Friday, 2 February 2024

সিঙ্গারা সেসময়

স্কুলে এক মাসি ছিলেন, টিফিনের সময়ে ঝুড়ি নিয়ে আসতেন। ঝুড়িতে থাকত সিঙ্গারা। দু টাকাতে পাওয়া যেত একটা সিঙ্গারা। ঝুড়ির পাশে আরেকটা মিনি ঝুড়ি থাকত, পয়সা ফেলার জায়গা। দুপুরে ঘন্টা বাজলেই, মাসি নির্দিষ্ট জায়গায় বসে থাকত। বাকি সমস্ত কাজ অটোমেশনে হত। ছাত্রীরা আলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে মাসির কাছে পৌঁছত, পয়সা ফেলত এক হাতে, সিঙ্গারা নিত অন্য হাতে এবং গায়েব। পুরো ব্যাপারটা একেবারে সাজানো।
বাড়িতে প্রতি শনিবার বিকেলে গরম-পাতলা-মচমচে-চামড়া-ভরাট-পুর সিঙ্গারা নিয়ে আসত কাকা। রবিবার নিয়ে আসত বাবা। বিকেল পাঁচটায় দূরদর্শনে উত্তমকুমারের (বেশিরভাগ সময়) সিনেমা চলত। উত্তম-সিঙ্গারায় সময়টা জব্বর কাটত।
রবিবার সকালে আঁকার স্কুল থেকে মাঝে মাঝে সিঙ্গারা খাওয়া হত। তার আকার অপেক্ষাকৃত ছোট, দামে কম কিন্তু স্বাদ চমৎকার।
অষ্টমীর অঞ্জলি শেষ করে কচুরি খাওয়াই নিয়ম তবে সিঙ্গারা হলেও মন পুলকিত হত সন্দেহ নেই।
বিয়ের সম্বন্ধ দেখতে গেলে (আজকের দিনে প্রায় অস্তিত্বহীন), ছোটদের যাওয়ার তেমন প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও, নিয়ে যাওয়া হত সঙ্গে। তাই গিয়েছিলাম। সেখানে মিষ্টির পাহাড়ের মাঝে সিঙ্গারার পাহাড় না থাকলে বিষয়টা জমত না!
শীতকালের ফুলকপির সিঙ্গারার মহিমা ছিল অন্যরকম। ছোটরা গপাগপ খেয়ে যখন ঢেঁকুর তুলছে, জেঠু পুরের দিকে ভালো করে দেখে বুঝছেন, ফুলকপির পরিমাণ আগের থেকে কমছে কি!
সিঙ্গারার সঙ্গে পার্টনার হল জিলিপি। সিঙ্গারার নোনতা-ঝালের মাঝে মাঝে জিভকে চমকে দিয়ে মিষ্টির আস্বাদ, এ এক বিস্ময়কর পার্টনারশিপ। পরের দিকে চাটনি/সস দেওয়া শুরু হল বটে, তবে ব্যক্তিগতভাবে ওসব অনুষঙ্গ ছাড়া মূল বিষয়ের স্বাদ নেওয়ার আনন্দ নিতে পছন্দ করেছি।
পৃথিবীর প্রায় ৪০টি দেশে ঘুরেও সিঙ্গারার মহিমা বাংলার বাইরে কোথাও পাইনি টেবিল চাপড়ে বলতে চাই। মনে রাখতে হবে, সিঙ্গারা আর সামোসা এক নয়। এক করলে, তা সমস্যা।

শিশুকালের অগুণতি সিঙ্গারা গ্রাস করার ক্ষমতা বয়সের সঙ্গে কমেছে। শিশুকালের সেই দুনিয়া এখনকার তেল, দূষণ, বুকজ্বালা, এন্টাসিড, ওবেসিটির দুনিয়ার থেকে অনেক দূরের।

No comments:

Post a Comment