Tuesday, 27 February 2024

একটা জবরদস্ত নাটক

 ঝড়-বৃষ্টি-বজ্র-বিদ্যুৎ এরা বেশ জমিয়ে মাঝরাতেই একটা জবরদস্ত নাটক মঞ্চস্থ করবে বলে রেডি।

পর্দা উঠল।
নাটক শুরু হল।
সমস্যার শুরু তার পরে।
নাটক শুরু হতে না হতেই দর্শক মোবাইল বাগিয়ে চালু করল সেল্ফি-ক্লিক-ক্লিক। তার ফ্লাশলাইট-এ "ওরেশশালা" বলে পালাল বজ্র-বিদ্যুৎ ভ্রাতৃদ্বয়।
ঝড়-বৃষ্টি তবু বেশ কিছুক্ষন ক্লাইম্যাক্স ধরে রাখতে চাইল। কিন্তু দর্শক নাটক ছেড়ে ফেসবুকে আপডেট দেওয়া শুরু করতেই, ঝড়-বৃষ্টি সমস্ত উত্তেজনা-অনুপ্রেরণা হারাল। ঝপাঝপ পর্দা ফেলে তারাও পড়ল কেটে।
মঞ্চ এখন ফাঁকা। দর্শক মুখ বেজার করে, চুক চুক করছে"এহে! আর একটু হলো না? এতো তাড়াতাড়ি শেষ!"
এখন দর্শক নিজেরাই মঞ্চে উঠে খানিক বাঁদর নাচ নেচে নেবে কিনা ভাবছে।
কে যেন অলক্ষ্যে বললো,
"তেরে নাসিব মে নেহি জো খুশিকে মানজর,
সামনে হি তো থি, জো তুঝে ফুরসৎ না মিলা।"



Wednesday, 14 February 2024

এসব নাটক আর কতদিন

 'আমরা নতুন যৌবনের দূত' অর্থাৎ এএনজেডি এবং 'আমরা সবাই রাজা' অর্থাৎ এএসআর, এই দুটি ক্লাবের ঝগড়া ধারাবাহিক। এতটাই, যে এবার ইতিহাসের পাতায় নাম উঠল বলে।

কালীপুজোতে এএনজেডি এএসআর-এর একটি ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলো। এএসআর পরের দিন এএনজেডি-র ক্লাব হানা করে চারজনকে থ্রেট দিয়ে আসে। এএসআর-এর একজনের মনে হয় খেলাটা এক-এক হয়নি। তাই সে রাতের অন্ধকারে এএনজেডি-র ক্লাবে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় এক সদস্যকে আধমরা করে। এবার খেলাটা বেশ এক-এক হয়। পরের রাউন্ডে এএনজেডি তৈরী হচ্ছে। এএসআর রাতের পর রাত বসে ছক করছে আক্রমণ সামলানোর। সরস্বতী পুজোর আগের দিন, এএনজেডি এএসআর-এর ক্লাবে আগুন লাগিয়ে দেয়। পাড়ার সবাই বিরক্ত। পাড়া প্রায়ই টেনশনে থাকে, এই বুঝি আবার ঝামেলা। পাড়ার মাথারা মধ্যস্থতা করেছেন বহুবার, বহুবার সমঝোতার চেষ্টা হয়েছে, ফল জিরো।
মোহনবাণী শোনালেন দাদু। দাদু বলেন, এই এক-এক খেলা একটা অসভ্যতা। প্রতিশোধের স্পৃহা মানুষকে অসভ্য করে তোলে। চোখের বদলে চোখ নিলে পৃথিবী অন্ধ হয়ে যাবে।
এসব শুনে এএসআর ক্লাব এই আগুনের পরের চাল নিয়ে আলোচনায় বসে। ঠিক করে কোনও মারামারি নয়, পাড়ার কেউ যেন এএনজেডি-র সরস্বতী পুজোতে না যায়। এভাবেই তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। এড়িয়ে যাত্তয়া যাক। দেখা যাক কী হয়! উত্তম প্রস্তাব। পাড়ার সকলে এই উদারতার রায়ে ধন্যধন্য করে ওঠে।
কেউ এএনজেডি-র সরস্বতী পুজোতে যায়নি। কেউ না!
সত্যি? কেউ না?
পাড়ার কয়েকজন গিয়েছিল। বেমালুম গিয়েছিল! শুধু যায়নি, জমিয়ে আড্ডা মেরে, লেচে-গেয়ে রীতিমতো যাকে বলে এনজয় করে এসেছে।
তাতে এএনজেডির সাহস কয়েক লিটার বাড়ে আর এএসআর-র বুক ফাটে। কী হল এভাবে এড়িয়ে গিয়ে। দুশমন এখন কলা দেখাচ্ছে। আর এদিকের লোকজন যারা সৎ হয়ে পুজোয় গেল না, মাথা নিচু করে চলছে।
পাড়ার হারু ডাক্তার পুরো ব্যাপারটা শুনে বলেন,ধুস। মন খারাপ কেন। ভালোই হল তো! ক্যান্সার চিনে নাও। ওই যারা একবার এদিকের খেলেন আবার ওদিকেরও ফেললেন না।
দাদু বললেন, ঠিক তাই। এই বিভীষণ চেনাও বিরাট বিষয় খোকা। আগে তাদের অন্তরাত্মাতে কড়া পড়ুক। তারপর বাইরের শত্রু। ওদের বাড়ি সরস্বতী পুজোর স্পেশাল প্যাকেট পাঠানো হোক, সঙ্গে ফুল, 'গেট ওয়েল শুন'
পাড়ায় পোস্টার পড়ল:
'এসব নাটক আর কতদিন, ভাবের ঘরে চুরি,
গান্ধীও এবার স্বর্গ থেকে, এগিয়ে দেবেন ছুরি।'



Tuesday, 13 February 2024

বাজল আজ ভীমপলাশী

গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে নানান কান্ড। হাসি-ঠাট্টা-তামাশা-মজা। 'ধুস ভাল্লাগেনা' হয়ে চলছে দিনগুলো। ফেসবুক খুলবে না, এমনই ভেবেছিল পূরবী। অসহ্য লাগছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালোবাসা দেখানোর খেলা। অফিসে, ফেসবুকে কত কথা কাটাকাটি হলো এই নিয়ে। ভ্যালেনটাইন উইক! কী ভয়ানক বাড়াবাড়ি, লোক দেখানো! আগে একদিন ছিল, এখন পুরো সপ্তাহ ধরে চলছে! যেন দুর্গাপুজো! একথা মনে হতেই দুম করে হঠাৎ একটা ভাবনা এল। পুজোও তো মানুষ সারাবছর করে। তাহলে দুর্গাপুজো নিয়ে এতো মাতামাতি কেন। আসলে হয়ত মানুষ আনন্দ পেতে চায়, উৎসবে থাকার ছুতো খুঁজতে চায়। অনেক কিছু ভুলে যাওয়ার জন্য, অথবা অনেক কিছু মনে পড়ানোর জন্য।

এই কথা মনে হতেই 'কেমন আছিস তোরা? হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে, ইতি পূরবী' মেসেজ করলো পাঁচ বন্ধুকে, যাদের সাথে কত বছর কোনও কথা হয়নি, অথচ একদিনও তাদের ছাড়া থাকতে হবে, তা ভাবাই যেত না কলেজের দিনগুলিতে। মেসেজ করেই নিজের মনে খুশি হয়েছিল পূরবী। কাজ করছিল টুকটাক। মুহূর্তের মধ্যেই একটা টুং, তারপর আবার একটা টুং, তারপর আবার। শেষে ফোন, মিট করার প্ল্যান আরও কত কী! মুঁচড়ে যাওয়া মনটা, ছয় বন্ধুর হাসি-ঠাট্টার আওয়াজে কখন গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে পড়েছে। উইকেন্ডে মিট হল, বাড়ি ফিরে শুধুই নস্টালজিয়া। অনেকদিন পর আজ গুলজার শুনতে ইচ্ছে করল পূরবীর। না পড়া, পরে থাকা বইগুলো সব আজই পড়তে ইচ্ছে করছে। কতকিছু করতে ইচ্ছে করছে। কত কাজ বাকি! আজ আর ঘুমের ওষুধ নিতে হলো না পূরবীকে।
পরের দিন ফেসবুকে পোস্ট করলো পূরবী,'ভালোবাসার বিজ্ঞাপন হচ্ছে বটে, তবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে চড়া সুরে জানান দিচ্ছে সবাইকে, ভালোবাসতে-ভালো থাকতে ভুলে যাননি তো?'
********************
"ভালোবাসা-বাসি তো হলো, দেখান হল আরও অনেক বেশি,
তবু তাতেই, ছেঁড়া তারের তানপুরাতে বাজল আজ ভীমপলাশী"



Wednesday, 7 February 2024

শীতটা শেষ হতে চলেছে, ইটস বোরিং, ম্যান

 নতুন বছর শুরু আর ওদিকে শীতটা শেষ হতে চলেছে!

এমন রাগ হয় যে কি বলব। শীত এলো, যেন গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স। আরে বাবা, দু এক মাস আরও থেকে যাবি, রসে-বশে-বসে-কষে, তা না! মাঙ্কিক্যাপটা তো সূর্যের মুখ দেখতেই পেল না। মটনের ইনটেক ২০% বাড়াতেই ঘেমে ঘ হয়ে যাচ্ছে মানুষ। শাটল গাড়ির চারজনের সিটটা আবার তিনজনের মনে হতে শুরু করেছে। সবাই এক্সপ্যান্ড করছে, প্রস্থে! ধুস ধুস ধুস...
রোববার সন্ধ্যেতে রোমহর্ষক ভূতের গল্পে কম্বলের মরাল সাপোর্ট তো মেলে এই শীতেই।
আর ওদিকে বেহালা টু বইমেলা জার্নি সামলানোর মত মানানসই ক্লাইমেটটা তো নিদেনপক্ষে চাই নাকি!
আরও কতকিছু যে রইলো বাকি!
সার্কাস দেখা, ক্ষীরাই যাওয়া, লাল-হলুদ শাড়ি পড়ে বোলপুরে সেল্ফি কিচিক ইত্যাদি ...
বল্টুকে মুখ থেকে একরাশ ধোঁয়া বের করা ম্যাজিক দেখানো বাকি,
জমাট কুয়াশাতে প্রিন্সপ ঘাট থেকে দৌড়ে এসপ্লানেড যাওয়া বাকি,
ঠাকুমার কোলে শুয়ে কম্বল মুড়িয়ে খই নাড়ু খাওয়া বাকি।
আর মাখোমাখো প্রেমে বাহু জড়াইয়া, পুস্পকাননে টহল দিয়া, কড়াইশুটির কচুরি গিলিব নব্য আলুর সহিত, উহাও যে বাকি।
ধুস!
P.S. অল্টারনেট ডে তে স্নানের রুটিন আবার ব্যাক টু ডেইলি রুটিন। ইটস বোরিং, ম্যান।

Friday, 2 February 2024

ও ঠাকুরমশাই! আমার বাড়িতে ছোট্ট করে .. প্লিস .. বাচ্চাটা অনেকক্ষণ ধরে ..

 -ও ঠাকুরমশাই বলছি মানে ইয়ে একটু পুজোটা দিয়ে যান না।

-কেন বৌদি, কাল যে দেখলুম রাঘব ভটচাজের সাথে ডিল করলেন, লম্বা ফর্দ করলেন উনি. আসেননি বুঝি? জানতুম চিরকাল ওর প্রচন্ড লোভ, অ্যাডভান্স করে বসেননি তো আবার হে হে

-ইয়ে মানে, ওই এক শো.... সে বাদ দিন, বলছি বাচ্চা মেয়েটা আশা করে আছে, অঞ্জলি দেবে। আপনি একটু করে দিন না।

-আহা রে, আসলে আমি তো খেয়ে ফেলেছি, মানে আগের বাড়ি এতো জোড় করলো, আমার আবার লোভ কম। অনলি ছ-বাড়ি পুজো আর ছ-নম্বরে একটু লুচি, পায়েস, সুজি  ....

-তাতে কি! একটু এদিক-ওদিক করে ম্যানেজ করে নিন না প্লিজ।

-হে হে, সব কি আর ওভাবে ম্যানেজ হয় বৌদিমনি, ওই যে বললুম লোভ আমার এক্কেবারে নেই। ওসব পাপের কাজ করবো নাকি, খেয়ে পুজো?

- আপনি ব্রাহ্মণ মানুষ, কোনো পাপ নেই, আপনি ভগবানের ডিরেক্ট প্রতিনিধি বলে কথা, আমি আসলে একটা শাড়িও কিনে রেখেছি, আর ধুতি-মিষ্টি-পোলাও-বেগুনভাজা তো আছেই। ভেবেছিলাম ব্রাহ্মণকে দান করবো।

- ওহ! ইয়ে  ... পোলাও-বেগুনভাজা  ...  ইয়ে শুধুমাত্র বাচ্চাটার মুক চেয়ে রাজি হলুম, চলুন দেখি, সব জোগাড় যন্তর দেখিয়ে দিন


সিঙ্গারা সেসময়

স্কুলে এক মাসি ছিলেন, টিফিনের সময়ে ঝুড়ি নিয়ে আসতেন। ঝুড়িতে থাকত সিঙ্গারা। দু টাকাতে পাওয়া যেত একটা সিঙ্গারা। ঝুড়ির পাশে আরেকটা মিনি ঝুড়ি থাকত, পয়সা ফেলার জায়গা। দুপুরে ঘন্টা বাজলেই, মাসি নির্দিষ্ট জায়গায় বসে থাকত। বাকি সমস্ত কাজ অটোমেশনে হত। ছাত্রীরা আলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে মাসির কাছে পৌঁছত, পয়সা ফেলত এক হাতে, সিঙ্গারা নিত অন্য হাতে এবং গায়েব। পুরো ব্যাপারটা একেবারে সাজানো।
বাড়িতে প্রতি শনিবার বিকেলে গরম-পাতলা-মচমচে-চামড়া-ভরাট-পুর সিঙ্গারা নিয়ে আসত কাকা। রবিবার নিয়ে আসত বাবা। বিকেল পাঁচটায় দূরদর্শনে উত্তমকুমারের (বেশিরভাগ সময়) সিনেমা চলত। উত্তম-সিঙ্গারায় সময়টা জব্বর কাটত।
রবিবার সকালে আঁকার স্কুল থেকে মাঝে মাঝে সিঙ্গারা খাওয়া হত। তার আকার অপেক্ষাকৃত ছোট, দামে কম কিন্তু স্বাদ চমৎকার।
অষ্টমীর অঞ্জলি শেষ করে কচুরি খাওয়াই নিয়ম তবে সিঙ্গারা হলেও মন পুলকিত হত সন্দেহ নেই।
বিয়ের সম্বন্ধ দেখতে গেলে (আজকের দিনে প্রায় অস্তিত্বহীন), ছোটদের যাওয়ার তেমন প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও, নিয়ে যাওয়া হত সঙ্গে। তাই গিয়েছিলাম। সেখানে মিষ্টির পাহাড়ের মাঝে সিঙ্গারার পাহাড় না থাকলে বিষয়টা জমত না!
শীতকালের ফুলকপির সিঙ্গারার মহিমা ছিল অন্যরকম। ছোটরা গপাগপ খেয়ে যখন ঢেঁকুর তুলছে, জেঠু পুরের দিকে ভালো করে দেখে বুঝছেন, ফুলকপির পরিমাণ আগের থেকে কমছে কি!
সিঙ্গারার সঙ্গে পার্টনার হল জিলিপি। সিঙ্গারার নোনতা-ঝালের মাঝে মাঝে জিভকে চমকে দিয়ে মিষ্টির আস্বাদ, এ এক বিস্ময়কর পার্টনারশিপ। পরের দিকে চাটনি/সস দেওয়া শুরু হল বটে, তবে ব্যক্তিগতভাবে ওসব অনুষঙ্গ ছাড়া মূল বিষয়ের স্বাদ নেওয়ার আনন্দ নিতে পছন্দ করেছি।
পৃথিবীর প্রায় ৪০টি দেশে ঘুরেও সিঙ্গারার মহিমা বাংলার বাইরে কোথাও পাইনি টেবিল চাপড়ে বলতে চাই। মনে রাখতে হবে, সিঙ্গারা আর সামোসা এক নয়। এক করলে, তা সমস্যা।

শিশুকালের অগুণতি সিঙ্গারা গ্রাস করার ক্ষমতা বয়সের সঙ্গে কমেছে। শিশুকালের সেই দুনিয়া এখনকার তেল, দূষণ, বুকজ্বালা, এন্টাসিড, ওবেসিটির দুনিয়ার থেকে অনেক দূরের।