Monday, 30 December 2024

সকাল ৪ টে

সকাল ৪ টে নয় মশাই, মাঝরাত ৪টে। ঐসময় ঘুম থেকে ওঠার মোটিভেশন শুধু লুচি আলুরদম ছাড়া অন্য কিছু হয় না, হতে পারে না, হওয়া অন্যায়। কিন্তু হলো। কারণ আগেরদিন ঠিক হয়েছিল সবাই মিলে যাওয়া হবে উদ্যেশ্য হীন গন্তব্যে। বড় সহজেই আগেরদিন মুখ ফস্কে কোনও কথা দেওয়া। বড় কঠিন মাঝরাতে, সে কথার দাম রাখা। অ্যালার্ম আর ফোন কল বেজে বেজে যখন মাথার মধ্যে হ জ ব র ল করছে, নিজেকে সামলে যুদ্ধে নেমে পড়লাম। নানা মুনির মত এ গুতো খেয়ে শেষে ভোট প্রসেসে যে যে জায়গা যাওয়ার প্ল্যান হলো, তার সবকটাতেই গিয়ে দেখা গেলো হয় সে জায়গা আপাতত বন্ধ বা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বা নেহাতই ভুল সিদ্ধান্ত। ঠিক হলো জমিয়ে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক যাতে মনে মলম মালিশ হয়। খিদের কথায় "খিদে" মাথায় ছাইয়া ছাইয়া করতে শুরু করল। আকাশ মেঘলা। গাড়ি চলতে শুরু করল পার্ক স্ট্রিটের দিকে। বিদ্যাসাগর সেতুতে উঠতেই ক্লাচ ক্লা ক্লা করে কলা দেখিয়ে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। এগোয় না। পিছিয়ে পড়ে ঢাল বেয়ে। কোনরকমে গাড়ি বন্ধ করে নিজেদের ঢলে পড়া থেকে বাঁচানো গেল। এবার? গাড়ি ক্ষেপে উঠেছে। রেসকিউ গাড়ি, গারাজ সবাই নারাজ। সবার মুখে বিপবিপ, বুকে ঢিপঢিপ, চোখ করুন, অবস্থা পিতামহ ভীষ্ম। পাশ দিয়ে প্রচুর গাড়ি ছুটছে স্যাট স্যাট। বাস থেকে উৎসাহী জনতা ব্রিজ দেখছে আর আমাদের দেখছে। দুটোই তাদের কাছে বেশ নতুনত্ব, বেশ আজিব। আমরা আটকে। 

দুটো কাকও এল। এদিক ওদিক দেখল, কিন্তু আমাদের দেখল না। চুমু খেল একজন আরেকজনকে। আর তারপর উড়ে গেল। একটা ছেলে মেয়ে বাইক নিয়ে এলো, আমাদের দেখল না। জড়িয়ে সেল্ফি তুলল, তারপর চলে গেল। একটি ছেলে বস্তা মাথায় চলতে চলতে একটু দাঁড়াল, রেলিং ধরল, কি একটা ভাবল, তারপর চলে গেল।

এমন সময় রেসকিউ গাড়ি থেকে কল করল, "দাদা আপনারা কোথায়। হ্যাজার্ড লাইট জ্বলছে তো? আর মিনিট পাঁচেক।" সূর্য বেশ জ্বলজ্বল করছে।



আলবার্ট-হল

 সাড়ে পাঁচ কাপ কফি: 

টেবিল চাপড়ে নিজের বক্তব্যে বঙ্কিমচন্দ্র স্ট্রীটে টর্নেডোর জন্ম দিতে। 

দুটো মাটন কাটলেট:

পাশের টেবিলের সাথে তালে তাল দিতে। 

একটা ফিশ কবিরাজী:

বাংলাতে মাছের ডিমান্ড-সাপ্লাই চেইন টা বহাল রাখতে। 


শুনি, আজকাল মেজাজ নাকি আগের মতো আর নেই। না রং, না রূপ, না গন্ধ। তবু! 

মন দিয়ে দেখলে টেবিলে কি আজও চাপড়ের দাগ পাওয়া যায় না?

চোখ বন্ধ করলে কি শোনা যায় না, ফ্রাস্ট্রেশনের হুঙ্কার, প্রথম ভালোবাসার অনুচ্চার, বন্ধুত্বের আশ্বাস আরও কোটি কোটি আভাস?

বলছি, কেউ কি আলবার্ট-হলে রাবড়ি মিস করেন না? একেবারেই করেন না?

(30-Dec-2017)




Wednesday, 25 December 2024

বড়দিনের মেটামরফোসিস

 

আজকালকার বড়দিনের মেটামরফোসিসে, সান্তা আছে, পান্তাও আছে, পাবলিক সবজান্তাও আছে।

প্লাষ্টিক-ফুল-শিরসজ্জিতা এঞ্জেল থিকথিক।

যদুবাবুর বাজারে ইস্পেশাল ট্রাফি-কেক।

সুমন-অঞ্জন এক ছাদের তলায়। একজন একে। অন্য দোতলায়।

মোমোর গন্ধে ম-ম এক্সাইড।

ফুচকা আর এগরোল যথারীতি ফুড বিলবোর্ডের তালিকার টপে।

আলু আর ডিম হলো বাংলার "আপনি থাকছেন স্যার" রজতাভ দত্ত। সবেতেই আছেন।

আঙ্গুল উঁচিয়ে "ট্রাফিক রুল, তুমি ভুল" বলে সদর্পে লালবাতিতেই এগিয়ে যায় হাতে হাত ধরা সদ্য প্রেমে পড়া ম্যাংগো-জনতা।

সাউথ কলকাতা চকমক।

বাস নেই, ট্যাক্সি নেই।

মেট্রো বাঙালি-ওষুধ-বাক্সের চেয়েও ওভারলোডেড।

ওলা-উবের ধনকুবের।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই স্মাইলিং। কেউ দুঃখী নেই এ তল্লাটে। একমাত্র আবশ্যিক হলো কেক, অন্য সবকিছু চূড়ান্ত ফেক। সবকিছুই। কিছুদিন আগে অব্দি বড়দিন বলতে চিড়িয়াখানা, একাডেমি, জাদুঘর, নিকোপার্ক ছিল। লম্বা লাইন দেখা যেত দূরদূরান্ত থেকে। এখন পার্কস্ট্রিট আর বো-ব্যারাক্স । দুর্গাপুজোর মতো দলে দলে সবাই চলে। কিসের দিকে  এগোচ্ছে কেউ জানে না । হয়ত কিছু বছর পরে প্যান্ডেল হবে। যীশু-সান্টা মঞ্চে বসবেন। প্যান্ডেলের থিম হবে। উৎসব ২৫ থেকে ৩১ অব্দি চলবে।  মন্দ কী! মানুষ নতুন নতুন জামা পড়বে, ছবি তুলবে , সবাইকে দ্যাখাবে। কেউ কারোরটা দেখবে না। সব সবাই নিজের জন্যই করে যাবে। একটা ঘোরের মধ্যে জীবন কাটবে। নো সমস্যা, নো ক্রিয়েটিভিটি, নো বুদ্ধিমত্তা , নো প্রশ্ন। 

পূর্ণিমার চাঁদটা বড়ো ভালো, সাথে সাথে থাকে।



(২৬ ডিসেম্বর ২০১৮)





Monday, 23 December 2024

মাদুলি নয়, মাজুলি

 রসিকবাবু বলেন, শীতকালে যাওয়া উচিত মাজুলি।

মাদুলি নয়, মাজুলি।
সকালবেলা আড়মোড়া ভাঙেন যে দিকে মুখ ঘুড়িয়ে, হ্যা হ্যা ঠিক ওই দিকে।
অনলি থাউসেন্ড কিলোমিটারস ফ্রম কোলকাত্তা।
পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপটি যে একেবারেই আপনার পড়শি তা কি জানতেন? মিসিং উপজাতিদের খ্রীষ্টমাস সেলেব্রেশন দেখেছেন কখনো?
অবশ্য শুধুই যে সেই জন্যই রসিকবাবু মাজুলি জপ করেন, তা নয়।
রসিকবাবু বিয়ের পর যে বার প্রথম গিন্নীকে নিয়ে মাজুলি গেছিলেন, সে বছর গিন্নীকে মিসিংদের বানানো মুখোশ কিনে দিতে, গিন্নী খুশিতে লাফিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন রসিকবাবুকে।
ওরকম এক বাজার লোকের সামনে শুধু গোঁফওয়ালা অনিল কাপুরকেই জড়িয়ে দেখতে দেখা যায়, ওই বত্রিশ ইঞ্চি স্ক্রিনে।
এরকম একটা ঘটনা রসিকবাবুর সাথেই যে ঘটে যাবে, তা তো কখনো ভাবেননি। প্রথমে হঠাৎ একটু ভেবলে গেলেও, ঠিক সামলেছেন। শুধু ঘটনার আচম্বিকতাতে শারুখ খানের মতো ডানা মেলতে ভুলে গেছিলেন। তাই ডানা মেলার প্রাকটিস চালিয়ে যান বাথরুমে। আর প্রতিবছর ঢুঁ মারেন গিন্নীর সাথে, মাজুলিতে, মুখোশ হাতে।
তাই শীতকালেই, হ্যা ওই শীতকালেই মাজুলি যেতে সাজেস্ট করেন রসিকবাবু।
মুখোশটা কিন্তু মাস্ট।





Wednesday, 4 December 2024

ভুলের পর ভুল করে যাচ্ছ

 একটা পাখি উড়তে উড়তে বলে গেলো, "ভুলের পর ভুল করে যাচ্ছ।"

একটা শিরশিরে দমকা হাওয়া হঠাৎ ঘুরে ফিসফিস করল, "উহু, অন্যায়।"

একমুঠো রোদ চমকে উঠে বলল, "কি করে সহ্য করছ?"

এক মেঘ তার বৃষ্টিকে বুকে আগলে বলতে বোল্ট চলে গেলো, "দমবন্ধ লাগে না তোমাদের? আমাদের লাগে"

ধূসর গাছগুলো ক্লান্ত হয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছে,"হাহ"। 

একটা সবুজ পাতা খুশি খুশি মুখে পৃথিবীকে প্রথম দেখবে বলে মুখ বাড়াতেই আশেপাশের বয়স্ক পাতারা ভয় পেল। বলল,"লুকিয়ে পর, লুকিয়ে পর।"

লম্বা লম্বা নির্মাণগুলি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। "হমম" 

এক মনকেমনকরা চাঁদের আলো বলল, "ভালো আছো? ভালো থেকো।"


আমি অবাক হয়ে বললাম, "এরকম কেন বলছ? কি হয়েছে তোমাদের?"


ওরা একসাথে চিৎকার করে বলে উঠল, "মনুষ্যত্ব মশাইকে দেখতে পাচ্ছি না বহুদিন। উনি বাড়ি আছেন?"


(০৫ -ডিসেম্বর-২০১৭)



Tuesday, 3 December 2024

মেয়েটি কি কাঁদছিলো?

 বাচ্চা মেয়ে। কি সুন্দর পোজে ঠমকি চমকি!

"কলসি কাঁখে চলছি মৃদু চালে" পায়ে নূপুর ধিনাক না তিন তালে।
একটু ভালো করে দেখলে তার গায়ের ময়লা চোখে পড়ে কি? আরো ভালো করে দেখলে ওর নাক থেকে ঝরা জল?
মেয়েটি কি কাঁদছিলো?
আচ্ছা ওকে মেয়ে বলা যায়? নাকি ও এখনো শিশু? যার নিজের কোলে চড়ার বয়স, সে কলসি বয়ে চলেছে!
ছবিতে তো আর সব ধরা পড়ে না। ভালো করে দেখলেও কতটাই বা জানা যায়, বোঝা যায়।
কত গল্প অজানা থেকে যায়, যা জানলে ছবির সাথে দূরত্ব লক্ষ ক্রোশ বেড়ে যায়।
আমি এই ছবিটার নাম দিয়েছি "জীবন" কারণ এতে হাসি আর কান্না দুটোই (আন) ফেয়ারলি ব্যালান্সড।
(04-Dec-2020)

(Pic from Internet)



Monday, 18 November 2024

মেয়েরা শুধুই "টাফ গাই" গায়

 আমার এক পুরুষ বন্ধু। কষ্ট পেলে সে কেঁদে ফেলে। কি ভীষণ অবাক কান্ড! ছোটবেলা থেকে আশপাশের লোকজনের ধারাবাহিক ঠাট্টার চাপে আজকাল চোখ  কিঞ্চিৎ ছলছল হয়, যা কিছু পরেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তার ধারণা সে এবার বোধহয় যথেষ্ট "পুরুষ" হয়েছে। 

আমার এক দাদার শপিং না করলে মাস পূরণ হয় না। লোকজন তাকে "বাতিকগ্রস্ত" বলে। বলে, "মেয়েদের মত স্বভাব"।

আমার এক মেসো টিকটিকি দেখলেই লাফায়। মাসীর পিছনে লুকিয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরা মেসোকে আড়ালে "মেয়েছেলে" বলে। মাসিকে কেন যে "ব্যাটাছেলে" বলে না, তা বুঝি না!

আমার এক পরিচিত পুরুষ তার বৌ প্রেগনেন্ট হওয়ার পরেই চাকরি ছেড়ে হাউস-হাসব্যান্ড হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্বেচ্ছায়। বৌ নিশ্চিন্তে চাকরি করে। আত্মীয়স্বজন শুরুতে খামখেয়ালি করছে ভেবেছিল। বেশ কিছুদিন যেতে ঘটনার গাম্ভীর্য্য বুঝে তারা একশো কুড়ি কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে বাড়ি এসে বা ফোন করে মনোবিদ-গিরি করেছিলেন, পরিস্থিতির অস্বাভাবিকত্ব বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই। কোনও হেলদোল হয়নি দেখে গালাগালি করে তবে বাড়ি ফিরেছেন। 

আমার দেখা কিছু পুরুষ গোলাপি রং পছন্দ করে। কী লজ্জা! 

আমার দেখা কিছু পুরুষের ভয়ানক মুড সুইং হয় থেকে থেকে। অযৌক্তিক আর্গুমেন্টের কাঞ্চনজঙ্ঘা তৈরী হয়। কী ভয়ঙ্কর!

অনেক পুরুষই কখনও পছন্দের মানুষের কাছে নিজেকে সর্বস্ব ছেড়ে দিয়ে গলা ছেড়ে কাঁদতে চেয়েছে আর চেয়েছে যাতে সেই মুহূর্তে কেউ মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিক। কী ন্যাকা!

আর এসবের পর যদি সামনে আসে "গে" পুরুষ, তাহলে তো আর...  যাক-গে। 

কথা হচ্ছে, উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট আজকাল মার্কেটে যতটা অনুকূল, পুরুষদের ওভার-এমপাওয়ারমেন্ট ততটাই সংকুল। রণে বনে জলে জঙ্গলে এমনকি স্বপ্নেও পুরুষের "পুরুষ" হয়ে থাকার অহোরাত্র নাটক করে যেতে হচ্ছে। মারাত্মক!

আমাদের মতো দেশে যেখানে ছোটবেলা থেকেই পুরুষদের শেখানো হয় তুমি একটা টাকা তৈরীর মেশিন। অনেক টাকা রোজগার করতে হবে, গাড়ি কিনতে হবে, সবাইকে "দেখাতে" হবে। নিদেনপক্ষে ভবিষ্যতে একটা গার্লফ্রেন্ড বা বৌ জোটানোর জন্যও টাকা রোজগার করতে হবে। তোমাকে শেখানো হয়, একবার টাকা রোজগার করলে তুমি হবে রাজা। 

যদি দেখাতেই হয় শুধু রাগ দেখাও। তুমি রানা প্রতাপ হবে। 

গৌতম হবে, গম্ভীর হবে, বুদ্ধ হতে যেও না। 

তোমার কাঁদলে চলবে না। ডিপ্রেশন আবার কী! 

টাট্টু ঘোড়া হয়ে শুধু ছুটতে হবে। মেয়েরা শুধুই "টাফ গাই" গায় এবং চায়। 

গার্লফ্রেন্ড না থাকলে অথবা এখনও ভার্জিন থাকলে তোমার মুখে কচুপাতা ঢেকে চলা উচিত। 

মায়ের আর বৌয়ের ওয়েইট স্কেল মেশিনের ব্যালান্স তুমি। 

এসবের মধ্যেও তুমি চলছো। ব্যালান্স করছো। কখনো লুকিয়ে কেঁদে, কখনো স্লিপিং পিল খেয়ে বা নেশাগ্রস্ত হয়ে  ..... 

কিন্তু ইকোসিস্টেমের তুমি অর্ধাংশ। তুমি yin yang এর অর্ধ্যেক। তুমি অর্ধনারীশ্বরের আংশিক। তোমাকে ছেড়ে তো কিছুই নয়। 

কাঁদতে পারো তুমি, তুমি কোমল হতে পারো, ডিপ্রেশন স্বাভাবিক হতে পারে, কন্সালটেন্সি নিচ্ছো বলে হাসছে যারা তারা অশিক্ষিত, ভার্জিনিটি একটা অপসন ঠিক যেমন বিয়ে অথবা সন্তান। 

"ইমোশন" জেন্ডার স্পেসিফিক নয় গো।


#happyinternationalmensday #InternationalMensDay




Monday, 4 November 2024

শান্তিগোপাল

- রুটিই যদি বানাবেন ভাবছেন, পরোটাই হোক।

-পরোটা যদি হচ্ছেই, একটু ডিম ভেজে চেপ্টে দিন।

-এসব ভাজা ব্যালেন্স করতে veggies হয়ে যাক, পিয়াজ, ক্যাপ্সি, লঙ্কা।

-এসব যখন হলোই, একটু লেবু বুলিয়ে দিলেন নাহয়।

-এবার মুড়ে দিলেই হলো।

- এ কে রে শান্তিগোপাল

- বলছি ফ্রিজে বাসি চিকেন কি একেবারেই নেই!

- মরণ দশা

















ভারতীয় আর বাঙালি আলাদা

 ঠিক এইসময়টাতে ভারতীয় আর বাঙালি আলাদা।

দেশের বাইরে সবাই যখন বাঙালিকে প্রশ্ন করছে, আর ইউ নট সেলিব্রেটিং দিওয়ালি? কি করে বোঝাই, মশাই, উই ডোন্ট হ্যাভ দিওয়ালি। ছোটবেলায় দীপাবলিও তেমন জানতাম না। কালীপুজো এটাই। বাজি ফাটবে। ভয় হতো। তারাবাতি আর সাপবাজি ফাটাতে সাহস পেতাম। চকোলেটের মতো সুস্বাদু বস্তু কালীপুজোয় হঠাৎ বোমা হয়ে মহা ত্রাস তৈরী করতো। কালীপটকা নিয়ে নাজেহাল ছিল কুকুর শ্রেণী। তুবড়ি প্রতিযোগিতা হতো। দেখতে বেশ লাগতো। কার তুবড়ি কত উঁচু। পাড়ায় শাঁখ বাজানোর প্রতিযোগিতাও হতো। কখনও বুক কাঁপিয়ে দিতো। কখনও হাসি ছুটিয়ে দিতো। তবে এসবের পরেও একটা চিন্তা দুদিন পরেই স্কুল খুলবে আর খুললেই পরীক্ষা। অর্থাৎ কালীপুজো মানেই ছুটি শেষ।  

"হ্যাপ্পি দিওয়ালি"র ঢাই কিলো-কা হাতের ভয়ে সেই সব দীপাবলি, প্রদীপ-মোমবাতিকে বগলদাবা করে কেটে পড়ার তালে। টুনির মা বাজার মাতিয়ে ফেলেছে মশাই।

আর এসেছে ঝাঁটা। কেন! কেউ জানে না। কিন্তু সবার বাড়িতে ঝেঁটিয়ে ঝাঁটা। 

ভূত চতুর্দশী কাকে বলে? ঘরে ঘরে এখন হালোইন ইন। শিশুরা এখন বাজি নয়, কুমড়ো নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করছে। ছয় বছরের রিয়া বাবাকে বাজার থেকে কুমড়ো আনতে বলছে। বাবা হা। দিদিমা গদ গদ। বৌমা মেয়েকে এখন থেকেই রান্না শেখাচ্ছে বুঝি, আহা! রিয়া বলে উঠলো, মা ছুরিতে ধার আছে তো? ভূতের দাঁত বানাতে হবে। দিদিমা জল খেলেন।

তবে বাজির ব্যাপারটা তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে (হয়তো)! ছোটবেলার চকোলেট বোমা, কালী পটকা, দোদোমা, দিদিমা, কাকিমা, মাসিমা, এই মা, ওই মা যে কত দাদুর হার্টএটাক ঘটিয়েছে, কত কাকু যে সাময়িক বধিরত্ব পেয়েছিলেন, কত কুকুরের যে ল্যাজ পুড়েছিল, কতদিন যে সে আতঙ্কে ডাস্টবিনের পিছনে লুকিয়েছিল, তার ইয়ত্তা নেই। সেসব, বাজি বাজার থেকে যে আপাতদৃষ্টিতে বেপাত্তা, তাতে আমি বেশ খুশি। লুকিয়ে যারা আজও ডিমান্ড এবং সাপ্লাই এ অংশ নিচ্ছেন, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় শীঘ্রই হোক, এই প্রার্থনা করি।

যাই হোক, দীপাবলি শুভ কাটুক।

(26 October 2019)




Friday, 20 September 2024

কাকু হাঁকুপাঁকু

 - হ্যালো

- কি রে? ঘুমোচ্ছিস?
- এ? না মানে? হ্যা। কি? মহিষাসুরমর্দিনী শুরু হয়েছে?
- ধুর শেষ হয়ে গেছে।
- ওহ যাহ। শোনা হলো না তো।
- ঠিক আছে। ইউটুবে দেখে না। শোন্ না। খুব দরকার
- কি হয়েছে? কাল খাওয়াবো তো বললাম।
- ধুস।
- তাহলে? ও চিনি ফোন করেছে? বলেছিলাম ও তোর প্রপোসাল ফেলতে পারবে না। দেখলে তো? হে হে
- আরে ধুর। তোর বাবা মানে কাকু ....
- কি? তোকে ফোন করেছে? কিছু বলিসনি তো? আমি মদ খেয়েছি কেউ বোঝেই নি কাল। তুই কেস খেয়েছিস নাকি?
- আরে এ কি রে। বলতে দে না।
- বলছিস না তো। বল না।
- কাকু ছাদে, বসে বসে কাঁদে।
- এয়া? মানে?
- আমাদের ঘুড়ি কেটে তোদের ছাদে পড়েছিল। চিৎকার করে কাকুকে ওটা পাস করতে বললাম। ভালোমানুষ কাকু হাঁকুপাঁকু করে আমাদের ঘুড়ি দিতে গিয়ে কোথাও খোঁচা খেলেন। ধুতি আঁটকে গিয়ে হড়কে উনি বড়ির ওপর ধপাস। ছাদে শুকোতে দিয়েছিলো বোধহয় কাকিমা। কাকুকে একটু সামলা। আমরা বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে।
- কি বলছিস রে! সেকি।
- আরে চিন্তা করিস না। কাকু ঠিক আছে।
- ধুস অটো বড় শরীরটা ওই কোমল বড়ির ওপর পড়েছে। আর একটাও কি আস্ত আছে? তোরা যা বাবাকে সামলা। আমি বরং মা কে সামলাই। বাড়িতে ১০ বছর পরে বড়ি হলো! বড়ির দুঃখ মা যেন সামলে ওঠে।



Friday, 6 September 2024

খিচুড়ির অভিমান

 টেকনিক্যালি খিচুড়ি হলো সারভাইভাল ফুড। নিতান্তই উপায় নেই অথচ জিভকে চটানো যাবেনা, এহেন পরিস্থিতিতে, খিচুড়ি। চালে-ডালে তালে-দুলে বেশ। আর বর্ষাকালে খিচুড়ি খাওয়াটা? ওটা ওই রাস্তাতে চলতে চলতে মন্দির দেখলেই হাত মাথাতে চলে যাওয়ার মতো। অভ্যেস। নাহলে রসিয়ে কষিয়ে জমিয়ে পোলাও-মটন ছেড়ে, নিদেনপক্ষে লুচি-মাংস ছেড়ে খিচুড়ি?

এহেন তাচ্ছিল্য দেখে খিচুড়ির খানিক অভিমান জাস্টিফায়েড। খিচুড়িঅশ্রু উপচে বেরিয়ে গঙ্গা বেয়ে পদ্মা পৌঁছলো। "পানি নোনা লাগে ক্যান"
...... ইলিশটিম ব্যাকস্ট্রোক দিতে দিতে গঙ্গা হয়ে বর্ষার কাঁদাজলে হালকা ঠেলা-গুঁতো খেয়ে একেবারে বেহালা মার্কেটে।
রসিকবাবুর পেটে মিলন হলো খিচুড়ি-ইলিশের। কাঁদাজলের ঠেলা-গুঁতোতে টেস্ট নাকি আরও খোলতাই হয়েছে বলে রসিকবাবুর ধারণা।
পুনশ্চ: রসিকবাবু আগামী বেশ কিছুদিন পটি করবেন না, দাঁত মাজবেন না।



Wednesday, 4 September 2024

বাঙালির হাইজিন

 বাঙালির হাইজিন কন্সসিয়াসনেস লুই পাস্তুরকে দস্তুর মতো ঘায়েল করতে পারে।

প্রি-ভোজন দশাতে পেটের অবাধ্য আচরণে মন নিমন্ত্রণ বাড়ির বেসিনের উল্টোদিকে বুফে-কাউন্টারে ছুটে যায়।
পোস্ট-ভোজন দশাতে পেট যখন হাত তুলে দিয়েছে, "মিসন একমপ্লিশড" বাঙালি দলে দলে বেসিনের কাছে ধায়।
কচ্লে কচ্লে হাত ধোয়।
গাল টোপলা করে, আগোলম বাগোলম করে।
পিচিক পিচিক জল বেসিনে অল্প, বেসিনের বাইরে বাকিটা ছড়ায়।
পিছনে লম্বা লাইন অনুভব করেও "জাস্ট চিল" তৃণজ্ঞান করে।
এবং পুরো কসরতটি সাড়ে আটবার পুনরাবৃত্তি করে।



Tuesday, 3 September 2024

সিটি অফ জয়

 - ফাইনালি আমরা কলকাতায়! উহুউউ। ওয়েলকাম টু মাই রুটস।

- হ্যাঁ, যেখানে তুই নিজেই জীবনে প্রথমবার এলি আর টেনে নিয়ে এলি আমাকে।
- নাচারালি দোস্ত। দুজনেই আমরা মাইগ্রেটড বাঙালি, ইটালির গ্রামে বসে পিৎজার বদলে ভাত খাই, বাঙলায় আমরা পরিষ্কার কথা বলি, ঘরে রবীন্দ্রনাথ থেকে শিবরাম মজুত, প্লেলিস্ট এ কোল্ডপ্লের সাথে মান্না দে। আর আমাদের দুজনকেই ছোটবেলা থেকে বাড়ীতে "কলকাতার দুর্গাপুজো" , "সিটি অফ জয়"
নিয়ে এত্ত এত্ত এডভার্টাইসমেন্ট হজম করতে হয়েছে।
- এডভার্টাইসমেন্ট বলিসনা বরং, "তোরা আর কি জানিস দুর্গা পুজোর..... " মার্কা রাগিং বল।
- আগ্রিড। রাগিং ইট ওয়াস। আর তাই আমাদের মত দুটো পারফেক্ট রাগিং ভিকটিমকে নিজেদের রুট খুঁজে কলকাতা তো আসতেই হতো রমা রায়। তাই না? এবার বল, তোর দম আছে এখনও নাকি আজ একটু রেস্ট নিবি।
- হান্ড্রেড পার্সেন্ট দম আছে। তোর গ্রানির বাড়ী যাবার প্ল্যান সেই কবে থেকে। এখানে পৌঁছে নো রেস্ট। এখুনি চল। কিন্তু তার আগে প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। ফ্লাইটের মিল এভয়েড করেছি। এখন প্লিজ কিছু খাওয়া, তোর কলকাতার স্পেশাল কিছু।
- ডোন্ট ওরি ম্যাডাম। হোটেলে যাই, ব্যাগ রাখি, ফ্রেশ হই। চল তারপর কফি হাউস যাই। ওখান থেকে গ্রানির বাড়ী টু মিনিটস।
......
- গুগল ম্যাপস এ এই স্ট্রীট টাই বলছে রে। লেটস গো মলি, অলমোস্ট রিচড..... ইএই এই বাড়ী টাই তো। ইয়স অ্যাড্রেস মিলে গেছে। দ্যাখ বাবার ছবিটার সাথে মিলিয়ে? রংটা কিরকম বদলে গেছে..... কিন্তু ছাতের কোণার ওই ডিজাইন..... দ্যাখ একদম এক। ভাগ্যিস প্রোমোটার এখুনি কাজ শুরু করে দেয়নি। মলি, এই কর্ণার ইস ভেরি স্পেশাল। এখানে বসে বাবারা সবাই গাঁজা খেত, হা হা হা হা হা!
- ওয়াউ। আর ইউ সিওর, তুই ফার্স্ট টাইম এসেছিস এই বাড়ী!
- হাহা। এতদিন এত ডিটেইলড গল্প শুনেছি, সব আমার ছবির মত মুখস্ত। এই পাড়ার সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেলের পিছনে বাবা মাকে প্রথম দেখেছিল। এদিকে এদিকে ইয়েশ ..... এই ঘরটা ছিল গ্রানির। আর একটা ফানি ইনসিডেন্ট। একদিন সকালে গ্র্যান্ড পা দেখলেন, শুকোতে দেওয়া বাবার আন্ডারওয়ার, ওই ওখান থেকে উড়ছে।
- এ্য?
- হ্যাঁ। কাকে উড়িয়ে নিয়ে নাকি সামনের ইলেকট্রিক তারে নিয়ে ফেলছে। প্রবাবলি তারটা ছিল এই দিকে।
- lol রনি, বাই দা ওয়ে ওইটাই কি তারটা? ওই তারে এখনও কি একটা ঝুলছে! ইস ইট ইউর ফাদার্স?
- ধুস। আর ইউ ক্রেজি? হ্যাং অন। হোয়াট! মে বি। মানে! ৪০ বছরের আন্ডারওয়ার এখনও!?
- হা হা হা হা রনি। এত সত্যিই "সিটি অফ জয়"। শোন, তুই ভালো করে চেক কর। কল অ্যান্টি। যদি এটা সত্যি হয়, আই এম ইমপ্রেসড রে। এত রোদ বৃষ্টি সহ্য করে যেভাবে ওটা টিকে আছে। কোয়ালিটি তো লা জবাব। তুই কয়েকটা সেট কিনে নিয়ে ফিরিস কিন্তু। হা হা।


Wednesday, 21 August 2024

নীলচে শাড়ি

 - বলছি ঘুমাচ্ছিস?

- না
- লাঞ্চ?
- হবে
- সেকি অনেক দেরী হলো যে! খিদে পায় নি?
- তুই এইসব ন্যাকা প্রশ্ন করা শুরু করলি কবে থেকে! আমি একটু ল্যাদ খাচ্ছি। তোর কি হয়েছে বলতো।
- মস্ত কাণ্ড।
- কি রে?
- ঘুড়িটা উড়ে এসে পড়লো আমাদের নারকেল গাছে। দুলল হাওয়ায়। নীলচে রং ঠিক ওই ডিসেম্বর বিয়ে বাড়িতে তুই যে শাড়িটা পড়ে গিয়েছিলি, সেই রঙের। মনে পড়লো তুই ভিডিও কল করে দেখালি তোকে কি সুন্দর লাগছে। দেখলাম কাঠঠোকরা ওই ঘুড়ি বাইপাস করে দিব্যি নিজের কাজ করে চলে গেলো। কাকও তাই। নারকেল গাছের বোরিং ডালগুলো বেশ গ্ল্যামার পেলো, বুঝলি। তারপর হঠাৎ মেঘ কালো, ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামলো। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর সব শান্ত হলো যখন, দেখি ঘুড়ির শুধু কাঠামোটাই পড়ে আছে। আর সব ...... তোর কথা হঠাৎ এত মনে পড়লো। একটিবার তোর সাথে কথা না বললে মনে হচ্ছিলো যেন তোকে ..... যেন তোকে হারিয়েই ফেললাম। ভালো আছিস তো তিতির? তুই ঠিক থাকবি কিন্তু, আমার জন্য প্লিজ। কথা দে।


অনাদি

 - মিষ্টি ভালবাসিস না যখন কেক এনে ন্যাকামো করে কি লাভ!

- সেই তো।
- তাই এটাই, স্ট্রেট ফ্রম .....?
- অনাদি?
- এক্কেরে ম্যাডাম।
- হমম, লাব্বু গাব্বু। তা মশাই, আজ না তো আমার বাড্ডে....
- বাদ্দে। আজ আমার মনের কানে খবর এলো যে তোর জিভে অনাদির দু টুকরো না পড়লেই নয়। ধর্মধর্মীর গর্মাগর্মীতে বিয়েতে না তুই ভালো করে সাজতে পারলি, না বছর বছর জন্মদিনে এবাড়ি ওবাড়ি থেকে সেলিব্রেশন হয়। এবার আমার গলায় ঝুলেছিস যখন ...... অক্কে সরি আমাকে যখন তোর গলায় সারাজীবন ঝুলতেই হবে, সেক্ষেত্রে গলার ভিতর-বাহির যাতে চনমনে থাকে, সে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করতে হবে আমাকেই যে ম্যাডাম।
- বুঝেছি, নাটক সম্রাট দিলবার খাঁ। ছুরি কাঁচি রেডি। আর কিছু?
- এই ডিজাইনার ক্যান্ডেল।
- ধুস। মোগালাইয়ে ক্যান্ডেল।
- ইয়েস ম্যাডাম। প্রাচ্য পাশ্চাত্য এক করে দিয়েছি শুধু একটাই আশা। চোখ বন্ধ করে তুই কি সব গুণগুণ করবি, তারপর ক্যান্ডেল লাইট ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিয়ে ওই মারকাটারি চোখে তাকাবি আমার দিকে, ব্লাকমাজিকে আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুল ফুটবে, এইটুকুই। তারপর প্রসাদ হিসেবে একটুকরো ছুড়ে দিস অধমের দিকে, ব্যাস.....


ভোলা ময়রা

 - ভোলা ময়রা

- হে হে, এর নাম বুঝি?
- এই নামটাই দিলাম।ইনি ভারী ভোলা। সবাইকে ভালোবেসে ফেলে। পুষ্পশ্রীর সামনের ওই গাছের পিছনে ওর আস্তানা। বৃষ্টি হলে বেচারা খুব কষ্ট পায়। আমাদের বারান্দার জায়গাটা ওর আজকাল বেশ পছন্দ হয়েছে। বাবা রাগারাগি করছে বটে।
- এই রে।
- ও কোনো ব্যাপার না। মা ঠিক ম্যানেজ করে দেবে। তুই জানিস তো, তোকে কি করতে হবে।
- দুধ?
- চলবে।
- ভাত?
- দৌড়োবে।
- চকলেট?
- পাগল হলি?
- হে হে, জানি রে বাবা। চকলেট চলবে না। সোয়ারমা?
- উফফ তুই না, খিদে পাইয়ে দিলি। ভোলার জন্য তুই দুধ-ভাত-রুটি আনিস। বাকি আমি দেখে নেবো। এখন চল, এভেন্জার্স-এন্ডগেম ট্রিট হোক। আজ তোকে সোয়ারমা খাওয়াই।
- সিরিয়াসলি?
- হ্যাঁ চল না।
- তারপর তুই আইরন ম্যান হয়ে নর্থ কোরিয়া চলে গেলি। শুনেছিস কি হচ্ছে ওখানে!
- হমম। ওখানে ঘর থেকে কুকুর কেড়ে নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে। "বুর্জোয়া বিরোধীতা" র নামে আসলে ওই কুকুরদের মেরে খাবে। ওই লোকগুলোকে ....
- শেষ করে দিতিস মুহূর্তের মধ্যে। ওদের বিবেক নেই রে। ওরা কি করছে ওরা জানে না। সত্যি যদি আইরন ম্যানের শক্তি মিলতো ..... ওকি বুবাই কাঁদছিস নাকি তুই? পাগল তুই। ওদেশের কুকুরদের রেসকিউ করার ক্ষমতা নেই আমাদের। কিন্তু আমরা এখান থেকেই শুরু করি। এই পাড়া, ওই পাড়া, আমাদের শহর, শহরের বাইরে গ্রাম ...... কত্ত কাজ বলতো। ওরে, শুনছিস তুই? ভোলা ময়রার চোখটা দ্যাখ। কিরকম মায়া ভরে দেখছে তোকে। আমরা ওদের এতো ভালোবাসা দেব, যে কোরিয়ার ওই কুকুরগুলো, রিইনকার্নেট করে আমাদের দেশে জন্মাবে, সব্বাই। এই তো ছেলের মুখে হাসি ফুটেছে। ওই, আমার খিদে পেয়েছে। সোয়ারমা খাওয়াবি বল্লি যে, ঢপ দিলি নাকি।




"এডজাস্ট" মহামন্ত্র

 "ওরা"

কথা বলতে বলতে হাঁটা দেয় অন্যদিকে।
ইচ্ছে হলেই কথা শুরু করে দেয় যার-তার সাথে। যে কোনো টপিক। যা হোক ভাষা।
যেটাতে প্রতিরোধ পায়, সেটাতেই আগ্রহ জন্মায়।
সামনে আলুভাজা দেখলেই ঝাঁপিয়ে পরে। সে প্লেট-হাত পরিচিত হোক বা একেবারেই অজ্ঞাত। খিদে পেলেই গপাগপ।
"কি-কি-খেতে-নেই" সে লিস্টটা তাদের ডাটাবেসে নেই। পটাপট ব্যাঙ-টিকটিকি-আরশোলা ধরে কে-এফ-সি-র বার্গার ভেবে ফেলে।
কখন এক পাত্র জলে হাত ঝাপ্টে মজা। কখন সেই জল দেখেই কান্না।
কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ উল্টে পরে সবার সামনে, হঠাৎ পাল্টি খায়।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো, জামা-কাপড় ছাড়াই বেরিয়ে পরে রাস্তায়। প্রতিবেশী কাকিমার ভাষায় "একটা সুতো অব্দি নেই গায়ে"। (একটা সুতো থাকলেই কি তফাৎ কিছু হতো?)
"ওরা" মঙ্গোলিয়ার আদিবাসীরা।
"ওরা" কলকাতার রাস্তাতেও ঘোরে। আপনারা ওদের পাগল বলেন।
"ওরা" আপনার বাড়িতেও আছে। আপনারা ওদের শিশু বলেন।
মানে বুঝতেই পারছেন হে হে আপনি নিজেও এরকমই ছিলেন, ওই যখন সবে সবে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন আপনি, তখন।
তারপর যা হয় আর কি। সুশীল-সমাজ -এর রাজ্যে যারা বন্দী, তারা মানে আপনারা সুশীল-সমাজ -এর শিক্ষা-দীক্ষায় (চাপে) ওদের থেকে অন্যরকম হয়ে ওঠেন।
কষ্ট হচ্ছে?
কি আর করবেন বলুন।
যাহোক তাহোক করার ভাগ্য কি সবার থাকে মশাই।
বন্দীদশা তেই তো দিব্বি এডজাস্ট হয়ে গেছেন মশাই। "এডজাস্ট" মহামন্ত্র। জপতে থাকুন।

Thursday, 11 July 2024

প্রথম ইনাম দেওয়ার অধিকার গৃহস্বামীর

 "প্রথম ইনাম দেওয়ার অধিকার গৃহস্বামীর"

ঠিক যেন ঠাকুরদাটি। দি ম্যান অফ দি ডিনার টেবিল।
শক্ত কিন্তু আবেগ, গম্ভীর কিন্তু শান্ত, কর্তৃত্ব কিন্তু ধৈর্য্য। বিশ্বম্ভর রায় কিন্তু রেহমাত।
"বুঝলে জয়ন্ত, অভাব দরজায় এসে দাঁড়ালে ভালোবাসা জানলা দিয়ে বেরিয়ে যায়।"
উনি? প্রেম-খুনী।
চিরকাল উত্তমকুমারকে সুন্দরী মেয়েদের থেকে দূরে রাখলেন। কখন খ্রিস্টান বলে, কখন বাঙাল বলে, কখন ফ্যামিলি স্ট্যাটাস বলে। যত্তসব।
"এই রোমান্টিক সারাউন্ডিংসে তোমার হয়তো মনে হচ্ছে, love is the most important thing in the world. কিন্তু কলকাতায় ফিরে গিয়ে তোমার যদি কখন মনে হয় প্রেমের চেয়ে সিকিউরিটি বড় বা সিকিউরিটি থেকে প্রেম গ্রো করতে পারে, তাহলে আমায় জানিও কেমন?"
উনি? কঠিন গাঁথুনি।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। গাঁথুনিতে ফাটল ধরে।
"বটে"
পাঁচ সেকেন্ডের "বটে"তে তখন বুক ঢিপঢিপ। শেষে একটি মস্ত চিঠিতে আবেগের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে যাওয়া একগাল মিষ্টি ক্ষমা চাওয়া।
এক সময় মনে হতো, ওই হুঁকো-বাবুর মসৃন চুমুই ছিল যড়যন্ত্রী। কখন যে কি মন্ত্রণা দিয়ে যেত থেকে থেকে ওনাকে। সম্ভব?
"এই দুনিয়ায় ভাই সবই হয়, সব সত্যি, সব সত্যি।"



Monday, 24 June 2024

পাড়ার নতুন রেকর্ড

 - এসেছো? এতো দেরি হলো? দাঁড়াও দাঁড়াও খুলছি দরজা। উফ ভেঙে ফেলবে নাকককইইই ..... এককিইইইই তোমার একই অবস্থা! চুল ওলোটপালোট। জামা ছিঁড়েও গেছে বুঝি! চোখে মুখে কালি। কি হলো তোমার?

- আরে সড়ো সড়ো বসতে দাও গিন্নী। উফফ একটু ফ্যান চালাও। জল দাও। শ্বাস নিতে দাও শ্বাস।

- এই নাও। বলো এবার। আমার বুক ঢিপঢিপ করছে এখনো। কি হয়েছে বলো তো তাড়াতাড়ি। মারামারি করেছো নাকি? এই বয়সে?

- আরে গিন্নী, যদি তোমার জন্য করতে হয়, জীবন দিয়ে দেবো, পরোয়া করবো না গিন্নী, পরোয়া করবো না। বয়স ভুলে আমি হয়ে উঠবো হিমশিখর হিমালয়। এখনো কুড়মুড়িয়ে দিতে পারি অপোনেন্টকে গিন্নী।

- ধুস তুমি কি যে বলো।

- আরে সত্যিই যে। ওবাবা এ আবার লজ্জা পায় দ্যাখো। হে হে

- ধুস ওসব ছাড়ো। বলো কি হয়েছে আজ তোমার। তুমি তো বললে বিশ্বাস বাড়ী যাবে আমাদের গাছের আম দিতে। যাওনি?

- আরে সেটাই তো। রুকুর চায়ের দোকানে যাওয়া হলে আম ওখানেই দিয়ে দিতাম। সেই কবে ওদের বাড়ী গেছি শেষ ভুলেই গেছি। বিশ্বাস বাড়ী পৌঁছে দেখি বাড়ীর সামনে তিনটে দরজা। প্রথমটাতে গেলাম। দেখলাম কলিং বেলের সামনে মাকড়সার জাল। বুদ্ধি আমার তুমি জানোই গিন্নী। বুঝলাম ওটা বহুদিন বন্ধ আছে। তাই চলে গেলাম দ্বিতীয়টাতে। যেতে গিয়ে ক্যাকটাস গাছের কাঁটাতে এমন গুঁতো খেলাম গিন্নী কি বলবো।

- আহা রে। তারপর

- কোনোরকমে দ্বিতীয় দরজাতে পৌঁছে দেখি কলিং বেল নেই। দরজাতে ধাক্কা মারতে যাবো, বড় মায়া হলো। দরজার অবস্থা ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থার মতো। একটু চাপ পড়লেই মূর্ছা যাবে। তাই ওকে বিরক্ত না করে এগিয়ে যেতে গেলাম তৃতীয়র দিকে।

- ধুর বাবা। একটু তাড়াতড়ি বলো তো। এ যেন উপন্যাস শুনতে বসেছি।

- তৃতীয়তে যেতে গেলে দেখলাম অনেকটা ঘুরতে হবে। বুদ্ধি আমার তুমি জানোই গিন্নী। আমি পাঁচিল টপকালাম।

- হ্যাঁ মানে? এই বুড়ো বয়সে তুমি! হ্যাঁ? মানে?

- ওটা কোনো ফ্যাক্টর নয় গিন্নী। মুশকিল হলো আমি পাঁচিলে আঁটকে গেলাম যখন। কিছুতেই নামতে পারিনা। দূর থেকে এক ছোকরা "চোর" "চোর" বলে এমন চিৎকার .....

- ওমা গো ......

- আহা তুমি ওরকম করলে কি করে হবে। ব্যাপারটা সামলেই গেলো শেষ অব্দি। লোকজন জড়ো হয়ে মারতে যাবে, আমি চিৎকার করে বলছি,"কিছু নিতে নয়, দাদা দিতে এসেছি।" বিশ্বাসের ছোটো বৌ, হাতে আম দেখে লোকজনকে থামায়। দেখো কিরকম সব মিটে গেলো।

- মিটে গেলো? এটাকে মিটে যাওয়া বলে? লোকজন চোর বললো, মারতে গেলো, কাঁটার গুঁতো খেলে। এটা তোমার মিটে যাওয়া?

- মিটবে না? বিশ্বাসের ছোটো বৌ যার কিনা হাত থেকে একটা নকুলদানা পাওয়া যায় না। সে আমাকে বাড়িতে নিয়ে চা আর রসোগোল্লা খাওয়ালো, গিন্নী। রুকুর চা দোকান খুললে যখন এইটা ওদের বলবো, দেখবে আমাকে কিরকম ধন্য ধন্য করে। পাড়ার রেকর্ড গড়া গিন্নী এতো সোজা কথা নয়। তুমি একটু বরং বোরোলিন টা এগিয়ে দাও .....

ছেলের বিয়ে, বাবা কোথায় গেলো


সকাল থেকে বাড়িটা আনন্দমুখরিত, কলকোলাহলজাগরিত, উল্লাসবিচ্ছুরিত।

ছেলের বিয়ে বলে কথা।

পুরুতমশাই মন্ত্র পড়ছেন। ছেলের মুখে চাপা-হাসি মেকি-গাম্ভীর্য্য এর ককটেল মাখা। মাঝে মাঝেই ধুতির আড়ালে হোয়াটস্যাপ চেক করে নিচ্ছে। কিছু দরকারি বার্তা হবে। মা কুতিয়ে কাতিয়ে পুরুতমশাইকে সাহায্য করছেন। মাসি-পিসি-কাকী-জেঠি-শালী-বাড়িওয়ালি এনারা ব্যস্ততার অভিনয় ঝালিয়ে নিচ্ছেন। মেসো-পিসো-কাকা-জ্যাঠা-শালা-বাড়িওয়ালা এনারা সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে রাতের জলের আর্র্যাঞ্জমেন্ট টা বুঝে নিচ্ছেন। জল মানেই জীবন।

"ছেলের বাবাকে ডাকুন"

"এই ওর বাবা কোথায় গেলো"

"আরে হরেনবাবু গেলেন কোথায়"

"হরেনকাকু, বেরিয়েছে মনে হয়"

"তাহলে জ্যাঠাকেই বলুন বসতে ......"


গায়ে হলুদের গাড়ি রেডি। ফটোসেশন প্রায় শেষ।

"ছেলের বাবা কোথায়, উনি যাবেন তো"

"এই ওর বাবা কোথায় গেলো"

"আরে হরেনবাবু গেলেন কোথায়"

"হরেনকাকু, বেরিয়েছে মনে হয়"

"তাহলে জ্যাঠাকেই বলুন বসতে ......"


দুপুরের খাওয়া শেষ। ছেলের মা খাবেন না।

"ছেলের বাবা বসে পড়ুক। একটু পরেই তো বরের গাড়ি বেরোবে"

"এই ওর বাবা কোথায় গেলো"

"আরে হরেনবাবু গেলেন কোথায়"

"হরেনকাকু, বেরিয়েছে মনে হয়"

"তাহলে জ্যাঠাকেই বলুন বসতে ......"


বিকেলে বরের গাড়ি রেডি। এবার বেরোতেই হয়।

"ছেলের বাবা কোথায়? ছেলের সাথে তো উনিই বসবেন"

"আরে হরেনবাবু গেলেন কোথায়, ছেলের মা তো চিন্তায় প্রায় অজ্ঞান, ছেলে হোয়াটস্যাপে চেপে, কিছু জরুরি কাজ হবে হয়তো"

"তাহলে জ্যাঠাকেই বলুন বসতে ......"

"জ্যাঠার তো এসিডিটি। দুপুরে তিননম্বর সর্ষে ইলিশটা একেবারে ডাইরেক্ট ইসোফেগাসে হিট করাতে ....."

"তাহলে তো মুশকিল। আচ্ছা হরেন বাবুই বা কোথায়"

"হরেনকাকু, বেরিয়েছে মনে হয়"

"সেতো সকাল থেকেই শুনছি, বিয়েটা আটকে না যায়"

"ইয়ে মানে, কি বললে, বাবা কোথায়? দাড়াও তো কল করি।"

"এই যে খোকা। তোমার ঘাড় তুলতে বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না বাবা। যেভাবে টুংটাং চালিয়ে যাচ্ছো সকাল থেকে। সকাল থেকেই তো তোমার বাবাকে কল করা হচ্ছে। কিছুই তো সাড়াশব্দ নেই। কোনো সিরিয়াস কিছু হলো কিনা বোঝা যাচ্ছে না। ফোন বেজে বেজে ..... আরে ঐতো ঐতো হরেনবাবু, কি মশাই কোথায় ছিলেন"

"আরে হরেনকাকু, এইতো। কোথায় ছিলে?"

"আরে হরেনজ্যাঠা ...."

"এইতো হরেনমামা ....."

"বৌদি, হরেনদা এইযে এসেছেন ....."

"আমার বলে চিন্তায় হাত-পা শুকিয়ে। সারাসকাল কোথায় ছিলে শুনি? মাছটাও তো রবিঠাকুরপো আনলো। তুমি কি করছিলে ...... কি হলো বলবে তো"

"হে হে। খেয়াল ছিল না। তাস এর আজ ফাইনাল ছিল। পরশু নকআউট হয়ে গিয়েছিলো ভুলেই গেছিলাম। মাছের দোকানে ভোলা মনে করলো। আরে না হলে মনোহরা আর সরভাজাটা মিস হয়ে যেত যে। তুমি তো জানোই, তাসের ফাইনালে আজ অব্দি কেউ আমাকে ...... এই ওকি ওকি হলো তোমাদের? এমন চোখমুখ কেন .... শরীর খারাপ লাগছে নাকি! মাথা ঘুরছে নাকি?"


Wednesday, 3 April 2024

মেডিটেশন ইস মাস্ট

 দাদু বললেন,"শোন, মেডিটেশন ইস মাস্ট। সম্পূর্ণভাবে নিজেকে একাত্ম করে, চোখ বন্ধ করে আধঘন্টা। ব্যাস, মোক্ষ।

আমি বললাম," সত্যি?"
দাদু বললেন,"তবে নয়তো কী? কী সব তোদের টেনশন-ফেনশন? অল উইল ভ্যানিশ, উধাও।"
আমি বললাম," তুমি করো দাদু?"
দাদু বললেন,"এভরি নাইট, রাত এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটা, চলে আসিস আজ রাতেই, দেখে যাবি। আমি তো তখন এ জগতেই থাকি না। একাত্ম টু দি অলমাইটি।কানের কাছে হানি সিং ফানি সিং কিছুই বাজিয়ে দেখিস। আমার কোনও নড়ন-চরন হবে না"
-----
ঠিক রাত এগারোটা দশ। সাথে মোবাইল। যদি সত্যিই পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। দেখি দাদু খাটের ওপর, মনে হয় শবাসনে মেডিটেশন করছেন।
দিদিমা বলেন,"কী রে এতো রাতে?"
আমি বললাম,"দাদু মেডিটেশন?"
দিদা বলেন,"ধুসসস ..... জমিয়ে ঘুমোচ্ছে, দেখছিস না নাক ডাকছে! রোজ সকালে উঠে আমাকে মেডিটেশনের গল্প বলে, আমি লুকিয়ে হেসে নি"
-----
আর কি, ঘুমোনোতেই তো বাঙালির মোক্ষ।

Tuesday, 19 March 2024

একটি সাঁওতালি গল্প

 একটি সাঁওতালি গল্প

---------------------------

রসিকবাবু স্টোরিটেলার। গল্প বলতে পারেন বেশ ভালো। তা তার কাছে সঠিক তথ্য থাকুক বা না থাকুক, একটি মুচমুচে রোববার বিকেলের চা-কাটলেট মার্কা গল্প নামিয়ে দেবেন মুহূর্তে।

সেদিন পপি জিজ্ঞেস করল,"মামা, ওদের নাম সাঁওতাল কেন?"
রসিকবাবু দুমিনিট সময় নিয়ে বলতে শুরু করলেন
-------------
ব্রাজিলের সাঁও-পাওলোতে ফুটবল শিখতে গেল বাংলার অনামী এক ছোট্ট গ্রামের ছেলে বুরু মুরমু। ফুটবল না শিখেই মুরমু, হুড়মুড় করে দেশে ফিরে এল। সবাইকে বলল, "উরা, ফুটবলটিকে বেদম পিটায় বটেক। উ আমাদের জন্যে লয় রে।" গ্রামের সবার খুব মন খারাপ। নতুন খেলা একটি শিখবে ভেবেছিল। সে আর হল না। একদিন বিকেলে মুরমু আনমনে ফুটবলের কিকটা প্র্যাক্টিস করছিল। আর তাই দেখে সব বলে উঠল,"ই তো মজার রে". সবাই তখন হাতে হাত ধরে সাঁও-পাওলোর কিক শিখল। সবাই মিলে এক সাথে কিক দিতে দিতে বেশ একটা ছন্দ এল, তাল এল। তালের নেশায় বুঁদ হয়ে যাওয়া আর সাঁও-পাওলো থেকে ফিরে আসা বুরু মুরমু এবং তার গ্রামের লোক সেদিন থেকে "সাঁও-তাল"।

P.S. সব চরিত্র কাল্পনিক।


ঝিঁঝিঁ

 - এই যে এতো ক্রিকেট ক্রিকেট করিস, কত রকম ক্রিকেট আছে জানিস? খোঁজ রাখিস?

- হ্যাঁ এই তো টেস্ট, ওডিআই .....

- তোদের দৌড় ও ওই অব্দি। হাউস ক্রিকেট জানিস? ফিল্ড ক্রিকেট?

- য়্যা? সে সব কি? ডোমেস্টিক বা ইন্টারন্যাশনাল মানে বিদেশ .....

- ধুর। ঘরের পিছনে জঙ্গলে।

- য়্যা?

- হ্যাঁ। ঝিঁঝি পোকা। ইংরিজিতে ক্রিকেট বলে। জানতিস?

- ঝিঁঝি?

- হে হে পোকা। এবার থেকে আর বলিস না কাউকে ক্রিকেটের সব জানিস। বুঝলি? উঠে পর আর আমাকে একটু ধর তো, উঠি। এতক্ষন একটানা বসে আছি তো, কিরকম অবশ অবশ লাগছে। পায়ে ক্রিকেট। হে হে বুঝলি না? পায়ে ঝিঁঝি। 😁

Tuesday, 27 February 2024

একটা জবরদস্ত নাটক

 ঝড়-বৃষ্টি-বজ্র-বিদ্যুৎ এরা বেশ জমিয়ে মাঝরাতেই একটা জবরদস্ত নাটক মঞ্চস্থ করবে বলে রেডি।

পর্দা উঠল।
নাটক শুরু হল।
সমস্যার শুরু তার পরে।
নাটক শুরু হতে না হতেই দর্শক মোবাইল বাগিয়ে চালু করল সেল্ফি-ক্লিক-ক্লিক। তার ফ্লাশলাইট-এ "ওরেশশালা" বলে পালাল বজ্র-বিদ্যুৎ ভ্রাতৃদ্বয়।
ঝড়-বৃষ্টি তবু বেশ কিছুক্ষন ক্লাইম্যাক্স ধরে রাখতে চাইল। কিন্তু দর্শক নাটক ছেড়ে ফেসবুকে আপডেট দেওয়া শুরু করতেই, ঝড়-বৃষ্টি সমস্ত উত্তেজনা-অনুপ্রেরণা হারাল। ঝপাঝপ পর্দা ফেলে তারাও পড়ল কেটে।
মঞ্চ এখন ফাঁকা। দর্শক মুখ বেজার করে, চুক চুক করছে"এহে! আর একটু হলো না? এতো তাড়াতাড়ি শেষ!"
এখন দর্শক নিজেরাই মঞ্চে উঠে খানিক বাঁদর নাচ নেচে নেবে কিনা ভাবছে।
কে যেন অলক্ষ্যে বললো,
"তেরে নাসিব মে নেহি জো খুশিকে মানজর,
সামনে হি তো থি, জো তুঝে ফুরসৎ না মিলা।"



Wednesday, 14 February 2024

এসব নাটক আর কতদিন

 'আমরা নতুন যৌবনের দূত' অর্থাৎ এএনজেডি এবং 'আমরা সবাই রাজা' অর্থাৎ এএসআর, এই দুটি ক্লাবের ঝগড়া ধারাবাহিক। এতটাই, যে এবার ইতিহাসের পাতায় নাম উঠল বলে।

কালীপুজোতে এএনজেডি এএসআর-এর একটি ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলো। এএসআর পরের দিন এএনজেডি-র ক্লাব হানা করে চারজনকে থ্রেট দিয়ে আসে। এএসআর-এর একজনের মনে হয় খেলাটা এক-এক হয়নি। তাই সে রাতের অন্ধকারে এএনজেডি-র ক্লাবে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় এক সদস্যকে আধমরা করে। এবার খেলাটা বেশ এক-এক হয়। পরের রাউন্ডে এএনজেডি তৈরী হচ্ছে। এএসআর রাতের পর রাত বসে ছক করছে আক্রমণ সামলানোর। সরস্বতী পুজোর আগের দিন, এএনজেডি এএসআর-এর ক্লাবে আগুন লাগিয়ে দেয়। পাড়ার সবাই বিরক্ত। পাড়া প্রায়ই টেনশনে থাকে, এই বুঝি আবার ঝামেলা। পাড়ার মাথারা মধ্যস্থতা করেছেন বহুবার, বহুবার সমঝোতার চেষ্টা হয়েছে, ফল জিরো।
মোহনবাণী শোনালেন দাদু। দাদু বলেন, এই এক-এক খেলা একটা অসভ্যতা। প্রতিশোধের স্পৃহা মানুষকে অসভ্য করে তোলে। চোখের বদলে চোখ নিলে পৃথিবী অন্ধ হয়ে যাবে।
এসব শুনে এএসআর ক্লাব এই আগুনের পরের চাল নিয়ে আলোচনায় বসে। ঠিক করে কোনও মারামারি নয়, পাড়ার কেউ যেন এএনজেডি-র সরস্বতী পুজোতে না যায়। এভাবেই তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। এড়িয়ে যাত্তয়া যাক। দেখা যাক কী হয়! উত্তম প্রস্তাব। পাড়ার সকলে এই উদারতার রায়ে ধন্যধন্য করে ওঠে।
কেউ এএনজেডি-র সরস্বতী পুজোতে যায়নি। কেউ না!
সত্যি? কেউ না?
পাড়ার কয়েকজন গিয়েছিল। বেমালুম গিয়েছিল! শুধু যায়নি, জমিয়ে আড্ডা মেরে, লেচে-গেয়ে রীতিমতো যাকে বলে এনজয় করে এসেছে।
তাতে এএনজেডির সাহস কয়েক লিটার বাড়ে আর এএসআর-র বুক ফাটে। কী হল এভাবে এড়িয়ে গিয়ে। দুশমন এখন কলা দেখাচ্ছে। আর এদিকের লোকজন যারা সৎ হয়ে পুজোয় গেল না, মাথা নিচু করে চলছে।
পাড়ার হারু ডাক্তার পুরো ব্যাপারটা শুনে বলেন,ধুস। মন খারাপ কেন। ভালোই হল তো! ক্যান্সার চিনে নাও। ওই যারা একবার এদিকের খেলেন আবার ওদিকেরও ফেললেন না।
দাদু বললেন, ঠিক তাই। এই বিভীষণ চেনাও বিরাট বিষয় খোকা। আগে তাদের অন্তরাত্মাতে কড়া পড়ুক। তারপর বাইরের শত্রু। ওদের বাড়ি সরস্বতী পুজোর স্পেশাল প্যাকেট পাঠানো হোক, সঙ্গে ফুল, 'গেট ওয়েল শুন'
পাড়ায় পোস্টার পড়ল:
'এসব নাটক আর কতদিন, ভাবের ঘরে চুরি,
গান্ধীও এবার স্বর্গ থেকে, এগিয়ে দেবেন ছুরি।'



Tuesday, 13 February 2024

বাজল আজ ভীমপলাশী

গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে নানান কান্ড। হাসি-ঠাট্টা-তামাশা-মজা। 'ধুস ভাল্লাগেনা' হয়ে চলছে দিনগুলো। ফেসবুক খুলবে না, এমনই ভেবেছিল পূরবী। অসহ্য লাগছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালোবাসা দেখানোর খেলা। অফিসে, ফেসবুকে কত কথা কাটাকাটি হলো এই নিয়ে। ভ্যালেনটাইন উইক! কী ভয়ানক বাড়াবাড়ি, লোক দেখানো! আগে একদিন ছিল, এখন পুরো সপ্তাহ ধরে চলছে! যেন দুর্গাপুজো! একথা মনে হতেই দুম করে হঠাৎ একটা ভাবনা এল। পুজোও তো মানুষ সারাবছর করে। তাহলে দুর্গাপুজো নিয়ে এতো মাতামাতি কেন। আসলে হয়ত মানুষ আনন্দ পেতে চায়, উৎসবে থাকার ছুতো খুঁজতে চায়। অনেক কিছু ভুলে যাওয়ার জন্য, অথবা অনেক কিছু মনে পড়ানোর জন্য।

এই কথা মনে হতেই 'কেমন আছিস তোরা? হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে, ইতি পূরবী' মেসেজ করলো পাঁচ বন্ধুকে, যাদের সাথে কত বছর কোনও কথা হয়নি, অথচ একদিনও তাদের ছাড়া থাকতে হবে, তা ভাবাই যেত না কলেজের দিনগুলিতে। মেসেজ করেই নিজের মনে খুশি হয়েছিল পূরবী। কাজ করছিল টুকটাক। মুহূর্তের মধ্যেই একটা টুং, তারপর আবার একটা টুং, তারপর আবার। শেষে ফোন, মিট করার প্ল্যান আরও কত কী! মুঁচড়ে যাওয়া মনটা, ছয় বন্ধুর হাসি-ঠাট্টার আওয়াজে কখন গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে পড়েছে। উইকেন্ডে মিট হল, বাড়ি ফিরে শুধুই নস্টালজিয়া। অনেকদিন পর আজ গুলজার শুনতে ইচ্ছে করল পূরবীর। না পড়া, পরে থাকা বইগুলো সব আজই পড়তে ইচ্ছে করছে। কতকিছু করতে ইচ্ছে করছে। কত কাজ বাকি! আজ আর ঘুমের ওষুধ নিতে হলো না পূরবীকে।
পরের দিন ফেসবুকে পোস্ট করলো পূরবী,'ভালোবাসার বিজ্ঞাপন হচ্ছে বটে, তবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে চড়া সুরে জানান দিচ্ছে সবাইকে, ভালোবাসতে-ভালো থাকতে ভুলে যাননি তো?'
********************
"ভালোবাসা-বাসি তো হলো, দেখান হল আরও অনেক বেশি,
তবু তাতেই, ছেঁড়া তারের তানপুরাতে বাজল আজ ভীমপলাশী"