Wednesday, 5 March 2025

সাড়ে চুয়াত্তর মণ

- কন্যে, বলো কি করতে পারি তোমার জন্যে। পরশু তোমার হ্যাপি বাডডে।
- ধুস বাদ দে।
- সেকি? কেন?
- বানান ভুল ওয়ালা ঢাউস কেক আনবি প্রতিবারের মত। এর চেয়ে বরং ডেট টা ভুলে যা। সারপ্রাইজ হবে ওটাই।
- কি জ্বালা। লোকে ডেট ভুলে যায় বলে কত গালি খায় আর আমি মনে রাখি তাই খাই। দামী গিফ্ট তুমি নেবে না বলে সাশিয়ে রেখেছ কত ছয় জন্ম। কেক হল স্রেফ .....
- সেফ। জাস্ট সেফ খেলা। তুই বরং আমাকে একটা রোমান্টিক চিঠি দে দেখি।
- পত্র? প্রেম? বাংলা?
- অবভিয়াসলি। বাংলা এন্ড উইথ নো স্পেলিং মিসটেক।
- এর থেকে বরং তোকে মাঝরাতে হুগলির লাইট হাউস এর উপরে উঠে আই লাভ ইউ বলবো? দই এর সর টা তুই খাস? মশারি আমিই টাঙানো র দায়িত্ব নিলাম এক্সট্রা ওয়ান উইক? কিন্তু পত্র! আমার হাতের লেখা দেখলে তুই যে তোর মানসিক স্থিতি হারাবি সোনা। এ রিস্ক নিস না।
- পত্র অ্যান্ড ওনলি পত্র। এ ছাড়া নো নত্রচত্র। আর চিঠির সামনে মিষ্টি করে লিখে দিবি "সাড়ে চুয়াত্তর".
- তুলসী বাবু, মলিনা দেবী, ভানু?
- হমমম সাথে পদ্মাবতী, আলাউদ্দীন খিলজী আর জহরব্রত
- মানে?
- চিঠির সামনে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সংখ্যাটি লিখে রাখা মানে প্রাপক ছাড়া অন্য যে ব্যক্তি এই গোপনীয় চিঠিটি খুলে পড়বে তার ভাগ্যে সাড়ে চুয়াত্তর মণের নির্মম অভিশাপ নেমে আসবে।
-সাড়ে চুয়াত্তর মণ?????
-আলাউদ্দীন খিলজী চিতর আক্রমণ করলে, রাজ্যের পতনে নিজসহ প্রাসাদের নারীদের আত্মসম্মান রক্ষার্থে রাণী পদ্মিনী জহরব্রত করে মৃত্যুবরণ করল। সাথে কিছু সৈন্যও মৃত্যুবরণ করলো। এই আত্মহত্যা করা সৈন্য ও রাণীদের ছাইভষ্মের ওজন নাকি ছিল সাড়ে চুয়াত্তুর মন!

সেই থেকে শুরু গোপনীয় চিঠির সামনে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সংখ্যাটি লিখে রাখা। যাতে চিঠির প্রাপক বাদে অন্য কেউ সেই চিঠি খুলে না পড়ে। অন্য কেউ সেই চিঠিটি খুলে পড়লে তার ভাগ্যে “সাড়ে চুয়াত্তর মণের অভিশাপ” নেমে আসবে। শুরুতে সম্ভবত যে কোনো গোপনীয় চিঠির জন্যই এই প্রথা চালু ছিল, পরে মূলত প্রেম পত্রের সামনে লেখা থাকত সাড়ে চুয়াত্তর। রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশ থেকে ক্রমশ এই প্রথাটি ছড়িয়ে পড়ে ভারতে এবং স্বাভাবিকভাবে অবিভক্ত বাংলাতেও।
- তুলসী বাবু কে তাই ওই ভোগান্তি পোহাতে হল। এবার বুঝলাম। 


০৫ মার্চ ২০২০ 




No comments:

Post a Comment