Saturday, 1 April 2017

ইয়া বড় পুরু ঠোঁট

সুন্দর ফর্সা নাদুসনুদুস চেহারা, ইয়া বড় পুরু ঠোঁট লাল টুকটুকে, এ দেখেই বাবা ছেলের নাম রেখেছিলেন শ্রীমুখ। আত্মীয়স্বজন ছেলের মুখ ঠিকমতো দেখতেই পাননি জন্মের বেশ কয়েকবছর। মুখ ভরে থাকতো কালো টিপে। বাড়ির প্রত্যেকেই সকালে উঠে একটি করে কালো টিপ্ সাটিয়ে দিতেন শ্রীমুখে। সবাই প্রথম তার মুখ দেখতে পেয়েছিলো প্রথম স্কুলে ভর্তি যাওয়ার সময়। স্কুল থেকে টিপ্ ভর্তি মুখের ছবি বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। অগত্যা....
যে যাই হোক শ্রীমুখবাবুর এতদিনে সরকারি চাকরি হয়েছে। সুতরাং কোল্ড্রিংক্স সুরুৎ করে মেরে দেওয়ার পর ঢেকুর যেমন অবশ্যম্ভাবী এবং আকাঙ্ক্ষিত। ঠিক তেমন ভাবেই সরকারি চাকরির পরই ঘটকের আগমন বাড়িতে। মার্কেটে ফেসভ্যালু কম নয় শ্রীমুখবাবুর। সুতরাং গোলগাল ঘরোয়া পাত্রীর সাথে শুভপরিণয় সম্পন্ন হলো। বিয়ের পর বৌ গদ গদ হয়ে বলেছিলেন,"তোমার ঠোঁটদুটো এক্কেবারে দুধপুলি, ঘন, গাঢ়, জমাট, পুরু, নিবিড়". সে দুধপুলির স্বাদ কেমন বা বৌদির সে স্বাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে অবশ্যই শ্রীমুখবাবু খোলসা করেননি। তবে এ বিবরণের মুহূর্তে লাল হয়ে যাওয়া গাল আর কানদুটি ঘটনার সুখকর আমোদের দিকেই ইঙ্গিত করে। সুতরাং বেশ চলছিল এতকাল। সুষ্ঠ সুন্দর নিয়মমাফিক। সমস্যা শুরু এই কয়েকমাস ধরে। একটা অস্বস্থিকর পরিস্থিতি। বাসে যাচ্ছেন, অমনি কেউ যেন তাকে দেখে হাসছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, কেউ যেন তাকে মুখ ভেঙাচ্ছে। প্রথম প্রথম পাত্তা দেননি। কিন্তু ক্রমে যেন ব্যাপারটা বাড়ছে। এহেন অবস্থায় মনমেজাজ খুব খারাপ। কিছু ভালো লাগছে না টাইপ। বৌ লুচি-মটন, ইলিশ দিয়ে মনটাকে ফুরফুরে মোডে আনছেন বটে, কিন্তু রাস্তায় বেড়োলেই সেটা রিসেট হয়ে যাচ্ছে। মনের ভুল যে নয় তা প্রমান পেলেন, দেখেন কয়েকটি স্কুল-পড়ুয়া তার দিকে স্মার্টফোন তাক করে আছে। ছবি তুলছে নাকি? সহ্য করতে না পেরে ছুট্টে যেতে গেলেন, এ সমস্যার কারণ জানা দরকার। কিন্তু পৌঁছানোর আগেই তারা বেপাত্তা। সেদিনই বিকেলে অফিস থেকে ফিরে যখন বাড়িতে লুচি -আলুরদমে ভাসছেন। কে যেন এসেছে। খাওয়া ছেড়ে ওঠার নো কোয়েশ্চেন। তাই খাওয়া শেষ করে পাঁচ মিনিট কুলকুচি করে মোট আধঘন্টা পর বসার ঘরে গিয়ে দেখেন, একটি ছেলে-মেয়ে জোড়া তার সাথে দেখা করতে এসেছে। তাদের কাঁধে ক্যামেরা।
- বলো কি ব্যাপার।
- কাকু, বলছি আপনার একটা ফটো নিতে পারি?
বলেই কিচিক
- য়্যা? মানে? ওকি তুলে নিলে যে। মানে কিছুই তো  ...
- বুঝিয়ে বলছি কাকু। আসলে আপনার মুখটা ভীষণ ইউনিক। তাই আপনাকে মডেল হিসেবে আমাদের খুব কাজে লাগবে। আমরা একটা ট্রেনিং স্কুল চালাই।
- (শ্রীমুখবাবু খুশিতে ডগমগ হয়ে, আড়চোখে পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো বৌয়ের উদ্দেশ্যে হালকা হাসি ছুড়ে বললেন) দেখ ভায়া, আমি তো এসবের কিছুই জানি না। তবে তোমরা যখন বলছো  ....
- কাকু কিচ্ছু জানতে হবে না, আপনাকে। প্রতি উইকেন্ডে একটা করে সিটিং ব্যাস। এই ধরুন ঘন্টা দুয়েক। চেয়ারে হেলান দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন। আর কিচ্ছু না। আমরা আপনাকে দেখিয়ে স্টুডেন্টদের ট্রেনিং দিয়ে নেবো।
- ব্যাস এইটুকু, আর কিছু না?
- না কাকু, এইটুকুই, আসলে আপনার মুখটা আজকের দিনে একটা অ্যাসেট। কতদিন আপনার পিছনে ঘুরছি জানেন। সমস্ত এঙ্গেলে আপনাকে পরখ করেছি।
- (খুশিতে শ্রীমুখবাবুর চোখের কোণে তখন জল) কি যে বলবো ভাই তোমাদের, মানে আমার মুখ নিয়ে ছোট্টবেলা থেকে অনেক প্রশংসা টসংশা হে হে ওই আর কি শুনেছি। কিন্তু এই ভাবে কেউ .... তা বেশ ভায়া তোমরা কিসের ট্রেনিং দাও?

- কাকু, সেলফি ট্রেনিং সেন্টার। মানে আজকাল তো জানেনই, সেলফি তোলাটা একটা আর্ট। মার্কেটে হেবি চলছে, এই ফেসবুকে, টুইটারে, ইনস্টাগ্রামে এখানে ওখানে। আসলে ওর ওপরেই তো সব মানে প্রেম, বিয়ে এমনকি চাকরি ব্যবসা অব্দি। এপ্লিকেশন ফর্মে চাইছে সেলফি। আমরা তাই শেখাই বিভিন্ন এঙ্গেল, কৌণিক পরিমাপ ইত্যাদিতে সেলফি নেওয়া। আপনাকে নিচ্ছি পাউটের ক্লাসের জন্য। পাউট নিশ্চয় জানেন। ঠোঁটটা একটু ছুঁচোলো করে, এগিয়ে এনে হে হে কিচিক সেলফি। আপনার ঠোঁট গুলো তো বাই ডিফল্ট পাউট। মুউউউআআআ হে হে।

No comments:

Post a Comment