Thursday, 30 March 2017

ভালোবাসার মার্কেট ভ্যালু

গতবছর স্বামীটি তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে, বিয়ে করেছে অন্য কাউকে। আর তার পর থেকেই নাকি মেয়েটির সাজসজ্জ্বার বহর বেড়েছে। পাড়ায় কানাঘুষো যে, আবার মেয়ে বিয়ে করবে তাই.... হাতে চুরি একটার থেকে বেড়ে দুটো-তিনটে। মাথায় ফুল, কখনো গয়না। শাড়িটা নাকি আজকাল উঁচু করে পড়ে। সাইকেল চালিয়ে যখন কাজে যায়, এদিক ওদিক তাকায়, বোধহয় পুরুষ খোঁজে। এমন তখন তার চাউনি, যে দেখবে সে বশীভূত হয়ে যাবে। কথা বলে যখন, কোমড়ে হাত দিয়ে ন্যাকামো করে। রাত-বিরেতে একা একা ঘুরে বেড়ায়, নোংরা পাড়ায় যায় কিনা কে জানে? আসলে পুরুষের মন ইলাস্টিকের মতো, টানতে হয়। আজকাল সাজের বহরে অনেকেই উঁকিঝুঁকি মারে বটে। তাতে মেয়েটির বেশ মজা লাগে। ভালোবাসতে মেয়েটির বেশ লাগে। ভালোবাসার কথা শুনলে বুক ঢিপঢিপ করে, শিহরণ জাগে। এই তো সেদিন পূর্ণিমায় ছেলেটি মাতাল হয়ে কত্ত ভালোবাসার কথা বললো। শেষে বিয়ের কথা অব্দি বলে বসলো। এটাই তো চাইছিলো মেয়েটি, খুশিই তো হওয়ার কথা। কিন্তু কিরকম যে সব গুলিয়ে গেলো, কেমন পচা গন্ধ চারিদিকে। সব নেশা উড়ে গেলো যেন। ছেলেটি তখনও ঘ্যান ঘ্যান করছে। ছেলেটিকে "না" বলে ছেড়ে আসতে কি যে আনন্দ হচ্ছিলো। ছেলেটি এখন দেখলেই দৌড়ে পালায়।
কেন এরকম?
এই ফাগুনে পাশের পাড়ার বুড়ো মাস্টারও খুব কদিন পিছু পিছু। সুন্দর সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি কত কথা। বলে নাকি ওগুলো কবিতা। মেয়েটির মাথায় কিছু ঢোকেনি, কিন্তু শুনতে বেশ লাগছিলো। মাসখানেক চলেছিল এই খেলা। মাঝে একদিন হাত বাড়ালো এদিক ওদিক, কিন্তু মেয়েটির চাহনিতেই সে হাতের উন্মাদনা শাসিত হলো। বোধহয় সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। তাই রাতে ডাকলো চাঁদপুরের বনে। মেয়েটির কোনো ভয় নেই যেন। চলে গেলো একাএকা। গান হলো, নাচ হলো, নেশা হলো, হঠাৎ মাস্টার বলে বসলো," চল বিয়ে করি, এই সব যারা আমাদের দেখছে, ওই পলাশ, ওই আফ্রিকান টিউলিপ, ওই পান্থপাদপ, দেখ কিরকম দুলছে, সায় দিচ্ছে আমাদের কথায়, ওদের সাক্ষী করে চল বিয়ে করি". অমনি পচা পচা গন্ধ, মদটাতে কে যেন বিষ-তিতো ঢেলে দিয়েছে। তারপরের কথা মনে নেই মেয়েটির। শুধু মনে আছে যে, বাড়ি ফিরে আসতে আসতে খুব মজা লেগেছিলো, খুব হাসছিলো মেয়েটি। পরের দিন ডাক্তারের একটি দল এলো শহর থেকে। মেয়েটিকে নিয়ে গেলো তাদের সাথে।

ডক্টর রায় এই গল্পটা আমাকে বলে। মেয়েটির নাকি মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার। মাস্টারকে নাকি পাথর ছুড়ে মেড়েছিলো, সারা পাড়া তখন ওর পাশবিক হাসিতে জেগে উঠেছিলো।


আমি হেসে বললাম, দোষটা আমাদেরই। ভালোবাসার মার্কেট ভ্যালুটা ওকে জানানো হয়নি যে। ওটা তো বিনামূল্যে পাওয়া যায় না।

No comments:

Post a Comment