Wednesday, 6 December 2017

লিস্টটা

বাপ মরা মেয়ে তাও আবার বয়স পঁয়ত্রিশ ছুঁইছুঁই। সে মেয়ের বিয়েটা ঠিকঠাক দিতে পেরে উমাজেঠিমা বেশ খুশি। আরও বেশি খুশি এইজন্য যে বিয়ের ১ মাসের মধ্যে মেয়ে তল্পি-তল্পা নিয়ে বাড়ি ফেরেনি। ঘন ঘন ফোন করেনি। যে কবার ফোন করেছে, শশুড়বাড়ির গুষ্টি উদ্ধার করেনি। আর  এতো কিছু করেনি বলেই, উমাজেঠিমা দারুন খুশি।
একদিন সকালে ছেলেকে ডাকলেন ঘরে।
- শোন বাবু, পিলুর বিয়েটা ভালোই হলো কি বল? শোন, একটা লিস্ট করেছি। তার মধ্যে টুকটাক জিনিসগুলো স্বপনকে দিয়ে আনিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু কিছু জিনিস আনতে হবে তোকে। কাল বিকেলের আগে একটু এনে দিস তো।
- সে এনে দেওয়া যাবে মা। দেখি কি জিনিস? লিস্টটা দাও  ..... ও এই টিক দেওয়া গুলো? আচ্ছা। য়্যা? মানে? হুঁকো? গাঁজা? মানে? মা?
- হ্যা আর ওই ইসে ....
- কি?
- ওই মদের মধ্যে কোনটা ভালো হবে রে?
- মানে? তুমি? মদ? গাঁজা? কিসব বলছো?
- কেন?
- মানে তুমি বলছো? তোমার চাই মদ?
- কেন? তুই আকাশ থেকে পড়ছিস যে? কি বলছি যেন বুঝতেই পারছিস না? রোজ রবিবার দরজা বন্ধ করে কি গেলা হয়, জানিনা নাকি?
- এ এই ইয়ে মানে  ..... না মানে আহা আবার আমার কথা কেন  .... আমি বলছি যে তুমি? মদ? মানে  ....
- মানে মানে করিস না তো। কোনটা ভালো হবে বল।
- ওই ওই ইয়ে, হুইস্কি।
- আচ্ছা আনিস ঐটাই। ব্যাস বিকেলের মধ্যেই আনিস কিন্তু। রাতেই বসতে হবে তো?
- (চিৎকার করে) মা গো, বলছি এমন কি হলো গো তোমার? এই রকম করছো। আমাদের কোনো ভুল হলে বলো একবার। কি হয়েছে তোমার?
- আরে, কি আবার হবে? "শিবঠাকুরের মানত" এর এবার রিটার্ন টাইম। শিবঠাকুরের পুজো হবে কাল। ওনার যা পছন্দ দিতে হবে না পুজোর সামগ্রীতে?

Monday, 20 November 2017

তুম তানা নানা

পরিস্থিতি হেবি থমথমে। জেঠুর মুখে কালি লেপে শ্রাবন্তীদি নাকি পালিয়েছে। কালি মুছতে সারা পাড়া উইথ পাড়ার ডাক্তার বাড়িতে হাজির। আমি আর দাদা স্কুল থেকে ফিরে খবর পেয়েই দৌড়ে কালি মোছা দেখতে গেলাম। কালি কোথায়! জেঠুর দিব্বি সেই ফর্সাটি। শুধু খাটে হেলান দেওয়া আর বুকে হাত। পাড়ার ডাক্তার বলছেন,"কালই ইসিজি করিয়ে নিন। কোনো নেশা নেই তো? এখনকার ব্যাথাটা আপনার স্ট্রেস থেকেই। বেশি চাপ নেবেন না" চারিদিকে সবার মুখ কালাপানির কয়েদিদের মতো। নিস্তব্ধতার কম্পেটিশন -এ পাড়ার দিদা-দাদুরা মাঝে মাঝে বাঁধ সাধলেও, মোটের ওপর একটা থমথমে ভাব ইন্ট্যাক্ট রাখতে সক্ষম হচ্ছেন সবাই। মাঝে মাঝে চপাট চপাট মশা মারার আওয়াজ। শ্রাবন্তীদির পালানো তবু সহ্য হবে,  কিন্তু ভয়ানক ডেঙ্গি? সে থেকে কে বাঁচাবে? কুঁইকুঁই করে জেঠু বলে উঠলেন,"কাছুয়া টা জ্বালাও না"
উপস্থিত সকলেই ঝটপট শশব্যস্ত হয়ে কাছুয়া খুঁজতে লাগলেন। পেলেনও। মুশকিল হলো, দেশলাই? নাই। জেঠিমার মুখ-এর পরিস্থিতি যা, তাতে বিনা দেশলাই-তেই আগুন লাগার সম্ভাবনা। তাই জেঠিমাকে কেউ ঘাটাতে চায় না। ঠিক এ অবস্থায়, দাদা বলে উঠল,"আরে দাদু, লাইটার তো তোমার পকেটেই"।

সবার মুখ এখন দাদার দিকে। ঠিক তখনি, কার মোবাইলে বেজে উঠলো,"আগুন লেগেছে লেগেছে লেগেছে আগুন তুম তানা নানা নানা"

Monday, 13 November 2017

চিরকুট চিৎপাত

ছাতাটা হারিয়েছি।
কোথায় রেখেছি মনে রাখতে না পারাকেই হারানো বলে, তাই না?
ছাতাটা হারিয়েছি এই ধরুন ছটা বর্ষা আগে। এ ক বছরে অবশ্য ছাতা হারিয়েছি এই স্মৃতিটাই হারিয়ে গেছিলো। মনে পড়লো এই একটা অদ্ভুত ঘটনাটাতে। গত ২৩ দিন ধরে ইতিহাস বইয়ের পাতায় রাখা একটি চিরকুট পাচ্ছি রোজ। তাতে লেখা,"আমি আছি, ইতি ছাতা"। প্রথম প্রথম ব্যাপারটাকে ছাতার মাথা বলে উড়িয়ে দিলাম। কিন্তু  ইতিহাস পড়া ইগনোর করাতে ওই সেদিন স্যারের কাছে প্রবল বকা খাই। বকা খেয়ে ইতিহাস বইটি খুলতেই আবার ওই চিরকুট। মাথাতে আগুন জ্বলে উঠলো। সমাধান এবার করতেই হচ্ছে। মা-বাবা-দিদি কে বলতে গেলাম। হিতে বিপরীত। বুঝলাম, সবার ওই ছবর্ষা আগের স্মৃতিটিকে উস্কে দিয়েছি। চিরকুটের উপস্থিতির থেকে ছাতাটির অনুপস্থিতিতে তাঁরা বেশি মর্মাহত। ফলস্বরূপ ছ-বছর আগে ছাতা হারানোর দিনটির যেন পুনরাবৃতি ঘটলো। সাথে বোনাস প্রাপ্তি- বাবার গুরুগম্ভীর জ্ঞান, ডালের হাতা হাতে মার হাই পিচ উপদেশ আর দিদির? খিল্লিমাখা হাসি। বিশেষ সুবিধা হলো না। সব আশা নিয়ে স্কুলে আমার আমার ডিটেক্টিভ বেস্ট ফ্রেন্ডকে এই ব্যাপারে বললাম। শুরুতেই ওর কথা কেন যে মাথায় আসেনি! যাই হোক, প্রথমেই শুরু করলাম সবকটা চিরকুট নিয়ে প্যাটার্ন বোঝা। উদ্ধার হলো দুটো জিনিস:
১. লেখাটা কারো একার নয়। ডিফারেন্ট হ্যান্ডরাইটিং
২. লেখা কালোকালি তে, কিন্তু শেড এক নয়

এর মধ্যে একটা চিরকুট নিয়ে বন্ধুটি বেশ সিরিয়াস। বললো,"চল বাড়িতে"। গেলাম। পরিস্কার চকচকে ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাস নিয়ে এলো ওর দাদার ঘর থেকে। ওই চিরকুটের ওপর কিছুক্ষন ধরতেই চিৎকার করে উঠলো,"তোর দিদি থিয়েটারের স্ক্রিপ্ট লেখে, তাই না? ওরই কাজ মনে হচ্ছে রে। দেখ না চিরকুটের ওপর আবছা লেখা, ভূতের গপ্পো ৩। আমার মনে হয় এই চিরকুটটা যে পাতাতে লেখা তার আগের পাতাতেই এই গল্পের প্লটটা লেখা শুরু হয়েছিল। ডটপেনে চেপে লেখে বোধহয়, তাই ছাপ পড়েছে নিচের পাতায়। ভেবেছিলো, তুই এই চিরকুট দেখে ভয় পাবি, তাই তোর সাথে একটা রিয়েল এক্সপেরিমেন্ট করতে চেয়েছিলো।"
"জিও কাকা" বলে লাফিয়ে উঠলাম। ঠিকই তো, বাড়ির লোক ছাড়া রোজ রোজ আমার ঘরে ঢুকে এ কাজ কে করবে! আজ বাড়ি গিয়ে একটা দুর্দান্ত ক্লাইম্যাক্স মোমেন্ট যে ক্রিয়েট করবো, সে নিয়ে সন্দেহ নেই। উফফ ভেবেই রোমাঞ্চ জাগছে। মনে হচ্ছে এবার আমার ছাতা হারানোর দোষটা কাটবে।


খুশিতে ডগমগ আমি যখন বন্ধুটির সাথে সমাধান উদযাপন করছি, র দাদা পাশের ঘর থেকে ঢুকে বলে," তোপসে, আমার ম্যাগনিফায়িং গ্লাসটা  .... ও তোর হাতে। তোদের কাজ হয়ে গেলে দিয়ে যাস। আর শোন, বাড়িতে সন্দেশ আছে। চাই তো এখুনি ভিতরে যা দৌড়ে।" এই বোনাস সন্দেশ জিভের চারিধারে ঘুরঘুর করতে করতে বললো, মনে হয় দিদি এরকম কাজ বার বার করুক। ২১ রজনী সেনের এই বাড়ি আমার এই জন্য এতো ফেভারিট।

নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতি

মেজোমামার বিয়েতে তার সঙ্গে প্রথম দেখা। না ঠিক দেখা নয়। আড়চোখে পলক ফেলে ফেলে নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতি কে একটু বুঝে নেওয়া। কালো ধুতির চল সে সময় ছিল না। তাই সবার চোখই ছিল তার ওপর। নানারকম চাহুনি, যেমন “কি বোকা বোকা” “একি অদ্ভুত” “বাহ্ বেশ হাটকে তো” ছিল বটে। কিন্তু তাতে তাকে মোটেই অপ্রতিভ মনে হচ্ছিল না। বরং যেন একটু বেশিই স্বচ্ছন্দ। আর তাতে আড়চোখ আরও বেশি করে তাকেই খুঁজতে লাগলো। তার চোখ দু-একবার আমার চোখকে অ্যাকনোলেজ করেছিল বটে তবে খুব দ্রুত। ইতিমধ্যে এই পুরো সাইলেন্ট টেলিফিল্মটা কখন যে আমার ভাই ট্র্যাক করতে শুরু করেছে জানি না। মালা–‌বদলের ভিড়ে আমার কানের কাছে এসে বললো, “লাভ নেই। এনগেজড। আমাদেরই কোচিংয়ের মেয়ের সঙ্গে” । ড্যাম। চুরি করে ধরা পরে যাওয়া, তাও আবার সে চোরাই মাল যদি অকেজো হয়। ফিলিংসটা ঠিক কেমন হয় বলুন তো! যাক চোখাচুখি নিয়ন্ত্রিত হল তখুনি। সোনু নিগম হয়ে বিড়বিড় করলাম, জানা নাহি থা পিয়ার কি গলি মে।
===============
প্রায় ৭-৮ মাস পরে, অক্সিজেনে তখন পুজো পুজো গন্ধ। নতুন জামার মসমস, নতুন জুতোর ফোস্কা, পুরনো বন্ধুর হইচই, পুরনো রেস্টুরেন্টে নতুন মেনু, সব চলছিল নিজের তালে। উলটোদিকের টেবিলে আমাদের মতোই আরেক দল, একইরকম হুল্লোড়ে মত্ত। শুধু মুখগুলোই অচেনা ….. উহু একটা মুখ তো বেশ চেনা। আরিব্বাস। নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতি যে। আজ সাদা শার্ট নীল ডেনিম। আর সঙ্গে সঙ্গেই মাথা বলে উঠলো, “না না, আর ও পথে না”। ব্যাস সোনু নিগম হয়ে বিড়বিড় করলাম, জানা নাহি থা পিয়ার কি গলি মে। কিন্তু ওপার থেকে ফোর জি নেটওয়ার্কের মতো শক্তিশালী চোখ যেন আমাকে ফলো করছে মনে হল। ইগনোর করতে, আরও বেশি করে মন দিলাম বিরিয়ানিতে। সবে দু-চামচ মুখে দিয়ে বিরিয়ানিতে মেডিটেশন শুরু করেছি, ওমনি “হাই, ডু উই নো ইচ আদার ….. ” সাদা শার্ট নীল ডেনিম আর তার দলবল, চোখের সামনে। কতক্ষণ হা করে ছিলাম মনে নেই। বাকি কী বলে গেল, মনে নেই। আলাপচারিতার শুরু। সুতপা কনুই-এর গুঁতো মেরে বলেছিল,”এই সেই? খবরদার। এনগেজেড কিন্তু।” এরকম সাবধান বাণী শুনে মনে হল, যেন ও সাবধান না করলে আমি যে কোনও মুহূর্তে সাদা শার্ট নীল ডেনিমকে জড়িয়ে ধরবো। আশ্চর্য্য। তা সেই সাবধানবাণীর ঠেলায় বা বিরিয়ানি কন্সেন্ট্রেশনে বাঁধা পড়ায়, আলাপচারিতাতে কন্সেন্ট্রেট করতে পারিনি। আমি মূলত শ্রোতাই হলাম। শেষে অবাক করে দিয়ে সুতপা হঠাৎ নবমীতে ম্যাডক্স স্কোয়ারের প্ল্যান বানিয়ে বসলো। সুতপাকে বুঝতে পারে কার সাধ্যি! আবার দেখা হওয়ার এক্সাইটমেন্ট যে আমার মধ্যে একেবারেই ছিল না তা বলা ভুল। মাস্কারা লাগালাম একটু ঘন করেই। না না, আর কিছু না। একটা প্রেজেনটেব্‌ল লুক তো দরকার, নাকি! তবে সুতপা-বুবাই দের সঙ্গে বেরোলে কেন এ কথা মনে হয় না! ওরা ছোট্টবেলার বন্ধু বলে! ম্যাডক্স স্কোয়ারের আড্ডা তখন চরমে, সাদা শার্ট নীল ডেনিম আমার কানে ফিসফিস করে বললো, “হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে। কাল একবার লেকে মিট করা যায়? সেই বিয়ে বাড়ি থেকে ট্রাই করছি। না বললে শুনবো না কিন্তু।” হার্টবিট ১১০। আচ্ছা এমন বুক চিনচিন করে কেন বলুন তো যখন মাথা আর মন ঝগড়া করে? মাথার শত অ্যালার্টকে মিথ্যে করে, দেখি না কী বলতে চায়, শুনতে মন চলল দশমীর বিকেলে, লেকের ধারে। পৌঁছনোর দু-কিলোমিটার আগেই এসএমএস, “নাহ সামনাসামনি বলার সাহস নেই। অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে। ক্যান ইউ হোল্ড মাই হ্যান্ড? ফর লাইফ?” মোবাইল থেকে চোখ তুলে মনে হল আশেপাশের কিছু লোক হা করে দেখছে আমায়? খেয়াল করলাম আমার মুখটা এক গাল হাসিতে ভরে গেছে কখন, আমার অজান্তেই! অক্সিজেনে এখন নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতির গন্ধ। আশেপাশে লুকিয়ে আমায় দেখছে না তো? বাড়ি ফিরে ভাইকে একটা কিল মারবো ভাবছি।

Monday, 30 October 2017

ফিউচার

ফিউচার

- তাহলে কি.....
- হ্যা আর কোনো ফিউচার দেখছি না। শুধু শুধু একে টেনে বেরিয়ে লাভ কি?
- সবই তো ঠিক ছিল শ্রী। হঠাৎ কি হলো?
- তোমার আর আমার মধ্যে এতো ফারাক। এডজাস্ট করা সম্ভব কিন্তু তার একটা লিমিট আছে তো নাকি?
- খেতে খেতে ঢেকুরটা তো আজকাল একটু কমই হয়। হয় না?
- উফ ওটা তো মাইনর। কুঁজো হয়ে হাঁটা টা আর নেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সময়-অসময়ে কথার খেই হারিয়ে ফেলা। পরশু রাতে ফোন করতে করতে হঠাৎ চুপ। কত কথা বলে যাচ্ছি আমি একা একাই। শেষে আওয়াজ নেই দেখে কেটে কল করি। তারপর বুঝলাম, ঘুমিয়ে পড়েছিলে। মানে হাউ ডেয়ার ইউ! যাক গে যাক আজ ঠিক করেছি আর মাথা গরম করবো না।
- বলছি যে, একটি বার আমার কথা শোনো। আমি কথার খেই হারাবো না। মানে যেই খেই হারিয়ে যাবার সিগন্যাল পাবে, আমাকে একটু চোখ মেরে দিও বা হাত টিপে দিও। আমি বুঝে যাব। কথার খেই, দড়ি, তার, পাইপ যা পাবো ধরে উঠে আসবো ঠিক মেন লাইনে। আসলে তুমি না থাকলে খেই-খৈ সবেতেই তো জল থৈ থৈ। ঠাঁই পাই কোথা বলতো। আর ঘুমের কেসটার সমাধান আছে।
- আছে?
- হ্যা গো। কলেজেই কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেবো না হয়। ক্যারাম আর উনিয়নের টাইমটার সাথে এডজাস্ট করে নেবো। স্যার শাস্তি দেবে দিক। বন্ধুরা ত্যাগ করবে করুক। ও দুঃখ তবু সহ্য হবে। কিন্তু তোমাকে ছেড়ে থাকার দুঃখ, সারাজীবন তোর্তুগিলা দ্বীপে একা থাকার মতো হবে গো। তুমি ত্যাগ কোরো না গো। ট্যাগ করে রেখো। পিনপোস্টের মতো।
- প্লিস। রাস্তায় মেয়ে দেখলেই যে চোখটা ড্যাবডেবিয়ে বেরিয়ে আসে। জিভটাও। তার বেলা? ঐটাই মেন রিজন। আমি তো আর গরু চড়াতে তোমার সাথে হাঁটি না যে সারাক্ষন তোমার দিকেই নজর রাখবো। আর কি ইরিটেটিং! তুমি একটা পারভার্ট। বিকৃতবুদ্ধি। নাহলে রাস্তায় মেয়ে দেখে এরকম করো!
- বটেই তো। বটেই তো। গরু চড়াবে কেন খামোকা। কিন্তু তুমি তো পয়েন্টটাই বোঝোনি এতদিন আর আমাকে ভুল বুঝে এসেছো, এহ হে এহ হে এহ হে।
- কিসের পয়েন্ট? দাঁত বার না করে বলে ফেলো।
- ব্যাপারটা হলো যে, দ্যাখ তুমি হলে আমার রত্ন। মানে তোমাকে পেয়ে আমার সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে। মানে তুমিই আমার ডেসডিমোনার সুরেলা গলা, তুমিই আমার "হামদাম সুনিও রে", তুমিই আমার "টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন, টু ফোর ফোর ...."
- একেবারে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেব কিন্তু, ভনিতা না করে বলবে?
- ঐটাই তো মানে সংক্ষেপে এই যে, তোমাকে সাথে নিয়ে হাঁটি যখন, ওরা দেখনি কিরকম হাঁ করে থাকে!! তাই ওদের আমি ইয়ে মানে....
- কি বলো?
- ওই মুখ ভেঙ্গাই। জিভ বের করে, এ এ এ এ। আর চোখ আর জিভের কানেক্শনটা তো জানোই। জিভ বেরোলেই দেখবে চোখটা বড়ো হয়ে যায়। ওই "জিম ক্যারি" ইন "দি-মাস্ক" এর মতো আর কি। কি যে প্রশান্তি কি বলবো তোমায়।
- য়্যা মানে? ওরকম বাঁদরের মতো?
- এএএই এক্কেবারে ঠিক বলেছো। বাঁদরের মতো ভেঙ্গিয়ে সারা পৃথিবীকে জানাতে চাই,"পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি, ফিং দিয়া দিই তিন দোল, আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা  ...."
- আচ্ছা আচ্ছা। বুঝেছি।
- বুঝেছো?
- হুঁ।
- (ভয়ে ভয়ে) কি?
- একটু এডজাস্ট নাহয় করেই নেবো। ছেলে তুমি মন্দ না।

Monday, 23 October 2017

আজ হয়ে গেলো একচল্লিশ

-ও এম জি! দিস ইস ড্যাম অসাম ইয়ার। এটা বট না অশ্বত্থ?
-অশ্বত্থ গাছ। খুব পুরোনো হবে। বাড়িটাকে পুরো জাপটে ধরেছে। হে হে যেন বাড়িটা ওর প্রেমিকা।
-তুই এই দেখছিস? আমি ভাবছি, প্রোপার্টিটার কি বিচ্ছিরি অবস্থা। নিশ্চয় ছেলে-মেয়েরা সব আমেরিকা-লন্ডনে। আর কোর্টে কেস চলছে। হিয়ারিংয়ের ডেট পিছোচ্ছে। সেম ওল্ড স্টোরি।
-ধুস। তুই আনরোমান্টিক। আমার মতো করে ভাবলেও তো পারো দেবী ফর আ চেঞ্জ। শিকড়-এ একটা আর্ট আছে, দেখ। লুক্স লাইক একটা মেয়ের এলোমেলো সাহসিনী চুল।
-আমার তো মনে হচ্ছে একটা নাম্বার, সামথিং লাইক থার্টি নাইন?
- হে আমার আনরোমান্টিক, সংখ্যাতত্ববিদ দেবী, আপনি এর মধ্যে কোর্টের কেস আর সংখ্যা ছাড়া আর কিছু পেলেন না দেখে নিশ্চিন্ত হলাম।
- নিশ্চিন্ত কেন?
- বিয়ের পর সংসারের জমা-খরচের রেসপনসিবিলিটি তোমায় দিয়ে আমি মাতবো আপন তালে।
- স্যাট আপ।
- আচ্ছা আচ্ছা, যাক ফটো তুলে নি কি বল। রাতে একবার আসবো। বিউটিফুল একটা ক্যাপচার হবে এক্সপেক্ট করছি।
-এই, আজ কি রে? পূর্ণিমা না অমাবস্যা?
-ওহ গস। কাম অন। আমি কি বলছি, আর তুই কি বলছিস! আই ডোন্ট নো ইয়ার, পূর্ণিমা না অমাবস্যা। কাল রাতে কালীপুজো গেলো। নিশ্চয় অমাবস্যা হবে। রাইট?
-দিদা বলতেন, অমাবস্যার রাতে বট বা অশ্বত্থ গাছের তলায় যেতে নেই!
-ডোন্ট টেল মি, সেটা তুই বিলিভ করিস আজও। প্লিস লেট্ মি কন্সেন্ট্রেট। আজ রাতে আসছি। একটা ফাটাফাটি ক্লিক তোমাকে উপহার দেব বেবি।
=======================
"আজ কি অপরূপ সাজ তোমার হে পৃথিবী
অশ্বত্থে আজ লেগেছে হাওয়া, উত্তাল মাধবী।
হা হা হা হা। আজ অমাবস্যা। অশ্বত্থের আজ কামনা জেগেছে, আবার। আবার সে আজ মহাতরঙ্গময়। যেমন হয়েছিল আজ থেকে ষাট বছর আগে। পাতায় পাতায় কেমন ইশারা। ডালে ডালে চলেছে সর্বনাশা খেলা। শিকড়গুলি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। উদ্দণ্ড শক্তি চেপে বসেছে ওতে। আজ কি নেশায় মেতেছে যেন। গুণে দেখেছো উনচল্লিশ। সেই উনচল্লিশটা খিদে মিটিয়েছিলো অশ্বত্থ একে একে উনচল্লিশ তাজা প্রাণে। আরে আরে এ ছেলে-মেয়ে দুটি কোথায় যায়? ওদের আটকাই কিভাবে। এই কি বিধাতার ইচ্ছে? আজ কি আবার? আবার? না, না ..."
=========================
-এই পিনটু দেখ দেখ, অশ্বত্থ গাছটা কিরকম বেড়ে গেছে এক রাতে?
-আরে ও সব ওরকমই। বাড়িটা কোনদিন ভেঙে পড়বে, দেখিস।
-এই দেখ দেখ, শিকড়ে এমন জড়িয়ে আছে, যেন কি একটা বোঝাতে চাইছে।
- ওই আবার। আবার সেদিনের মতো। আজ কি সংখ্যা? নাকি আজ তোকে ডাকছে, বলছে, দোল খাবি? হ্যা? হা হা।
-আরে ইয়ার্কি না। সত্যি দেখ, শিকড়গুলোর আঁকাবাঁকা পথ গুলো দেখ। কিরকম একটা যেন লাগছে। মম ... ওই চার আর এক দেখ দেখ একচল্লিশ। একদম যেন একচল্লিশ। ও ও ওই ও ও ওই কিছু শুনতে পাচ্ছিস? একটা চিৎকার? কেউ যেন কিছু বলতে চাইছে?


-ধুর ভাই। চল তো যত্তসব। এই সেদিন বলি উনচল্লিশ। আজ হয়ে গেলো একচল্লিশ। আবার চিৎকারও শুনছিস? তুই কবিতা লেখ না হয় ডাক্তার দেখা। হা হা। এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? ধুর। শোন। সামনের অমাবস্যায় রাতে আসবো দুজনে কেমন? কিচ্ছু ভয়ের নেই। একবার রাতে এখানে এসে বসবো, দেখবি ভয়-টয় সব হাওয়া। কবে রে অমাবস্যা? পরশু?

Wednesday, 18 October 2017

১২ নম্বরের রচনা

"বৈচিত্র্য-র মধ্যে ঐক্য" এই ১২ নম্বরের রচনাটা সবার হেব্বি পছন্দের। "কমন পড়েছে, হুররে"।
গাছগাছালি, পাহাড়পর্বত, মরুভূমি এসব নিয়ে লিখলে মেরে কেটে ৬, তবে খাতা যিনি দেখছেন তাঁর জিভে জল আনা খাবার দাবার নিয়ে লিখলে ৯ নম্বর পাক্কা।
রাকাও মহা উৎসাহে পরীক্ষাতে রচনাটা লিখেছিল, বলেছিল জব্বর লিখেছে। নম্বর বেড়োতে রাকা কিরকম যেন হতভম্ভাইস্ড হয়ে গিয়েছিল, ১২তে পেয়েছিল ২। শুধুই কি তাই? টিচার-ব্যক্তিটি বাঁকা হাসি হেসে উচ্চস্বরে ক্লাসের মাঝে পড়ে শুনিয়েছিলেন ওর লেখা। সে কি কান্ড! মাথা নিচু করে ছিল রাকা। টপটপ করে দুফোটা জল পড়েছিল হাতে। আজ সবটা মনে নেই। তবে শেষ লাইনটা ছিল এইরকম, "ভারতবর্ষ-এর মানুষের মন সর্বাপেক্ষা বৈচিত্র্যময়। কালো রং-ওয়ালা মহিলা-জীব ভারতের রাস্তায়-হাটে-মাঠে-ঘাটে কুচ্ছিত-মহাঅশুভ, তবে পূজার মন্দিরে মূর্তি হিসেবে চলবে।"

(চরিত্র কাল্পনিক। বিষয়বস্তু কাল্পনিক কিনা, আপনারাই বলুন।)
(নিচের ছবিটি একটি শ্যামবর্ণা নারীর, যেন ঘরের মা লক্ষীটি, যাঁর অস্ত্র ওঠে অন্যায়ে।)

Saturday, 7 October 2017

থিমের প্যান্ডেল

রসিকবাবু ফাইনালি এবার হুপহাপ্ করে হপিংয়ে বেরোলেন, গিন্নিকে নিয়ে প্যান্ডেল। 
- বেহালা মন্দ কি। প্যান্ডেল সে তো আছেই। অশোকার মোগলাইও তো আছে। বেঙ্গল হোটেলের মটন কাটলেটও তো .... 
(গিন্নি কটমট চোখে)- বেরোতে না বেরোতেই খাওয়ার চিন্তা এসে গেলো, তাই না? বলি বিয়ের পর এই প্রথম তো নাকি। 
- আহা এতো হাটবে, শরীর টাকে রাখতে হবে না? তাছাড়া তোমার পছন্দের প্রচুর ডালডা ঢালা এগরোলও তো আছে- এগরোল ফ্রম হাজি, কি রাজি?
(গিন্নি) - সে পরে দেখা যাবে। চলো চলো, এতে ঢোক তো। কি সুন্দর প্যান্ডেলটা। এই কি থিম গো এইটের?
- দাড়াও বুঝে দেখি। ভিতরে চলো। ওকি কিছুই তো নেই। প্যান্ডেল কি কমপ্লিট হয়নি নাকি? সব তো ফাঁকা। নাকি চোখে দেখা যাচ্ছে না? বললাম কাটলেট খেয়ে ঢুকি। তাতে চোখ-মাথা সব ভালো খোলে। থিমের প্যান্ডেল বোঝা কি সহজ নাকি? নিড এলেম গিন্নি।
(সিকিউরিটি) - স্যার ওপরে তাকিয়ে দেখুন। টেবিল, চেয়ার, আলমারি সব ওপরে সাঁটানো। বুঝলেন না? এটাই থিম। যেন বাড়িটা উল্টে গ্যাছে।
(গিন্নি) - এই এই ওকি কি করছো, ওগো কে কোথায় আছো গো? এই এরকম শুয়ে পড়লে কেন? দেওয়াল বেয়ে কি করছো?
রসিকবাবু ততক্ষনে দেওয়াল বেয়ে মাথা নিচে, পা ওপরে।
- আহা আহা গিন্নি এইবার থিম টা বোঝা যাচ্ছে। থিমের নাম "শীর্ষাসন"। ঠিক বলেছো গিন্নি, আগে থিমের প্যান্ডেল, তারপর কাটলেট। না হলে এতক্ষনে কাটলেট মাথায় চড়তো।


নিকো পার্কের বাপীদা

লোকজন বলছিল, ওটা নাকি একোয়ারিয়াম।
দুর্গাপুজোতে একোয়ারিয়াম!! ও ফিশ!!
কাছাকাছি হতেই বুঝি একোয়ারিয়াম নয় হে। এ হলো মরীচিকা, ফুল অফ ফুচকা।
বাংলার বুকে ফুচকা সারভাইভিং ফ্যাক্টর। এনার প্রভাব অনস্বীকার্য।
#বাড়িতে ডিনার না হলে ফুচকা।
#ছেলের এক্সাম পরশু থেকে, টেনশনে ফুচকা।
#অফিস ফেরত, গৃহযুদ্ধের প্রাক্কালে দশটাকার ফুচকা।
#স্কুললাঞ্চ ডাস্টবিনে, গেটের বাইরে হাত বাড়িয়ে ফুচকা।
সে আরও কত কান্ড।
তা এই ফুচকা দোকানি ফুচকা দোকানি পাক্কা মার্কেটিং এনালিস্ট। মার্কেট ডিমান্ড ভালোই বুঝেছে, তাই এনাফ সাপ্লাই নিয়ে হাজির। এনাফ বলে এনাফ। শুধু কোয়ান্টিটি দেখলেই যে হবে না তাও বুঝেছে, তাই মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কম নাকি? দেখুন না কি অফার করছে  আপনাকে। দই ফুচকা তো আঁতিপাতি। এখানে পাওয়া যাচ্ছে চাটনী ফুচকা, জেলি ফুচকা। আমি ঘাড় উঁচু করে খুঁজছিলাম মটন ফুচকা বা রাবড়ি ফুচকা গোছের কিছু। মানে ঘেটে ঘ যখন হচ্ছেই, তখন ড্রিম বিগ।

"জেলি ফুচকা জিনিসটা কি বাপিদাদা", জিজ্ঞেস করতেই, মায়াবী চোখ তুলে জিজ্ঞেস উনি বললেন ,"আমি বাপি নই,  ঝাল বেশি না কম? জল দিয়ে না শুকনো? এই নিন বাটি"

নিকো পার্কের এরকম একটি বাপীদা না হলে দুর্গাপূজাতে টিনেজার রা বলবে কি করে,"ইটস ক্রেজি ইয়ার"


Tuesday, 3 October 2017

বাঁশ

"বাঁশ" শুনলেন কি ব্যাস অমনি সব ভয়ে ভ। বলি বাঁশকে ভয় পান কেন? আরে মশাই, বাঁশ তো আর নিজে নিজে ভয় দেখায় না। যত্তসব। বাঁশ-ক্যারিয়ারদের ভয় পাওয়াটা বরং লজিকাল। বাঁশ-ক্যারিয়াররা বাঁশকে অন্য-এর ওপর ইউস করলে, তাতে বাঁশের কি দোষ বলুন তো? বেচারা নির্ভেজাল শান্ত বাঁশটি। এভাবে ওকে ভয় পেতে থাকলে আর খিল্লি ওড়াতে থাকলে একদিন যে বাঁশ বাবাজি নিজেই ভয় দেখাতে হামলা করবে না, সে গ্যারান্টি নেই কিন্তু। বাঁশ বলে কি, আত্মসম্মান নেই নাকি! ভাগ্যিস পুজোর প্যান্ডেলে বছর বছর তার একটু সন্মান প্রাপ্তি হয়। না হলে ওনাকে বাগে আনা মুশকিল ছিল। এবারের পুজোতে বাঁশ বাবাজি হেব্বি হ্যাপি সুরুচি সংঘ-এ। তার মেক ওভার আগেও হয়েছে বটে তবে এখানে লুকটা জাস্ট ফাটিয়ে। তৈরী হয়েছে বাঁশ-মানুষ। উচ্চতায় সাধারণদের দু-গুণ। সিক্স প্যাক, বাই-ট্রাই সেপ্স, চেস্ট, মানে একেবারে জমে রাবড়ি। মানুষ-মানুষ সেজে বাঁশের সে কি ঝিং-চ্যাক হাবভাব! সাধারণ মানুষ যখন ভিড়ে গুঁতোগুঁতি করে, ঘাড় উঁচিয়ে, হা করে, শুধু ঢোক গিলছে, বাঁশবাবুর কি মজা। মনে মনে হেব্বি হেসেছে। সে এক কান্ড বটে।

পুনশ্চ: বাকি সবাই যেমন তেমন বাঁশ সামলেছে। কিন্তু অসুর টেনশনে সবুজ হয়ে গেছে। যতই হোক ভিলেন, যতই থাকুক ত্রিশূলের গুঁতো, যতই কামড়াক সিংহ, ফিজিক এর দিক দিয়ে একটা ফেভারেবল পসিশন তো তার ছিল এতদিন নাকি! সেটাকেই চ্যালেঞ্জ? দু হাত তুলে বলছে, "কি বাঁশ। কি বাঁশ"


এই উইকেন্ডে দেখা করবে?

বং-রা বলেন, রবিঠাকুর-মান্না-কিশোর নিয়ে বাঙালি ন্যাকাপনা লেবু চটকে একেবারে তেতো। শুধুই কি বলেন? কোনো কোনো সাহসী বং এগিয়ে এসে নতুন লেবু প্রোডিউসও করতে চান। গিটার-ক্যানভাস-বাংলা কিবোর্ড এপ্লিকেশন, অস্ত্র-সস্ত্র যা সহজে পাওয়া যায়, নিয়ে এগিয়ে পরেন। ফেসবুকে পেজের পর পেজ বাড়ে। ইউটিউবে চ্যানেল এর পর চ্যানেল। দুদিন যেতেই অস্ত্রে ভ্যাজাল বেরোয়। কিন্তু ব্রহ্মাস্ত্র নেই বলে পিছিয়ে যাওয়া? উহু নাহ। বরং এর ওর বাগান থেকে লেবু চুরিটা বেটার। তাই শুরু হয়। তাতে পৃথিবী বদলায় না। উল্টে ঘড়ির কাঁটা বদলায়। কিছুতেই আকাশের রং সবুজ আর গাছের রং নীল হয়না। এইটা মোটামুটি চলে ধরুন এই বয়স ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ অব্দি। কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে এরপর তারাই আবার নিজেরাই লেবু চটকানোতে ফিরে আসেন। বা ঢাউস গদিতে এক পা আর একটির ওপর তোলার চেষ্টা করে হুইস্কী-র গ্লাসে সুপ করে চুমুক দিয়ে "ধুর শ্লা বাঙালি" বলে নিজের জীবনপথের যত-সমস্ত পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে নেন। একে বলে চক্র। লেবু চক্র।
ভাত-ডাল থেকে via ইডলি-সাম্বার বাঙালি পাস্তাতে সহজেই আস্থা পেয়েছেন। ধুতি থেকে via বলিউড বাঙালি হলিউড ডুড হয়েছেন। তাতে কি। আর একটা রবীন্দ্রনাথ জন্মালে ঠিক যে আবার ইউ-টার্ন মারবেন, সে মনে মনে জানা। ঠান্ডা ঘরে মিটিংয়ের পর মিটিং শেষে, ইংরিজি কপচে, দুহাত দিয়ে মাথা চেপে যখন ল্যাপটপ স্ক্রিনে তাকিয়ে। হঠাৎ হোয়াটসাপে টুং। "তুমি যে শিশির বিন্দু মম কুমুদির বক্ষে না হেরিলে ওগো তোমারে তমসা ঘনায় চক্ষে।"। ম্যাজিক কাজ করে না বলুন? গায়ে বাঙালি কাঁটা গুলো সোজা হয়ে বলে ওঠে "ওহ, শ্লা বাঙালি", হাতের আঙ্গুল গুলো মাথা থেকে নেমে ওই পুরোনো বাংলা কিবোর্ডে টাইপ শুরু করে, এমনি এমনি,"আমি যামিনী তুমি শশী হে ভাতিছ গগন মাঝে, মিস ইউ। এই উইকেন্ডে দেখা করবে?"

Independence Day

রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে যারা পিক করে কালারফুল বা কালারলেস থুতু ফেলেন, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
সম্মানজনক দূরত্ব না রেখে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একেবারে ঘাড়ের ওপর উঠে পরতে চান, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
পাবলিক সিট্, চেয়ার-এ আঁচড় কেটে অমুক+তমুক লেখেন যারা, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
কান ফাটিয়ে অকারণে যারা হর্ন বাজিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে চলেছেন, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
রেষারেষি করে গাড়ি চালিয়ে "Dhoom" এর অডিশন দিচ্ছেন যারা, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি। 
বাসে বসে যেসব মায়েরা বাচ্চাকে কনুইয়ের গুঁতো দিয়ে চানাচুরের প্যাকেটটা "ফেলে দে না জানলা দিয়ে" বলেন, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
নিজে না এগোতে পেরে যারা এগিয়ে যাওয়া মানুষটাকে পিছনে টানতে চান, তাদের কাছ থেকে আমি শিখি।
এরা শিক্ষক, প্রতিমুহূর্তে লাইভ ডেমো দিয়ে, নিজেদের মনুষ্যত্বকে ঘুষি মেরে, পাঁকে হাবুডুবু খেতে খেতে শেখাচ্ছেন। ওনাদের ধন্যবাদ দিয়ে ও পাঁক থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা ধরুন। খুব সহজ তো, ওনারা যে রাস্তায়, ক্রস করে উল্টোটা ধরুন। ব্যাস।

জিভে "ধাপ্পা"

"সব পেলে নষ্ট জীবন" অনুপমদা আগেই বলেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আর তাছাড়া বাঙালিরা আবার কো-বাঙালিদের কথা বিশেষ মনে ধরেন না। পশ্চিমীদের কথাকেই ..... ওই আর কি আপ্তবাক্য বলে ধরেন। 
কাচের ভিতর ঠান্ডাঘরে ১০ খানা ইয়া লম্বা লম্বা চোঙ পাশাপাশি সাজানো। তাতে একটাতে হলুদ, নিচে ছোট্ট স্টিকারে লেখা "ম্যাংগো"। ও মা গো! পাশেরটা সাদা, "পিস্তাসিও"। জিও। তারপরে "ভ্যানিলা", "রাম-রেসিন", "চকলেট", "স্ট্রবেরি", "রাস্পবেরি" আরও সব মিলে লাল-নীল-হলুদের মেলা বসিয়েছে। জিভ আন-কন্ট্রোলেবল। কোনোরকমে ঢোক গিলে গিলে সামাল দেওয়া। চোখ বাঁ থেকে ডানে যায়। মন বলে "লুটে নে, লুটে নে"। দড়াম করে অমনি মাথা থ্র্যাটেনিং দেয়,"ওহে টোয়েন্টি টু পার্সেন্ট ফ্যাট"। ভ্যাট, এই হাতছানি ইগনোর করা যায় নাকি? একটা তো নেবোই। চোখ নাচতে নাচতে এগোতে লাগলো। থামলো একটা হালকা নির্ভেজাল অলিভ সবুজে। নিয়েই নেওয়া গেলো, এক স্কুপ। জিভকে বইতে দেওয়া গেলো "আমার খোলা হাওয়া"। মাথাকে রেস্ট দেওয়া গেলো "তিষ্ঠ ক্ষণকাল"। মন-প্রাণ এক করে চামচে অমৃতাংশ তুলে স্ট্রেইট জিভে চালান করা গেলো। চনমনে ঠান্ডা মুখের ভিতর কাবাডি কাবাডি খেলতে শুরু করেছে সবে .... আহা। হুট্ করে হঠাৎ কে যেন জিভে "ধাপ্পা" বলে দিলো। "ধাপ্পা আ আ আ আ"। এমন টেস্ট, কেউ যেন রেগে ঘাস সিদ্ধ খেতে দিয়েছে। সান্তনা হিসেবে সেই সিদ্ধতে মিষ্টি দিতে ভোলেনি যদিও। এহে একিরে। শেষে মিষ্টি ঘাস! দৌড়ে যাওয়া চোঙ-এর কাছে। দেখা গেলো হালকা নির্ভেজাল অলিভ সবুজটির স্টিকারটিতে লেখা "গ্রিন টি"! জিভ চিৎকার করে ওঠে,"হে পাপাত্মা, পাষন্ড, পাপিষ্ঠ, দুরাত্মা ..... "
"সব পেলে নষ্ট জীবন" অনুপমদা আগেই বলেছেন......
অত কিছু ছেড়ে গ্রিন টিতে চোখ আটকানোর পিছনে যড়যন্ত্রটা কার সেটা ভেবে কিছুতেই উত্তর পাওয়া যায়না। কাচুমাচু চুপ মেরে থাকাই সেফ। তবে জিভ কিন্তু গালাগাল দিয়েছে উচ্চ ভাষায়। সেইটে অগ্রাহ্য করলে চলবে না। জিভের এই শালীনতার পিছনে কি ওই গ্রিন টির হাত আছে?

দেবীকে চক্ষুদান

পূজার বেদীতে বসা দেবীকে যেমন ইচ্ছে সাজাতে পারি, বলেই কি তার প্রতি এতো যত্ন? এতো মন আকুল করা ভালোবাসা?
না হলে, রক্ত-বুদ্ধি ওয়ালা জীবের প্রতি এতো অন্যায় কেন? তাদের বুঝি যেমন ইচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করা কিঞ্চিৎ দুস্কর? 
কাউকে বেশ করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার মধ্যে মনের জ্বালা মেটানো তৃপ্তি আছে একরাশ, তাই না?
যে দেশ কাউকে স্বচ্ছন্দ-স্বাধীন হতে দেখতে পারে না, সে "দেশ লয় গো কত্তা, দেশ লয়। সে দেশলাই, ভিজে দেশলাই। ক্ষুদ্র, সংকীর্ণ, ক্ষমতাহীন।" 

কুমোরটুলিতে আজ দেবীকে চক্ষুদান করা হচ্ছে, দেখুন দেখুন দেবী হাসছেন। এই দেশের অন্তরে চক্ষুদান কবে হবে?

গোলবাড়ি

এক প্লেট মটন কষা। এক প্লেট মটন কিমা। সাথে পরোটা। ব্যাস এইটুকুই। 
তাং মাত কারো। 
বাকি কিছু মনে নেই, মশাই। মনে থাকার কথাও নয়। মেডিটেশন -এ কতটা কন্সেন্ট্রেশন লাগে, সে যারা করেন তারা জানেন, বোঝেন। মনপ্রাণ এক করে চিন্তন-মননকে ভাসিয়ে দিয়ে তবেই তো আধ্যান। গাঢ় খয়রী রং আর তেলের ভাবাবেগের মাঝে সে আধ্যান তখন পিকে। আমির খানের পিকে নয়। ইংরিজি পিকে। মানে শীর্ষ-এ। ঘোর কাটল যখন সামনের প্লেটে লেগে তেলের বিন্দু। হাত ভার্টিক্যালি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আঙ্গুল চেটে ফিনিশিং টাচ চলছে তখন, কানে ভেসে এলো,"গোলবাড়ি কেন গোল নয়", "গোলবাড়ির কেন কোনো শাখা নেই", "গোলবাড়ি কেন এতো ঘিঞ্জি", "গোলবাড়িতে কেন এসি নেই", "গোলবাড়ির মেনুতে অপসন এতো কেন কম".
হে মহাজীবন .....
নাহ মানুষের দেখছি কন্সেন্ট্রেশনের খুব অভাব। মটন কষাকে সামনে পেয়েও ফোকাস করতে পারছে না। হৃদয়বিদারক এ ঘটনার আঘাত সামলাতে, প্রতিবাদ স্বরূপ কালো কাপড়, না না কাপড় নয়, ওই কালো রগরগে মটন কষাই ওই আর কি ইয়ে এক প্লেট অনলি, সাথে মটন কাটলেট আর মটন চাপ প্যাক করানো গেলো। এ শুধুমাত্র জাতির উদ্দেশ্যেই। প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে।


পুজোর দিনগুলিতে নিরামিষ

- এহ!! পুজোর দিনগুলিতে মাংস!!
- আরে পিঁয়াজ-রসুন নেই তো!!
- ওহ নিরামিষ বুঝি। দাও তো পাঁচ পিস্। চর্বিওয়ালা দিও বুঝলে।

Monday, 28 August 2017

সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপর নাই

"সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই"
- য়্যা? কে বললো?
- ইয়ে আমি
- আমি কে?
- আমি ক্রো, ব্রো।
- (ভুঁরু উঁচিয়ে) অ তুমি? তা আমি কারো ব্রো নই। তবে আপাতত তুমি আমার লেফ্ট আই ব্রোয়ের ওপর থেকে ঠোঁটটা সরাও বাছা। 
- উপস সরি। বলছি আপনিই কি সেই? মানে দি অলমাইটি? দি খ্ৰীষ্ট।
- মমম সেই রকমই তো জানতাম। তো হঠাৎ এই ভর দুপুরবেলা, আমাকে বাটারিং? কি চাই হে?
- ধুস, কি যে বলেন, খ্ৰীষ্টদা। একটা প্রশ্ন খুঁজতে খুঁজতে সেই দূর নিকো থেকে ইকোতে এসে হাজির।
- বটে। নিকো আর এমনকি দূর? ওই তো সেক্টর ফাইভ …
- আরে আমি কি আর ওলা-উবের করে এসেছি? এর কাঁধে, ওর মাথায় ভর করে, নৌকো চড়ে, সাঁকো বেয়ে তবে না....
- আচ্ছা হয়েছে।, এবার প্রশ্নটা বলে ফেলো।
- সেরকম কিছু না, তবে আবার সেরকমই। মানে যার কাছে যেরকম। তো উইদাউট মাচ বকমবকম, প্রশ্নটা হলো,"সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই", ইহা কি সত্য?
- বটে। কলকাতার ঘাম চ্যাটচ্যাটে দুপুরবেলা হিসেবে প্রশ্নটি নিতান্তই বিরক্তিকর। তবে ক্রোয়ের মুখে এরকম প্রশ্ন আগে থ্রো হতে দেখিনি। তাই আমি যাইপরোনাই আপ্লুত। তা হ্যা কথাটি সত্য হে।
- ও মানে একেবারেই মিথ্যা করা যায়না? সেই ঈশপের সময় থেকে ছেলেপুলে আমার রেফারেন্স নিয়ে নিয়ে ডাক্তার-ইঞ্জি হয়ে গেলো। আর আজ এতো ওপরে বসেও আমায় শুনতে হবে সবার ওপরে ওই ওরা?
- দেখো হে, এটাই বলবো তুমি ভায়া অনেক সেফ।
- সেফ?
- ইয়েস। ওপথে মোটেই পা বাড়িও না। দেখছো না "সবার ওপরে মানুষ সত্য" শুনে পাবলিক গুলোর হাল কি হয়েছে? খেলা শুরু করেছে নিজেদের মধ্যে। কে সত্য, কে ওপরে, সেই নিয়ে লাঠালাঠি শুরু করেছে। ওই ওই দেখো সমস্ত রকম অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়েছে। সাহিত্য? লালিত্য? বাচস্পত্য? পাণ্ডিত্য? সব নিয়ে। তার চেয়ে বরং এই ওপর থেকে সেফ খেলা দেখে যাও ভায়া।
- ওরে ব্বাবা। তাই তো। আপনার ওপর এই এদের দ্বায়িত্ব ভেবে আমার নিজেকে বেশ ফ্রি বার্ড লাগছে। মানে সেটাই ছিলাম। আরও ফুরফুরে লাগছে। এখন মনটা বেশ হালকা লাগছে। বেশ একটা উপলব্ধি হচ্ছে।
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপর নাই,
আর

বেশ উঁচু স্ট্যাচু পেলে, আমি টপ ভিউটা পাই।
 

Friday, 18 August 2017

প্রতিযোগিতার নাম হলো .....

আরে ভায়া, বিকেলে পারফরম্যান্স, হ্যা হ্যা অন স্টেজ। তা সেলেব্রিটি সময়ের একটু আগেই এসে পড়েছেন। এসেই লাজুক মুখে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে একটু রেস্ট নেওয়ার প্রস্তাব রাখলেন। একে তো ওই এত্তোওওওওও বড়ো সেলিব্রিটি তায় আবার জাস্ট একটু "বিউটি স্লিপ" এর রিকোয়েস্ট। কোনো অসুবিধা তো হয়ইনি। বরং আগে এসে পড়াতে স্টেজে ওনার সঠিক সময়ে উপস্থিতি নিয়ে কোনো রকম চিন্তাই রইলো না। আপ্লুত হয়ে ক্লাব একটা বেঞ্চ ইসিলি এরেঞ্জ করলো। উনিও দিব্বি ওতেই ভালোভাবে এডজাস্ট করে নিলেন। একটু রেস্ট চাই বৈকি। যতই হোক পারফরমান্সটা তো তাতে আরও জমবে, কারণ শুনেছি ঘুমলে নাকি উনি নাকি আরও বিস্তারিত হন! সেও চাক্ষুষ দেখার সুযোগ রইলো। মানে একেবারে জমে দই .... মানে হতো। জাস্ট একটা মাইনর প্রব্লেম। উনি যখন সবেই বেঞ্চে নিজেকে বেশ কমফোর্টেবল করে, হেমা মালিনীর মতো ড্রিমগার্ল চোখটা বন্ধ করবেন, ব্যাস ..... ওনার মালিক হাজির! ভাবুন, ওই এত্তোওওওওও বড়ো সেলিব্রিটি হয়েও ওনার ওপর হম্বিতম্বি করার এক মালিক আছে। কি দুঃখের কথা বলুন তো। তবে কি, ওনার এই এত্তোওওওওও বড়ো সেলিব্রিটি হওয়ার পিছনে ওনার মালিকেরই সমস্ত অবদান। তাই কিছু বলারও নেই। সেলেব্রিটির পুষ্টি-তুষ্টি-ইস্টি এমনকি সেলেব্রিটির সৃষ্টিও ওই মালিকেরই দয়ায়। তাই আর মুষ্টি বাগিয়ে ধরা হয়না মালিকের ওপর। মালিক লোকটা এমনি ভালো, কিন্তু এই সময় বিশেষে নিজেকে এমন প্রাধান্য দেন যে ওই সেলেব্রিটি ব্যাটাকে একদম পাত্তা দেননা। এমনিতে মালিক-সেলিব্রিটি এক আত্মা এক প্রাণ। কিন্তু কোথাও পৌঁছনোর ক্ষেত্রে সেলেব্রিটি আগে পৌঁছন। তা এই যে সেলিব্রিটি রেস্ট নিতে যাবেন বেঞ্চে, মালিক দেরীতে পৌঁছলেন। পৌঁছেই মালিক উইদাউট নকনক, ঠেলে গুঁতিয়ে ওই জায়গা নিজে দখল করলেন। বেদম ঠেলা খেয়ে সেলিব্রিটি বেচারা চোখ খুলে হড়কে একেবারে ঝুলে পড়ে-পড়ে। ভাগ্যিস ক্লাবের মেম্বারদের মধ্যে একজন ঘটনাটা একদম সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেয়েছে, সে তাড়াতাড়ি এসে সেলিব্রিটিকে দুহাতে তুলে ধরে। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবে। চিল চিৎকার করতে বাকিরাও এসে পড়ে। ওর ওই অবস্থা দেখে চটপট একটা তক্তা জোগাড় করে। তাতে এইযাত্রা রেহাই। আপাতত ওটাই ঠেকিয়ে রাখা। মালিক তো ততক্ষনে বেঞ্চে স্বপ্ন-সাগরে। গোলু-সেলিব্রিটি তক্তায়। ক্লাবের উদ্যোক্তারা আপাতত বিকেল অব্দি পর্যায়ক্রমে টহল দিচ্ছে। তক্তা সরলেই মুশকিল। মালিক-সেলিব্রিটি তো নিশ্চিন্তেই আছেন মনে হচ্ছে। ও আপনাদের প্রতিযোগিতার নামটাই বলা হয়নি, নাম হলো "ভুঁড়ি কত ভারী"।

Monday, 7 August 2017

"রাখী" তে কেউ "গুলজার" হচ্ছে না

আগের দিন যে চঞ্চল হাত গুলো "বাড়িয়ে দাও তোমার হাত আমি আবার তোমার আঙ্গুল ধরতে চাই" জানিয়েছিল, আজ তারা অদৃশ্য। অদ্ভুত তো!
"রাখী" তে কেউ "গুলজার" হচ্ছে না।
"রাখী" শুনলেই কেউ "পল পল দিল কে পাশ" ধর্মেন্দ্র হচ্ছে না।
উল্টে ছেলেগুলো সব ভাইরাস-এর মতো একেবারে নিকেশ হচ্ছে।
জন্মমাত্রই যদিও "রাখী" এন্টিভাইরাস-সম! ওই যে সংস্কৃত-তে রাখী শব্দের অর্থ "বন্ড অফ প্রটেকশন"। তাই .....
তা সে তো দুশমন-দমনে। শিষ্ট-দের ভয় কিসের? তারা পালাচ্ছে কেন?
ইতিহাস অনুযায়ী "রাখী" যত্রতত্র সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়েছে। এই যেমন ধরুন যুদ্ধ বাঁধলো রাজা-স্বামীর সাথে অন্য রাজার। স্ত্রী টিং টিং টি টিং করে বুদ্ধি বাতলে ফটাং পাঠিয়ে দিলেন "রাখী", ব্যাস বরফ গলে জল। (কে বলে, বাঙালিরাই শুধু ইমোশনাল। শুধু নিজেদের ভাও বাড়ালে হবে, হে বাঙালি?)। তা সেসব তো সব ওই উত্তরভারতে। পূর্ব-পুরুষদের ওসব কান্ড দেখে তারা আজকাল জোরকদমে "ভাইয়া-মেরে রাখী কে বন্ধন কো নিভানা"। বেশ কথা।
কিন্তু দি গ্রেট বেঙ্গলে যারা রবি-ঠাকুর বলতেই মূর্ছা যান, তারাও কি করে তালে বেতাল হয়ে পড়েন শুনি? যেখানে রবিগুরু হিন্দু-মুসলিম বন্ড-এর উদ্দেশ্যে রাখী-বন্ধন উদযাপন করছিলেন, সেখানে? অবশ্য যতই তিনি করে থাকুক না কেন, তা তখনই বিভাজন রুখতে পারেনি। আর আজ তিনি যখন শুধুই বাঙালির বসার ঘরের "টেগোর" হয়ে আছেন, তখন আর .... উহু কোনো শক্ত শক্ত কথা নয়। সোমবার এমনি বড়ো একগুঁয়ে। তাই আল্টিমেটলি "রাখী" একটা বন্ড। জেমস বন্ড। মজবুত জোর। টুটেগা নাহি।
অতঃপর ছেলে-মেয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই রাখী কিনুন, রাখী পড়ান। শুধু ভাই-বোন কেন? আজ ওই রিক্সা-চালককে রাখী পড়ান না কেন? পাশের বাড়ির ঠাম্মাকে রাখী পড়ান না কেন? বয়-ফ্রেন্ড, গার্ল-ফ্রেন্ডকেও পড়ান। বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে কেও পড়ান।
শর্ত একটাই।
কব্জির এপাশ ঘুরিয়ে সুতো ওপাশে নিয়ে যাবার সময়, জোরে জোরে বলুন, "ভালো থেকো, শুভ হোক"।
#রাখীবন্ধন #রাখী

Wednesday, 26 July 2017

এ জগতে হায় সেই বেশি চায় যার আছে ভুরি "ভুঁড়ি"

পূজোতে পুরুষদের জামাকাপড় কেনা? তার দ্বায়িত্ব ওনাদের। বৌ-দিদি-বৌদি মিলে চললেন শপিংএ। "XL" এ জাত যাবে। "L" তাদের কাছে তবু সহনীয়। কিন্তু ওই বিবাহিত পুরুষদের মধ্যপ্রদেশ যে মাত্রায় প্রভাবশালী, তাকে কি আর ওই এল-ফেলে আয়ত্তে আনা যায়?

জাস্ট একটা গর্ভাশয়! জাস্ট! ঐটা নেই বলেই যত তাচ্ছিল্য? দিলেই কি তা গর্ব ভরে গর্ভে স্থান দিত না পুরুষ? বীর হবার চান্সটুকুই দেওয়া হলোনা পুরুষদের। কিন্তু তবু নিজের শুধুমাত্র নিজের একান্ত পরিশ্রমে যে পরিমান মাল-মশলা ঠুসে টুসটুসে ভুঁড়ি টুকু বানিয়েছে তাকে একেবারেই পাত্তা না দেওয়া এবং রীতিমতো হেয় করা কি ভালোমানুষের কাজ? "L" মার্কা জামা-কাপড় কিনে এনে একেবারে বোল্ড এন্ড উন্ডারলাইন করে দেখানোর মধ্যে যে মানসিক অত্যাচার, তা কি সুন্দরীদের মানায়? সবথেকে দুঃখের কথা হলো, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও সময়মতো ঠুকে দিয়েছেন, এ জগতে হায় সেই বেশি চায় যার আছে ভুরি "ভুঁড়ি"। কি আর চাইলো পুরুষ! সবই তো চাওয়ার আগেই নারী হিসেবে টপাস ছাদনাতলাতে।
সেই নারীরাই এক হলে বরের ভুঁড়ি নিয়ে তোলপাড়।
আর ব্যাপারটা শুধু কি মানসিক-এই?
পার্থবাবুকে রোজ সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠানো? সেটা? জগিং করতে গিয়ে ওনার ওই ইয়ে টা যে ক্লিয়ার হয়না, সেইটা কে বোঝে?
ত্রিলোকবাবুকে কি একটা মেশিন এনে দেওয়া হয়েছে, সেটা বেল্টের মতো জাপ্টে নিতে হয়। তারপর সুইচ অন। তখন মনে হয় যেন কেউ ওনার সাথে "রজনীকান্ত" "রজনীকান্ত" খেলছে। আর রমেনবাবুর? ওনার গল্পটা শুনে যান। লুচি আর রসগোল্লা গিলে রমেনবাবু শুয়েছেন। হঠাৎ পেটের ওপর হেব্বি চাপ। ঘাড় উঁচিয়ে দেখেন, বৌ পেটের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন চারটি খন্ডস অফ রবীন্দ্ররচনাবলী, তারপর রেখেছেন নিজের বাহুবলী। ওই অবস্থায় যখন রমেনবাবু শুধু মুখ হা করে কিছু বলার চেষ্টা করছেন, বৌ ওনার দিকে তাকিয়ে ভারতনাট্যম চোখ নাচাচ্ছেন। ভেবে দেখুন অবস্থাখানা।

Wednesday, 19 July 2017

পোচ্চন্ড নেশা

এসেছি ..... আমি এসেছি .......দূর থেকে বহুদূরে- পথে পথে ঘুরে ঘুরে আমি এসেছি।
নেশা নিরাময় করাতে চাই ডাক্তারবাবু। পোচ্চন্ড নেশা আমার। গাঁজা-চরসের নেশা নয়। ওসব তো সেই বাচ্চাবেলার জিনিস। আর ড্রাগ শুনলেই ড্রাগনের ভয়। সেই একবার ড্রাগন-ওয়ার্স দেখতে গিয়ে সিনেমাহলে বন্যাপরিস্থিতি তৈরী হলো, সেই থেকে ড্রাগ-ওনে অনীহা। হেরোইনটা মমমম না ঠিক নেশা বলবোনা। ওটাও আয়ত্তে। আসলে আমার হিরোইনে নেশা। পোচ্চন্ড। তা সে যেকোনো হিরোইনই হোকনা কেন। সে নেশা বলবো কি মশাই, কি দুলুনি কি দুলুনি। সিনেমাহল থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারি না। এই মনে হয় সামনে নূতন। আপনি কি নতুন পড়লেন? উফফ আপনাদের এতো তাড়াহুড়ো না। নতুন নয়, নতুন নয়, নূতন, নূতন। ওই "দিল কা ভমর করে পুকার", পাড়ায় হুল্লোড় করেছিলাম, সারা পাড়া বালতি নিয়ে জল ঢালতে তবে সৎবিৎ ফেরে। আবার কখনো মনে হয় সামনে দীপিকা, ওই পাদুকোন। হ্যাঁ। "কাশ্মীর ম্যা, তু কন্যাকুমারী", নেশার চোটে সেবার তো ফুলদাদুর বিয়ের ধুতিই পড়ে পাড়া মাত করেছিলাম। তবে সেবার নাকি সবাই মজাই পাচ্ছিলো। ওই যেই ধুতিটা গুটিয়ে হাঁটুর ওপর তুলতে গেছি, ব্যাস "ও বাবাগো" বলে আবার জলের বালতি। পরশু একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। করিনার ওই রিকুয়েস্ট আর ফেলতে পারিনি। হ্যা মশাই কাপুর। ওনার ফটো কিনে বুকে চিপকে নিয়েছি নেশার ঘোরে। সে অব্দি তবু ঠিক ছিল। ফেভিকলটা যে পকেটেই সে খেয়াল ছিলোনা। ও নিয়েই বসে গেছিলাম কোমোডের ওপর। ব্যাস। আঁটকে গেছি। কিছুতেই উঠতে পারিনা। সেবার আর জল ঢালতে হয়নি। ওই ল্যাজে গোবড়ে কেসে নেশা এমনিই কেটে গিয়েছিলো।
তাই মনে হলো সিম্পটম গুলো সিরিয়াস। কেস বেশ ম্যাচুওর্ড। তাই প্রফেশনাল হেল্প নিতান্তই দরকার বলে মনে হচ্ছে। তা বলছি যে, আপনার স্পেশালাইজেশন বোধহয় মদ-এর ওপরেই। ওই পি কে তারপরই আপনার বিশ্বাস। আর তাছাড়া ডার্ক রেড, বোল্ড লেটারে "মদ ছাড়ান" .... তাই দেখেই গেস মারলাম। কিন্তু আমার কেসটা তবু আপনাকেই নিতেই হবে। আপনি পারবেন। আমি জানি।
কেন?
1. আপনার নামে আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস।
2. লোকেশনটাও বেশ সুইট্যাবল। গেস্ট হাউসে নিরিবিলি-বিবৃতিতে বেশ দ্বিধাহীন বোধ করবো।
3. বৃহঃবার টাও সুবিধাজনক। ঐদিন আমার নেশা লাগে না। শুক্কুরবারে নতুন রিলিজ থাকে যে।
খুব সমস্যায় আছি মশাই। বাঁচান।

ইমোজি না ইমোবাবু

- মে আই কাম ইন? 
- ইয়েস। সিট্ ডাউন প্লিস। আপনার বায়ো-ডাটা তো খাসা মানে বেশ ইম্প্রেসিভ। 
- বলছেন? ওই ইয়ে সবই ন্যাচারাল-ট্যালেন্ট বলতে পারেন। 
- সে আর বলতে। বলছি এখুনি একটু হেসে দেখাতে পারবেন? ওয়েট। যে সে হাসি নয় কিন্তু। ওমরেশ পুরি টাইপ?
- কি আর বলবো স্যার? হে হে ওটা তো আমার বাথরুম স্টান্ট। 
- য়্যা? সেকি? আর উৎপল দত্ত "হীরক রাজা" মার্কা?
- হে হে ঐটাও। খুবই সহজ। মুখ আধ-চাপা, বেরিয়ে থাকবে দাঁত শুধুমাত্র ওপর পাটির চারটি ইন্সাইজর। ব্যাস।
- বটে? আর কানন দেবী কান্না?
- একটু ডিফিকাল্ট ছিল শুরুতে, ডুকরে কান্না টাইপ তো, তা এখন করে ফেলতে পারি ঐটাও। আসলে শুধুই তো এক্সপ্রেশন। ভয়েসের ব্যাপারটা নেই বলেই ব্যাপারটা সহজ আর কি। সুচিত্রা সেন "সপ্তপদী" মানে চোখ ছলছল কিন্তু গাম্ভীর্য্য, মাধবী "ছদ্মবেশী" মানে মুখ বন্ধ এক গাল হাসি, রবি ঘোষ "ধন্যিমেয়ে" মানে উচ্ছে-তেতো মুখ করা পুরোহিত। এই গুলোও রপ্ত।
- আপনি তো মশাই ফাটিয়ে দিয়েছেন। এতো ট্যালেন্ট নিয়ে এতদিন কোথায় ঘাপটি মেরে ছিলেন? আপনার আগের জনেরা, যারা সব ইন্টারভিউ দিতে এলো, সব কটা যেন হিমেশ রেশমিয়া, পাথরের সাথে কম্পেটিশনেও হেরে যাবে। যাক গে যাক। শুনুন চাকরি আপনিই পাচ্ছেন। আপনার গাল গুলো একটু শুধু ভরাট করতে হবে এই যা। সে একটা ডায়েট চার্ট বানিয়ে নিতে হেল্প করবে আমাদের টীম। এখন অনেক কাজ। আপনার সব ইমোশন প্রিন্ট করতে পাঠাতে হবে। আমাদের সোশ্যাল নেটওয়র্কিংএ লঞ্চ করতে হবে। সে নিয়ে একটা প্রমোশন ইভেন্ট এরেঞ্জ করতে হবে। টু মাচ ওয়ার্ক। ফেসবুকের সাথে কম্পিটিশন বাবা, যে সে কথা! তবে বাঙালি এক্সপ্রেশন-এর সাথে ওরা পাল্লা দিতে পারবে না। হে হে হে হে। ও আর একটা কথা, আপনার নামটা ....
- ইমোজি। বা স্মাইলি।
- উহু। বদলাতে হবে। বাঙালি এক্সপ্রেশন্স। বাঙালি ভাব-আবেগ থাকবে আর নাম ধার নেবো নর্থ ইন্ডিয়ানদের থেকে? ইমো "জি"? ওসব "জি" "ফি" চলবে না। বাবু চলতে পারে। ইমোবাবু? বা ইমো-মশাই? শর্ট-এ ইমোশাই। শব্দে বেশ একটা লাজুক ব্যাপার আছে। কি বলেন?

জাগ্গা জাসুস

বলছি, বয়স কত? হাড়ের নয়। মনের? কিভাবে মাপবেন?
"জাগ্গা জাসুস" দেখে আসুন।
*****প্রথমেই বিধিমূলক সতর্কীকরণ, এলেখা মুভি রিভিউ-টিভিউ নয়। একে বলা যায় "ধিতাং" লেখা।
"এহেড অফ টাইম" "নট ইভেন ইন্টেলেকচুয়াল" "বোগাস" "বিলো অ্যাভারেজ" ইত্যাদি শুনেই বা পড়েই গিয়েছিলাম "জাগ্গা জাসুস" দেখতে।
ফোর্থ ডে, লাস্ট শো।
ছবির শুরুতেই একটি বাচ্চার গলা, গানের মাধ্যমে জানাচ্ছে ডু'স এন্ড ডোন্ট'স। ওই মোবাইল-ফেসবুক ইত্যাদি বন্ধ রাখা, নাহলে ফিল্মে যা খিচুড়ি হয়েছে, সেটা গুলিয়ে যেতে পারে ইত্যাদি। শুনে মুচকি হাসি এসেই গেলো অজান্তে। আরে সিরিয়াসলি। অনুরাগ বাসু আমার খুড়তুতো কাকুর জ্যাঠতুতো জ্যেঠুর মামাতো মামা বলেই কি বলছি নাকি? সিরিয়াসলি এলো। চুপচাপ ইন্টারনেট অফ করলাম। মোবাইল সাইলেন্ট করলাম।
ক্যাটরিনা গল্পকার, বাচ্চাদের কমিক বই থেকে গল্প শোনাচ্ছেন। কখনো কথা কখনো গান। গল্প নিয়ে যাচ্ছে এক সেট থেকে অন্য সেটে। সেখানেও গান-নাচ। বুনিয়াদে আসলে রহস্য উদ্ঘাটন। নামেই সেটা স্পষ্ট। "জাসুসি" তো থাকছেই। মোট তিনটে অনুসন্ধানী বা গোয়েন্দা গল্প, পাশাপাশি জাগ্গা-গোয়েন্দার নিজস্ব জীবন কাহিনী নিয়েই এই মুভি। মোটামুটি সবাই এটিকে "মিউজিক্যাল ফিল্ম"ই বলছেন। কারণ সংলাপ-এর বেশিরভাগই গানে গানে। তিন ঘন্টার সিনেমাতে তাহলে কত গান হতে পারে, কল্পনা করুন। অদ্ভুতভাবে অসংখ্য সে গানের সবকটাই আমার কাছে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অদ্ভুত নয়? কন্সিস্টেন্সি রাখতে পারাটা কি চাট্টিখানি কথা?
তা হঠাৎ খামোকা সব গানে-ভুবন-ভরিয়ে-দেব কেন? লজিক হ্যায়। "জাগ্গা জাসুস" তোতলা, মানে একটু নয়, বেশ ভালো রকম। গানে গানে কথা বললে ব্যাপারটা নাকি স্মুথ হয়ে যায়। ওই মিউসিক ডিরেক্টর প্রীতমের নিজস্ব এক্সপেরিন্সও তাই। ওর ইন্টারভিউতে এ কথা বহুবার শুনেছি।
যদিও খুব কম জায়গায়, তথাপি, "গলতি সে মিস্টেক" হয়েছে। "জাগ্গা জাসুস" ভুলে গেছে সে তোতলা আর ফ্লুয়েন্টলি কথা বলে ফেলেছে। আমি ব্যাপারগুলো ইগনোর করেছি। এ ঘটনা এক্সসাইটমেন্টে হতে পারে বলে ধরেছি। হয় জগ্গার এক্সসাইটমেন্ট বা হয়তো অনুরাগ বাসুর।
হাতি-জিরাফ-বাঘ-গুহা- হিরোর চুলের স্টাইল সবই এলো পর্দায়। তাতে একটু বেশ টিনটিন এ ফিরে যাওয়া হলো। পুরুলিয়া, আসাম হয়ে, মরক্কো পৌঁছলো। আসামের বিহু হলো। "নাইফ থ্রো" হলো। "গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা। কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা" হলো। "শুন্ডি" হলো। কলকাতার "ইয়েলো ট্যাক্সি" হলো। “শাশ্বত-রজতাভ” হলো। মানে বাঙালিদের জন্য এক্সট্রা মাখো-মাখো, যেটা অনুরাগ বাসুর মুভিতে না পেলেই বরং মন খারাপ, সে সব একদম জোরকদমে ছিল। আর সেই একই কারণে অবাঙালিরা বেশিরভাগই গালি দিয়েছেন। গানে গানে গল্প বলে অনেকেই হাই তুলেছেন। হাতির মাথার ওপর চেপে বিয়াল্লিশ তলা থেকে ঝাঁপ মেরে আবার লাফ দিয়ে গার্লফ্রেন্ডকে কাঁখে করে সোজা বিয়ের মণ্ডপে পৌঁছে যাওয়া টাইপ "সিম্পল" সিনেমাটিক কিছু নেই বলেছেন। তার ওপর আবার বাঙালিদের নিয়ে বাড়াবাড়িটা, "আগুনে ড্রপিং ফ্রেশ ঘি"। আমার কথা হচ্ছে, আইডিয়াটা এদেশে নতুন। সেইটা মানতে হবে ভায়া। শুধু একটাই ইয়ে ইয়ে ব্যাপার। বেশ কয়েকবছর আগে একটি হলিউড মিউজিক্যাল ফিল্ম "দি সাউন্ড অফ মিউসিক" দেখেছিলাম। সেটি সাধারণ একটি গল্পকে অসাধারণ করে তুলেছিল শুধুমাত্র মিউসিক ছিল বলে। মিউসিকের সব লিরিক্সের মানে বোঝা না গেলেও গল্পটা সিম্পল বলে কোনো ঠোক্কর খেতে হয়নি। এবার "জাগ্গা জাসুস" যেহেতু ডিটেক্টিভ তাই প্রতিটি শব্দ-বাক্য পরিষ্কার শোনা বা বোঝার প্রবল চেষ্টা ছিল, তা যাচ্ছিলোনা মিউজিকের জন্য বা ছন্দের জন্য বা স্পীডের জন্য বা আমার ব্রেনের সিগন্যালের জন্য। ঐটাই যা.... কিন্তু তা রসে ব্যাঘাত ঘটায় নি। বরং দুটো গান বেশ মনে ধরেছে। সোশ্যাল মেসেজ দেওয়া,"কিষান সুইসাইড কর রাহা হ্যায় তো হামারা কিয়া, হাম তো নিম্বু মির্চি লাগাকে সেফ হ্যায়।" অন্যটি,"জিনা তো উনহিকা জিনা কাহালায়া, জোভি বিনা চু চা কারকে, খাকে-পিকে চলে গায়ে।"
না না এতো কিছুর পরেও এটা মুভি রিভিউ-টিভিউ নয়। আসলে লোকজন বলছে প্রচুর জায়গা থেকে নাকি কপি-টপি হয়েছে। আমার কাছে যুক্তিগুলো একেবারেই ধোপে টেকার মতো না। বাঙালির ইমোশনগুলোকে ইঙ্গিতে রেখেছেন সারা সিনেমা জুড়ে, হ্যা তা বলতে পারেন। তাতে তো বাঙালিদের খুশিই হওয়া উচিত। বাঙালিমুভির যা হাল ৮০-এর পর থেকে, এই অনুরাগ, প্রীতম এরাই তো আবার একটু হাল ধরছেন। বাঙালিদের তাতেও প্রব্লেম। রাবণের চেয়ে বিভীষণ মার্কেটে বেশি। যাই হোক রিস্ক নিয়ে এতো সুন্দর একটা প্রজেক্ট করার জন্য পুরো টীমকে হৃদয়মার্কা ইমোজি।
আর ইয়ে সৌরভ শুক্লা ভদ্রলোককে আবারো প্রণাম।

Tuesday, 4 July 2017

জিরো

 -কিরে মুখটা ওরকম করে আছিস কেন?
- মামা, পাউট প্র্যাক্টিস করছি। এ এ এ মমম ঐটা হলো পাউট। সেলফি নিতে লাগে, আবার উত্তমবাবুর মতো গোল গোল ধোঁয়া ওড়াতেও লাগে।
- তোদের পাউটে ইয়ে..... ও সব জিরোর খেলা।
- জিরো? সেটা কোথা থেকে এলো।
-তুই একটু জিরো বাবা। আমি বোঝাচ্ছি। উত্তম বাবুর মুখ থেকে কি বেরোচ্ছে? জিরো, মানে শূন্য. বুঝলি?
- ও।
- ইয়েস ও। জানিস কি আদিম টাইপরাইটার-এ দেয়ার ওয়াস নো জিরো। জিরোর কোনো লিখিত গুরূত্ব সেখানে নেই। ইংরিজির o দিয়ে কাজ হয়ে যেত তো।
- ও। তা আজকাল তাহলে জিরোর আলাদা বাটন কেন?
- অভিমানী জিরোর আইডেন্টিটি ক্রাইসিস হওয়াতেই..... তাছাড়া o কিরকম ওয়েইট গেইন করেছে দেখেছিস? ক্যালোরি নিয়ে ওর চিন্তাই নেই। ওদিকে জিরোকে ওসব নিয়ে ভাবতে হয়। পৃথিবীর শুরু এবং শেষএর মাঝে আছে শূন্য। সাংঘাতিক রিস্কে। তাই তো একটা স্লিম o হিসেবে জিরো। আবার অঙ্কের হিসেবে যা নাল, পাতি ভাষায় বাতিল।
-মানে কোনো দাম নেই?
-আছে। দৃষ্টিভঙ্গির বদলে। এই যে দূরদেশে ফোন করবি? শুরুতেই একটি শূন্য ছাড়া সে নম্বর ডায়াল করা অসম্ভব। মানে জিরো হলো শুরু। আবার হিমাঙ্ক হিসেবে দেখ। শূন্যতেই তরল থেকে কঠিনে পরিণত হওয়া। মানে ঘুরে দাঁড়ানো অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
-মানে পসিটিভিটি?
-মমম মানে নেগেটিভিটির আগের অবস্থা। যেমন অণু-পরমাণুর খেলা। নিরপেক্ষ, প্রশমিত, উদাসীন। এক তুরি নয়, ওই এক শূন্যমার্কা ফুঁ ই দিতে পারে সব লন্ড-ভন্ড করে। এই যে কথায় কথায় "ও" বলছিস। মানে সম্মতি। আবার সভ্যতার ভাষায় সম্পর্কশূন্যতাসূচক অবস্থার ঠিক আগের মুহূর্ত। মানে একেবারে নেই তা নয়, আছে। আবার মুহূর্তে তা নেই হযে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। ওই সম্ভাবনা। ঐটি হলো শূন্য। শূন্য মানে সম্ভাবনা।