Tuesday, 21 March 2017

জীবন মানেই জিবাংলা

অফিস থেকে ঠিক বেরোনোর মুহূর্তে বুড়ো বস একগাদা ফাইল চাপিয়ে দিয়ে পাঠালেন পিওনের হাত দিয়ে। যারা বলে গভর্নমেন্ট চাকরি সুখের, তাদের বিরিয়ানিতে গাদা গাদা উচ্ছে সিদ্ধ। তাদের রসোগোল্লায় গাদাখানেক নুন। তাদের মটনরোলে সোয়াবিন আর পনির ঠাসা।
"ধ্যাৎ তেরিকা" বলে সব ফাইল ঠেলে বিনীতা ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
মিটির এক্সাম কেমন হলো কেজানে। এতক্ষনে নিশ্চয় এক্সাম শেষ। একটা কল করে দেখ যাক। টিংটিং ফোন , রিং হচ্ছে। কিন্তু ওপার থেকে কোনো উত্তর নেই। "উফফফ" বলে আবার ফোন। এবারও কোনো উত্তর নেই। নিশ্বাসটা জোরে জোরে পড়ছে বিনীতার।
সতেরো বছরের মেয়ে, তবু একা ছেড়ে একমুহূর্তে থাকতে পারে না বিনীতা। সমসময় চিন্তায় থাকে। স্বামীর সাথে ডিভোর্স পাঁচ বছর হলো। মা আর মেয়েকে নিয়ে সমস্ত পৃথিবী বিনীতার।
মা কে ফোন করে দেখি তো। এখানেও রিং হচ্ছে, কিন্তু কেউ ফোন তোলে না। কি  মুশকিল। টেনশনে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার যোগাড়। তাড়াতাড়ি ট্যাক্সি ধরে জোরে চালাতে বললো বিনীতা। পুরো রাস্তাটা একবার এই ফোন, আরেকবার ওই ফোন। এরকম তো কোনোদিন হয়না। মাঝরাস্তা যখন পৌঁছেছে, বাইরে অফিস টাইমের ট্রাফিক। জঘন্য। নাঃ মিটির বন্ধু কে ফোন করি। টিংটিং ফোন , রিং হচ্ছে।
-হ্যালো
-হ্যা হ্যালো, আমি মিটির মা বলছি
-হ্যা বলুন বিনীতা। আজকের পেপারটা কি বাজে হয়েছে না। সব আউট অফ সিলেবাস। মিটির কেমন হো  .....
- হ্যা মানে বলছি, মিটিকে ফোনে পাচ্ছি না। ওকে দেখেছেন ছুটির পর?
- য়্যা? মিটি? মমমম হ্যা বেরোলো তো। স্কুলভ্যানেও উঠলো দেখলাম, কিন্তু পেপারটা অতি জঘন  .....

যাক্ তাহলে ভ্যানে উঠেছে। বাড়ি পৌঁছেছে।  ......
কিন্তু তাহলে ফোন ধরছেনা কেন। বাড়িতে পৌঁছলে মা বা মিটি কেউই রিং শুনতে পাচ্ছে না? আর পিলামাসি, সেও তো আছে। সেও কি এখনো রান্না ঘরে? ভ্যানওয়ালা ঠিকঠাক পৌঁছে দিয়েছে তো? নাকি? আবার টেনশনে অস্থির হয়ে উঠলো বিনীতা। আর ভাবতে পারছে না, মাথাটা টলমল করছে। হাতগুলো ঠান্ডা হয়ে গেছে। বাড়ির দরজার কাছে পৌঁছলো। তাড়াতাড়ি ভাড়া মিটিয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢুকলো। বাড়ির একটা চাবি বিনীতার কাছে থাকে। সব্বাই উপরের ঘরে থাকে। হাঁকুপাঁকু করে উপরে উঠতেই এদিক ওদিক দেখে, কেউ কোথাও নেই। মা র ঘরের দরজা বন্ধ। পড়িমরি ঠেলে ঢুকতেই দেখে প্রচন্ড শব্দে টিভি চলছে।  আর মা, মিটি , পিলামাসি সব বুঁদ হয়ে টিভির দিকে। "টেন পোয়েএএএএএএএএএন্টস, দি  .. দি  .. নম্বর ওয়ান। দি  .. দি  .. নম্বর ওয়ান।"
প্রচন্ড রাগে বিনীতা বলতে শুরু করলো,
"কি ব্যাপার কি হ্যা? তখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি? তোমরা কি পাগল? কোনো কান্ডজ্ঞান নেই নাকি হ্যা? অফিসের সমস্ত টেনশন নিয়ে আছি, তার ওপর ফোনটা ধরারও প্রয়োজন  বোধ  ....."

মা: "কুমড়ো   ....."
মিটি: "না গো দিম্মা, আনসারটা ক্যাডবেরি হবে ...."
পিলামাসি: "না না, কোনো সব্জির নাম বলতি হবে  ....."

সব দেখে ধপ করে বসে পড়লো বিনীতা। বসতে গিয়ে দেখে চেয়ারে ডাই করে রাখা সব জামাকাপড়, তার মধ্যে মা আর মিটির ফোনদুটো চোখ পিটপিট করে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে।

No comments:

Post a Comment