Saturday, 29 April 2017

প্রসাদ

- মানে? ইয়ার্কি নাকি? টাকা দেবেন না মানে? মামদোবাজি?
- (আঙুলে লেগে থাকা মাংসের ঝোল চাটতে চাটতে) ইয়াম মানে... ইয়ে চেঁচামেচি করছেন কেন। এটা আপনার দোকান?
-হ্যা। না হলে বলছি কেন? টাকা বার করুন ফটাফট।
-আরে দাঁড়ান মশাই। আপনার ব্যবসা এটা?
-আলবাত
-শুনুন, ঠাকুমা বলতেন বুঝলেন (আঙুলে লেগে থাকা মাংসের ঝোল চাটতে চাটতে)
-মশাই ঝোল চাটা বন্ধ করুন। কি বলতেন আপনার ঠাকুমা?
-বলছি বলছি। ঠাকুমা বলতেন," মন্দিরে চেঁচামেচি করতে নেই। দেবতা অসন্তুষ্ট হয়।"
-অ। মানে? কি? হঠাৎ দেবতা-মন্দিরের প্রসঙ্গ কেন?
-ওই দেখুন। ধর্মে কর্মে একেবারেই মন নেই দেখছি। ওই যে পিছনে লিখে আটকে রেখেছেন, সে কি লোক দেখানো? লোক দেখানো ধর্ম আমার একদম পছন্দ নয় বুঝলেন। আজকাল যা সব.... যাক ওসব কোথায় কাজ নেই। আসল কথা হলো, আপনি ব্যবসায়ী, আপনার মন্দির এটা। আমি দেবতা। এবার আপনি নিশ্চয় জানতে চাইবেন, আমি সন্তুষ্ট কিনা। তা রান্না আমার খুব খারাপ লাগেনি। শুধু মাংসে একটু আজিনোমোটো দিলে জমে যেত। আর রুটি পাতলা করে বেল্লে বেশ একটু তুলতুলে ভাব আসতো। রুমালি রুটির অপশনটাও তো রাখতে পারেন।
-থামুন। ইয়ার্কি মারার জায়গা পাননি। আটত্রিশটা রুটি খেয়ে দুটো মাংসের প্লেট গিলে, ন্যাকামো হচ্ছে? তুলতুলে নয় তো গিললেন কি করে?
-আহা একেবারেই মন্দ হয়নি। কিন্তু ইম্প্রোভমেন্টের জায়গা রাখবেন না তা বলে? শুনুন রান্না একটা শিল্প। আর শিল্পে ইম্প্রোভমেন্ট না থাকলে স্যাচুরেশন এসে যাবে যে। তাহলেই দেবতা রুষ্ট হবেন। মানে কাস্টমার। আর শুনুন বাড়িতে পঁচিশটা খাই। তাই আটত্রিশটা ওয়াস টাফ। কিন্তু শুধুমাত্র আপনার মুখ চেয়ে আমি জোর করে ঠুসে ঠুসে খেলাম।
-জোর করে ঠুসে ঠুসে? আমার ছেলেগুলো দৌড়ে দৌড়ে যোগান দিতে দিতে পাগল হয়ে গেলো। আর আপনি কি ঢপের কথা বলছেন? পাগল আপনি?
-কেন, পাগলের কি আছে? আপনিই তো লিখে রেখেছেন? পরিশ্রম আমার পূজা। তা আমাকে কি আপনার এমন অমানুষ মনে হয় যে একজন মনখুলে মন্দিরে পূজা করতে চাইছে আর আমি দেখেও তা অদেখা করবো? একটু সাহায্য করবো না? তাই.....
-আরে মশাই। আপনি আমাদের পাগল করে দেবেন যে। ওইটাতো কাল বৌ এসে কোথা থেকে এনে লাগিয়ে গেছে। দেওয়ালের ওই জায়গাটা খোবলানো ছিল, ঐটাই চাপা দিতে … যাতে দেখতে ভালো লাগে তাই। শুনুন, এখন কাস্টমার আসার টাইম। ঝামেলা করবেন না। চুপচাপ দিয়ে দিন।
-হ্যা এই তো। একেবারে কড়কড়ে। 
- (হেসে) দিচ্ছেন? ব্বাবা, বকালেন বটে। দিন দিন। দিয়ে দিন।

-আরে কি যে বলেন, না দিয়ে যাই কখনো। এএএই এএএই ......... এই যে আমার হাত রইলো তোমার মাথায়। আর আমি বলছি, আমি খুব সন্তুষ্ঠ। তোমরা যে পরিপাটি করে পূজার আয়োজন করেছো। তাতে আমি খুব খুশি। ব্যাস প্রসাদ পেয়ে গেলে। চলি তাহলে। ওহ হ্যা বলছি যে, আজকাল কি সব সেলফি টেলফি হয়. তুলতে পারেন আমাকে নিয়ে। যদি টদি আপনাদের টাপনাদের কাজে টাজে লাগে টাগে। ওই হয়তো নেক্সট দেবতার সামনে রেফারেন্স হিসেবে … এই এএএই একি পড়ে গেলেন যে। ওরে বাবা একি পরম ভক্ত রে আমার, সাষ্টাঙ্গে টাস্ট্যাঙ্গে দরকার নেই রে পাগল। আমি এতেই খুশি রে। ওকি সাড়া নেই কেন..... কি হলো?

Thursday, 27 April 2017

শিল্প ভাবনা

মানুষের শিল্প ভাবনা যত্রতত্র। শিল্পকাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাদের ব্যক্তিত্ব। তাদের শিল্পীস্বত্বা পাশের মানুষকেও দেয় অনাবিল আনন্দ।
এই যেমন এই ছবিটি, দেখুন ভালো করে। ইতিমধ্যেই দেখে নিয়েছেন? তাহলে অনুরোধ করবো, আরেকবার দেখুন।

-কি দেখছেন বলুন তো?
-আরে, ওই তো কটা চাড্ডি রুমাল আর মোজা।
-ধুস, ভালো করে দেখুন। রুমাল গুলি দেখুন বাঁ দিক থেকে ডানে। কিরকম রংগুলি গাঢ় থেকে ধূসর? আবার উল্টোদিক থেকে ধূসর থেকে গাঢ়। এবার মোজাগুলি দেখুন। এর মধ্যে আবার অন্য বৈচিত্র। গাঢ়-ধূসর-গাঢ়।
- কি বুঝলেন?
- কি আর বোঝার আছে বলুন তো?
- বটে, এবার তো আপনার শিল্পচিন্তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে মশাই। দেখুন এর মধ্যে আছে নিষ্পাপ অভিরাম শিল্প। এবং এর মাধ্যমে শিল্পীর চরিত্র প্রকাশ পায়। চারটি প্রধান বৈশিষ্ঠ্য নজরে পড়ে।

প্রথমত
শিল্পী নিশ্চয় কাজে-কর্মে বেশ নিপুণা। ঘরে বাইরে নিশ্চয় তিনি অনবদ্য়।

দ্বিতীয়ত
এনার হাতে সময় অনেক। তাই সময় নিয়ে এক এক করে এগুলি সাজিয়েছেন।

তৃতীয়ত:
দেখুন মহিলারুমাল এবং পুরুষমোজা বেশ কাছাকাছি। মানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা যাকে বলে বেশ মাখোমাখো।

চতুর্থত:
রুমালের ক্ষেত্রে রং ধূসর থেকে গাঢ় অর্থাৎ বেশ খুশিতেই দিন কাটছে শিল্পীর। মোজার মধ্যে বৈচিত্র্য সুতরাং স্বামীর জীবন বেশ রঙিন। রঙের ওঠানামা নজরে আসে। কিন্তু তা সংযত।

তাছাড়া ব্যালান্স মানে সামঞ্জস্য ব্যাপারটা শিল্পী ভালোই বোঝেন। সে সংখ্যার দিকেই হোক বা জোড়ায়।
ম্যাট্রিমোনিয়াল নয় একই রকম একটি মানুষের প্রয়োজন এ সমাজে। শিল্পীর সাথে আলাপচারিতাতেই কিছু জ্ঞানবৃদ্ধি হওয়ার সুযোগ থেকেই যায়। কি বলেন?





Tuesday, 25 April 2017

হাঁস ত্যাগ

দাদা- বুঝলে ভাই, হাঁস ত্যাগ করলাম

বৌদি ভক্ত ঠাকুরপো - সেকি রোস্টেড প্রিপারেশনটা তো মারাত্মক ছিলো, বৌদির হাতেই তো প্রথম খেলাম। বৌদি, দাদা কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি।

বৌদি (কোমড়ে হাত দিয়ে ভুরু কুঁচকে দাদার দিকে শ্যেনদৃষ্টি দিয়ে)
(থতমত দাদা)- মানে আমি তো ফেসবুকএ যাস্ট  .....

বৌদি ভক্ত ঠাকুরপো- আবার ফেসবুকেও জানাচ্ছেন নাকি এসব। আরে বাবা প্রোটিনএর দিকটাও যদি দেখেন, তাতেও তো হাঁস এগিয়ে চিকেনের থেকে, বৌদি আপনিই বলুন তো। 

বৌদি (শ্যেনদৃষ্টি এখনও) - গতমাসে বুড়ির জন্মদিনের দিন যে বললে, হাঁস-আইটেমটা তোমার খাসা লেগেছে! তবে কি শুনছি এসব হ্যা?

বৌদি ভক্ত ঠাকুরপো - তবে। তাছাড়া আপনি না খেলে বৌদি কি আর শুধু নিজের জন্য রাঁধবে! তাছাড়া বৌদিরও তো প্রোটিন দরকার নাকি এই বয়সে। (বিড়বিড় করে) আর আমাদের জন্য!!!!

(এখনও থতমত দাদা)-কি যে হচ্ছে একেবারে ধরতে পারছি না যে ভাই। কি রাঁধবে ভাই?

বৌদি ভক্ত ঠাকুরপো -আরে ধুর বাবা, ওই যে বললেন হাঁস। ত্যাগ করলেন যে!

(এইবার ধাতস্ত দাদা)-না না হাঁস না হাঁস না। হাঁস ছাড়া যায়। ঐটা তো মানে সত্যিই 
তোমার বৌদির ওতে জুড়ি নেই। আমি তো হ্যাস ট্যাগএর কথা বলছিলাম। নতুন শিখলাম ফেসবুকে। 

বৌদি (লুকিয়ে মুচকি হেসে)- বুড়োর ভীমরতি যত্তসব।


বৌদি ভক্ত ঠাকুরপো - ও হরি। মশায় পুরো দিয়েছিলেন একেবারে টেনশনে ফেলে। বলছি কথা যখন উঠলোই, হবে নাকি কাল? নিয়ে আসবো নাকি দাদা আজ?

Wednesday, 19 April 2017

পকেটমারাটা কোয়ালিফিকেশন নয়?

পকেটমারাটা কোয়ালিফিকেশন নয়? কোয়ালিফিকেশন নয় পকেটমারাটা?

কোন পকেটটা টার্গেট, দূর থেকে সেটা পরিমাপ করা। বাসে-ট্রামের দুলুনি সহ্য করা, লোকের ঘাম-বগলের গন্ধ সে সব তো ছেড়েই দিন। লোকজন নাকি ডিও মাখে। ধুর ধুর খুব খারাপ কোয়ালিটি। ডিও কোম্পানিগুলোর উচিত আমাদের থেকে রিভিউ নেওয়া।

সে যায় হোক, পকেটমারের ঝক্কি জানেন? পকেটের পিছনে সুড়সুড়ি দিয়ে মানুষকে কমফোর্ট দেওয়া। ভিড়ে ওই মসাজ খেয়ে যখন তারা মোটামুটি নিরূপদ্রব নিয়ন্ত্রণাধীনে, তখন বকশিস হিসেবে ঐটুকু আর এমন কি। তাতেও তো ঠকে যাই, মশাই। একে তো ওই মানিব্যাগগুলো সব চাইনিজ মাল, তার মধ্যে ক্যাটরিনা কাইফের দাঁত কেলানো ছবি, দশ টাকা, দাঁত খুচানোর কাঠি। এই সব দেখলে মটকাটা একেবারে.... একবার তো পেলাম পাঁচশো টাকা। পেয়েই মনে হলো, যাক আজ পিঙ্কিকে নিয়ে আটটা-এগারোটার একটা শো ঠুকে দেব। শ্লা, জানলাম টাকাটাই নাকি এখন অচল। সে টাকা ভাঙাতে লাইন-টাইন দিয়ে মাইরি, খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে গেলো। মোবাইল ফোবাইল ছুঁই না। ও সব সালটানো খুব মুশকিল। মেয়েদের ব্যাপারেও হেভি রিস্ক। তাই ওব্যাপারে কোনোদিনই সাহস করিনি। তাছাড়া ওদের গলায়-কানে আজকাল যা সব আইটেম, ও সব দেখে ওদের জন্যই মায়া হয়। এক একবার মনে হয় ডেকে বলে দি, "দিদিমনি গলা-ঘাড়টা তো আপনার কালো হয়ে যাচ্ছে, ওসব বাজে কোয়ালিটির মাল পড়বেন না". তবে মেয়েদের মুডের ঠিক নেই তো, কিসে কি হয়, সেই ভেবে আর সাবধান করতে যাইনি।

আচ্ছা সবই কি খারাপ করি বলুন? এই মানিব্যাগগুলোর যা একেবারে জরাজীর্ন অবস্থা, পকেটমার হওয়ার পর যখন ভদ্রলোক নতুন আরেকটা কেনেন, মনটা কিরকম খুশি খুশি লাগে বলুন তো? সেদিন তো মানিব্যাগের সাথে একটা চিঠিও পেলাম। মাফ করবেন, পড়ে ফেলেছি, হে হে। ওতে যা পড়লাম তাতে বুঝলাম, বৌয়ের হাতে ওই টিনা-ময়নার চিঠি পড়লে, ভদ্রলোক খবরের কাগজের হেডলাইন হতেন। ভদ্রলোকটিকে কিরকম মারাত্মক বিপদ থেকে বাচালাম, বলুন। হয়তো, ওই ভদ্রলোকের খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স হয়ে যেত, সে রাতে বাড়ি ফিরে পকেটমারির গল্প করতে করতে, বৌয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন, তখন হয়তো আর ডিভোর্সের কথা ভাবতে ভালো লাগছে না তাদের।

আর এদিকে আমার কাছে বরং চিঠিটা সেফ। পিঙ্কিকে চিঠি লেখার একটা ইনস্পিরেশন কপি হিসেবেও রইলো। আমার তো আর কাব্য ফব্য আসে না। এইসব লিখলে পিঙ্কি হয়তো খুশি হয়ে উঠলো। সারাদিনের ঘাম, দুলুনি, ঠেলাঠেলি, মার্ খাওয়ার টেনশন, এসবের পর শুধু ওই ওর হাসি মুখেতেই তো সব জমা-খরচ ডেবিট-ক্রেডিট মিলে মিশে কিরকম যেন .... মম..... কিরকম যেন লাল-মার্কা তীর-চালানো-দিল হয়ে যায়।


Friday, 14 April 2017

চো চো চোদ্দশ চব্বিশ।

বাংলা চোদ্দশ চব্বিশ।
বেশ একটা চো চো ব্যাপার, তাই না?
কি কি করবেন:
এই বছরটা চোঁ চোঁ করে কাটান।
চপ-চমচম-চা-চানাচুর-চিনি-চর্ব্যচোষ্য ছাড়া বাঙালি অচল। কুচোচিংড়ির বড়া, সাথে কুচোনো পিঁয়াজ, উফফ চমৎকার, চলবে।
চোঁয়া ঢেকুরটা আপ্রতিরোধ্য। অম্ল-প্রতিষেধক চিবিয়ে নেবেন।
আমের চোকলা চোয়ানো রস চোষা? অসমীচীন, একান্তে চলবে।
চোলাই? এহ!! চোপ!!
চোখ পাকানো, চোখ টেপা, চোখ টাটানো, চোখ ঘোরানো, চোখ রাঙ্গানো ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা আবশ্যিক। তবে চঞ্চল চোখাচুখি চলতে পারে। তা যেন চুলোচুলিতে পরিণত না হয়।
আড়চোখে এদিক ওদিক চাইতে গিয়ে চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থেকেও, বিরত থাকুন।
যে হারে চড়চড় করে চারিদিকে চরম গরম, চোখে সর্ষেফুল দেখা অসম্ভব নয়।
চোপড়ানি বা চোটপাট বা চোপার মাত্রা চোদ্দশ চব্বিশ-এ বাড়তে পারে। তাতে ভয়ে কেঁচো হয়ে যাবেন না। চুপসে থাকুন।
চোয়াড়ে চোস্ত চোরচোট্টা-চিটিংবাজ চারিদিকে কৃত্রিম চেহারা নিয়ে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে। তাদের চোয়াল ভেঙে দিতে মন চাইছে? উহু নিতান্তই চিপ। ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করবেননা।
চটপট কুলকুচি করে নিন।
ধার বাকি চোকান।
ভাঙাচোরা মন নিয়ে মনচোরের সাথে জুয়াচুরি খেলবেন না। ওতে নাকানিচোবানি খাওয়ার চান্স আছে।
মন খুলে বাঁচুন। ওটাই বাঁচোয়া।

Wednesday, 12 April 2017

ভয়ঙ্কর টুপি

টুপি। ওহ অমনি মাঙ্কি ক্যাপ ভাবছেন? তা অবশ্য ভাবতেই পারেন। সে বাঙালিদের এক্কেবারে নিজস্ব কিনা। ন্যাপথলিনের গন্ধে জড়ানো আলমারির শেষ প্রান্তে সে থাকে। তাকে খুঁজে বার করা যেন পলাশীর যুদ্ধ, খুঁজতে গেলে সব টেনে আগে বার করতে হবে। এই নিয়ে কত গল্প কত লেখালেখি। তবে ২০১৭ তে দাঁড়িয়ে বলবো মাঙ্কি ক্যাপএর গুরুত্ব হারিয়েছে, শুধু হারিয়েছে বললে ভুল বলা হবে। বলা উচিৎ সচেতনভাবে পরিহার করা হয়েছে। নকল করা চলছে যে!! হে হে, বাঙালি যা করে মন দিয়ে, তাই নকলও। যদিও আজকাল লেখকেরা এখনো মাঙ্কি ক্যাপ আওড়ান লেখালেখিতে। বোধহয় এটি বাঙালির কমফোর্ট এঙ্গেল। ওই যেরকম গ্লোবাল ওয়ার্মিংর খাঁচায় আঁটকে থাকা বাঙালিদের জন্য, "ডিসেম্বরের হাড় হিম করা" শীতের মিথটা বেশ এনজয়বল।
সে যাই হোক, টুপি কিন্তু টেনশন ও। এই বুঝি কেউ পরিয়ে দিলো। সব সময় সজাগ থাকতে হয়।
**কি হলো, রোজ যাচ্ছি এই রুটে, ডেলি প্যাসেঞ্জেরদের বোকা বানানো? রোজ আট টাকা নিচ্ছে, আর তুমি বলছো নয়? তুমি কে হে?
**এই জানো, পুরো ঠকে গেলাম। ওই দোকানে এতো দরাদরি করে আশি টাকা, আর এখানেতো এমনিতেই আশি বলছে। ইশশ
**দিস ইস আনরিয়েল। সেম রুম ছশ টাকা বেশি চার্জ করেছেন আমাকে। ওই তো দেখলাম ওনাদের দিব্যি ডিসকাউন্ট দিয়ে দিলেন।
এই সব খুচরো ঝামেলার পরে আরও একটু উচ্চমার্গের কিছুও আছে।
**দূর বা** ফেসবুক করা ছেড়েই দেব। শালা সব ফেক একাউন্টে ভর্তি। মালটার সাথে ইমোশনালি ইনভল্ভড হয়ে গেলামরে। এখন দেখছি ফেক।
**রামকৃষ্ণ এন্ড বিবেকানন্দ চিট ফান্ড-এর ঘটনাটা শুনলি? ভগবানকেও ছাড়ছেনা, এদের নরকেও ঠাই নেই 
**বিয়ের আগে কিচ্ছু বলেনি, ছেলেটার আগের বিয়ের এখনো ডিভোর্সও হয়নি। এখনো নাকি সম্পর্ক আছে। একটা বাচ্চাও নাকি আছে ওদের।
যত্রতত্র তাই এই অদৃশ্য টুপির টেনশন। তবে এর থেকেও ভয়ানক এক টুপি আছে, বলুনতো কি?
আচ্ছা দাঁড়ান, হিন্ট দিচ্ছি, এটিকে দেখা যায়। এটিকে পড়া যায়, আর পড়লেই পরাজয়। এটলিস্ট সমর্পন তো বটেই।
একদম ঠিক বলেছেন কত্তা, টোপর। টুপির ওপর।

আচ্ছা, এর থেকেও ভয়ঙ্কর টুপি আছে। আমেরিকার আমাজন ভ্যালিতে যুগের পর যুগ ধরে আছেন এক প্রজাতি, তারা টুপি। মানে তাদের প্রজাতির নাম টুপি। টুপিরা আবার টুপি ও পড়ে। কেন ভয়ঙ্কর? তারা মরতে ভালোবাসে। নিজের জন্য, নিজের প্রজাতির জন্য, নিজের মাতৃভূমির জন্য। নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে, এককথায়, মুহূর্তে। কি ভয়ঙ্কর, তাই না? আমরা সব কি সুন্দর নিজেরদের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত, নিজের বর-বৌ-বাচ্চা নিয়েই সময় পাইনা আর এদিকে দেখুন এদের! এরা একেবারেই পাতে দেওয়ার মতো নয়। নাঃ আমাজন ভ্যালিতে কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে গেলে টুপি থেকে সাবধান। সংস্পর্শে যদি দেশপ্রেম-ট্রেম জেগে ওঠে! টু ডেঞ্জারাস।

ঘরোয়া পদ্ধতি

রসিকবাবুর বিয়ের পরের একসপ্তাহ, পঙ্গপালের মতো আত্মীয়দের বিদায় দিতে দিতেই চলে গেলো। বৌয়ের সাথে বসে দুদণ্ড কথা বলবে তার উপায় নেই। আজ আপিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখে বাড়ি ফাঁকা, অনলি বৌ রান্নাঘরে, ফ্রায়িং বেগুউউনি। উফফফফ লাভলি। 
- ওগো খেতে এসো? বেগুনভাজা গুলো তুলে রেখেছি। দেরি কোরোনা কিন্তু, ঠান্ডা হয়ে যাবে। 
- হে হে 
-হাসছো কেনো গো? কি হলো? এসো খেয়ে নাও। 
- হে হে হে হ্যা যাচ্ছি হে হে 
-কি হলো গো তোমার? হাসছো কেনো।
- হে হে কিজানি কেনো
-মানে, ওমাগো পাগলের সাথে বিয়ে হলো নাতো? কিগো না হেসে খাও না গো। কি দেব বোলো।
- এগুনি ব্যাকটা। হে হে
- মানে?
- না এগুনি ব্যাকটা ধুর হে হে বেগুনি একটা। হে হে যুলিয়ে গাচ্ছে। ধুর গুলিয়ে যাচ্ছে। হে হে।
(হাত পা ছড়িয়ে)- ওগো বাবাগো মাগো , একি হলো গো। এই তুমি কি পাগল? হাসছো? ভুলভাল বকছো?
রসিকবাবু হেসেই চললেন। বেগতিক দেখে পাড়ার সাহিত্যিক কাম ডাক্তার সুবিমলকে ডাকতে হলো। অবস্থা বিচার করে, সুবিমল বললেন,"রেয়ার কেস। বিয়ের কদিন খুব হা হা করে হাসার ফলে, মুখের পোস্টেরিওর পিলার আর ইন্টেরিওর পিলার তীব্র অভিমান করেছে। বুঝলেন না? মানে মুখের ওপর আর নীচ, তীব্র অভিমান, কিছুতেই কাছাকাছি আসতে চাইছে না। এতদিন কিছু সিম্পটম বোঝেননি? মান ভাঙাতে হবে। জিভ ওদিকে ঘটক হতে গিয়ে বিপদে পড়ছে। তীব্র বিরোধিতায় খেই হারিয়ে ফেলছে।"
-উপায়?
-হমমম ওই আর কি ইয়ে মানে চুম্বন। দুটি অভিমানী বিপরীতগামী মেরুকে এক করতে ঐটিই একমাত্র ঘরোয়া পদ্ধতি। কি করবেন দেখুন। নাহলে এম্বুলেন্স ডাকি?
রসিকবাবু সবটি শুনে জোরে জোরে বললেন,"হে হে হে হে হে হে হে হে"


Monday, 10 April 2017

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, চক্রের বদলে ছড়ান রসভরা জিলিপি

সন্দীপনিতে পড়াশোনা শেষ করে থেকে সময় পেলে ভালো লেখা পড়েন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। লিপি, পাণ্ডুলিপি সব পড়া শেষ। বারকয়েক রিভিশনও হয়ে গেলো। এবার একটু নতুন লেখা পেলে ভালো হতো। দেবী সরস্বতী শেষমেশ বাঁচালেন, খোঁজ দিলেন ফেসবুকের। লিংক পাঠিয়ে দিলেন। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও। ফেসবুকে নতুন একাউন্ট খুলে শ্রীকৃষ্ণ ভারী খুশি। এতো লিপি, এতো লিখন, এতো ভাষা, এতো বর্ণমালা। বেশ চলছিল, মুশকিল হলো, গত কয়েকবছরে লেখার সংখ্যা হুড়হুড় করে বেড়েছে।
যেমন সংখ্যা বাড়ে পরীক্ষার সময় ছাত্রভক্তের,
যেমন সংখ্যা বাড়ে পুজোর সময় মহিলাভক্তের,
যেমন সংখ্যা বাড়ে ইয়ারএন্ডের সময় চাকুরেভক্তের, (সূক্ষ্মরূপে বেশিরকম বাড়ে ফিনান্সিয়াল ইয়ারেন্ডে)
যেমন সংখ্যা বাড়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাষনের পর আমজনতাভক্তের, (বাজেট পেশের পর অতিরিক্ত মাত্রায়)
তেমনই ঝাটিকাবেগে লেখার পরিমান বাড়ছে। চারিদিকে থিকথিক করছে লেখা। শ্রীকৃষ্ণ অভিভূত, বিস্মিত এবং চিন্তিত। কোনো লেখা মিস করতে চান না তাই কিছুটা বিচলিতও। নারদকে খুব দরকার। এইসব কাজে ওর খুব মাথা চলে। ঠিক সময়ে আগমন নারদমহাশয়ের।
-নারায়ণ, নারায়ণ, প্রভু, চিন্তিত দেখাইতেছে কেন আপনারে?
-আইসো আইসো নারদমহাশয়, এইতো খুঁজিতেছিলাম তোমারে।
-হাজির প্রভু, কহেন দেখি কি চিন্তা আপনারে করিতেছে বিব্রত?
-আর কি বলি, ফেসবুকে লেখা লেখি, কত কত, শত শত ....
-আর বলিতে হইবে না প্রভু, ধরিয়াছি ঠিক, পড়িতে এতো লিখন, হউক দিনের দৈর্ঘ্য অধিক.
-উহু না না, উহাতে সমস্যা বাড়িবে অতিশয়, পড়িবার সময়ের সাথে লিখনও জন্মাইবে শয় শয়। অন্য কোনো উপায়?
-তবে প্রভু, লেখকের চিত্তবিক্ষেপ ঘটিলে, বিশ্রাম লইবে কলম, বিরতি আঙুলে।
-সাধু উপায় হে নারদমহাশয়, ভাবিয়া দেখ কি রূপে তাহাদের চিত্তবিক্ষেপ হয়। যাহাতে সমাজেরও কল্যাণ এবং চিত্ত রয় আমোদময়।
-জিহ্বা লইয়া বড়ো সংবেদনশীল বাংলার লেখককুল, খাদ্য জাতীয় আয়োজনে চিত্তবিক্ষেপ ঘটিবেই, নির্ভুল।
- ইয়ায়ায়ায়াহুউউউউউ
জিহ্বাকে পরিতৃপ্ত করিতে লেখক ছুটিল, শ্লথ হইলো লিপি,
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, চক্রের বদলে ছড়ান রসভরা জিলিপি।
নারদ অগোচর হতে হতে ভাবলেন, বাঙালিদের জন্য জিলিপি কেন? রসগোল্লা-সন্দেশ থাকতে? ও হরি, প্রভুর জন্মস্থান ভুললে চলবে কি করে। প্রভু নিজের জন্মস্থানের মিষ্টান্ন বড়ই পছন্দ করেন বটে।
মধ্য(প্রদেশ)এর স্বাদ পাক উত্তর, উত্তরের স্বাদ পাক পশ্চিম,
এবার পশ্চিম? পশ্চিম পাক খাক রসে।


Saturday, 8 April 2017

বোতল এট ইওর সার্ভিস, চিয়ার্স

নতুন বিয়ের পর অনেক কিছু পরিবর্তন হবে, এই সাবধান বানীর অন্ত ছিল না. বিয়ের পর তাই যা কিছু পরিবর্তন তার সাথে মোটামুটি একপ্রকার সমন্বয়সাধন করা গিয়েছিল. মদ্যপানের সাথেও. 
এমনিতে বৌ আমার অপর্না সেন, শুধু ওই .. মানে .. মদ্যপান নিয়ে একটু ছায়াদেবী গোছের. আমি আবার লুকিয়ে চুড়িয়ে কিছু করে বৌয়ের কাছে কেস খেতে নারাজ. তাই চ্যালেঞ্জটা নিয়েই ফেল্লাম.সুযোগ বুঝলেই শুরু করলাম এলকোহলের গুরুত্ব​-প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ছোট ব​ড় অনুচ্ছেদ ব্যাখ্যা. মুখ ঝামটা, রবিবার সকালের আধসিদ্দ আলুর দম, রাতের মশারি টানানোর বিরক্তিকর ডিউটি সব মুখ বুঝে হজম করলাম. এট লাস্ট একদিন বৌ বলে ওঠে, "এনোতো দেখি একটা ওয়াইন, কাল বিউটিশিয়ান রিনা টিভিতে বলছিলেন ওটা খেলে নাকি স্কিনে গ্লো আসে!" ইয়াহু উ উ উ উ চাহে কোই মুঝে জঙলি কাহে..... ওয়াইন জিনিসটাতে আমিও তখন সেভাবে অভ্যস্ত নই যদিও, লেকিন কুছ পরোয়া নেই.....বিউটিসিয়ান রিনাকে চুমু খেতে ইচ্ছে করলো। না মানে ধন্যবাদজ্ঞাপন হিসেবে। যাই হোক পরের দিনই একটা রেড ওয়াইন নিয়ে হাজির হলাম.. উত্তেজনায় ঘেরা সন্ধ্যেতে গদ গদ গলায় বল্লাম, কি গো খুলবো? গিন্নীর ঘাড় নাড়া ওয়িথ মুচকি হাসি দেখে আমি তো তখনই মাতাল. ওপরের প্লাস্টিকটা খুলতেই, দেখি বোতলের মুখে কর্ক. বুঝলাম যত সাধ্য সাধনা এর আগমনের জন্য, আগমনের পরবর্তী বন্দোবস্তের প্রতি অবহেলা হ​য়েছে, মানতেই হবে. কর্কস্ক্রু নেই বাড়িতে! ঠুকঠাক-দুমদাম-টানা-হ্যাঁচ​ড়া যন্ত্রবিজ্ঞানের যাবতীয় কৌশল প্রয়োগ করে যা দেখা গেল, হিতে বিপরীত হ​য়েছে, কর্ক আর ও ভিতরে ঢুকে গেছে! বৌয়ের ভুরুযুগল কাছাকাছি আসছে, মানে আসন্ন ঝ​ড়ের সংকেত. ওদিকে কর্কও বিপরীতমুখী. রাত তখন একটা. বৌ ইতিমধ্যে যুদ্ধের অভিপ্রায় ত্যাগ করে হাই তুলছে আর ধীরে ধীরে গা এলিয়ে দিতে দিতে বলছে,"হোলো, বোতল খোলা?" কথাটা স্ট্রেইট ছবি-বিশ্বাসী-অভিমানী-হৃদয়ে হিট করল. করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে. দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে পাতি বাঙলা আইটেম মানে সাঁড়াশি নিয়ে দিলাম এক বাঙালি ঠোকা কর্কের ওপর, ব্যাস কর্ক আত্মসমর্পণ করে টুপ করে পরলো বোতলের মধ্যে, সাঁড়াশি ই  ই ই, তোমায় কুর্নিশ..... বৌ, বোতল এট ইওর সার্ভিস..... চিয়ার্স…


পুনশ্চ: বৌ গ্লাস হাতে নিদ্রালু চোখে জিজ্ঞাসা করেছিল,"বোতলের ভিতরে ওটা কি ভাসছে যেন".... আমি বলেছিলাম," ও আমাদের প্রেম গো, ওই রূপরাশি আপনা বিকাশি. রয়েছে পূর্ণ গৌরবে ভাসি"

Monday, 3 April 2017

গাইয়ে হবু-জামাই

বেশ অনেকদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিলো মেয়ে কমলা নাকি প্রেম করছে, তাও আবার এক গাইয়ে বাউন্ডুলের সাথে। মেয়ের বাবা ডেকে পাঠালেন গাইয়েকে। ইন্টারভিউ টাইম উইথ প্রবাবল-হবু শ্বশুরমশাই।
---------------------------------------------------------
-কতদিন ধরে চলছে এসব?
-পুরানো সেই দিনের কথা, হায় ও সেই, চোখের দেখা প্রাণের কথা .....

-থাক থাক ওকি গান শুরু করলে কেন? বলছি যে, কিছু করা হয়? নাকি বাবার হোটেলেই....
-হা-আ-আ-আই। নাই কাজ নাই। দিন যায়, দিন যায়। আয় আয়, আয় আয়। হাতে কাজ নাই॥

- ও বাবা তারমানে লবডঙ্কা!
-তোমরা যা বলো তাই বলো, আমার লাগে না মনে,আমার যায় বেলা, বয়ে যায় বেলা কেমন বিনা কারণে ....

-কি জ্বালা! আরে বাপু কি খাওযাবে আমার মেয়েকে?
- আমার ভুবন তো আজ হল কাঙাল, কিছু তো নাই বাকি, ওগো নিঠুর, দেখতে পেলে তা কি ....

-কি কপাল, মা কমলা আর কোন ছেলে পেলে না মা, শেষে এই? তা ছেলে, তোমার বাবা-মা কি বলছে?
- হায় গো, ব্যথায় কথা যায় ডুবে যায়, যায় গো--সুর হারালেম অশ্রুধারে....

- বটেই তো, তা হবে না, এ ছেলের জন্মমাত্রই মা-বাবার এই হাল বলে আমার মনে হয়! বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো কেস, তা কি আমার ঘাড়ে পড়বার পরিকল্পনা নাকি?
- হৃদয়-আবরণ খুলে গেল তোমার পদপরশে হরষে ওহে দয়াময় ....

- জানতাম আমি, এ সব কেস কি করে ঠিক করতে হয় আমি জানি.
- হৃদয় মোর কোমল অতি, সহিতে নারি রবির জ্যোতি, লাগিলে আলো শরমে ভয়ে,মরিয়া যাই মরমে॥

-- (মাথায় হাত দিয়ে)হে ভগবান ....
-- (ইন ঘরে-বাইরে-সৌমিত্র স্টাইল) শাসনে যতই ঘেরো আছে বল দুর্বলেরও, হও-না যতই বড়ো আছেন ভগবান।


Saturday, 1 April 2017

ইয়া বড় পুরু ঠোঁট

সুন্দর ফর্সা নাদুসনুদুস চেহারা, ইয়া বড় পুরু ঠোঁট লাল টুকটুকে, এ দেখেই বাবা ছেলের নাম রেখেছিলেন শ্রীমুখ। আত্মীয়স্বজন ছেলের মুখ ঠিকমতো দেখতেই পাননি জন্মের বেশ কয়েকবছর। মুখ ভরে থাকতো কালো টিপে। বাড়ির প্রত্যেকেই সকালে উঠে একটি করে কালো টিপ্ সাটিয়ে দিতেন শ্রীমুখে। সবাই প্রথম তার মুখ দেখতে পেয়েছিলো প্রথম স্কুলে ভর্তি যাওয়ার সময়। স্কুল থেকে টিপ্ ভর্তি মুখের ছবি বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। অগত্যা....
যে যাই হোক শ্রীমুখবাবুর এতদিনে সরকারি চাকরি হয়েছে। সুতরাং কোল্ড্রিংক্স সুরুৎ করে মেরে দেওয়ার পর ঢেকুর যেমন অবশ্যম্ভাবী এবং আকাঙ্ক্ষিত। ঠিক তেমন ভাবেই সরকারি চাকরির পরই ঘটকের আগমন বাড়িতে। মার্কেটে ফেসভ্যালু কম নয় শ্রীমুখবাবুর। সুতরাং গোলগাল ঘরোয়া পাত্রীর সাথে শুভপরিণয় সম্পন্ন হলো। বিয়ের পর বৌ গদ গদ হয়ে বলেছিলেন,"তোমার ঠোঁটদুটো এক্কেবারে দুধপুলি, ঘন, গাঢ়, জমাট, পুরু, নিবিড়". সে দুধপুলির স্বাদ কেমন বা বৌদির সে স্বাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে অবশ্যই শ্রীমুখবাবু খোলসা করেননি। তবে এ বিবরণের মুহূর্তে লাল হয়ে যাওয়া গাল আর কানদুটি ঘটনার সুখকর আমোদের দিকেই ইঙ্গিত করে। সুতরাং বেশ চলছিল এতকাল। সুষ্ঠ সুন্দর নিয়মমাফিক। সমস্যা শুরু এই কয়েকমাস ধরে। একটা অস্বস্থিকর পরিস্থিতি। বাসে যাচ্ছেন, অমনি কেউ যেন তাকে দেখে হাসছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, কেউ যেন তাকে মুখ ভেঙাচ্ছে। প্রথম প্রথম পাত্তা দেননি। কিন্তু ক্রমে যেন ব্যাপারটা বাড়ছে। এহেন অবস্থায় মনমেজাজ খুব খারাপ। কিছু ভালো লাগছে না টাইপ। বৌ লুচি-মটন, ইলিশ দিয়ে মনটাকে ফুরফুরে মোডে আনছেন বটে, কিন্তু রাস্তায় বেড়োলেই সেটা রিসেট হয়ে যাচ্ছে। মনের ভুল যে নয় তা প্রমান পেলেন, দেখেন কয়েকটি স্কুল-পড়ুয়া তার দিকে স্মার্টফোন তাক করে আছে। ছবি তুলছে নাকি? সহ্য করতে না পেরে ছুট্টে যেতে গেলেন, এ সমস্যার কারণ জানা দরকার। কিন্তু পৌঁছানোর আগেই তারা বেপাত্তা। সেদিনই বিকেলে অফিস থেকে ফিরে যখন বাড়িতে লুচি -আলুরদমে ভাসছেন। কে যেন এসেছে। খাওয়া ছেড়ে ওঠার নো কোয়েশ্চেন। তাই খাওয়া শেষ করে পাঁচ মিনিট কুলকুচি করে মোট আধঘন্টা পর বসার ঘরে গিয়ে দেখেন, একটি ছেলে-মেয়ে জোড়া তার সাথে দেখা করতে এসেছে। তাদের কাঁধে ক্যামেরা।
- বলো কি ব্যাপার।
- কাকু, বলছি আপনার একটা ফটো নিতে পারি?
বলেই কিচিক
- য়্যা? মানে? ওকি তুলে নিলে যে। মানে কিছুই তো  ...
- বুঝিয়ে বলছি কাকু। আসলে আপনার মুখটা ভীষণ ইউনিক। তাই আপনাকে মডেল হিসেবে আমাদের খুব কাজে লাগবে। আমরা একটা ট্রেনিং স্কুল চালাই।
- (শ্রীমুখবাবু খুশিতে ডগমগ হয়ে, আড়চোখে পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো বৌয়ের উদ্দেশ্যে হালকা হাসি ছুড়ে বললেন) দেখ ভায়া, আমি তো এসবের কিছুই জানি না। তবে তোমরা যখন বলছো  ....
- কাকু কিচ্ছু জানতে হবে না, আপনাকে। প্রতি উইকেন্ডে একটা করে সিটিং ব্যাস। এই ধরুন ঘন্টা দুয়েক। চেয়ারে হেলান দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন। আর কিচ্ছু না। আমরা আপনাকে দেখিয়ে স্টুডেন্টদের ট্রেনিং দিয়ে নেবো।
- ব্যাস এইটুকু, আর কিছু না?
- না কাকু, এইটুকুই, আসলে আপনার মুখটা আজকের দিনে একটা অ্যাসেট। কতদিন আপনার পিছনে ঘুরছি জানেন। সমস্ত এঙ্গেলে আপনাকে পরখ করেছি।
- (খুশিতে শ্রীমুখবাবুর চোখের কোণে তখন জল) কি যে বলবো ভাই তোমাদের, মানে আমার মুখ নিয়ে ছোট্টবেলা থেকে অনেক প্রশংসা টসংশা হে হে ওই আর কি শুনেছি। কিন্তু এই ভাবে কেউ .... তা বেশ ভায়া তোমরা কিসের ট্রেনিং দাও?

- কাকু, সেলফি ট্রেনিং সেন্টার। মানে আজকাল তো জানেনই, সেলফি তোলাটা একটা আর্ট। মার্কেটে হেবি চলছে, এই ফেসবুকে, টুইটারে, ইনস্টাগ্রামে এখানে ওখানে। আসলে ওর ওপরেই তো সব মানে প্রেম, বিয়ে এমনকি চাকরি ব্যবসা অব্দি। এপ্লিকেশন ফর্মে চাইছে সেলফি। আমরা তাই শেখাই বিভিন্ন এঙ্গেল, কৌণিক পরিমাপ ইত্যাদিতে সেলফি নেওয়া। আপনাকে নিচ্ছি পাউটের ক্লাসের জন্য। পাউট নিশ্চয় জানেন। ঠোঁটটা একটু ছুঁচোলো করে, এগিয়ে এনে হে হে কিচিক সেলফি। আপনার ঠোঁট গুলো তো বাই ডিফল্ট পাউট। মুউউউআআআ হে হে।