্ষুদ্র, সংকীর্ণ, ক্ষমতাহীন।" 

কুমোরটুলিতে আজ দেবীকে চক্ষুদান করা হচ্ছে, দেখুন দেখুন দেবী হাসছেন। এই দেশের অন্তরে চক্ষুদান কবে হবে?

গোলবাড়ি

এক প্লেট মটন কষা। এক প্লেট মটন কিমা। সাথে পরোটা। ব্যাস এইটুকুই। 
তাং মাত কারো। 
বাকি কিছু মনে নেই, মশাই। মনে থাকার কথাও নয়। মেডিটেশন -এ কতটা কন্সেন্ট্রেশন লাগে, সে যারা করেন তারা জানেন, বোঝেন। মনপ্রাণ এক করে চিন্তন-মননকে ভাসিয়ে দিয়ে তবেই তো আধ্যান। গাঢ় খয়রী রং আর তেলের ভাবাবেগের মাঝে সে আধ্যান তখন পিকে। আমির খানের পিকে নয়। ইংরিজি পিকে। মানে শীর্ষ-এ। ঘোর কাটল যখন সামনের প্লেটে লেগে তেলের বিন্দু। হাত ভার্টিক্যালি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আঙ্গুল চেটে ফিনিশিং টাচ চলছে তখন, কানে ভেসে এলো,"গোলবাড়ি কেন গোল নয়", "গোলবাড়ির কেন কোনো শাখা নেই", "গোলবাড়ি কেন এতো ঘিঞ্জি", "গোলবাড়িতে কেন এসি নেই", "গোলবাড়ির মেনুতে অপসন এতো কেন কম".
হে মহাজীবন .....
নাহ মানুষের দেখছি কন্সেন্ট্রেশনের খুব অভাব। মটন কষাকে সামনে পেয়েও ফোকাস করতে পারছে না। হৃদয়বিদারক এ ঘটনার আঘাত সামলাতে, প্রতিবাদ স্বরূপ কালো কাপড়, না না কাপড় নয়, ওই কালো রগরগে মটন কষাই ওই আর কি ইয়ে এক প্লেট অনলি, সাথে মটন কাটলেট আর মটন চাপ প্যাক করানো গেলো। এ শুধুমাত্র জাতির উদ্দেশ্যেই। প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে।


পুজোর দিনগুলিতে নিরামিষ

- এহ!! পুজোর দিনগুলিতে মাংস!!
- আরে পিঁয়াজ-রসুন নেই তো!!
- ওহ নিরামিষ বুঝি। দাও তো পাঁচ পিস্। চর্বিওয়ালা দিও বুঝলে।